শুক্রবার ২২ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।

২০২৪ এর মাধ্যমিক পরীক্ষা হবে আগামী ২ ফেব্রুয়ারি থেকে ১২ ফেব্রুয়ারি। জীবনবিজ্ঞান পরীক্ষা ৯ ফেব্রুয়ারি হবে। এতদিন যা পড়েছ, যেভাবে প্রস্তুতি নিয়েছ এবং পরীক্ষা কেন্দ্রের জন্য কী কী কথা মনে রাখা দরকার, সেটা মনে করিয়ে দিতেই এই লেখা। পাঠ্যবিষয়ের কোন কোন অংশ বিশেষভাবে দেখা দরকার সেটাও এখানে আলোচনা করবার চেষ্ঠা করব।

প্রথমেই বলব, পাঠ্যবিষয় ভালভাবে পড়তে হবে, খুঁটিয়ে। মূল বইটি প্রথমে ভালো করে পড়ে তারপর প্রশ্ন ও তার উত্তর অংশ অনুশীলন করতে হবে। তোমরা সেভাবেই করেছ নিশ্চয়। পাঠ্যাংশ পাঁচটি ভাবমূলে বিভাজিত। প্রথম ভাবমূল জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়। দ্বিতীয় জীবনের প্রবহমানতা। তৃতীয় ভাবমূলে আছে বংশগতি ও সাধারণ জিনগত রোগ। চতুর্থ অভিব্যক্তি এবং অভিযোজন। পঞ্চম তথা শেষ ভাবমূলে আছে পরিবেশ, সম্পদ ও তার সংরক্ষণ।
 

প্রথম ভাবমূল

পরীক্ষার আগে সিলেবাসের প্রতিটি অংশকে গুছিয়ে নিতে হবে মনে মনে। কোথায় কী আছে সেটা যেন মনে থাকে। যেমন ধরো, জীবদেহের সমন্বায়ক হিসেবে হরমোন ও স্নায়ুতন্ত্র কিভাবে তুলনীয় ও পৃথক সেটা মনে রাখতে হবে। গাছ ও প্রাণিদের হরমোন অধ্যায়দুটি পাশাপাশি রেখে সেটা ভাবতে হবে। উদ্ভিদ থেকে কী কী হরমোন বের হয়, তাদের উৎসস্থল কোথায়, কী কী কাজ তারা করে, তা স্পষ্টভাবেমনে রাখতে হবে। ঠিক সেভাবেই প্রাণিদের হরমোন গ্রন্থি, হরমোনের নাম, কাজও জানতে হবে। এ ভাবে পড়লে লাভ হবে, কারণ তুলনামূলক প্রশ্ন, যেমন উদ্ভিদ ও প্রাণি হরমোনের পার্থক্য, ভৌত ও রাসায়নিক সমন্বয়ের তফাৎ, হরমোনের রাসায়নিক গঠনের তারতম্য, কাজের প্রকারভেদ এসব সহজেই বুঝতে পারা যাবে।

একইভাবে উদ্দীপনায় সাড়া দেওয়ার বেলায় গাছ ও প্রাণিদের কী তফাৎ হয় সেটাও এভাবে পড়া যেতে পারে। এই ভাবমূল থেকে নিউরোনের ছবি, স্নায়ুর গঠনের ধারণাচিত্র, নিউরোগ্লিয়া কাকে বলে, প্রতিবর্ত ক্রিয়া বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে পড়তে হবে। এখানে প্রতিবর্ত চাপের ছবি অভ্যাস করবে। মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশের কাজ বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে। প্রাণিদের গমনের উদাহরণগুলি ও অস্থিসন্ধির ও পেশির (উল্লেখযোগ্যগুলি) অবস্থান ও কাজ এখানে উল্লেখযোগ্য।

 

