এখনকার জেনারেশন সবজির নাম শুনলেই নাক সিটকায়। কিন্তু তারা নাকি আবার স্কিন সচেতন। সবজির মধ্যেই থাকে আমাদের শরীর সুস্থ রাখার বিভিন্ন খাদ্য উপাদান। বিভিন্ন সবজির মধ্যে গাজর এমন একটি সবজি যার পুষ্টিকর উপাদানের অভাব নেই। এটি রান্নার পাশাপাশি কাঁচা ও নানারকম পদে খাওয়া যেতে পারে। গাজর ভিটামিন-এ, ভিটামিন-সি, ভিটামিন-কে, পটাশিয়াম এবং আয়রনের মতো অনেক প্রয়োজনীয় পুষ্টিতে সমৃদ্ধ। গাজর খাওয়া শরীরকে কেবল পুষ্টি সরবরাহ করে না, বহু শারীরিক অসুস্থতাও প্রতিরোধ করতে পারে। গাজর একটি অত্যন্ত সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর শীতকালীন সবজি যা প্রায় সারাবছরই কম বেশি পাওয়া যায়। গাজরের অত্যধিক পুষ্টিগুণ ও উপকারিতার কারণে একে বলা হয় সুপারফুড।
গাজরে কী কী পুষ্টিগুণ কতটা পরিমাণে আছে?
প্রতি ১০০ গ্রাম গাজরে আছে, কার্বোহাইড্রেট ১০.৬ গ্রাম, ফাইবার ১.২ গ্রাম, প্রোটিন ০.৯ গ্রাম, ক্যালশিয়াম ৮০ মিলিগ্রাম, ফ্যাট ০.২ গ্রাম, আয়রন ১.০৩ মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন ১৮৯০ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন সি ৩ মিলিগ্রাম, জলীয় উপাদান ৮৬ গ্রাম, ফসফরাস ৫৩০ মিলিগ্রাম, খাদ্যশক্তি ৪৮ কিলো ক্যালরি, ফলিক অ্যাসিড ১৫ মাইক্রোগ্রাম, সোডিয়াম ৩৫.৬ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ১০৮ মিলিগ্রাম৷
গাজর খাওয়ার পরিমাণ
একটি মাঝারি মাপের (৮০-১০০ গ্রাম) গাজর প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় (পছন্দমতো পদ হিসেবে) খাওয়া যেতে পারে।
তবে প্রয়োজনের অতিরিক্ত না খেলেই ভালো।
গাজর কীভাবে খাওয়া যায়
● এটি কাঁচা এবং রান্না করে দুভাবেই খাওয়া যেতে পারে।
● কাঁচা গাজর খাওয়া বেশি উপকারী তাই স্যালাড হিসেবে এবং গাজরের জুস হিসাবে অনায়াসেই খাওয়া যায়।
রান্নাতে তো গাজরের বিবিধ ব্যবহার আছেই। যেমন গাজরের হালুয়া, গাজরের স্যুপ, গাজরের পরোটা, গাজরের কেক (যা carrot cake হিসাবে খুবই জনপ্রিয়), এছাড়া গাজর অন্যান্য সবজির সঙ্গে মিশিয়ে পাঁচমিশালি সবজি করেও খাওয়া যায়। তবে ছোটদের গাজর খাওয়ানো যদি মুশকিলের হয় তাহলে তাদের জন্য বানিয়ে দেওয়া যেতে পারে কিছু মনোরঞ্জক স্নাক্স। যেমন, ক্যারট স্মুদি, ক্যারট মাফিন, ক্যারট চিজ বল, ক্যারট ধোসা, গ্রিলড ক্যারট ইত্যাদি।
গাজরের উপকারিতা
গাজরের এত পুষ্টিগুণ আছে, গাজর কীভাবে খাব সবই তো জানলাম তাহলে এবার জেনে নিই ঠিক কী কী উপকার আমরা পেতে পারি গাজর থেকে:
● গাজরে প্রচুর পরিমাণে উপস্থিত বিটা ক্যারোটিন মানবদেহে ভিটামিন-এ-তে রূপান্তরিত হয়ে চোখের বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি দেয় ও চোখের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখে। এছাড়া ভিটামিন-এ রোগ প্রতিরোধেরও ক্ষমতা বাড়ায়।
● গাজরে উপস্থিত প্রচুর ফাইটোকেমিক্যাল যেমন ফেনোলিক যৌগ, অ্যাসকরবিক অ্যাসিড, ক্যারোটিনয়েড অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রূপে দেহের ফ্রি রেডিক্যাল-এর ওপর কাজ করে বহু রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। যেমন, হৃদরোগের আশঙ্কা কমে, ক্যানসার প্রতিরোধ করে।
● অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ছাড়াও গাজরে সোডিয়াম কম আর পটাশিয়াম-এর মাত্রা বেশি হওয়াতে উচ্চ রক্তচাপ হ্রাস করতে সাহায্য করে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে যাঁরা সপ্তাহে ৬টির বেশি গাজর খেয়েছেন তাঁদের স্ট্রোকের সম্ভাবনা অনেকটাই কম।
● এই অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ত্বকের লাবণ্য ধরে রাখে। বয়সের ছাপ দূর করে ত্বকের ঔজ্জ্বল্য ধরে রাখে আর সুন্দর চুল গঠনেও খুব ভালো কাজ করে।
● ওজন কমাতে গাজরের আছে দারুণ ভূমিকা। এটি বেশ ফাইবার বা আঁশ যুক্ত সবজি হওয়ায় এর ফাইবার ধীরে ধীরে হজম হতে ও দীর্ঘ সময় ধরে পেটের ভর্তি ভাব বজায় রাখতে সাহায্য করে। এর ফলে আমাদের দেরিতে খিদে অনুভব হয়। এছাড়া এর ক্যালোরি মাত্রা কম বলে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় অনায়াসেই রাখা যায়।
● এর ফাইবার অন্ত্রের চলাচলে সহায়তা করে ফলে হজমের উন্নতি হয়। তাই প্রতিদিনের স্যালাডে গাজর অবশ্যই রাখা যেতে পারে।
● ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্যতালিকাতেও কিন্তু গাজর গুরুত্বপূর্ণ। কারণ গাজর মাটির তলার সবজি হলেও এতে স্টার্চের পরিমাণ অন্যান্য মূল বা কন্দ জাতীয় সবজির তুলনায় কম। আর এর জিআই (গ্লাইসেমিক ইনডেক্স) অনেক কম তাই প্রতিদিনের খাবারে নির্দ্বিধায় গাজর রাখা যায়।
● গাজরে ফোলেট-এর মাত্রা ভালো পরিমাণে থাকায় গর্ভাবস্থায় এটি শিশুর ‘নিউরাল টিউব ত্রুটি’ অর্থাৎ অনাগত শিশুর মেরুদণ্ড ও মস্তিষ্কের গঠনগত ত্রুটি প্রতিরোধ করে।
যাঁদের গাজর খাওয়া নিষেধ
যাঁদের গাজর খেলে এলার্জি জনিত সমস্যা হয় তাঁদের গাজর এড়িয়ে চলাই ভালো।