সোমবার ৮ জুলাই, ২০২৪


ছবি প্রতীকী

মাঝে মাঝেই পিঠে বা কোমরে অসহ্য ব্যথা করছে। আর আপনি ভাবছেন শোয়ার দোষেই হয়তো এরকম হচ্ছে। যদি এরকম ঘটনা দীর্ঘদিন ধরে হয়, তাহলে আপনার হাড়ের দুর্বলতা কারণেও এরকম হতে পারে। একটা বয়সের পর আমাদের হাড় দুর্বল হয়ে পড়ে। সেই কারণে ব্যথা হয়। হাড়কে শক্তিশালী রাখতে রাখতে কিছু অভ্যাসের পরিবর্তনের জরুরি। পাশাপাশি প্রতিদিনের খাদ্য তালিকাতেও বদল আনতে হবে। রাখতে হবে ক্যালশিয়াম, প্রোটিন, ভিটামিন-ডি সমৃদ্ধ খাবার।

আমরা ভাবছি একটানা কাজ বা শোয়ার অভ্যাসেই এই ব্যথা হচ্ছে। আবার কেউ মনে করেন ভুল লাইফস্টাইল এবং খাদ্যাভ্যাসের কারণে ব্যথা হচ্ছে। তাই ব্যথা কমাতে এ সময় আমরা বিভিন্ন তেল মালিশ করি। আবার কখনও কখনও ব্যথা কমানোর স্প্রে ব্যবহার করি। অনেক ক্ষেত্রে আমরা আবার লেপ, তোষক রোদে দিই। কিন্তু আমরা কখনওই ভাবি না, এই যাবতীয় ব্যথা আসলে আমাদের শরীরে ক্যালশিয়াম এবং ভিটামিন-ডি এর ঘাটতির কারণেই হচ্ছে।
সব ব্যথাই বাত বা আর্থারাইটিস নয়। কিছু ব্যথা খাদ্যে অপর্যাপ্ত ক্যালশিয়াম এবং ভিটামিন-ডি এর কারণে হাড় দুর্বল হয়ে যায়, আর উপসর্গ হিসেবে ব্যথা হয়।
ছোট বয়স থেকেই যদি আমরা রোজকার খাবারে বিশেষ নজর দিই অর্থাৎ প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় যদি পর্যাপ্ত ক্যালশিয়াম এবং ভিটামিন-ডি সমৃদ্ধ খাদ্য রাখি, তাহলে বড় বয়সে এসে হাড়ের সমস্যা কম অনুভূত হবে।
 

হাড় মজুবত রাখতে রোজ খাবারেকী কী রাখবেন?

 

দুধ এবং দুধ থেকে তৈরি খাবার

দুধ ভিটামিন-ডি এর খুব ভালো উৎস। তাই প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় দুধ অবশ্যই রাখতে হবে। সবাই দুধ হজম করতে পারে না, তাদের ক্ষেত্রে দুধের তৈরি খাবার যেমন—দই, পনির, ছানা ইত্যাদি খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে। তবে দুধের যাবতীয় খাবার ফ্যাট ফ্রি দুধ বা ডবল টোনড দুধ দিয়ে তৈরি হতে হবে।
 

সয়া মিল্ক

হাড়কে মজবুত রাখতে দুধের পাশাপাশি সোয়া মিল্ক খেতে পারেন। সোয়া মিলকে থাকা ক্যালশিয়াম এবং ভিটামিন-ডি হাড়ের ক্ষয় রোধ করে। সয়া মিল্ক খেতে অসুবিধা হলে সয়া মিল্কের তৈরি অন্যান্য খাবারও খেতে পারেন।

 

চিজ

সাধারণত ৩০ ঊর্ধ্বদের হাড়ের ক্ষয় বেশি দেখা যায়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেহে ক্যালশিয়ামের ঘাটতির কারণে এই হাড়ের ক্ষয় দেখা যায়। তবে মহিলাদের মধ্যে এই লক্ষণ বেশি মাত্রায় প্রকাশ পায়। তাই, ক্যালশিয়াম জাতীয় খাবার রোজকার খাদ্য তালিকা রাখা জরুরি। ক্যালশিয়ামের ঘাটতি পূরণ করে চিজ। খেতেও সুস্বাদু, আবার স্বাস্থ্যের পক্ষেও ভালো। তাই, রোজকার খাবারে চিজ রাখা যেতে পারে।
 