দ্বিতীয় ভাবমূলে

কোষ ও কোষ বিভাজন অধ্যায়টি থেকে কোষ অঙ্গাণু ও তাদের কাজ গুরুত্ব দিয়ে পড়তে হবে। কোষচক্র, মাইটোসিস ও মিয়োসিস কোষ বিভাজনের দশা, উপদশা বৈশিষ্ট্য জেনে রাখো। কোষের অধ্যায় থেকে ছবিও তৈরি করতে হবে, বিশেষ করে কোষ বিভাজনের ছবি। ক্রোমোজমের ছবিও আঁকতে হবে। উদ্ভিদ জনন অধ্যায়টি উদাহরণসহ ছকের মতো করে সাজিয়ে তৈরি করতে পারলে উপকার হবে। অবজেকটিভ প্রশ্নের উত্তর দিতে সুবিধা হবে। বৃদ্ধি ও বিকাশ অধ্যায়টি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এখান থেকেও নানারকম প্রশ্ন আসতে পারে, যেমন বৃদ্ধির দশা, বৃদ্ধি ও বিকাশের পার্থক্য ইত্যাদি।
 

তৃতীয় ভাবমূল

বংশগতি অধ্যায় থেকে মেন্ডেলিজম, একসংকর ও দ্বিসংকর ক্রস, বংশগতির সুত্র, সূত্রের ব্যতিক্রম, টেস্ট ও ব্যাকক্রস জেনে রাখো। মনে রেখো এখান থেকে অনেকরকম পার্থক্যমূলক, সংজ্ঞাবাচক ও অবজেকটিভ প্রশ্ন আসেতে পারে। জিনগত রোগের মধ্যে অটোজোমাল ও সেক্স ক্রোমোজোমাল রোগের উদাহরণ জেনে রাখ। থ্যালাসেমিয়ার কারণ, প্রতিরোধের উপায়, বর্ণান্ধতার প্রকার ও হিমোফিলিয়ার বংশানুসরণ জেনে রাখবে।

আরও পড়ুন:

মাধ্যমিক ২০২৪: ভূগোলে বেশি নম্বর পেতে এই সব বিষয় অবশ্যই মনোযোগ দিয়ে পড়ো

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-২৮: শুরু হল কঠিন জীবনচর্যা

 

পরের ভাবমূল

বিবর্তনের প্রমাণ খুব গুরুত্ব দিয়ে পড়বে। বিবর্তনের তত্ত্ব অংশটি খুঁটিয়ে পড়বে। পৃথিবীতে প্রাণের উদ্ভব অংশটিও খুব গুরুত্বপূর্ণ। অভিযোজন অধ্যায়ে, প্রাণি ও উদ্ভিদের অভিযোজন বৈশিষ্ট্যগুলি পয়েন্ট করে নির্দিষ্ট করে তৈরি করবে। বেশি লেখার কোনও সুযোগ এখানে নেই। প্রাণিদের আচরণ সম্বন্ধীয় কিছু প্রশ্ন প্রতিবছর এখান থেকে এসেছে আগে। কাজেই সেগুলি পুরনো টেস্ট পেপার থেকে দেখে তৈরি করে রাখ।
 

পঞ্চম অধ্যায়

নাইট্রোজেন চক্রের সঙ্গে অক্সিজেন ও কার্বন চক্র খুব ভাল করে তৈরি করবে। দুষণ থেকে প্রতিটি অংশ খুঁটিয়ে দেখবে। জল মাটি বাতাস কী কী ভাবে দূষিত হয়, এ ব্যাপারে কী কী করা যেতে পারে, সেনিয়ে তোমাদের ভাবনা কি, প্রশ্নে সেরকম বিষয় থাকতে পারে। পুরনো প্রশ্ন দেখে সেটা জেনে নিতে পারবে। জনসংখ্যার অপরিমিত বৃদ্ধি ও রোগের কারণ ও ফলাফল গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া জীববৈচিত্র্য ও সংরক্ষণ থেকেও অনেক রকম প্রশ্ন থাকে, সেগুলি টেস্ট পেপার থেকে দেখে রাখবে। প্লাস্টিক ও শব্দদূষণ সম্বন্ধে ধারণা তৈরি করে রাখতে পার। বিষয় হিসেবে এগুলি উল্লেখযোগ্য।

