শুক্রবার ২২ নভেম্বর, ২০২৪


ভাইরাস দুই ধরনের হয়— আরএনএ ভাইরাস এবং ডিএনএ ভাইরাস। অ্যাডিনোভাইরাসটি এক ধরনের ডিএনএ ভাইরাস। প্রকৃতির মধ্যেই অনায়াসে বেঁচে থাকতে পারে এই ভাইরাসটি। তাই খুব সহজেই মানুষ এই ভাইরাসের কবলে পড়েন। আর ছড়িয়েও পড়ে দ্রুত।
 

কাদের ভয় বেশি?

কো-মর্বিডিটি থাকলে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। তবে এই রোগে শিশুরাই বেশি আক্রান্ত হয়। যেহেতু করোনার কারণে শিশুরা প্রায় দুই বছর ঘরবন্দি ছিল, তাই বাইরে আলো বাতাস বা পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলা তাদের মধ্যে খুব একটা গড়ে ওঠেনি। এক কথায় বলা যেতে পারে, শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালোভাবে তৈরি হয়নি। আর সেই কারণেই তারা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। ফলে এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে জরুরি হল ওদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা করা।

অ্যাডিনোভাইরাস খুব সাধারণ একটি ভাইরাস। এই রোগে আক্রান্ত বেশিরভাগ মানুষই খুব সহজেই সেরে ওঠেন। তবে এর প্রকটতাও কিছু কিছু ক্ষেত্রে খুব বেশি।

চিকিৎসকদের মতে, যে শিশুদের বয়স দু’বছরের কম, তাদের ক্ষেত্রে ভয় বেশি। বয়স এক বছরের কম হলে আরও বেশি ঝুঁকি। ভীষণ সাবধানে রাখতে হবে। বড়দের জ্বর-সর্দি-কাশি, গলাব্যথা হলে শিশুদের থেকে দূরে থাকতে হবে। কারণ, বড়দের থেকেই অ্যাডিনোভাইরাস শিশুদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এই ভাইরাস শিশুদের মূলত ফুসফুস এবং শ্বাসনালি মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আরও ভয়ের হল সাধারণ সর্দি-কাশি শ্বাসকষ্টে বদলে যে সময় লাগছে দু’দিনও। তাই এ সময়ে ছোট থেকে বড় সকলেই প্রতিরোধ ক্ষমতার বাড়ানোর দিকে নজর দিতে হবে। খাওয়ার পাতে কী কী রাখতেই হবে?

 

রোগ প্রতিরোধে খাদ্য তালিকায় থাকুক

 

দুধ

হাড় মজবুত করার জন্য দুধ আবশ্যকীয় একটি পানীয়। দুধে উপস্থিত ক্যালশিয়াম, ফসফরাস, প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট শরীরের পক্ষে অত্যন্ত উপকারী। বড়দের ক্ষেত্রে অসুবিধা নেই। কিন্তু অনেক বাচ্চাই দুধ খেতে ভালোবাসে না। দুধের গ্লাস নিয়ে তাদের পিছনে ছুটতে হয়। এমন হলে নানান ধরনের মিল্কশেক বানিয়ে তাদের দুধের জোগান পূর্ণ করতে পারেন।
 

দই

ক্যালশিয়াম ও প্রোটিন দইই দাঁত ও হাড়কে মজবুত করে। এমনকি সুষ্ঠু ভাবে খাবার হজম করতেও সাহায্য করে। সেই সঙ্গে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। টাটকা ফলের সঙ্গে দই খেলেও উপকার পাওয়া যাবে।
 

