
শ্যুটিংয়ে ব্যস্ত সত্যজিৎ রায়
অনেকদিন আগের কথা৷ কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএ-তে ভর্তি হয়েছি৷ অরূপ সাউ নামে এক ভদ্রলোকের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়৷ গ্রামের ছেলে৷ কলকাতায় এসেছিলেন ভাগ্যসন্ধানে৷ বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে ধীরে ধীরে একটা যোগাযোগ গড়ে ওঠে তাঁর৷ অরূপদা প্রায়ই টালিগঞ্জে নির্মীয়মাণ বিভিন্ন ছবির শ্যুটিংয়ে যেতেন৷ তাঁর সঙ্গে আমিও কয়েকবার শ্যুটিং দেখতে গিয়েছি৷ একদিন সাতসকালে আমি যেখানে থাকতাম সেখানে এসে হাজির অরূপদা৷ ব্যাপার কী? অরূপদা বললেন, ‘একটা গুড নিউজ আছে৷’ ভাবলাম, কী এমন গুড নিউজ যার জন্য এত সকালে অরূপদাকে ব্যস্তসমস্ত হয়ে আসতে হল?
আমাকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে অরূপদা হাসিমুখে বললেন, ‘তুমি একদিন আমাকে বলেছিলে না সত্যজিৎ রায়ের শ্যুটিং দেখতে চাও? সেই ব্যবস্থা করে এসেছি৷ ইন্দ্রপুরী স্টুডিওতে ওঁর ছবির শ্যুটিং চলছে৷ সন্দীপ রায়ের সঙ্গে আমার পরিচয় আছে৷ ওর সঙ্গে কথাও হয়েছে৷ আজই লাঞ্চের আগে আমরা ইন্দ্রপুরীতে যাব৷ তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নাও৷’
বিশ্ববরেণ্য চলচ্চিত্রস্রষ্টার ছবির শ্যুটিং দেখতে পাব, তাঁকে কাছ থেকে দেখব, আমার অনেকদিনের লালিত ইচ্ছে যে কোনওদিন পূরণ হবে ভাবতেও পারিনি৷ যথাসময়ে দুরুদুরু বুকে পৌঁছে গেলাম ইন্দ্রপুরী স্টুডিওতে৷ সত্যজিৎ রায়ের শ্যুটিং, সিকিউরিটি গার্ড কিছুতেই আমাদের শ্যুটিং ফ্লোরে ঢুকতে দেবে না৷ শেষমেশ সন্দীপ রায়ের হস্তক্ষেপে ফ্লোরে ঢোকার অনুমতি পেলাম৷ প্রায় ৪২ বছর আগের কথা৷ সম্ভবত ছবির নাম ‘হীরক রাজার দেশে’৷
এরও বেশ কয়েক বছর পর সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে বিশিষ্ট হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ কান্তিভূষণ বক্সী ভালোভাবে আমার আলাপ-পরিচয় করিয়ে দেন৷ সেই সময় মাঝে মাঝে চেকআপের জন্য বেলভিউ নার্সিংহোমে যেতেন সত্যজিৎ রায়৷ বেলভিউয়ের নামকরা কার্ডিয়াক ইউনিটের প্রধান ছিলেন ডাঃ বক্সী৷ আর সেই পরিচয়ের সূত্র ধরেই বিশ্বের সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রস্রষ্টার সঙ্গে আমার এক সুন্দর সম্পর্ক গড়ে ওঠে৷ সেইসব প্রসঙ্গে যথাসময়ে আলোকপাত করব৷ ফিরে আসি ওই শ্যুটিংয়ের কথায়৷
