বৃহস্পতিবার ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪


ছবি প্রতীকী।

২০২৩-এর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা আগামী ১৪ মার্চ থেকে ২৭ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে। জীববিদ্যার পরীক্ষা ১৮ মার্চ। উচ্চমাধ্যমিক জীববিদ্যা বিষয়ে পরীক্ষার্থীদের উত্তরের সাধারণ মানের অবনমন লক্ষ করা যাচ্ছে এবং বিষয়ের পাঠ-গভীরতা কমছে। এটা একটা সাধারণ প্রবণতা।

অনেকেই বলছেন, করোনার আবহ, পরীক্ষার অনিশ্চয়তা এই অবস্থার জন্য দায়ী। হতে পারে। কিন্তু যদি তাই-ই হয়, তাহলে এখন সেই অবস্থার মধ্যে থেকে কীভাবে বের হয়ে আসা যাবে সেটা নিয়ে ভাবা দরকার। বেশি করে পড়াশোনায় মন দেওয়া দরকার। সাধারণ প্রবণতার বাইরেও তো ব্যতিক্রমী অনেকে আছে, যারা মান বজায় রেখে নিজেদের তৈরি করছে, তারাই প্রমাণ করছে বাধা কাটানো সম্ভব। এবার আসি বিষয়ের আলোচনায়।

সবাই জানে এখন পাঠ্যবই ভালো করে পড়বার প্রয়োজন বেড়েছে। সাজেস্টিভ পঠনের গুরুত্ব কমেছে। তাছাড়া, পরীক্ষার্থীরা উচ্চমাধ্যমিক ছাড়াও সর্বভারতীয় নানা পরীক্ষায় বসবার প্রস্তুতি নেয় একই সঙ্গে। সেখানে সিলেবাসের কোনও কাটছাঁট থাকে না। ফলে প্রস্তুতির জন্য সবটাই পড়তে হয়। কাজেই আমাদের আজকের আলোচনা যদিও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা কেন্দ্রিক, তথাপি সেই আলোচনায় সামগ্রিক সর্বভারতীয় প্রেক্ষাপটটিও থাকা দরকার বলে মনে হয়।
তবে এখানে সবচেয়ে বড় বাধা বোধকরি পাঠ্যবইয়ের আয়তন। সেটা দেখেই অনেকে পড়বার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতিতে বইয়ের বাড়তি অংশ বাদ দেওয়াই প্রথম কাজ হওয়া উচিত। যাইহোক, পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় অংশগুলি নিয়ে আলোচনা শুরু করা যাক। এইবার গ্রুপ এ এবং বি দুটির প্রশ্ন একটি প্রশ্নপত্রে থাকবে। আলাদা করে খাতায় কোনও অংশ জুড়ে দিতে হবে না। অবজেকটিভ প্রশ্নের উত্তরের জন্য উত্তরপত্রে নির্দিষ্ট জায়গা থাকবে, জানানো হয়েছে।

উচ্চমাধ্যমিক জীববিদ্যায় দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্যবিষয় পাঁচটি একক বা ইউনিট নিয়ে তৈরি। প্রতিটি এককেই কিছু অংশ থাকে যেখান থেকে প্রশ্ন আসার সম্ভাবনা বেশি থাকে। যেমন, প্রথম এককের তিনটি অধ্যায় হল সপুষ্পক গাছের যৌন জনন থেকে ফুলের গঠন, পরাগযোগ, দ্বিনিষেক, পার্থেনোকার্পি খুব গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের জনন অধ্যায় থেকে— জননতন্ত্র, গ্যামেটোজেনেসিস, নিষেক, অমরা বা প্ল্যাসেন্টা গঠন ছবিসহ তৈরি করে নিতে হবে। জননগত স্বাস্থ্য অধ্যায় থেকে জন্মনিয়ন্ত্রণ, যৌনরোগের সংক্রমণ অংশগুলি উল্লেখযোগ্য। রোগ সংক্রামক জীবাণুর নাম, রোগের উপসর্গ জেনে রাখতে হবে।
আরও পড়ুন:

উচ্চ মাধ্যমিক ২০২৩: ভূগোলে বেশি নম্বরের জন্য অবশ্যই এই প্রশ্নগুলিকে বাড়তি গুরুত্ব দাও

ভিতর বাহিরে অন্তরে অন্তরে, আপনি কি বডি শেমিং-এর শিকার?