আরও পড়ুন:

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৫৯: হারিয়ে যাওয়ার ‘জীবন তৃষ্ণা’

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৩০: সুন্দরবনে লৌকিক দেবতা ছাওয়াল পীর ও রাখাল ঠাকুর

 

জরুরি কথা

প্রশ্নোত্তর অনুশীলনের জন্য যত পারবে প্রশ্ন দেখবে।
সময় ধরে লেখার অভ্যাস করে যাও।
লেখা পরিচ্ছন্ন ও খাতা পরিপাটি হতে হবে।
এখন লেখার অভ্যাস আমাদের অনেক কমেছে। লেখার সময় বানান আর হাতের লেখার প্রতি যত্ন অবশ্যই নেবে। কোনওরকম দায়সারা কাজ করবে না। যা করবে সুন্দর করে করবার চেষ্টা করবে।
আর মনে রাখবে তোমাদের কাজের প্রথম ও প্রধান মূল্যায়ণকারী কিন্তু তোমরা নিজেরাই। যা লিখছ তার মানে কিছু বোঝা যাচ্ছে কিনা, সেটা দেখার কাজটাও তোমাদের। নিয়মিত লেখা অভ্যাস করে এই জায়গাটি তোমাদের তৈরি করে নিতে হবে।
তোমাদের প্রশ্নপত্রে এমসিকিউ থাকবে ১৫টি। আর ২১টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে ১ নম্বরের জন্য। ২ নম্বরের ১২টি ও ৫ নম্বরের ৬টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। এ সব তোমরা জানো।
কোন প্রশ্নের উত্তর কতটা লিখতে হবে সেটা এইসময়ে তোমরা একবার দেখে নিও। প্রশ্নের নির্দেশ মেনে উত্তর করবে।
প্রশ্নের নম্বরের ক্রম অনুসারে খাতায় পরপর উত্তর লেখার চেষ্টা করবে। আগে পরে করে না লেখাই উচিত। প্রতিটি প্রশ্নের নম্বর যথাযথভাবে লিখবে। এখানে ভুল হলে উত্তর খুঁজে পেতে পরীক্ষকের অসুবিধা হতে পারে। স্তম্ভমিলের প্রশ্ন দাগ টেনে মেলাবে না। পাশাপাশি সম্পর্কযুক্ত শব্দগুলি লিখে মিল দেখাবে।

আরও পড়ুন:

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৫০: কুষ্টি বিচার, না কি রক্ত বিচার! জরুরি কোনটা?

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৪৪: রামচন্দ্রকে ঘিরে যুগান্তরেও কেন উন্মাদনা? একজন কথকঠাকুরানির সাধারণ সমীক্ষা

 