ডিম

বিশেষজ্ঞদের মতে, দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় ৪৫ থেকে ৫৫ গ্রাম প্রোটিন থাকা অত্যন্ত জরুরি। প্রতিদিন একটি করে ডিম খেলে প্রোটিনের জোগান পূর্ণ হয়। এর ফলে মস্তিষ্কের উন্নতি হয়। এ ছাড়াও ডিমে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ থাকে। এর পাশাপাশি ডিমে প্রচুর পরিমাণে কোলিন নামক পুষ্টিকর উপাদান থাকে, যা মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য জরুরি। ডিমে রোগ প্রতিরোধকারী কিছু নিউট্রিয়েন্ট যেমন ভিটামিন ডি, জিঙ্ক, সেলেনিয়াম, এবং ভিটামিন ই থাকে। ছোটদের বিভিন্নভাবে ডিম খাওয়ানো যেতে পারে। যে যেমন পছন্দ করে তাকে সেরকম ভাবেই ডিম খাওয়াতে হবে।

আরও পড়ুন:

ডায়েট ফটাফট: ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়েছে? কোন কোন খাবারে বশে থাকে এই সমস্যা? জেনে নিন কী খাবেন, কী নয়

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৮: জ্বরে ভাত খাবেন?

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-১৮: দেখা-অদেখা চেনা-অচেনায় ‘মরণের পরে’

তুলসী

অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ভিটামিন এ, সি, কে, আয়রন, পটাশিয়াম ও ক্যালশিয়ামে সমৃদ্ধ তুলসী। এটি পাচন তন্ত্রকে সুস্থ রাখে। তবে বাচ্চা সরাসরি তুলসী খেতে না চাইলে তুলসী পাতার রস মধুর দিয়ে রোজ সকালে খালি পেটে খাওয়ানো যেতে পারে। এ ছাড়াও বিভিন্ন খাবারের মধ্যে তুলসী পাতা দিয়ে খাওয়াতে পারেন।
 

হলুদ

হলুদে আছে প্রদাহ ও ব্যাকটেরিয়া বিরোধী এবং অ্যান্টিসেপটিক গুণাবলী, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করবে। সকালে খালি পেটে কাঁচা হলুদের রস সামান্য মধু দিয়ে খাওয়া যেতে পারে। আবার রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে দুধের সঙ্গে হলুদ ও মধু মিশিয়ে খাওয়ালেও উপকার মিলবে।
 

বাদাম

সব ধরণের বাদামই স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি। আখরোট ও কাঠবাদামে আছে প্রচুর ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। এসব বাদামে থাকা ভালো ফ্যাট ফুসফুসকে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
বাদাম গুঁড়ো করে দুধের সঙ্গে মিশিয়ে বাচ্চাকে দিতে পারেন। বাদাম ভিজিয়ে প্রতিদিন সেই বাদাম খেলে উপকার পাওয়া যায়। তাছাড়াও ভাজা বাদামও খাওয়া যেতে পারে।

আরও পড়ুন:

স্বাদে-আহ্লাদে: শীতে পছন্দের তালিকায় রয়েছে লাড্ডু? মিষ্টিমুখ হয়ে যাক গাজরের লাড্ডু দিয়েই

জ্যোতির্লিঙ্গ যাত্রাপথে, পর্ব-৪: কাশীর পথে-ঘাটে

শাশ্বতী রামায়ণী, পর্ব-৩৬: রামের সন্ধানে ভরতের যাত্রা সফল হল কি?

ওট মিল

ওট মিল ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার। ধীরে ধীরে হজম হয়। তাছাড়াও ওট মিলে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট আছে। তাই ওট মিলও খাওয়া যেতে পারে।
 

লাল আলু

রাঙালু বা লাল আলু ক্যালশিয়াম, ফাইবার, ভিটামিন এ সমৃদ্ধ উৎস। রাঙালু সেদ্ধ করে অথবা আগুনে সেঁকে খাওয়া যেতে পারে। তাছাড়াও বিভিন্ন সব্জির সঙ্গে মিশিয়েও রাঙালু খেতে পারেন। এটি খুদেদের জন্যও ভীষণই প্রয়োজনীয় একটা খাবার।
 

