ছবি প্রতীকী
সর্দি, জ্বর বা ফ্লু
জ্বর, সর্দি, শরীরে ক্লান্তি, গায়ে হাত পা ব্যথা, গলা ব্যথা, কাশি- এসবই ফ্লু-এর লক্ষণ
চিকিৎসা
এক্ষেত্রে প্যারাসিটামল ট্যাবলেট বা সিরাপ দিয়ে চিকিৎসা শুরু করতে হবে। প্যারাসিটামল শুধু জ্বরই কমায় না, মাথা, গা হাত পা ব্যথা থাকলেও এই ওষুধ সমান কার্যকরী। প্যারাসিটামল ট্যাবলেট ১২৫ মিলিগ্রাম, ২৫০ মিলিগ্রাম, ৩২৫ মিলিগ্রাম এবং ৫০০ মিলিগ্রাম পাওয়া যায়। প্যারাসিটামল সিরাপ ৫ এমএল এ ১২০ বা ১২৫ মিলিগ্রাম, ২৪০ বা ২৫০ মিলিগ্রাম এবং পাঁচ মিলিতে ৫০০ মিলিগ্রাম পাওয়া যায়। শিশুদের ডোজ বয়স অনুযায়ী নয়, ওজন অনুযায়ী হয়। প্রতি কেজি ওজনের জন্য ১৫ মিলিগ্রাম প্যারাসিটামল দিতে হয়। বারবার জ্বর এলে বারবারই দেওয়া যায়, কোনও ক্ষতি হয় না। ইনফ্লুয়েঞ্জা জ্বর সাত দিন পর্যন্ত থাকতে পারে। তবে তিন দিনের বেশি জ্বর থাকলে শিশু বিশেষজ্ঞ দেখিয়ে নেওয়া ভালো।
সর্দি, জ্বরে নাক বন্ধ হলে ছয় মাসের কম বয়সী শিশুদের স্যালাইন নাকের ড্রপ এবং ছয় মাসের বেশি বয়সের বাচ্চাদের অক্সিমেটাজলিন নাকের ড্রপ, প্রতি নাকে দু’ ড্রপ করে রোজ তিন থেকে চার বার লাগাতে হবে। সর্দি, জ্বরের সঙ্গে কাশি থাকলে, প্রথমে তুলসী বা বাষক পাতার রস দেওয়া যায়। তবে এসব প্রথমে গরম জলে ধুয়ে তারপর রস বের করতে হবে। নাহলে আবার অন্য সংক্রমণ হতে পারে। শিশুদের কাশির জন্য সালবুটামল সিরাপও দেওয়া যায়। তবে অ্যান্টিবায়োটিক শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া দেওয়া যাবে না।
প্রতিরোধ
এই রোগ প্রতিরোধের জন্য মাস্ক পরিধান করা ছোট শিশুদের জন্য বাস্তবসম্মত নয়। যদিও বড় শিশুদের মাস্ক পরেই বাইরে যেতে হবে। ছোট শিশুরা যাতে কোনও সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে না যায় বা আক্রান্ত কেউ যাতে ছোটদের সামনে হাঁচি, কাশি না দেয়, সেদিকে নজর রাখতে হবে। শিশুরা যাতে ঘন ঘন চোখে মুখে নাকে হাত না দেয়, হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে খাবার খায় সেদিকেও নজর রাখতে হবে।
আমাশয়, পাতলা পায়খানা, রক্তামাশয়, টাইফয়েড জ্বর, জন্ডিস
আমাশয়, পাতলা পায়খানা, রক্তামাশয়, টাইফয়েড জ্বর, ইনফেক্টিভ হেপাটাইটিস বা জন্ডিস, ক্রিমির সংক্রমণ সবই জল বাহিত রোগ এবং শিশুদের মধ্যে বর্ষাকালেই বেশি দেখা যায়। এই সমস্ত সংক্রমণে কমবেশি পাতলা পায়খানা হওয়া স্বাভাবিক। তবে পাতলা পায়খানা বেশি হলে জল অল্পতা বা ডিহাইড্রেশন হয়। তাই প্রথমেই ডিহাইড্রেশনের জন্য ওআরএস বা বাড়িতে প্রাপ্ত তরল যেমন ডাবের জল, নুন চিনির জল,ঘোল, মুড়ি ভেজানো জল ইত্যাদি খাওয়াতে হবে। পাশাপাশি শিশুকে স্বাভাবিক খাবার বা ছোটদের বুকের দুধ খাইয়ে যেতে হবে। বেশি বাড়াবাড়ি হলে তো শিশু বিশেষজ্ঞ বা হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবেই। বমি হলে ডমপেরিডন, অনডানসেট্রন ট্যাবলেট বা বয়স অনুযায়ী সিরাপ দিতে হবে। টাইফয়েড ও সংক্রমিত জন্ডিসে জ্বর থাকে, জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল সব সময়ই দেওয়া যায়। তবে ডাক্তার না দেখিয়ে সঠিক রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা সম্ভব নয়। রক্তামাশয় হলেও ডাক্তার দেখিয়ে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানো উচিত।
