রবিবার ১০ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি প্রতীকী

শিশুদের জ্বরের গৃহ চিকিৎসা করতে হলে প্রথমেই জ্বর হওয়ার কারণ বুঝতে হবে। যখন শরীরের প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা শরীরে প্রবেশ করা ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার মতো বহিরাগত জীবাণুগুলোর সঙ্গে লড়াই করে তখন শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়, সেটাকেই আমরা জ্বর বলি। জ্বরে আক্রান্ত হওয়া মানবদেহের বিকাশের একটি প্রাকৃতিক অঙ্গ। কারণ এটি যতবার হয় ততই শারীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী হয়। শুধু জ্বর কোনও স্বাস্থ্য সমস্যার তাৎক্ষণিক গুরুতর লক্ষণ নয়। তবে জ্বরের সঙ্গে অন্য মারাত্মক লক্ষণ থাকলে সেটাকে গুরুত্ব দিয়েই দেখতে হবে।
 

নবজাতকের জ্বর হওয়ার কারণ

শিশুর শরীরের তাপমাত্রা কোনও যান্ত্রিক কারণে বেড়ে যাওয়া — যেমন: ওয়ারমার, ফটোথেরাপি- ইউনিট, জলঅল্পতা (ড্রিহাইড্রেশন) ইত্যাদি।

 

শিশুদের জ্বরের কারণ

সর্দি-কাশি, শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণ— ফুসফুস বা গলায়।
প্রস্রাবে সংক্রমণ — কন্যা শিশুদের বেশি হয়।
খাদ্যতন্ত্রের সংক্রমণ — ডায়রিয়া, রক্তামাশয়, টাইফয়েড।
গ্রন্থির সংক্রমণ — চামড়া বা মাংসপেশির সংক্রমণ, যেমন: ফোঁড়া মাংসের উপরে বা গভীরে হতে পারে।
হাড়ের সংক্রমণ।
তাছাড়া যক্ষা, রিউমাটিক ফিভার, যকৃতের সংক্রমণ, মেনিনজাইটিস, সেপটিসেমিয়া, সেলুলাইটিস প্রভৃতি কারণে যে কোনও শিশুরই জ্বর হতে পারে।

আরও পড়ুন:

ত্বকের পরিচর্যায়: টানটান ত্বক চাই? বয়স ধরে রাখতে মেনে চলুন ত্বক বিশেষজ্ঞের এই পরামর্শগুলি

শাশ্বতী রামায়ণী, পর্ব ১৬: রাম-পরশুরাম দ্বৈরথ অযোধ্যার পথে

কেউ ঠান্ডায় জব্দ, কেউ গরমে, কোন ব্যথায় কোন ধরনের সেঁক কাজে লাগে?

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৩২: দীক্ষার আংটি হেমলতাকে দিয়েছিলেন মহর্ষিদেব

 

সাধারণ জ্বর কিন্তু কোনও রোগ নয়

মনে রাখবেন জ্বর কিন্তু কোনও রোগ নয় — রোগের লক্ষণ মাত্র। তিন মাসের কম বয়সী শিশুদের জ্বর সর্বদা গুরুত্ব সহকারে দেখা উচিত। তবে তিন মাসের বেশি বয়সী শিশুদের ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের চেয়ে কম জ্বর হলে তাৎক্ষণিক কোনও চিকিৎসার প্রয়োজন নেই।
 

শিশুর জ্বর হলে প্রাথমিক পরিচর্যা বাড়িতে কীভাবে শুরু করবেন?

শিশুকে সম্পূর্ণ বিশ্রামে রাখতে হবে।

প্রথমেই শিশু যে ঘরে থাকবে, সে ঘরের দরজা জানলা খুলে দিয়ে ফ্যান চালিয়ে দিতে হবে। কখনও কখনও অতিরিক্ত পোশাক পরানোর ফলে শরীর গরম হতে পারে। সেটাকে আমরা ভুল করে জ্বর বলে চিহ্নিত করি। তাই শিশুর শরীরে হালকা পোশাক পরিয়ে রাখতে হবে।

বারবার তরল খেতে দিতে হবে। সেটা হতে পারে জল, ওআরএস, ফলের রস বা দই, যা শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে ও জ্বর কমায়। তাছাড়া জ্বরের জন্য শরীর থেকে যে জল বেরিয়ে যায়। সেটা পূরণ করার জন্য এবং শরীরের রক্তের প্রবাহ স্বাভাবিক রাখার জন্য অতিরিক্ত ফ্লুইড খাওয়ানো প্রয়োজন।

ওয়াশ ক্লথ ভিজিয়ে কপালে রাখলে শরীরের তাপমাত্রা কমে।

ঈষদুষ্ণ স্নান- বাথটবে বা গামলায় ঈষদুষ্ণ জলে শিশুকে স্নান করালে জল বাষ্পীভবনের ফলে শরীরের তাপমাত্রা হ্রাস পায়। হালকা গরম জলে গামছা বা তোয়ালে ভিজিয়ে মাথাসহ সারা শরীর ভালো ভাবে মুছে দিলেও শরীরের তাপমাত্রা কমবে। তবে অতি ঠাণ্ডা বা বরফ জল কখনওই মাথায় দিতে নেই।

এইসব করেও যদি জ্বর না কমে তখন প্যারাসিটামল সিরাপ বা ট্যাবলেট শিশুর ওজন অনুযায়ী দিতে হবে। এই ওষুধ ক্যালপল, ক্রোসিন প্রভৃতি নামে পাওয়া যায়। ডোজ ওজন অনুযায়ী প্রতি কেজি ওজনের জন্য ১৫ মিলিগ্রাম। প্যারাসিটামল সিরাপে এক চামচ বা ৫ এমএল-এ ১২০, ১২৫, ২৫০, ২৪০ মিলিগ্রাম বা ৫০০ মিলিগ্রাম ও থাকে। ট্যাবলেট ১২৫, ২৫০, ৫০০, ৬৫০, ১০০০ মিলিগ্রামেরও হয়। জ্বরের জন্য এই ওষুধ বারবার খাওয়ালেও কোনও ক্ষতি হয় না। প্যারাসিটামলে জ্বর না কমলে বড় শিশুদের আইবুপ্রোফেন সিরাপ বা ট্যাবলেট অথবা আইবুপ্রোফেন প্যারাসিটামল কম্বিনেশন যেমন আইবুজেসিক প্লাস সিরাপ খাওয়ালে জ্বর কমে যাবে। তবে এই ওষুধ কোনও শিশু বিশেষজ্ঞ না দেখিয়ে না খাওয়ানোই ভালো। তিন মাসের কম বয়সী শিশুদের এই ওষুধ খাওয়ানো নিষেধ।

 

কখন ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবেন?

জ্বর তিন দিনের বেশি স্থায়ী হলে।
জ্বরের সঙ্গে তরকা বা খিচুনি হলে।
বমি, পাতলা পায়খানা বা রক্তামাশয় থাকলে।
জল অল্পতা দেখা দিলে।
শ্বাসকষ্ট বা কাশি থাকলে।
জ্বরের সাথে ত্বকে ফুসকুড়ি বা র্যারশ।
শিশু অস্বাভাবিক কান্না করলে বা ঝিমিয়ে পড়লে।
মুখে খাওয়াতে না পারলে।
জ্বরের সঙ্গে কানে ব্যথা বা কান দিয়ে পুঁজ পড়লে।
বমির ওষুধ খাইয়েও বমি বন্ধ না হলে।

ছবি: সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে

যোগাযোগ: ৯৮৩০২৯৪৯৩২


Skip to content