শনিবার ২৩ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি প্রতীকী।

ড্যাশ ডায়েট আর হাইপারটেনশন কথা দুটো যেন একে অন্যের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ড্যাশ (DASH) কথার অর্থ ডায়েটারি অ্যাপ্রচেস টু স্টপ হাইপারটেনশন। হাইপারটেনশন বা হাই ব্লাড প্রেশার এখন যেকোনও বয়সী মানুষের মধ্যেই একটা বিশেষ সমস্যা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হাইপার টেনশনের প্রাথমিক কোনও লক্ষণ না থাকায় যখন ধরা পড়ে তখন অনেক দেরি হয়ে যায়। ‘সাইলেন্ট কিলার’ হিসাবে রোগ বাড়তে থাকে দেহের অভ্যন্তরে।
 

হাই ব্লাড প্রেশার আসলে কী?

ধমনী গাত্রে রক্তের স্বাভাবিক সংকোচন ও প্রসারণ জনিত চাপ ১২০/৮০ মিমি পারদ স্তম্ভের চাপের সঙ্গে সমান। কিন্তু এই মাত্রা বাড়তি বাড়তে ১৪০/ ৯০ ছাড়ালেই হাইপারটেনশন। প্রি-হাইপারটেনসিভদের রক্তের চাপ ১২০-১৩৯/৮০-৮৯। এরা বিজ্ঞানসম্মত ডায়েট, শরীরচর্চা, নির্দিষ্ট মাত্রায় লবণ খাওয়া এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তনের চেষ্টা না করলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই হাইপারটেনসিভদের তালিকাভুক্ত হয়ে পড়বেন তাতে সন্দেহ নেই।

 

হাইপার টেনশনের লক্ষণ

প্রাথমিকভাবে হাইপারটেনশনের সেরকম কোনও লক্ষণ না থাকলেও হঠাৎ করে অতিরিক্ত ঘাম, বুক ধড়ফড় করা, তীব্র ক্লান্তি, চোখে ঝাপসা দেখা, মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব, কানমাথা, গরম হয়ে যাওয়া, নাক দিয়ে রক্ত পড়া ইত্যাদি সব সমস্যার এক বা একাধিক দেখা দেওয়া মাত্রই ব্লাড প্রেশার চেক করিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিন।
 

ড্যাশ ডায়েটের মূল কথা

প্রি-হাইপারটেনসিভদের জন্য এই ড্যাশ ডায়েট অত্যন্ত উপকারী। মাত্র কয়েকদিন অনুশীলনের মাধ্যমে ঊর্ধ্বগামী রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়।

আরও পড়ুন:

ডায়েট ফটাফট: ওজন কমাতে ব্রেকফাস্ট-লাঞ্চ-ডিনারের মাঝে ‘হেলদি স্ন্যাকস’ খাচ্ছেন তো?

বৈষম্যের বিরোধ-জবানি, পর্ব-১২: দক্ষ কর্মী নির্বাচন বনাম নারী সহকর্মী

খাই খাই: রাতে নিরামিষ পদে স্বাদ বদল চাই? বানিয়ে ফেলুন তেল পটল

 

কী এই ড্যাশ ডায়েট

এই ডেশ ডায়েট আসলে ফল, সব্জি, গোটা দানাশস্য, লিনমিট, লিনফিশ, সোডিয়াম, সল্ট, বিনস এবং লো ফ্যাট ডেয়ারি প্রোডাক্টস সম্বলিত এক বিশেষ ধরনের ডায়েট প্ল্যান যা অনুসরণের ফলে মাত্র দিন ১৫র থেকেই রক্তচাপের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কমতে থাকে।
 

ড্যাশ ডায়োতির খাদ্য পরিকল্পনা

আপনার বয়স, ওজন, উচ্চতা, কর্মক্ষমতা এবং বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার কথা মাথায় রেখে দৈনিক প্রয়োজনীয় শক্তি ও চাহিদা পূরণের জন্য গোটা দানাশস্য, তাজা শাকসব্জি, তাজা ফল, খোসাওয়ালা ডাল, বাদাম ও শুকনো বিন, লো ফ্যাট ডেয়ারি প্রোডাক্টস, উদ্ভিজ্জ তেল, লিনফিশ ও মিট ইত্যাদি বিভিন্ন অত্যাবশ্যকীয় অনুমোদিত খাবার খাদ্য তালিকার অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

আরও পড়ুন:

চেনা দেশ অচেনা পথ, পর্ব-১১: বন থেকে বনান্তরে

ডায়াবেটিসে শরীরের কোন কোন অঙ্গের বেশি ক্ষতি হয়? রইল বিশেষজ্ঞের পরামর্শ

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-২৮: পূর্ণ অপূর্ণ-র মাঝে পথ দেখায় ‘দেবত্র’