প্রসঙ্গ স্বাস্থ্য বিজ্ঞান: মানসিক চাপ এবং উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছেন? কোন পথে সমাধান? রইল কিছু ঘরোয়া সমাধান

দ্বিতীয় এককের মূল বিষয় জিনবিদ্যা ও বিবর্তন। মেন্ডেলিয়ান উত্তরাধিকার থেকে পরবর্তীকালের জিনবিদ্যার আলোচনা এখানে স্পষ্ট ধারণা নিয়ে পড়তে হবে। মেন্ডেল যা বলেছিলেন ও যা পরে আবিষ্কৃত হয়েছে, সবটাই এখানে আলোচিত হয়েছে। বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে নন মেন্ডেলিয়ান ইনহেরিট্যান্সকে। পরের অধ্যায়, বংশগত বৈশিষ্ট্যের উত্তরাধিকারের আণবিক ভিত্তি। এখানে ডিএনএ থেকে ডিএনএ ফিংগারপ্রিন্টিং পর্যন্ত আলোচনা বিস্তৃত। এটি সার্বিকভাবে তৈরি করতে হবে।

বিশেষ করে সর্বভারতীয় পরীক্ষার ক্ষেত্রে এই অধ্যায়টি অত্যন্ত জরুরি। পরের অধ্যায়, বিবর্তন। এর নানাবিধ প্রমাণ, মানে বিবর্তন যে হয়েছে বা হচ্ছে তার প্রমাণ, ডারউইনের তত্ত্ব ও তার প্রভাব এবং আধুনিক বিবর্তন তত্ত্ব যেখানে হার্ডি ওয়েনবার্গ থিয়োরি অবধি পরিব্যাপ্ত, সেই অবধি আলোচনা এখানে করা হয়েছে। এগুলির ধারণা স্পষ্ট থাকা দরকার। ছোট ছোট নানা প্রশ্ন এখান থেকে আসতে পারে। আসতে পারে ছোট ছোট সমস্যার সমাধান। যেমন, এই এই সমস্যাটি। একটি হার্ডি ওয়েনবার্গ সাম্যে থাকা জনগোষ্ঠীতে MN রক্তগ্রুপের জনবিন্যাস MM = 21, MN = 78, NN = 01. এক্ষেত্রে জিন/অ্যালিলিক ফ্রিকোয়েন্সি, এবং একপ্রজন্মের অবাধ জিন সংমিশ্রণের পর ইক্যুলিব্রিয়াম জিনোটাইপিক ফ্রিকোয়েন্সি নির্ণয় কর।
আরও পড়ুন:

ডায়েট ফটাফট: ওজন কমাতে ব্রেকফাস্ট-লাঞ্চ-ডিনারের মাঝে ‘হেলদি স্ন্যাকস’ খাচ্ছেন তো?

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-২৬: যিনি নিরূপমা তিনিই ‘অনুপমা’

দেখব এবার জগৎটাকে, পর্ব-১৩: ওকে নাড়ানোর চেষ্টা করলাম, সেও মিটমিট করে দেখল, ভাবলাম অ্যানাকোন্ডাটি হয়তো শিকারের আয়তন মাপছে!

তৃতীয় বিভাগে ‘মানুষের উপকারে জীববিদ্যা’ বিষয়ক আলোচনায় স্বাস্থ্য ও রোগ এবং মানুষ ও জীবাণু দুটি অধ্যায়ে নানাবিধ রোগ, তার কারণ, নিরাময়ের উপায় ও চিকিৎসা থেকে বহুরকম প্রশ্ন আসতে পারে।

চতুর্থ একক জৈবপ্রযুক্তি। নীতি, পদ্ধতি, প্লাজমিডের ভূমিকা, ইনসুলিন, ও টিকা প্রস্তুতি এবং জৈবনিরাপত্তা, জিএমও বিষয়ে আলোচনা এখানে আলোচনা করা হয়েছে। সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরের জন্য এই অধ্যায়টি খুব গুরুত্বপুর্ণ।
পঞ্চম ও শেষ একক বাস্তুতন্ত্র, পরিবেশ ও জনসংখ্যা। এখানে প্রতিটি অংশ গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে বাস্তুতন্ত্রের গঠন, পরিবেশের সংকট ও ক্রমবর্ধমান জনস্ফীতি। এর কারণ ও প্রতিরোধ জরুরি।