এবার পরীক্ষায় সম্ভাব্য প্রশ্নের কিছু নমুনা

এ বার ৫ নম্বরের জন্য সম্ভাব্য কিছু নমুনা প্রশ্ন উল্লেখ করছি, সেগুলি তৈরি করে রাখতে পারো। এই বিষয়গুলি থেকেই ছোট প্রশ্নও আসতে পারে। ২ বা ৩ নম্বরের। অবজেকটিভ প্রশ্নের জন্য পুরনো বছরের প্রশ্ন বা নমুনা প্রশ্ন অভ্যাস করবে।
উদ্ভিদের চলন কত প্রকার? উদাহরণ দাও। ট্রপিক চলনের প্রকারভেদ দেখাও।
অক্সিন জিব্বারেলিন ও সাইটোকাইনিন হরমোনের উৎস ও কাজ লেখ।
পিটুইটারি গ্রন্থি নিঃসৃত হরমোনের নাম ও কাজ লেখ।
ইনসুলিন হরমোনের কাজ উল্লেখ কর।
শুক্রাশয় ও ডিম্বাশয় নিঃসৃত হরমোনের নাম ও কাজ লেখ।
মানুষের স্নায়ুতন্ত্রের শ্রেণিবিভাজন কর। ছবিসহ নিউরোনের গঠন উল্লেখ কর।
মানুষের মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশ ছকের সাহায্যে দেখাও ও কাজ লেখ।একনেত্র ও দ্বিনেত্র দৃষ্টি কি? হাইপারমেট্রোপিয়া ও মায়োপিয়া কাকে বলে?
স্নায়ুকোষ বা নিউরোনের গঠন চিত্র আঁক। চিহ্নিত কর।
ডিএনএ এবং আরএনএ পার্থক্য এবং ডিএনএ’র গঠন আলোচনা কর।
ক্রোমোজোমের ভৌতগঠন (ছবি) ও রাসায়নিক গঠন উল্লেখ কর।
মাইটোসিস কোষ বিভাজনের দশাগুলি কী কী? তাদের বর্নণা দাও। ছবি-সহ।
মিয়োসিস কোষ বিভাজনের গুরুত্ব লেখ।
উদ্ভিদের অঙ্গজ ও অযৌন জননের বিভিন্ন পধতি লেখ। উদাহরণ-সহ।
পরাগযোগ কী? মাধ্যমের ওপর নির্ভর করে পরাগযোগ কত প্রকার ও কি কি? উদাহরণ দাও।
ফুলগাছের দ্বিনিষেক ছবিসহ ব্যাখ্যা কর।
বৃদ্ধি ও পরিস্ফুটনের পর্যায়গুলি কী কী?
বিজ্ঞানী মেন্ডেল’র করা এক ও দুই সংকর জননের জিনোটাইপিক ও ফিনোটাইপিক অনুপাত উল্লেখ করে সংরায়ণ দেখাও।
মানব শিশুর লিঙ্গ নির্ধারণে ক্রোমোজোমের ভূমিকা লেখ।
বিজ্ঞানী মেন্ডেল’র প্রস্তাবিত বৈশিষ্ট্যের উত্তরাধিকার সম্বন্ধীয় সূত্রগুলি উল্লেখ কর ও তার সীমাবদ্ধতা লেখ।
থ্যালাসেমিয়া, হিমোফিলিয়া ও বর্ণান্ধতা রোগের কারণ ও প্রতিরোধ উল্লেখ কর।
পৃথিবীতে প্রাণের উদ্ভবের সম্ভাব্য ধারাবাহিক ধাপগুলি কী কী?
ইউরে ও মিলার’র পরীক্ষার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও।
ল্যামার্ক ও ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্ব বর্ণনা কর।
শব্দছকে নাইট্রোজেন চক্র উপস্থাপণ কর। নাইট্রিফিকেশন, ডিনাইট্রিফিকেশন, অ্যামোনিফিকেশন কাকে বলে, উদাহরণ দাও।
ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার সমস্যাগুলি উল্লেখ কর।
জীববৈচিত্র্যের প্রকারভেদ ও গুরুত্ব লেখ। হ্রাসের কারণ কী? পিবিআর কী? জয়েন্ট ফরেস্ট ম্যানেজমেন্ট’র উদাহরণ দাও। রেড ডেটা বুক কী?

নমুনা হিসেবে এই ধরণের প্রশ্নগুলি অভ্যাস করে রাখো। এছাড়াও আরও বহু প্রশ্ন আছে যা পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
তোমাদের সকলের পরীক্ষা নিশ্চয় ভালো হবে। নিজেদের কাজের ব্যাপারে দায়িত্বশীল হবে, সিরিয়াস হবে। তাহলেই দেখবে সব কাজই ভালো করে করতে পারবে। অনেক শুভকামনা রইল।

* কাজরী সামন্ত, সহ-শিক্ষিকা, সোদপুর সুশীলকৃষ্ণ শিক্ষায়তন ফর গার্লস।

Skip to content