যেমন ব্রেকফাস্ট বা টিফিনে রাখতে পারেন ওটস, ডালিয়া, মাল্টিগ্রেইন আটা, কিনোয়া, ছাতু ইত্যাদি স্বাভাবিক খাবার। প্রসেসড খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। হোল হুইট পাস্তাও চলতে পারে।

লাঞ্চ ও ডিনারে রাখা যায় ব্রাউন রাইস, সাধারণ সেদ্ধ চালের ভাত, ওটস বা আটার রুটি, মাল্টিগ্রেইন রুটি, কিনোয়া, ডালিয়া সেদ্ধ ইত্যাদি।

একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের দিনে অন্তত হাফ কাপ রান্না করার শাক এবং দু’ কাপ থেকে তিন কাপ রান্না করা তরকারি খাওয়া উচিত। এক্ষেত্রে যে কোন ধরনের পছন্দ-সই শাক-সব্জি খাওয়া গেলেও রান্নায় তেল ও লবণের ব্যবহার অত্যন্ত কম করতে হবে।

দিনে ১৫০ গ্রামের বেশি লিনমিট বা ফিশ খাওয়া উচিত নয়। যেকোনও মিষ্টি জলের মাছ, মুরগির মাংস, ডিম ইত্যাদির পাশাপাশি সপ্তাহে দুই থেকে তিনদিন ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডযুক্ত সামগ্রিক মাছ ডায়েটে রাখলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

প্রতিদিন ডায়েটে ২৫০ থেকে ৩০০ মিলিলিটার ফ্যাট ফ্রি দুধ, দই, ইয়োগার্ট ইত্যাদি রাখুন। এক্ষেত্রে গ্রিক ইয়োগার্ট বেশ ভালো। ছানা বা লো ফ্যাট পনিরও খেতে পারেন।

ডালের মধ্যে খোসা হোলা মুখ, মশুর, গোটা ছোলা, সোয়াবিন, মটর, রাজমা, শুকনো বিন, আমন্ড, আখরোট ইত্যাদি মাত্রা মতো ডায়েটে রাখা উচিত। চলবে মটরশুটিও।

প্রতিদিন অন্তত ৩০০ গ্রাম তাজা ফল খেতে হবে। বিশেষ করে কলা, আপেল, আঙ্গুর, পেঁপে, সবেদা, তরমুজ, কমলালেবু, মুসম্বি, বাতাবি লেবু, পাতি লেবু ও বিভিন্ন ধরনের বেরি জাতীয় ফল এ ক্ষেত্রে অত্যন্ত উপকারী। ফলের পটাশিয়াম রক্তের উচ্চচাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে সাহায্য করে।
আরও পড়ুন:

বিধানে বেদ-আয়ুর্বেদ, বাতরক্ত বা গাউটে ভুগছেন? ঘরে বসেই মুক্তির উপায় জানুন

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-১২: ঘাম কমাতে পাউডার ব্যবহার করেন?

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৬: দুয়ারে অপচ্ছায়া

রান্নায় সারাদিনই এক চামচের বেশি লবণ ব্যবহার করা চলবে না। কাঁচা নুন একেবারেই নয়।

সারাদিনের রান্নায় ক্যালোরি চাহিদা অনুযায়ী তিন থেকে চার চা চামচ উদ্ভিজ্জ ভোজ্য তেল ব্যবহার করা যেতে পারে, কিন্তু তার বেশি নয়।

বাদ দিতে হবে রেড মিট, স্যাচুরেটেড ফ্যাট, কোলেস্টেরল, ট্রান্স ফ্যাটি অ্যাসিড এবং রিফাইন কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবারদাবার।

চিনি, গুড়, মধু, জ্যাম, জেলি, ক্যান্ডি, সফট ড্রিঙ্ক, শরবত, ক্যান্ড ফ্রুট জুস, হোল মিল প্রোডাক্ট এবং বেকারের খাবার বর্জনীয়।

ক্যালশিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, জিংক, সেলেনিয়াম, ডায়েটারি ফাইবার, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, ক্যারোটিনয়েডস এবং বিভিন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের গুণে সমৃদ্ধ ড্যাশ ডায়েট উচ্চ রক্তচাপের মোকাবিলায় দারুণ কার্যকরী।

যোগাযোগ: ৯৮৩০২১৪৯৭১
* ডায়েট ফটাফট (Healthy Diet tips): শম্পা চক্রবর্তী (Shampa Chakrabarty), ডায়েট কনসালটেন্ট।

Skip to content