সোমবার ৮ জুলাই, ২০২৪


ছবি প্রতীকী

কাজকর্মে আলস্য বাত-ব্যথায় কষ্ট—আজ হাঁটুতে তো কাল কোমরে, সঙ্গে অম্বল, গ্যাস, বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য, মাথাব্যথা, অনিদ্রা যেন নিত্যসঙ্গী। ওজনটাও ক্রমশ বাড়তে থাকায় রোজকার স্বাভাবিক হাঁটাচলাও আর হয়ে ওঠে না। গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো ডায়াবিটিস হাইপ্রেশার বা হার্টের রোগ জাঁকিয়ে বসার উপক্রম রয়েছে কি? এসব সমস্যার এক বা একাধিক দেখা পাওয়া মানেই বুঝতে হবে যে, জীবনধারণ পদ্ধতি এবং খাদ্যতালিকায় বদল আনা প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। আর এই খাদ্যতালিকার বদল যদি আমাদের সকলের প্রিয় অত্যন্ত চেনা জানা স্যালাডের মতো প্রাকৃতিক ঘরোয়া খাবার দিয়েই করা যায়, তাহলে তো একেবারে লা জবাব।
শরীরের নানা নিত্য ঝুঁকি থেকে মুক্তি পেতে ফাস্টফুডের মোহময় হাতছানিকে গুডবাই করে দিয়ে নিত্যসঙ্গী করে তুলুন অগণিত পুষ্টিগুণে ভরা দেহ রক্ষাকারী বর্ণময় স্যালাডকে। তকতকে ত্বক ও চকচকে চুলের গোপন রহস্যও ওই স্যালাড, তা সে ‘ফ্রুট স্যালাড হোক’ বা ‘গ্রিন ভেজিটেবিল স্যালাড’, বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন-সি, ক্যালশিয়াম, আয়রন, ডাইরেটারি ফাইবার, ফোলেট, পটাশিয়াম, জল এবং বিভিন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর গুণে সমৃদ্ধ স্যালাড এক কথায় বিভিন্ন অসুখ-বিসুখ মোকাবেলার ক্ষেত্রে অন্যতম হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে।
 

একনজরে স্যালাডের উপকারিতা

স্যালারি ব্যবহৃত প্রায় সব রকম ফল এবং সব্জিতে গড়ে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ জল থাকে এবং প্রচুর তন্তু বা অংশযুক্ত হওয়ায় অন্ত্রের জল ধারণ ক্ষমতা বাড়িয়ে মল উৎপাদনে সাহায্য করে। ফলে কষ্টবদ্ধতা দূর হয়।

স্যালারি ব্যবহৃত উপাদানের পেকটিন ও গুয়ারগাম জাতীয় ডায়েটারি ফাইবার ওবিসিটি, ডায়াবিটিস এবং হাইপার লিপিডেমিয়া নিয়ন্ত্রণে অন্তত উপকারী।

লবণ ছাড়া স্যালাড খাওয়া হলে উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও পটাশিয়াম সমৃদ্ধ বিভিন্ন সব্জি ও ফল এক্ষেত্রে উপকারী।

স্যালাডে ব্যবহৃত লেটুস পাতা, বাঁধাকপি, টম্যাটো, আপেল, পালং ইত্যাদি রক্তের অম্ল-ক্ষার সমতা রক্ষা করে।

পাকা পেঁপে, গাজর, টম্যাটো কমলালেবু, পাকা আম, ধনেপাতা, পাতিলেবু, ক্যাপসিকাম, কাঁচালঙ্কা ইত্যাদি ভিটামিন-সি এবং ক্যারোটিনয়েডস যুক্ত খাদ্য উপাদান সমৃদ্ধ স্যালাড খাওয়া হলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। দৃষ্টিশক্তি ভালো থাকে। সেই সঙ্গে ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য বজায় থাকে।

আরও পড়ুন:

ডায়েট ফটাফট: সব খাবারের সেরা সুপারফুড কিনোয়া খান, ওজন কমান

শাশ্বতী রামায়ণী, পর্ব-৩৩: শোকস্তব্ধ অযোধ্যানগরী কি আপন করে নিল ভরতকে?