প্রতিরোধ
এই সমস্ত সংক্রমণ যেহেতু মুখ দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে তাই প্রতিরোধের জন্য কড়াকড়ি ভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। যাতে শিশুরা হাত ধুয়ে যে কোনও খাবার খায়। পরিষ্কার পাত্রে খাদ্য পরিবেশন করা হয় এবং বাইরের সংক্রমিত খাবার না খায়, সে দিকে নজর রাখতে হবে। কৃমি প্রতিরোধের জন্য প্রতি ছয় মাস অন্তর একটা ডোজ কৃমির ওষুধ খাওয়াতে হবে। টাইফয়েড ও হেপাটাইটিসের প্রতিরোধের জন্য টিকা দিতে হবে।
ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়া
বর্ষাকালে মশার উপদ্রব বাড়ে। তাই ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, চিকেনগুনিয়ার মতো রোগ শিশুদের কাবু করে ফেলতে পারে। প্রচণ্ড জ্বর, মাথাব্যথা, গায়ে ব্যথা, বমি, পেটের গন্ডগোল ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যায় এই সমস্ত রোগে। ডেঙ্গু হলে চোখের পিছনে (রেট্রো-অরবিটাল) প্রচণ্ড ব্যথা হয়। মেরুদণ্ডে এবং অন্য হাড়েও হাড়ভাঙ্গার মতো ব্যথা হয় (ব্রেকবোন ফিভার)। এছাড়াও মাংস পেশী ও মাড়িতে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব হয়। ডেঙ্গুতে মলদ্বার দিয়ে বা অন্য জায়গা দিয়েও রক্তপাত হতে পারে। এই সমস্ত রোগে প্রাথমিক চিকিৎসা প্যারাসিটামল ট্যাবলেট বা সিরাপ দিতে হয়। তার সঙ্গে প্রচুর জল খাওয়া, পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। এগুলো সব বাড়িতেই করা যায়। তবে এই সমস্ত রোগে শিশু বিশেষজ্ঞ দেখিয়ে রক্ত পরীক্ষা করে সঠিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
প্রতিরোধ
এইসব রোগের প্রতিরোধের জন্য বাড়িতে মশারি টাঙিয়ে শিশুদের ঘুমাতে দিতে হবে। এমনকি দিনের বেলায়ও শিশুদের ছোট মশারির নীচে রাখতে হবে। বাড়ির চারপাশের ঝোপ, জঙ্গল পরিষ্কার করা এবং ব্লিচিং দিয়ে স্যানিটাইজ করা সবই এইসব রোগ দূরীকরণের সঠিক উপায়।
ত্বকের সমস্যা
বর্ষাকালে শিশুদের ছত্রাক জাতীয় সংক্রমণ খুব বেড়ে যায়। এই সময় শিশুদের চুলকানি (স্কাবিস), দাদ, হাজা বা নককুনি এগুলো খুব সাধারণ ব্যাপার। বৃষ্টির জমা জলে শিশুদের র্যা শ হতে পারে। চুলকানি বা স্কাবিসের জন্য গামাবেনজিন, হেক্সাফ্লোরাইড লোশন এবং দাদ, হাজার জন্য মাইকোনাজোল বা কোট্রাইমাজল লোশন বাড়িতেই ব্যবহার করা যায়। তবে খাবার ওষুধ ডাক্তার না দেখিয়ে খাওয়াতে নেই।
বর্ষাকালে এই সব রোগের প্রতিরোধের জন্য সর্বদা মেনে চলতে হবে। এইসব রোগ প্রতিরোধের জন্য শিশুদের পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। শুষ্ক জামাকাপড় পরাতে হবে। ভিজে হাত-পা সব সময় শুকনো কাপড় দিয়ে মুছিয়ে দিতে হবে।
বর্ষাকালে এই সমস্ত রোগ প্রতিরোধের জন্য শিশুদের কিছু জরুরি পরামর্শ
ছবি: সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে
যোগাযোগ: ৯৮৩০২৯৪৯৩২
ছবি: সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে
যোগাযোগ: ৯৮৩০২৯৪৯৩২