ফ্লোরের এক জায়গায় চুপ করে দাঁড়িয়ে সত্যজিৎ রায়কে দেখছিলাম৷ এর আগে নামী-অনামী কয়েকজন পরিচালকের শ্যুটিং দেখার অভিজ্ঞতা হয়েছে৷ কিন্তু সত্যজিৎ রায়কে দেখে মনে হয়েছিল, তিনি সকলের থেকে আলাদা৷ কোনও হইহট্টগোল নেই৷ অযথা কথাবার্তা নেই৷ শ্যুটিং যে হচ্ছে বোঝাই যায় না৷ একদম ঘড়ি ধরে কাজ চলছে৷ শিল্পী, কলাকুশলী থেকে শুরু করে ইউনিটের সকলেই আগে থেকে জানেন কোন কাজটা ঠিক কোন সময়ে করতে হবে৷ একসময় লাঞ্চব্রেক হল৷ সত্যজিৎ রায় ক্যামেরার পিছনদিকে একটা চেয়ারে চুপ করে বসে কিছু ভাবছিলেন৷ সন্দীপ রায় বাবার পাশে দাঁড়িয়ে৷ অরূপদাকে জিজ্ঞাসা করলাম, একবার গিয়ে সত্যজিৎ রায়কে প্রণাম করে আসব? অরূপদা একটু ইতস্তত করছিলেন৷ বললেন, ‘সত্যজিৎ রায় যদি কিছু মনে করেন? তার চেয়ে চলো এবার ফিরে যাই৷ আমাদের শ্যুটিং দেখা তো হলই৷’ আমি নাছোড়৷ এতবড় একজন বরণীয় স্রষ্টাকে প্রণাম না করে কোত্থাও যাব না৷ অগত্যা অরূপদাও আমাকে সঙ্গ দিলেন৷
সত্যজিৎ রায়ের কাছে গিয়ে ঢিপ করে তাঁকে প্রণাম করলাম৷ অরূপদাও আমাকে অনুসরণ করলেন৷ চলচ্চিত্রস্রষ্টা আমাদের দিকে একটু অবাক হয়ে তাকালেন৷ সেই মুহূর্তে সন্দীপ রায় বললেন, ‘বাবা, এরা দু’জনেই আমার পরিচিত৷ আমার অনুমতি নিয়েই ওরা ফ্লোরে এসেছে৷’ এবার সত্যজিৎ রায় স্মিত হেসে আমাদের নাম জানতে চাইলেন৷ কোথায় থাকি, কী করি তাও জানতে চাইলেন৷ জিজ্ঞাসা করলেন শ্যুটিং কেমন লাগল? কী মেঘমন্দ্র কণ্ঠস্বর! ব্যারিটন ভয়েস! আর এরকম কিংবদন্তি মানুষের ব্যক্তিত্ব কতটা যে আকর্ষণীয় হতে পারে তা বলার প্রয়োজন পড়ে না৷
আমাদের জন্য এক বড় চমক অপেক্ষা করছিল৷ সত্যজিৎ রায় ছেলেকে বললেন, ‘ওদের লাঞ্চ করে যেতে বোলো৷ খাওয়া-দাওয়া না করে যেন যায় না৷’ আপাত গাম্ভীর্যের আড়ালে তিনি যে কত বড় মনের মানুষ ছিলেন এই ঘটনাতেই প্রমাণ পাওয়া যায়৷ পরে তাঁর মহত্ত্বের আরও প্রমাণ পেয়েছি৷
কিছুদিন আগে মাধবীদি’র (অভিনেত্রী মাধবী মুখোপাধ্যায়) সঙ্গে কথাবার্তা হচ্ছিল৷ সত্যজিৎ রায়ের প্রসঙ্গ ওঠে৷ করোনা আবহে নানান বাধানিষেধ থাকার কারণে তাঁর জন্মশতবর্ষ আমরা সাড়ম্বরে পালন করতে পারিনি৷ এ ব্যাপারে মাধবীদিও দুঃখপ্রকাশ করেন৷ ১৯২১ সালের ২ মে সত্যজিৎ রায় জন্মগ্রহণ করেন৷ শ্যুটিং দেখার মাধ্যমেই তাঁকে প্রথম আমার সামনে থেকে দেখা একথা জেনে মাধবীদি খুশি হন৷ এক সন্ধ্যায় নস্টালজিয়ায় আচ্ছন্ন মাধবীদি স্মৃতিরোমন্থন করেছিলেন, যার অনেকটা অংশ জুড়ে ছিলেন সত্যজিৎ৷ তাঁর প্রতি আমার বিনম্র শতবর্ষের শ্রদ্ধাঞ্জলির এই স্মৃতিচারণে মাধবীদি’র প্রসঙ্গ এলে আশা করি তা অপ্রাসঙ্গিক হবে না৷ কারণ, সত্যজিতের অন্যতম সেরা ছবি ‘চারুলতা’র প্রাণস্বরূপিণী ছিলেন মাধবী৷ এমনকী তাঁদের ব্যক্তিগত সম্পর্কও ছিল বড়ই সুমধুর৷
আমাকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে অরূপদা হাসিমুখে বললেন, ‘তুমি একদিন আমাকে বলেছিলে না সত্যজিৎ রায়ের শ্যুটিং দেখতে চাও? সেই ব্যবস্থা করে এসেছি৷ ইন্দ্রপুরী স্টুডিওতে ওঁর ছবির শ্যুটিং চলছে৷ সন্দীপ রায়ের সঙ্গে আমার পরিচয় আছে৷ ওর সঙ্গে কথাও হয়েছে৷ আজই লাঞ্চের আগে আমরা ইন্দ্রপুরীতে যাব৷ তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নাও৷’
বিশ্ববরেণ্য চলচ্চিত্রস্রষ্টার ছবির শ্যুটিং দেখতে পাব, তাঁকে কাছ থেকে দেখব, আমার অনেকদিনের লালিত ইচ্ছে যে কোনওদিন পূরণ হবে ভাবতেও পারিনি৷ যথাসময়ে দুরুদুরু বুকে পৌঁছে গেলাম ইন্দ্রপুরী স্টুডিওতে৷ সত্যজিৎ রায়ের শ্যুটিং, সিকিউরিটি গার্ড কিছুতেই আমাদের শ্যুটিং ফ্লোরে ঢুকতে দেবে না৷ শেষমেশ সন্দীপ রায়ের হস্তক্ষেপে ফ্লোরে ঢোকার অনুমতি পেলাম৷ প্রায় ৪২ বছর আগের কথা৷ সম্ভবত ছবির নাম ‘হীরক রাজার দেশে’৷
এরও বেশ কয়েক বছর পর সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে বিশিষ্ট হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ কান্তিভূষণ বক্সী ভালোভাবে আমার আলাপ-পরিচয় করিয়ে দেন৷ সেই সময় মাঝে মাঝে চেকআপের জন্য বেলভিউ নার্সিংহোমে যেতেন সত্যজিৎ রায়৷ বেলভিউয়ের নামকরা কার্ডিয়াক ইউনিটের প্রধান ছিলেন ডাঃ বক্সী৷ আর সেই পরিচয়ের সূত্র ধরেই বিশ্বের সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রস্রষ্টার সঙ্গে আমার এক সুন্দর সম্পর্ক গড়ে ওঠে৷ সেইসব প্রসঙ্গে যথাসময়ে আলোকপাত করব৷ ফিরে আসি ওই শ্যুটিংয়ের কথায়৷
ফ্লোরের এক জায়গায় চুপ করে দাঁড়িয়ে সত্যজিৎ রায়কে দেখছিলাম৷ এর আগে নামী-অনামী কয়েকজন পরিচালকের শ্যুটিং দেখার অভিজ্ঞতা হয়েছে৷ কিন্তু সত্যজিৎ রায়কে দেখে মনে হয়েছিল, তিনি সকলের থেকে আলাদা৷ কোনও হইহট্টগোল নেই৷ অযথা কথাবার্তা নেই৷ শ্যুটিং যে হচ্ছে বোঝাই যায় না৷ একদম ঘড়ি ধরে কাজ চলছে৷ শিল্পী, কলাকুশলী থেকে শুরু করে ইউনিটের সকলেই আগে থেকে জানেন কোন কাজটা ঠিক কোন সময়ে করতে হবে৷ একসময় লাঞ্চব্রেক হল৷ সত্যজিৎ রায় ক্যামেরার পিছনদিকে একটা চেয়ারে চুপ করে বসে কিছু ভাবছিলেন৷ সন্দীপ রায় বাবার পাশে দাঁড়িয়ে৷ অরূপদাকে জিজ্ঞাসা করলাম, একবার গিয়ে সত্যজিৎ রায়কে প্রণাম করে আসব? অরূপদা একটু ইতস্তত করছিলেন৷ বললেন, ‘সত্যজিৎ রায় যদি কিছু মনে করেন? তার চেয়ে চলো এবার ফিরে যাই৷ আমাদের শ্যুটিং দেখা তো হলই৷’ আমি নাছোড়৷ এতবড় একজন বরণীয় স্রষ্টাকে প্রণাম না করে কোত্থাও যাব না৷ অগত্যা অরূপদাও আমাকে সঙ্গ দিলেন৷