শাক

শাকের মধ্যে প্রথমেই মাথায় আসে পালং শাকের কথা। পালং শাক আয়রন, ক্যালশিয়াম, ফলিক অ্যাসিড, ভিটামিন এ, সি-এর উল্লেখযোগ্য উৎস। শিশুদের মানসিক বিকাশ করতে ভীষণভাবে সাহায্য করে এই শাক। এ ছাড়াও পালং শাকে থাকা ক্যালশিয়াম হার্ট ও দাঁত মজবুত করতেও সাহায্য করে।
তবে বাচ্চারা সাধারণত শাক খেতে খুব একটা ভালোবাসে না। কিন্তু শাক খাওয়ানো জরুরি। শাক ডাল, শাকের পরোটা, স্যুপ ইত্যাদি বিভিন্ন রকম ভাবে খাওয়ানো যেতে পারে ছোটদের।
 

বেরি

বেরির মধ্যে পড়ে স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি, রাসবেরি। এগুলো পটাশিয়াম, ভিটামিন সি, কার্বোহাইড্রেট, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ফাইবার ইত্যাদি সমৃদ্ধ। এতে ফ্যাট ও কোলেস্টেরল থাকে না। আবার এর মিষ্টি স্বাদ বাচ্চাদের কাছে ভীষণই প্রিয়। ওদের ওটস, দই বা ডালিয়ার সঙ্গে বেরি দেওয়া যেতে পারে। তা ছাড়াও মিল্কশেক তো আছে।

আরও পড়ুন:

বৈষম্যের বিরোধ-জবানি, পর্ব-৮: মাতৃভাষায় লিঙ্গ বৈষম্য-বিরোধ জবানি

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৫২: বইয়ের সব কপি কবির নির্দেশে বাজার থেকে তুলে নেওয়া হয়েছিল

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-২: এসেছে দৈব পিকনিকে

আর কোন কোন দিকে নজর দিতে হবে

একজন নবজাতকের ১৬ ঘণ্টা, ২-৩ বছর বয়সি শিশুর ১১ থেকে ১৪ ঘণ্টা, ৪-৫ বছর বয়সি শিশুর ১০ থেকে ১৩ ঘণ্টা এবং অন্যান্যের ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত ঘুম প্রয়োজন। তাই ঘুমে যেন ঘাটতি না থাকে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।

পর্যাপ্ত পরিমাণে জল খাওয়াতে হবে।

আদা, রসুন ও হলুদ এগুলি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। এগুলি শরীরকে জীবাণুমুক্ত করে। এগুলো সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করবে। তাই খাদ্য তালিকায় উপযুক্ত পরিমাণে এগুলো থাকা প্রয়োজন।

প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রথম শ্রেণির প্রোটিন যেমন মাছ, মাংস, ডিম রাখতে হবে।

খাবার আগে অবশ্যই সাবান দিয়ে ভালো করে হাত ধুতে পরিষ্কার করে নিতে হবে।

শিশুরা যাতে অহেতুক মুখে হাত না দেয় সে দিকে নজর রাখতে হবে।

তবে শিশুদের অ্যাডেনোভাইরাস থেকে দূরে রাখার জন্য বড়দের আরও অনেক বেশি সচেতন হতে হবে। বাইরে থেকে আসার পর যথাযথভাবে পরিষ্কার হয়ে তবেই শিশুদের কাছে যেতে হবে। অপরিষ্কার হাত মুখে দেওয়া চলবে না। আর এখন কিছুদিন বাইরের খাবার বন্ধ রেখে বরং বাড়ির তৈরি খাবার খাওয়ায় জোর দিতে হবে।

যোগাযোগ: ৯৮৩০৭৬৮১৫২

* হেলদি ডায়েট (Healthy Diet): সুতনুকা পাল (Sutanuka Paul), পুষ্টিবিদ, ডায়েট-টু-ফাইট।

Skip to content