বাদাম

ক্যালশিয়াম হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। বাদামে ক্যালশিয়ামের সঙ্গে ফসফরাস ও ম্যাগনেসিয়ামও রয়েছে। ম্যাগনেশিয়াম আবার ক্যালশিয়াম শোষণে সাহায্য করে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টও প্রচুর মাত্রায় রয়েছে, যা হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে।
ব্রেকফাস্ট যদি না করে থাকেন, তাহলে এক মুঠো বাদামেই বাজিমাত হবে। কাজ করার ফাঁকে ফাঁকেও বাদাম খুব সহজেই খাওয়া যায়। তাই হাড় মজবুত করতে প্রতিদিন একমুঠো বাদাম খাদ্য তালিকা অবশ্যই রাখতে হবে।

আরও পড়ুন:

হেলদি ডায়েট: বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ! রোগ প্রতিরোধে কেমন হবে ডায়েট? খাদ্যতালিকায় কী রাখলে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন?

ধীরে ধীরে বাড়ছে ঠান্ডা, শীত পোশাক ব্যবহারের আগে অবশ্যই মাথায় রাখুন এই বিষয়গুলি

শিশুকে নিয়ে বেড়াতে যাচ্ছেন? কোন কোন বিষয়ে সতর্কতা প্রয়োজন? কী কী ওষুধ সঙ্গে রাখবেন? রইল পরামর্শ

 

কমলালেবু

কমলালেবু ক্যালশিয়াম, ভিটামিন-ডি এবং ভিটামিন-সি ইত্যাদি খুব ভালো উৎস। কমলালেবুতে উপস্থিত ক্যালশিয়াম এবং ভিটামিন-ডি হাড়কে শক্তিশালী করে। কমলালেবু খেলে অস্টিওপোরোসিস, অস্টিওম্যালেসিয়া ইত্যাদি ক্যালশিয়াম এবং ভিটামিন-ডি এর অভাবজনিত রোগকে সহজেই কাবু করা যায়।
 

আঙুর

আঙুরে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি পাওয়া যায়। এই ভিটামিন-সি কোলাজন উৎপাদনে সাহায্য করে। ক্ষতিকর ফ্রি র্যামডিকেল যা হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ তাদের সহজে দেহ থেকে বার করে দেয়।
তবে মনে রাখতে হবে আঙুরে সুক্রোজ প্রচুর মাত্রায় উপস্থিত, তাই যাঁদের ডায়াবেটিস বা কিডনির সমস্যা আছে তাদের আঙুর খাওয়া চলবে না।
 

কলা

ম্যাগনেশিয়ামের সেরা উৎস হিসাবে কলাকে বিবেচনা করা হয়। ম্যাগনেশিয়াম হাড় এবং দাঁতের স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই প্রয়োজনীয়। আর দাঁতের গঠনে ক্যালশিয়াম এবং ফসফরাসের যথাযথ পরিমাণে শোষণের জন্য ম্যাগনেশিয়াম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে।
তাই সারাদিনের যেকোনও সময়ে (যেমন ব্রেকফাস্ট, আফটারনুন, ইভিনিং) একটা কলা অবশ্যই খেতে হবে।

আরও পড়ুন:

যোগা-প্রাণায়াম: কোভিডে আক্রান্ত হয়েছিলেন? প্রাণায়ামে হবে শ্বাসকষ্টের উপশম, জেনে নিন কীভাবে করবেন

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-১৫: যখন ‘ওরা থাকে ওধারে’

ইংলিশ টিংলিশ: Appropriate Prepositions কাকে বলে জানো কি?

 

আনারস

আনারসে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম এবং ভিটামিন-এ রয়েছে। আনারসে উপস্থিত পটাশিয়াম ক্যালশিয়ামের ঘাটতি রোধ করে হাড়কে শক্ত করে।
 

পালং শাক

পালং শাকে ক্যালশিয়াম প্রচুর মাত্রায় উপস্থিত। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় এক কাপ সেদ্ধ পালং শাক আপনার শরীরের পঁচিশ শতাংশ ক্যালশিয়ামের চাহিদা পূরণ করে। পালং শাক আয়রন, ভিটামিন-এ, ফাইবার, ভিটামিন-কে, ম্যাগনেশিয়াম ইত্যাদির ভালো উৎস, যা হাড়ের ক্ষয় রোধে সাহায্য করে।
পালং শাক যেমন সেদ্ধ করে খাওয়া যায়, তেমনি তরকারি রান্না করে খাওয়া যায়। আবার পালং শাকের স্মুদি কলা দিয়ে বানিয়েও খেতে পারেন। এতে উপকার অনেক বেশি পাবেন।
তবে মনে রাখতে হবে, অতিরিক্ত পালং শাক খাওয়া কখনওই উচিত নয়। কারণ, পালং শাকে উপস্থিত ফাইটিক অ্যাসিড ক্যালশিয়াম শোষণে বাধা দেয়।
 

