মঙ্গলবার ৩ ডিসেম্বর, ২০২৪


ছবি প্রতীকী

শিশুকে স্তন্যপান করানো একটি জরুরি প্রাকৃতিক এবং সহজাত অভ্যাস, যা শিশুর শারীরিক এবং মানসিক বৃদ্ধি সুনিশ্চিত করতে সাহায্য করে। নবজাতকের জন্য মাতৃদুগ্ধ নিশ্চিত ভাবে একটি সর্বোৎকৃষ্ট পুষ্টিকর ও সুরক্ষিত খাদ্য। তাই আজ নবজাতককে স্তন্যপান করানো সংক্রান্ত একাধিক বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। শিশুর জন্ম স্বাভাবিকভাবে হোক কিংবা সিজার করেই হোক, জন্মের এক থেকে দু’ ঘণ্টার মধ্যেই তাকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। জন্মের পরে যত তাড়াতাড়ি মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো শুরু করা যাবে, তত তাড়াতাড়ি মায়ের দুধও পর্যাপ্ত পরিমাণে নিঃসরণ হতে শুরু করবে।
 

স্তন্যপানের সময় কেমন হবে মা ও শিশুর অবস্থান?

খোলামেলা জায়গায় মা একান্তে বসে দুধ খাওয়াবেন এটাই উত্তম পরিবেশ।
মা তাঁর বাঁদিকের স্তন্যপান করানোর সময় বাঁহাত দিয়ে শিশুর ঘাড় ও দেহ ধরে রাখবেন এবং ডান হাত দিয়ে বাম স্তন্যকে তুলে ধরবেন। সেই হাতের বুড়ো আঙ্গুল স্তনের উপরে এবং বাকি আঙ্গুলগুলো স্তন্যের নিচে থাকবে। আবার ডান দিকের স্তন্যপান করালে ঠিক উল্টোটা করতে হবে। মানে ডান হাত দিয়ে শিশুর ঘাড় ও পিঠে সাপোর্ট দেবেন এবং বাঁহাত দিয়ে স্তনে ঠেস দিতে হবে। মা যে হাত দিয়ে স্তন্য ধরবেন, সেই হাতের সাহায্যে স্তন্যের বোঁটা দিয়ে শিশুর থুতনিতে সুড়সুড়ি দিলেই শিশু হাঁ করবে আর তখনই স্তন্যের বোঁটা এবং তার চারপাশে রঙিন অংশ-সহ শিশুর মুখে পুরে দিলেই শিশু দুধ খেতে শুরু করবে। এটাই স্তন্যপানের স্বাভাবিক নিয়ম।
 

স্তন্যপানের সময় শিশুর মুখের অবস্থান কেমন হবে

শিশুর নীচের ঠোঁট স্তন্যের নীচে কিন্তু বাইরের দিকে থাকবে। উপরের ঠোঁট স্তন্যের উপরে কিন্তু বাইরের দিকে থাকবে— অনেকটা মাছের মুখের মতো। শিশুর জিভ আংশিক বেরিয়ে থাকা অবস্থায় স্তন্যপান করাতে হবে। তবে যতটুকু অংশ মুখে নিলে শিশুর মুখ ভরে যায় ততটুকু অংশই শিশু মুখেপুরে স্তন্যপান করবে। এটাই শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সফল স্তন্যপান।
শিশুকে জন্মের প্রথম এক মাস পর্যন্ত দু’ ঘণ্টা অন্তর এবং তারপরে আড়াই থেকে তিনঘণ্টা অন্তর বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। প্রতিবারই দুটো স্তন্যপান করানোই নিয়ম। প্রত্যেকটা স্তন্য ১০ থেকে ১৫ মিনিট অর্থাৎ প্রত্যেকবার দুটো স্তন্য ২০ থেকে ৩০ মিনিট ধরে পান করবে শিশু।

 

কীভাবে বুঝবেন শিশুর পেট ভরে গিয়েছে?

শিশু স্তন্য থেকে মুখ সরিয়ে নেবে।
মুখ ও চোখ দুটোই বন্ধ করে দেবে।
হাত-পা নড়াচড়া করবে এবং মুখ দিয়ে শব্দ করে বোঝাতে চাইবে যে তার পেট ভরে গিয়েছে (দুই থেকে তিন মাস বয়স হলে)।
 

শিশুকে কতক্ষণ অন্তর খাওয়াবেন?

স্তন্যপান করানোর দুটো প্রচলিত পদ্ধতি আছে— একটা হল চাহিদা অনুযায়ী, অন্যটি ঘড়ি দেখে নির্দিষ্ট সময় অন্তর। আমার পরামর্শ সব সময় শিশুকে একটা নির্দিষ্ট সময় অন্তর খেতে দিতে হবে। দু’ ঘণ্টা কিংবা তিন ঘণ্টা অন্তর বা বড় বাচ্চা হলে চার ঘণ্টা অন্তর খেতে দেওয়াই ভালো। শিশু জানবে যে তার সকাল ছ’টার পরে ন’টা বা তারপরে ১২টায় তার খাওয়ার সময়। তাই এই তিন ঘণ্টা থাকার জন্য তার প্রয়োজনীয় দুধ বা অন্য যা কিছু হোক সে খেয়ে নেবে। পরবর্তী সময় না হওয়া পর্যন্ত তার খিদে পাবে না এবং সে খিদের জন্য কাঁদবে না। সে বুঝবে তার খাবার একটা নির্দিষ্ট সময় আছে এবং তার আগে মা তাকে আর খাবার দেবে না।

এভাবে খাওয়ানোর মধ্য দিয়ে শিশুর জীবনে নিয়মানুবর্তিতা শুরু হবে। অন্যদিকে শিশু কাঁদলেই মা সঙ্গে সঙ্গে দুধ দিলে একটু দুধ টানার পরে খানিকটা তৃপ্তি মিটলেই শিশু খাওয়া ছেড়ে দেবে। এভাবে আধপেটা খাওয়ার ফলে কিছুক্ষণ পর আবার কাঁদবে। আবার সামান্য দুধ খেয়ে ছেড়ে দেবে। ফলে ওজন বৃদ্ধি হবে না। পরবর্তীকালে মা জোর করে খাওয়াতে যাবেন আর শিশু বমি করবে। দেখা যাবে পরবর্তীকালে খাওয়ার সময় খাবে না, পড়ার সময় পড়বে না, উশৃঙ্খল জীবনযাপন শুরু হবে। সুতরাং একটা রুটিন অনুযায়ী শিশুকে খাওয়ানো উচিত।
 

ঘুমাছন্ন শিশুকে কীভাবে দুধ খাওয়াবেন

মাঝে মাঝে হাত দিয়ে চেপে স্তন্য থেকে ক্রমাগত দুধ বের করার চেষ্টা করতে হবে।
এই সময় মায়ের স্পর্শ খুবই জরুরি।
নিরিবিলি জায়গায় শিশুকে মা দুধ পান করাবেন।
মাঝে মাঝে শিশুর পায়ের তলায় সুড়সুড়ি দিতে হবে।
শিশুকে জোর করে খাওয়ানোর চেষ্টা করা যাবে না।

ছবি: সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে

যোগাযোগ: ৯৮৩০২৯৪৯৩২


Skip to content