রবিবার ২৪ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি প্রতীকী, সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে

জাঁকিয়ে শীত না পড়লেও বইছে উত্তুরে হাওয়া। বঙ্গে শীতের আগমন ঘটতে না ঘটতেই বাজারে এসে গিয়েছে কমলালেবু। ঝুড়ি ভর্তি কমলালেবুর দর হাঁকাচ্ছেন বিক্রেতারা। শীতের দুপুরে অথবা টিফিনে একটা করে কমলালেবু না খেলে বাঙালির মন ভরে না। কিন্তু জানেন কি কমলালেবুর ঠিক কী কী গুণ রয়েছে? শীতের মরশুমে রসনাতৃপ্তি ছাড়াও কমলালেবু স্বাস্থ্যের পক্ষে ঠিক কতটা উপকারী, তা নিয়ে গবেষণা করছে দেশ-বিদেশের বহু সংস্থা। কমলালেবুর মধ্যে রয়েছে ফাইবার, পটাশিয়াম, ভিটামিন-সি, কোলিনের মতো বহু উপাদান। যেগুলি শরীরকে তরতাজা রাখতে সাহায্য করে।

সুস্থ থাকতে হলে শীতের ডায়েটে রাখতেই হবে কমলালেবু। কারণ, কমলালেবুতে রয়েছে ফাইবার, পটাশিয়াম, ভিটামিন সি, কোলিনের মতো বহু উপাদান। হৃদযন্ত্র সক্রিয় রাখতে এবং হৃৎস্পদনের গতি ঠিক রাখতে এই উপাদানগুলির জুড়ি মেলা ভার। এদিকে, ফাইবারের পরিমাণ বাড়তে থাকলে রক্তে ইনসুলিনও বাড়ে। মাঝারি আকারের একটি কমলালেবুতে প্রায় ৩ গ্রাম ফাইবার থাকে। তাই প্রতিদিন একটি করে কমলালেবু খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। শুধু তাই নয়, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সাহায্য করে কমলালেবুর মধ্যে থাকা পটাশিয়াম। তাই উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের ডায়েটে রাখতেই হবে এই মরশুমি ফলকে। কমলালেবু খেলে স্ট্রোকের ঝুঁকিও অনেকটা কমে যায়। মস্তিষ্কে রক্ত চলাচলের পথ মসৃণ করতেও সাহায্য করে কমলালেবু। বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশুর জন্মের দু’বছর বয়স পর্যন্ত প্রতিদিন কমলালেবুর রস খাওয়ালে লিউকোমিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়। এছাড়াও, কমলালেবুর মধ্যে থাকা ভিটামিন সি চুলের বৃদ্ধি ও ত্বকের ঔজ্জ্বল্য ধরে রাখতে সাহায্য করে। তবে এখানেই শেষ নয়, আপনি যদি মিস ক্যালকাটা হতে চান তাহলে অবশ্যই জানতে হবে কমলালেবুর খোসার গুণাগুণও।

শীতে শুষ্ক ত্বককে সতেজ রাখতে কীভাবে সাহায্য করে কমলালেবুর খোসা?
১. কমলালেবুর খোসাতে থাকে অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ও অ্যান্টি-ফাঙ্গালের মতো উপাদান। যা আপনার মুখে হওয়া ব্রণকে সহজেই নির্মূল করে দিতে সক্ষম। ত্বককে সতেজ রাখতে একটি গোটা কমলালেবুর খোসা এক কাপ জলে সিদ্ধ করে নিন। তারপর সেই জল মুখ ধোয়ার কাজে ব্যবহার করুন। প্রতিদিন এই পদ্ধতিতে মুখ ধুলে ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধি পাবে।

২. তৈলাক্ত ত্বককে মসৃণ, নরম করে তুলতেও বিশেষ কার্যকরী কমলালেবুর খোসা। তবে তার আগে কমলালেবুর খোসা ব্যবহারের পদ্ধতিটি অবশ্যই ভালো করে জেনে নিতে হবে। কমলালেবুর খোসা সরাসরি ত্বকে প্রয়োগ করা যায় না। ত্বককে মসৃণ ও নরম রাখতে হলে প্রথমে কমলালেবুর খোসার সঙ্গে মুসুরের ডাল বেটে নিন। তারপর কমলালেবুর খোসা ও মুসুর ডালের ওই মিশ্রণটি নিয়মিত ত্বকে লাগিয়ে নিন। এতে ত্বক মসৃণও হবে, আবার মুখের দাগও দূর হবে।

৩. আপনি যদি ঘরোয়া পদ্ধতিতে ট্যান তুলে ত্বক উজ্জ্বল করতে চান, তাহলেও আপনাকে ব্যবহার করতে হবে কমলালেবুর খোসা। মুখের ট্যান তোলার জন্য লাগবে দুই টেবিল চামচ কমলালেবুর খোসা গুঁড়ো, কয়েক ফোঁটা লেবুর রস, এক টেবিল চামচ চন্দন গুঁড়ো। এই সব উপাদান একসঙ্গে মিশিয়ে প্রথমে একটি পেস্ট তৈরি করুন। তারপর ওই পেস্টটি সারা মুখে ভালো করে লাগিয়ে ৩০ মিনিট মতো রেখে ঠান্ডা জলে মুখ ধুয়ে নিন। এইভাবে মাসে ৩ থেকে ৪ বার করলে আপনার ত্বক উজ্জ্বল হতে শুরু করবে।

৪ শীতের মরশুমে শুষ্ক হয়ে যায় ত্বক। এই সময় ত্বকের শুষ্কতা থেকে বাঁচতে কমলালেবুর খোসা অনেকটাই সাহায্য করে থাকে। তবে এক্ষেত্রে এক টেবিল চামচ কমলালেবুর খোসার গুঁড়োর সঙ্গে মেশাতে হবে টক দই। তারপর ওই মিশ্রণটি গোটা মুখে লাগান। ২০ মিনিট ওই মিশ্রণটি মুখে রেখে শুকিয়ে গেলে জল দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।

শরীর ও ত্বককে তরতাজা রাখতে যেমন কমলালেবুর উপকারিতা অনেক, তেমনই অতিরিক্ত কমলালেবুতেও সমস্যা। কথায় আছে অতি সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট। এও ঠিক তেমনই। কমলালেবু খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো ঠিকই, তবে একসঙ্গে অনেকগুলি কমলালেবু খেলে হিতে বিপরীত হতে পারে। দিনে ৪-৫টি কমলালেবু একসঙ্গে খেলে হতে পারে অম্বল। কমলালেবু শরীরে জলের জোগান দেয়। এই ফলের মাধ্যমে শরীরে যথেষ্ট পরিমাণ ভিটামিন সি প্রবেশ করে। যার ফলে রাতে ঘুম না হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। হৃদরোগের আশঙ্কাও বেড়ে যায়। একসঙ্গে অনেকগুলো কমলালেবু খেলে শরীরে অতিরিক্ত ফাইবার প্রবেশ করবে। ফলে পেটে ব্যথা, বমিভাব, ডায়েরিয়ার মতো সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। তাই শীতের মরশুমে শরীর সুস্থ রাখতে অবশ্যই কমলালেবু খান একটা বা দুটো।

Skip to content