উচ্চমাধ্যমিক প্রশ্নপত্রে ১, ২, ৩ ও ৫ নম্বরের প্রশ্ন থাকে। ১৪টি এমসিকিউ’র জন্য প্রতিটি অধ্যায় থেকে পর্যাপ্ত সংখ্যায় নমুনা প্রশ্ন অভ্যাস করতে হবে। পুরনো প্রশ্নপত্র থেকেও অভ্যাস করা যেতে পারে। এক দু’ কথায় উত্তরের জন্য বাছাই নমুনা প্রশ্ন দেখে রাখতে পারো। অপেক্ষাকৃত বড় উত্তরের জন্য প্রশ্ন কিন্তু সুনির্দিষ্ট। তার বাইরে প্রশ্ন খুব বেশি আসে না। টেস্টপেপার সলভ করে যাও। যতটা পার। যেকোনও অধ্যায় পড়ে নেওয়ার পর তার থেকে বড় প্রশ্ন বাছাই করে তার উত্তর তৈরি করতে পার। জনন, জৈব প্রযুক্তি অধ্যায় থেকে উত্তরের সঙ্গে ডায়াগ্রাম তৈরি করে রাখবে। শুক্রাশয়, ডিম্বাশয়ের গঠন, গ্যামেটোজেনেসিস (শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর জন্ম-গঠন) ছবি ও রেখাচিত্রে তৈরি করে রাখবে।
আরও পড়ুন:

অনন্ত এক পথ পরিক্রমা, পর্ব-১০: সাধনা যে সত্যের আশ্রয় পাওয়ার তরে…

বিশ্বসেরাদের প্রথম গোল, পর্ব-৭: ফুটবলের শিল্পী: বিশ্বের দশজনের একজন

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৪: শিকারীর গোপন চোখ

মলিকিউলার জেনেটিক্স অধ্যায়ে, প্রতিলিপিকরণ (রেপ্লিকেশন), ট্রান্সক্রিপশন ও ট্রান্সলেশন খুঁটিয়ে পড়তে হবে, এবং উত্তরের জন্য সংক্ষেপে লিখে তৈরি করতে হবে। ডিএনএ যে জিনবস্তু, এই বিষয়ের পরীক্ষাগুলি তৈরি করে রাখতে হবে। বিভিন্ন ধরনের আরএনএ-র গঠন ও কাজ জানতে হবে এখানে। স্বাস্থ্য ও রোগ অধ্যায়ে জীবাণুর চরিত্রগত শ্রেণিবিভাগ করে নিয়ে তাদের আলোচনা করলে মনে রাখতে সুবিধা হতে পারে। যেমন, প্রোটোজোয়ান জীবাণু, ছত্রাক, ব্যাকটিরিয়া ভাইরাস ইত্যাদি। হার্ডি-ওয়েনবার্গ নীতির ওপর জিন ফ্লো, জেনেটিক ড্রিফট’র ভূমিকা বা ফাউন্ডার এফেক্ট নিয়ে আলোচনা দেখে রাখতে পার।

এছাড়া হার্ডিওয়েনবার্গ নীতির ওপর জিন ও অ্যালিল ফ্রিকোয়েন্সির ছোট ছোট সমস্যা সমাধান দেখে রাখা ভালো। বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ, শক্তি উৎপাদনের বিকল্প ব্যবস্থা, জৈবনিয়ন্ত্রণ ও জৈবসার খুব গুরুত্বপূর্ণ। এখান থেকে ছোট ও বড় প্রশ্ন আসতে পারে।

শিক্ষার্থীদের মাত্রাতিরিক্ত গুগল করে জেনে নেওয়ার অভ্যাস না করাই ভাল। ব্যক্তিগত অনুসন্ধান চর্চার তাতে ক্ষতি হয়। প্রশ্নোত্তর লেখা ও পড়ার অভ্যাস করতে হবে। নিজেদের গড়ে তুলতে, ভবিষ্যৎ জীবনকে সুসংহত করতে অনুশীলনের বিকল্প কিছু হয় না।

প্রযুক্তি যতই উন্নত হোক, সেটা মানুষের সক্ষমতার চাইতে পারদর্শী হতে পারে না। এই বিশ্বাস রেখে বিজ্ঞান পড়তে হবে। হাতে কিছুটা সময় আছে, কাজগুলি গুছিয়ে নিলে পরীক্ষা ভালো হবে, ফল ভালো হবে। সাহসের সঙ্গে এগিয়ে যাও। তোমাদের সকলের জন্য শুভেচ্ছা রইল।

Skip to content