কম ক্যালরিযুক্ত, কোলেস্টরেল ও ফ্যাটবিহীন, ডায়েটারি ফাইবার সমৃদ্ধ স্যালাড নিঃসন্দেহে বাড়তি ওজন কমাতে সাহায্য করে।

যাঁরা হজমের সমস্যায় জেরবার তাঁরা নিয়মিত স্টিম স্যালাড বা ফ্রুট স্যালাড খেলে উপকার পাবেন।

সাধারণ স্যালাডের সঙ্গে সেদ্ধ বা ভেজানো সবুজ ছোলা, চিনা বাদাম, পনির, সয়াবিন, টোফু, চিকেন সেদ্ধ বা ডিম সেদ্ধ মিশিয়ে অনায়াসে বানিয়ে ফেলা যায় হাই প্রোটিন স্যালাড—যা বাড়ন্ত বাচ্চা ও গর্ভবতী মায়েদের ডায়েটে একটা আলাদা মাত্রা যোগ করবে সন্দেহ নেই।

স্যালাড অয়েল হিসেবে স্যালাডে সামান্য পরিমাণ অলিভ অয়েল ব্যবহার করলে ফ্যাট দ্রবণীয় ভিটামিনগুলো যেমন ভিটামিন-এ, ডি, ই, কে ইত্যাদির শোষণ ক্ষমতা বাড়ে।

স্যালাডের আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটা রান্না করার দরকার হয় না বলে যেমন সময় ও জ্বালানি বাঁচে, তেমনি ভিটামিন-এ, ভিটামিন-সি, বি১, বি২, বি৬ এবং ফলিক অ্যাসিডের অপচয় এড়ানো যায়।
আরও পড়ুন:

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৫০: লুকোনো বই পড়ার জন্য রবীন্দ্রনাথ বাক্সের চাবি চুরি করেছিলেন

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৫: সত্যিই কি মায়ের দয়ায় পক্স হয়?

 

স্যালাডের রকমফের

সাধারণ গ্রিন স্যালাড

শসা, টম্যাটো, গাজর, লেটুস, পেঁয়াজ, মুলো, ক্যাপসিকাম, বাঁধাকপি, ধনেপাতা, লেবুর রস, কাঁচালঙ্কা দিয়ে তৈরি স্যালাডের কথাতো সবারই জানা।
 

সুস্বাদু স্যালাড

সাধারণ স্যালাডের সঙ্গে টকদই, ভিনিগার, বিটনুন, জিড়ে ভাজা গুঁড়ো, আমচুর, রাইচূর্ণ, স্যালাড অয়েল ইত্যাদি মিশিয়ে সুস্বাদু স্যালাড তৈরি হয়।
 

স্টিম স্যালাড

আগেই বলেছি, যাঁরা অম্বল, গ্যাস ইত্যাদি সমস্যার ভুগছেন বা ইরিটেবল বাউল সিন্ড্রম আছে অথবা বয়সজনিত কারণে চিবিয়ে খাওয়ার অসুবিধা আছে তাঁরা স্যালারির উপকরণগুলোকে সামান্য লবণ জলে স্টিম করে নিয়ে খেতে পারেন।

আরও পড়ুন:

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-২৩: মোর সাধের বাসরে ঘটল ‘গৃহ প্রবেশ’ ড. সুশান্তকুমার বাগ, অধ্যাপক

মাধুরী দীক্ষিতের রেশমের মতো চুলের রহস্য কি? সেই তেল কিন্তু বাড়িতেই বানাতে পারেন

 

হাই প্রোটিন স্যালাড

সাধারণ গ্রিন স্যালাডের সঙ্গে অঙ্কুরিত ছোলা, মুগ, কাবলি চানা, রাজমা, বাদাম, ভাপানো ছানা, মাশরুম, সোয়া চাঙ্ক, চিকেন বা ডিম সেদ্ধ, স্টিমড ফিশ ইত্যাদি মিশিয়ে তৈরি করা যায় হাই প্রোটিন পৌষ্টিক স্যালাড — যা ‘অল ইন ওয়ান’ মিল হিসেবে খাওয়া যায়।
 

ফ্রুট স্যালাড

ডাঁসা পেয়ারা, পাকা পেঁপে, পাকা আম, কলা, আপেল, শশা তরমুজ, আনারস, বাতাবি লেবু, কমলা লেবু, ফুটি, আঙুর, জাম, সবেদা ইত্যাদি বিভিন্নমরসুমী ফল ছোট ছোট টুকরো করে কেটে সঙ্গে সামান্য নুন, লেবুর রস, মধু, টকদই ইত্যাদি মিশিয়ে বানানো যায় অত্যন্ত সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফ্রুট স্যালাড।

এছাড়া সারা পৃথিবীতে অগণিত রকমের বিভিন্ন বিচিত্র্যময় স্যালাডের ব্যবহার আছে। এখানে অতি পরিচিত খুব সাধারণ কয়েক ধরনের স্যালাডের উল্লখ করা হল। বলাই বাহুল্য, সবার জন্য সব স্যালাড উপযুক্ত নয়। এ ব্যাপারে ডায়েটিশিয়নের পরামর্শ নিয়েই খাওয়া উচিত।

যোগাযোগ: ৯৮৩০২১৪৯৭১

* ডায়েট ফটাফট (Healthy Diet tips): শম্পা চক্রবর্তী (Shampa Chakrabarty), ডায়েট কনসালটেন্ট।

Skip to content