মঙ্গলবার ৩ ডিসেম্বর, ২০২৪


ছবি প্রতীকী

বেশিরভাগ মায়েরই অভিযোগ— বাচ্চা খেতে চায় না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিশেষ কোনও রোগের কারণে শিশুর খাবার ইচ্ছা কমে যেতে পারে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যাপারটা অত কিছু জটিল নয়। অবশ্য মা-বাবার সব সময়ই একটা উৎকণ্ঠা তো থাকবেই। অনেক মাকে আবার খাবার থালা বা বাটি নিয়ে শিশুর পিছনে ছুটতে দেখা যায়।
বয়স অনুযায়ী শিশুর মানসিক ও শারীরিক বিকাশ না হলে শিশুর খাওয়া-দাওয়া নিয়ে মা-বাবারা চিন্তা করতে শুরু করেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কিন্তু আসলে কোনও রোগ নেই— সমস্যাটা শিশুর মনে।
 

কীভাবে বুঝবেন শিশুর খাবারের অনিহা?

১. নবজাতক শিশু বুকের দুধ মুখে দিলে বা দুধ খাওয়ার জন্য উদ্যোগী হলেই শিশু মুখ ঘুরিয়ে নেবে, ছটফট করবে বা কান্না করবে। কিন্তু আস্তে আস্তে ঘুম ভাব এসে গেলে আবার দুধ খেতে শুরু করবে।

২. একটু বড় শিশুদের ক্ষেত্রে— খাবার দেখলেই কান্না করবে, বমি ভাব এসে যাবে বা বমি করবে। খাবার থু করে ফেলে দেওয়া, খাবারের স্বাদ ভালো না বলা বা বাজে গন্ধ পাওয়া এসবই সাধারণ ঘটনা। অনেক শিশু, মা খাবার তৈরি করছে দেখলেই অন্যদিকে ছুট মারে।

৩. খাদ্য অনীহার সঙ্গে ওজন কমে যাওয়া।

৪. মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া।

 

আসল সমস্যাটা কী? কেন শিশুরা খেতে চায় না?

১. পূর্ণভাবে খিদে না পাওয়া।

২. যখন তখন টুকটাক খাবার দেওয়া।

৩. স্কুল থেকে ফিরেই ফলের রস —এতে খিদে নষ্ট হয়।

৪. অনেক সময় শিশু সারাদিন এটা সেটা খেয়ে পেট ভরে ফেলে— তাই প্রধান খাবারের সময় খেতে পারে না।

৫. খাবারের স্বাদ শিশুর পছন্দ নাও হতে পারে।

৬. বয়স অনুযায়ী খাবার না দেওয়া।

৭. খাবারের জন্য অযথা জোর করা তাতে খাবারের ইচ্ছা আরও কমে যায়।

৮. এই সমস্ত অনিয়মই ক্ষুধামন্দার জন্য দায়ী। অভিভাবকরা এই অনিয়ম করে থাকেন অনেক সময় না জেনে। কিছু সময় বাচ্চার আবদার মেটাতে গিয়ে এ রকম বিপত্তি ঘটে। বাইরের লোভনীয় খাবারে শিশুকে অভ্যস্ত করে তুলেও কেউ কেউ শিশুর স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস নষ্ট করেন।

৯. দুটি খাবারের মাঝে শিশুকে বিস্কুট, ফল, লজেন্স, আইসক্রিম দিলে প্রধান খাবারের সময় শিশুর খিদে থাকে না। অনেক মা আবার শিশুর কান্না শুনলেই ভাবেন শিশুর খিদে পেয়েছে। শিশু বারোটায় পেট ভরে খাবার খায়নি বলে মা তাকে আবার একটার সময় খাওয়াবার জন্য উদগ্রীব হয়ে ওঠেন। এটা ঠিক নয়।

১০. অনেক শিশু একটু খেলেই তার পেট ভরে যায়। কিন্তু মা মনে করে, সে প্রয়োজন মতো খেল না। সুতরাং শিশুর চাহিদাটা বুঝতে হবে।

১১. তাড়াহুড়ায় অনেক মা শিশুকে ম্যাগি বা অন্য কোনও খাবার যেমন— কেক, পেস্ট্রি বা চিপস এসব দিয়ে ব্যস্ত রাখেন। এতে বাচ্চার খিদে আরও কমে যায়। আসল খাবারের সময় তারা খেতে চায় না।

আরও পড়ুন:

ছোটদের যত্নে: শিশু পেটের ব্যথায় ভুগছে? তাহলে শিশু বিশেষজ্ঞের এই পরামর্শগুলি মেনে চলুন

ত্বকের পরিচর্যায়: যখন তখন হানা দিতে পারে ফাঙ্গাল ইনফেকশন, কী ভাবে বাঁচবেন? রইল উপায়

নাট্যকথা: রোদ্দুর ও অমলকান্তি/২

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৪: ধীরে চলো ‘ওরে যাত্রী’ [০২/০২/১৯৫১]

 

কী কী জটিল শারীরিক অসুস্থতার জন্য শিশুর খিদে কমতে পারে?

১. জন্মের সময় শিশু অসুস্থ থাকলে— সেই অসুস্থতা কাটিয়ে ওঠার পরেও শিশুর খিদে কমে যেতে পারে।

২. তাছাড়া শিশুর জন্মগত হার্টের বা অন্য কোনও বড় রোগ থাকলেও খিদে কমে যায়।

৩. তাছাড়া মুখে ঘা বা ফাঙ্গাল সংক্রমণ, গলার সংক্রমণেও ছোট শিশুরা খেতে চায় না।

৪. বড় শিশুদের ক্ষেত্রে— খাবার বা অন্য কিছু শাসনালীতে গিয়ে বিষম খেলে বা শ্বাসকষ্ট হলে, ভীতির জন্য পরবর্তীকালে খেতে চায় না। জিভে বা মুখের কোনও সংক্রমণেও জিভের স্বাদ থাকে না অর্থাৎ খিদে কমে যায়।
 

খাদ্য বা খাবারে অনিহা মোকাবিলা কীভাবে?

ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে বা নবজাতকের ক্ষেত্রে —

১. মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় মায়ের গায়ের সঙ্গে শিশুর গা লাগিয়ে দুধ খাওয়াতে হবে। (ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার)

২. জন্মের পর পরই প্রতি দু’ঘণ্টা অন্তর দুধ খাওয়াতে হবে। তার মাঝখানে কান্না করলেও দুধ দিতে নেই।

৩. বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে খাবারের সময়ের গ্যাপ বাড়াতে হবে।

৪. প্রয়োজন বোধে দুধ খাওয়ানোর পজিশন পাল্টাতে হবে।

৫. মায়ের স্তনের বোঁটায় ব্যথা থাকলে, ‘নিপল শিল্ড’ ব্যবহার করা যাবে।

বুকের দুধ বাড়ানোর জন্য মা পর্যাপ্ত জল, তরল, শাক-সবজি খাবেন।

৭. প্রতিবার দুধ খাওয়ানোর পর ঢেকুর তোলাতে হবে।

৮. শিশুর সঙ্গে মায়েরও পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম প্রয়োজন।

আরও পড়ুন:

শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভুগছেন? জানুন চিকিৎসকের জরুরি পরামর্শ

শাশ্বতী রামায়ণী, পর্ব ১২: বশিষ্ঠ-বিশ্বামিত্র বিরোধের ইতিবৃত্ত

হোমিওপ্যাথি: আপনার কি ঋতুবন্ধ আসন্ন? সমস্যা এড়াতে মেনে চলুন এই নিয়মগুলি

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-১৪: গুজব ছড়িয়েছিল মহর্ষি খুন হয়েছেন

 

বড় শিশুদের জন্য খাদ্যে অনিহার সমাধান

১. অসুস্থতা, মুখে ঘা বা আঘাত থাকলে এসব সাময়িক সমস্যার চিকিৎসা করতে হবে। তরল খাবার অল্প অল্প করে বারবার খাওয়াতে হবে।

২. দাঁত ব্রাশ করার সময় জিভ পরিষ্কার করতে হবে।

৩. খাবার তৈরি করার সময় শিশুকেও সঙ্গে নিন।

৪. খাবার পরিবেশনের সময় খাবার ডিজাইন করা, ঘরবাড়ি, কার্টুন আঁকা, ছোট পশুপাখি তৈরি করা অর্থাৎ খাবারটাকে শিশুর কাছে যথেষ্ট আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে।

৫. মোবাইল, টিভি বন্ধ করে— ছড়া, গান বা গল্পের মাধ্যমে বা পরিবারের সবাই এক সঙ্গে বসে গল্প করে খাওয়াতে হবে।

৬. শিশুকে নিজ হাতে খেতে উৎসাহিত করতে হবে।

৭. খাবারের জন্য বারবার বিরক্ত না করে টেবিলে খাবার রেখে আসুন। খিদে পেলে সে নিজেই খেয়ে নেবে।

৮. শিশুকে চিবিয়ে খেতে উৎসাহিত করবেন।

৯. বাচ্চাকে জলখাবারে কোনও ছাড় নয়। নিয়ম করে নির্দিষ্ট সময় বেঁধে, রোজ নতুন খাবার না দিলেই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সকালের খাবার দিতে হবে।

১০. বড়দের মতো তিনবেলা খাবার দিলে চলবে না। এতে খিদে আরও কমে যায়। ঘন ঘন খেতে দিলে শরীরে সেই মতো খাবারের চাহিদা তৈরি হবে।

১১. শিশুদের খেলাধুলা করান। ব্যায়াম করান। পার্কে ঘোরান। পরিশ্রম করলে খিদে বাড়বে।

১২. খাবারের জন্য অযথা জোর করা যাবে না। এতে খাবারের প্রতি শিশুর আগ্রহ কমে যাবে। শিশুর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে।

১৩. খাবারের সময় টিভি কার্টুন নয়। এগুলোতে মন দিলে পাকস্থলী থেকে প্রয়োজনীয় পাচক রস নির্গত হবে না।

১৪. খাবারের ধরন পাল্টাতে হবে। একঘেয়ে খাবার খেতে কেউই চায় না। নতুন খাবারে আগ্রহী করে তুলতে পুরস্কৃত করুন।

১৫. বাইরের খাবারের অপকারিতা বুঝিয়ে বলুন। শিশুকে প্রিয় খাবার দিন। সারা সপ্তাহ ঠিকমত স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খেলে রবিবার আইসক্রিম বা বার্গার বরাদ্দ করতেই পারেন। কথা শোনার উপহার হিসেবে এই খাবারগুলো মাঝে মাঝে খেতে দিন।

 

কখন চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাবেন?

১. দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকলে।

২. রক্তাল্পতা থাকলে।

৩. আচরণগত সমস্যা থাকলে।

৪. যকৃতের সংক্রমণ।

৫. কিডনির সংক্রমণ

৬. নিউমোনিয়া।

৭. গলা ব্যথা

৮. মানসিক সমস্যা।

৯. খাবার খেয়ে বমি করলে।

যোগাযোগ: ৯৮৩০২৯৪৯৩২


Skip to content