পেঁপে

পেঁপে শুধু হজমের জন্য, হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্যও সমান ভাবে উপকারী। তাই পেঁপেকে রোজকার খাদ্য তালিকায় অবশ্যই রাখতে হবে। ১০০ গ্রাম পেঁপেতে ২০ মিলিগ্রাম ক্যালশিয়াম পাওয়া যায়। তবে একবারে বেশি পেঁপে না খেয়ে অল্প অল্প করে খেতে হবে।

আরও পড়ুন:

তুষারপাতের সেই দিনগুলি, পর্ব-৩: ভারতে যেমন বৃষ্টি, এখানে তেমনি বরফ, যাদের ভালো লাগে, তারা প্রেমে পড়ে যায়

একঘেয়েমি কাটাতে পোলাও-এর স্বাদ বদল চাই? বানিয়ে ফেলুন সনাতনী ঝাল পোলাও

দশভুজা: আমার উড়ান— স্বাতী মোহন: এক এবং অন্যতমার আখ্যান…

 

মটরশুটি

মটরশুঁটিতে ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালশিয়াম, ফসফরাস ইত্যাদি রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে, যা হাড়কে শক্তিশালী করতে প্রয়োজনীয়। তাই প্রতিদিন খাদ্য তালিকা মটরশুটি অবশ্যই রাখতে হবে।
 

মাছ

মাছ ভিটামিন-ডি এবং প্রোটিনের আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ উৎস। তবে স্যামন বা টুনা মাছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ভিটামিন-ডি আর একটু বেশি মাত্রা পাওয়া যায়। তাই এই মাছগুলো হাড়কে শক্ত এবং মজবুত করতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে।
 

মুরগির মাংস

মুরগির মাংস প্রোটিনের সমৃদ্ধ উৎস। মুরগির মাংস হাড়কে মজবুত করার পাশাপাশি শরীরের অন্যান্য সমস্ত ঘাটতি পূরণ করতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকা পর্যাপ্ত পরিমাণে মুরগির মাংস অবশ্যই রাখতে পারেন।

আরও পড়ুন:

শাশ্বতী রামায়ণী, পর্ব ২৬: ‘সত্যেরে লও সহজে’—রাজসুখ ছেড়ে কি তবে বনবাসী মন?

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৪৩: নোবেল-প্রাপ্তির সংবর্ধনা-সভায় রবীন্দ্রনাথ ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন

বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-১৯: অনুপ্রেরণার আর এক নাম কই মাছ

 

শুধু খাদ্য তালিকায় পরিবর্তন নয়, বদল আনতে হবে জীবনযাত্রায়ও, কী কী?

 

গায়ে লাগান সূর্যের প্রথম আলো

আমরা সবাই জানি সূর্যের আলো ভিটামিন-ডি এর খুব ভালো একটা উৎস। তাই ভোরের বেলা ১০টা থেকে ১৫ মিনিট হালকা সূর্যের আলোতে থাকলে শরীরে ভিটামিন-ডি উৎপন্ন হবে।
 

ধূমপান বন্ধ করতে হবে

ধূমপান স্বাস্থ্যের পক্ষে কখনওই ভালো নয়। ধূমপান করলে শুধু হাড় সংক্রান্ত নয়, আরও অনেক ধরনের সমস্যা দেখা যায়। এমনকি, ধূমপান শরীরে ক্যালশিয়ামের শোষণ ভালোভাবে হতে দেয় না। ফলে আমাদের শরীরের হাড়ের ক্ষতি হয়।
 

খাবারে বেশি লবণ খাওয়া যাবে না

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, অতিরিক্ত মাত্রায় লবণ খেলে বেশি বয়সে হাড়ের ঘনত্ব কমে যায়। তাই খাবারে বেশি লবণ খাওয়া উচিত নয়।
 

সোডা কম খেতে হবে

যে কোনও রকম সোডা হাড়ের ঘনত্ব কমায়। হাড়কে সহজেই ভেঙে যেতে সাহায্য করে। তাই হাড় ভালো রাখতে সোডার বদলে যে কোন রকম ফলের রস খেয়ে সেই তেষ্টা দূর করা যেতে পারে।
 

এড়িয়ে চলুন মদ্যপান

বেশি মদ্যপান হাড়ের জোর কমিয়ে দেয়। তাই মদ্যপান না করাই ভালো।

তবে হাড়ের সমস্যা যদি বাড়াবাড়ি পর্যায়ে পৌঁছয় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

যোগাযোগ: ৯৮৩০৭৬৮১৫২


Skip to content