রবিবার ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪


নরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়।

২০২১-এ যখন সিবিএসই ঘোষণা করে যে, আমাদের মাধ্যমিক হবে না ততদিনে আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলাম বিজ্ঞান নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে পড়ব না। প্রথমে কলা বিভাগে ভর্তি হব ভাবলেও পরবর্তী ক্ষেত্রে অর্থনীতি নিয়ে পড়বো বলে অর্থনীতি, রাশিবিজ্ঞান, অঙ্ক এবং কম্পিউটার—এই বিষয়গুলোকে বেছে নিই। তা ছাড়া ইংরাজি ও বাংলা তো ছিলই।

ছোটবেলা থেকেই নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনে ভর্তি হওয়ার ইচ্ছে ছিল। ভাগ্যক্রমে তার আগের শিক্ষাবর্ষ থেকেই সেখানে কলাবিভাগের সঙ্গে অর্থনীতি, রাশিবিজ্ঞান ও অঙ্ক বিষয়ে পড়ানো শুরু হওয়াতে আমি আমার পছন্দের বিষয়গুলো নিয়ে পড়াশোনা করতে পারি। অনলাইনে পঠনপাঠন শুরু হয় করোনা অতিমারির জন্য। প্রথমদিন থেকেই সব শিক্ষক আমাদের অতি যত্ন সহকারে পড়াতে থাকেন। অর্থনীতি ও কম্পিউটার আমার প্রিয় বিষয় ছিল (সিবিএসই বোর্ডের ছাত্র হওয়ায় নবম শ্রেণি থেকেই আমি অর্থনীতি পড়েছি)। কিন্তু এখানকার শিক্ষকদের অত্যন্ত ভালো পড়ানোর জন্য সেই বিষয়গুলো এক অন্য মাত্রায় আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। তার সঙ্গে যোগ হয় আর এক নতুন বিষয় রাশিবিজ্ঞান।
একাদশ শ্রেণিতে আমি শুধু উচ্চ মাধ্যমিকে র্যা ঙ্ক করার জন্য বা নম্বর পাওয়ার জন্য পড়িনি। শুধু বিষয়গুলোকে ভালো লাগতো বলেই পড়তাম। কিন্তু যখন দেখলাম যে, আমাদের বিভাগ থেকেই দু’জন দাদা উচ্চমাধ্যমিকের মেধাতালিকায় স্থান করে নিলেন, তখন আমিও সেই আকাঙ্ক্ষা নিয়ে পড়তে শুরু করি। বিষয়ের প্রতি ভালোবাসা আমার সব সময়ই ছিল। সত্যি বলতে কী, বিষয়গুলোর প্রতি ভালোবাসা থাকার ফলেই আমি এত মনযোগ সহকারে পড়তে পেরেছিলাম।
আরও পড়ুন:

ক্লাসরুম: উচ্চ মাধ্যমিকে দশের মধ্যে জায়গা করে নেওয়া সহজ ছিল না, তবে মন বলছিল—আমি পারব

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৩: আত্মারামে কুটো বাঁধা আছে

নরেন্দ্রপুরের বাংলা বিভাগের শিক্ষকদের অবদান আলাদা করে উল্লেখের দাবি রাখে। ছোট থেকে ইংরাজি মাধ্যমে সিবিএসই বোর্ডের ছাত্র হওয়ায় আমার বাংলা খুব একটা ভালো ছিল না। কিন্তু এখানকার শিক্ষকরা যত্ন সহকারে পড়ানোর জন্য বাংলা আমার কাছে খুব সহজ হয়ে ওঠে। শিক্ষকরা আমাকে বাংলা পরীক্ষার জন্য বিশেষ ভাবে প্রস্তুত করে দিয়েছিলেন। ধরে ধরে টেস্ট পেপার করানো থেকে শুরু করে কীভাবে প্রশ্নের উত্তর লিখলে ভালো নম্বর পাওয়া যায় কিংবা কীভাবে খাতা সাজাতে হয় সবই তাঁরা শিখিয়েছেন। তাঁদের জন্যই মূলত বাংলায় ভালো নম্বর পেয়েছি।
আরও পড়ুন:

নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের কৃতিদের সম্বর্ধনা দিল ‘উদ্যম’

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৬: নাম দিয়ে যায় চেনা

এছাড়াও যাদের কথা বলতেই হবে, তারা আমার নরেন্দ্রপুরের বন্ধুরা। একইসঙ্গে হস্টেলে প্রায় দু’বছর থাকার ফলে আমাদের মধ্যে এক গভীর সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। যখনই কোনও বিষয় আটকে যেত এবং শিক্ষকদের সাহায্য নেওয়া সম্ভব হতো না, তখন কোনও না কোনও বন্ধু আমার সমস্যার সমাধান করে দিত। ওদের সঙ্গে উচ্চ মাধ্যমিকের আগে রাত জেগে গ্রুপ স্টাডি, সত্যিই আমাকে সমৃদ্ধ করেছে।
আরও পড়ুন:

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-২৯: ডায়াবেটিসে কি আলু একদম বন্ধ?

অনন্ত এক পথ পরিক্রমা, পর্ব-২৯: প্রাণ ব্যাকুল হলে, ঈশ্বর দর্শন হবেই…

নরেন্দ্রপুরের বৈশিষ্ট্য হল, সারা বছর ধরে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন যা ছাত্রজীবনের জন্য মহামূল্যবান শিক্ষা দেয়। নিজে খুব একটা অংশগ্রহণ না করলেও অনুষ্ঠানগুলো দেখে বা শুনে খুবই উপকৃত হয়েছি। আর একটি বড় সুবিধা হল, এখানকার বিশাল বড় খেলার মাঠ। প্রতিদিন বিকেলবেলা যখন সারাদিন ক্লাস করে ক্লান্ত হয়ে পড়তাম, তখন খেলার মাঠে বন্ধুদের সঙ্গে ফুটবল খেলা বাকি দিনটার জন্য শারিরীক ও মানসিক ক্লান্তি দূর করে দিত।

এই শেষ দু’ বছরে নরেন্দ্রপুরের হস্টেলজীবন আমাকে অনেক শিক্ষা এবং অবিস্মরণীয় স্মৃতি উপহার দিয়েছে। স্কুলের শিক্ষক, মহারাজ, প্রধান শিক্ষক স্বামী ইষ্টেশানন্দ, হস্টেলের হাউসমাস্টার এবং ডাইনিং স্টাফ সকলের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। আমার এই সাফল্যে আমার যতটা কৃতিত্ব, ততটাই অবদান রয়েছে আমার বাবা-মা এবং নরেন্দ্রপুরের সঙ্গে যুক্ত সমস্ত সবারই। তাই উচ্চ মাধ্যমিকে আমার এই সাফল্যের জন্য নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন এবং আমার বাবা-মাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
* নরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যালয়ের প্রাক্তনী। এ বার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৪র্থ স্থান অধিকারী।

Skip to content