রবিবার ২৪ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।

তীব্র দাবদাহে বাচ্চা থেকে বয়স্ক প্রত্যেকেই নাজেহাল। অসহনীয় গরমের জন্য আমাদের নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে। যেমন হিট স্ট্রোক, জলহীনতা, প্রস্রাবে সংক্রমণ, গরমজনিত সর্দি-কাশি, কিছু কিছু ক্ষেত্রে ডায়রিয়া, জ্বর ইত্যাদি এখন ঘরে ঘরে। এই তীব্র দহন দিনে সুস্থ থাকাটাই যেন এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তাই এমন দিনে সুস্থ থাকতে রোজকার খাদ্যতালিকায় বিশেষ গুরুত্ব দিন। এক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের টক জাতীয় খাবার খুব কাজে আসতে পারে। তাই এ ধরনের খাবার খাদ্যতালিকায় যোগ করতে পারেন।

টক জাতীয় খাবারের নাম শুনলে অনেকেরই জিভে জল আসে। তবে অন্য ঋতুর তুলনায় গ্রীষ্মকালে টক খাওয়াটা স্বাস্থ্যের পক্ষে ভীষণই উপকারী। টক জাতীয় খাবার বললেই প্রথমেই যেগুলো আমাদের মনে আসে তা হল—টকদই, টক ফল যেমন কাঁচা আম, কাঁচা তেঁতুল, পাকা তেতুল, চালতা, কামরাঙা, আমড়া, কয়েত বেল, জলপাই, আনারস ইত্যাদি। গরমের সময়ে এসব খাওয়ার উপকারিতা কতটা? সে সব নিয়েই আজকের প্রতিবেদন।
 

কোন কোন টক জাতীয় খাবার পাতে রাখতে পারেন?

 

টকদই

টকদইতে প্রোবায়োটিক থাকে, যে সব ব্যাকটেরিয়া আমাদের শরীরের পক্ষে খুবই ভালো। এগুলো আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যেমন বাড়ায়, তেমনি খাবার হজমেও বিশেষভাবে সাহায্য করে। এছাড়াও টকদইতে ক্যালশিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম, ভিটামিন বি১২ ইত্যাদি‌ থাকে।

প্রতিদিন দুপুরে খাবারের পরে একবাটি টকদই খাওয়া খুবই ভালো। তা ছাড়াও টকদই ফেটিয়ে ঘোল বা লস্যি করে খেলেও উপকার পাওয়া যাবে। প্রতিদিন দই খাওয়ার অভ্যাস শরীরকে যেমন তরতাজা রাখবে, তেমনি কর্মক্ষমতাও বাড়াবে। আর এই টকদই যদি ঘরে পাতা হয়, তবে তার পুষ্টিগুণ আরও বেড়ে যায়।
 

লেবু

টক বলতেই প্রথমেই মাথায় আসে লেবুর কথা। লেবু অনেক রকমের হয়, তার মধ্যে আছে পাতিলেবু, গন্ধরাজ, কাগজি, কমলা, মোসাম্বি ইত্যাদি। প্রায় সমস্ত লেবুই ভিটামিন-সি, ক্যালশিয়াম, ফসফরাস, আয়রন ইত্যাদিতে ভরপুর। তবে গরমকালে ভাতে, ডালে বা শরবতে লেবু ব্যবহার করে খাওয়া যেতে পারে। এমন সময় নুন-লেবু-চিনি দিয়ে তৈরি শরবত খুবই উপকারী।

আরও পড়ুন:

হেলদি ডায়েট: দ্রুত রোগা হতে চান? ভরসা রাখুন সুপারফুড ডালিয়াতে

ডায়েট ফটাফট: ডাবের জলের এই গুণগুলির কথা জানতেন?

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-১৭: গরমে পান্তা ভাত কি সত্যিই শরীর ঠান্ডা করে?

টক জাতীয় ফল মানে ভিটামিন সি-এর উৎকৃষ্ট উৎস। তাই কাঁচা আমও এর বিপরীত নয়। আমে ভিটামিন-সি ছাড়াও কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, জিংক ইত্যাদি রয়েছে। আমে থাকে সাইট্রিক অ্যাসিড, ম্যালিক অ্যাসিড, যা রক্তে অম্ল ও ক্ষারের সমতা বজায় রাখে। বিভিন্ন সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, কাঁচা আম বায়ু ও পিত্তবর্ধক এবং রুচিবর্ধকও বটে।
প্রচণ্ড গরমে কাঁচা আম নুন দিয়ে মেখে, কাঁচা আমের টক, আম দিয়ে মাছের ঝাল ইত্যাদি বিভিন্ন রকমের খাবার একটা আলাদা আমেজ তৈরি করে। এটা যেমন হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, তেমনি ক্লান্তি ও পিপাসা দূর করে। তবে বেশি কাঁচা আম খাওয়া ভালো না, এতে পেটে ব্যথা, বধহজম, আমাশা, ঠোঁটে মুখে ঘা হতে পারে।
 

কাঁচা ও পাকা তেঁতুল

তেঁতুলে থাকে টারটারিক অ্যাসিড ও ম্যালিক অ্যাসিড। তেঁতুলের গুণাগুণ প্রচুর। পুরনো পাকা তেঁতুল ঔষধি গুণে ভরপুর। এটা লবণের ক্ষতিকর প্রভাবকে নষ্ট করে, পাশাপাশি অর্শ, আমাশা, কোলেস্টেরল, পেটের সমস্যা, সর্দি-কাশি এবং অরুচিতে বিশেষভাবে কার্যকর। তবে যারা অতিরিক্ত অ্যাসিডের সমস্যায় ভোগেন, তারা তেঁতুলের জিনিস কম খাওয়াই ভালো।

আরও পড়ুন:

চেনা দেশ অচেনা পথ, পর্ব-১৬: রতনপুর মহামায়া দর্শন

উৎসবের উষ্ণতায় শারুল-শিমুল

পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-৮: সলিল চৌধুরীর সুরারোপিত গান খুব মনোযোগ দিয়ে শুনতেন পঞ্চম

 

চালতা

চালতাতেও ম্যালিক অ্যাসিড থাকে। এটি পিত্ত ও শ্লেষার সমস্যায় বিশেষভাবে কাজ করে। তাছাড়াও চালতা টক রুচি বন্ধক। যেহেতু প্রচণ্ড গরমের জন্য প্রায় প্রত্যেকেরই মুখের রুচি কমে যায়, তাই চালতার চাটনি বা মোরব্বা অথবা চালতার টক তৈরি করে রাখা যেতে পারে, যা দিয়ে অনায়াসেই খাবার খাওয়া যায়।

ফলটি মধুর অম্ল-কষায় ধর্মী, রুচিকর, মুখশোধক, পিত্ত ও শ্লেষ্মার বিকারে কার্যকর এবং হৃদয়ের বলকারক। গুড়, রাঙালু, মূলো প্রভৃতি দিয়ে চালতার অম্বল বা টক তৈরি করা যায়। চাটনি ও মোরব্বা খুবই সুস্বাদু।
 

কয়েত বেল

কয়েত বেল বায়ু ও পিত্ত নাশক। তাছাড়াও পিপাসা দূর করে, কয়েতবেল আচার, চাটনি যেমন রুচি বর্ধক, তেমনি বলকারক।

আরও পড়ুন:

হাত বাড়ালেই বনৌষধি: ডাব ও নারকেলের ইতিকথা

স্বাদে-আহ্লাদে: ‘এগ পকেট’ পছন্দ? তা হলে বাড়িতেই বানান সহজ এই রেসিপি

বৈষম্যের বিরোধ-জবানি, পর্ব-১৭: অর্থনীতির প্রান্তিকতায় নারী এবং তার প্রাতিষ্ঠানিক রূপ

 

জলপাই

এই ফলে সাইট্রিক অ্যাসিড থাকে। আমাশা দূর করতে এটির চাটনি বা অম্বল উপকারী।
 

আমড়া

কাঁচা আমড়া রুচি বর্ধক ও বায়ুনাশক। পাকা আমড়া মধুর ও কষায় রস, রুচিকর, বলকারক ও বহুমূত্র রোগে সাহায্য করে। আমড়ার চাটনি বা অম্বল তীব্র গরমে ভীষণ তৃপ্তি দেয়।
 

জানলে ভালো

গরমে টক জাতীয় খাবার অবশ্যই তৃপ্তি দায়ক। তবে খুব বেশি মাত্রায় খাওয়া কখনওই উচিত নয়। খুব বেশি মাত্রায় টক খেলে তার থেকে পেটের বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা যেতে পারে। তাছাড়াও অতিরিক্ত টক খেলে দাঁতের এনামেল নষ্ট হয়ে যায়। তাই চেষ্টা করতে হবে টক জাতীয় খাবার দাঁতে না লাগিয়ে খেতে। ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে দাঁত নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভীষণ সম্ভাবনা থাকে। তাই প্রতিবার টক খাওয়ার পরে অবশ্যই ভালো করে মুখ ধুতে হবে।

যোগাযোগ: ৯৮৩০৭৬৮১৫২

* হেলদি ডায়েট (Healthy Diet): সুতনুকা পাল (Sutanuka Paul), পুষ্টিবিদ, ডায়েট-টু-ফাইট।

Skip to content