সত্যজিৎ রায়ের কাছে গিয়ে ঢিপ করে তাঁকে প্রণাম করলাম৷ অরূপদাও আমাকে অনুসরণ করলেন৷ চলচ্চিত্রস্রষ্টা আমাদের দিকে একটু অবাক হয়ে তাকালেন৷ সেই মুহূর্তে সন্দীপ রায় বললেন, ‘বাবা, এরা দু’জনেই আমার পরিচিত৷ আমার অনুমতি নিয়েই ওরা ফ্লোরে এসেছে৷’ এবার সত্যজিৎ রায় স্মিত হেসে আমাদের নাম জানতে চাইলেন৷ কোথায় থাকি, কী করি তাও জানতে চাইলেন৷ জিজ্ঞাসা করলেন শ্যুটিং কেমন লাগল? কী মেঘমন্দ্র কণ্ঠস্বর! ব্যারিটন ভয়েস! আর এরকম কিংবদন্তি মানুষের ব্যক্তিত্ব কতটা যে আকর্ষণীয় হতে পারে তা বলার প্রয়োজন পড়ে না৷
আমাদের জন্য এক বড় চমক অপেক্ষা করছিল৷ সত্যজিৎ রায় ছেলেকে বললেন, ‘ওদের লাঞ্চ করে যেতে বোলো৷ খাওয়া-দাওয়া না করে যেন যায় না৷’ আপাত গাম্ভীর্যের আড়ালে তিনি যে কত বড় মনের মানুষ ছিলেন এই ঘটনাতেই প্রমাণ পাওয়া যায়৷ পরে তাঁর মহত্ত্বের আরও প্রমাণ পেয়েছি৷
কিছুদিন আগে মাধবীদি’র (অভিনেত্রী মাধবী মুখোপাধ্যায়) সঙ্গে কথাবার্তা হচ্ছিল৷ সত্যজিৎ রায়ের প্রসঙ্গ ওঠে৷ করোনা আবহে নানান বাধানিষেধ থাকার কারণে তাঁর জন্মশতবর্ষ আমরা সাড়ম্বরে পালন করতে পারিনি৷ এ ব্যাপারে মাধবীদিও দুঃখপ্রকাশ করেন৷ ১৯২১ সালের ২ মে সত্যজিৎ রায় জন্মগ্রহণ করেন৷ শ্যুটিং দেখার মাধ্যমেই তাঁকে প্রথম আমার সামনে থেকে দেখা একথা জেনে মাধবীদি খুশি হন৷ এক সন্ধ্যায় নস্টালজিয়ায় আচ্ছন্ন মাধবীদি স্মৃতিরোমন্থন করেছিলেন, যার অনেকটা অংশ জুড়ে ছিলেন সত্যজিৎ৷ তাঁর প্রতি আমার বিনম্র শতবর্ষের শ্রদ্ধাঞ্জলির এই স্মৃতিচারণে মাধবীদি’র প্রসঙ্গ এলে আশা করি তা অপ্রাসঙ্গিক হবে না৷ কারণ, সত্যজিতের অন্যতম সেরা ছবি ‘চারুলতা’র প্রাণস্বরূপিণী ছিলেন মাধবী৷ এমনকী তাঁদের ব্যক্তিগত সম্পর্কও ছিল বড়ই সুমধুর৷

'মহানগর' ছবির শ্যুটিংয়ে মাধবী মুখোপাধ্যায় ও সত্যজিৎ রায়
মাধবীদি’র ফ্ল্যাটের দেওয়ালে দুটো বড় ফোটো পাশাপাশি দেখেছিলাম—রবীন্দ্রনাথ এবং সত্যজিৎ রায়৷ মাধবীদি বলেছিলেন, ‘কবিগুরু হলেন আমার জীবনদেবতা৷ আর মানিকদা বিরাট মাপের মানুষ৷ আলোর ঠিকানা৷’ সত্যজিতের ছবিতে কাজের কথা বলতে গিয়ে কোন সুদূরে হারিয়ে গেলেন তাঁর ‘চারু’৷
‘…তখন আমি উত্তর কলকাতার কাশী মিত্র ঘাট স্ট্রিটে থাকতাম৷ ভাড়া বাড়ি৷ ততদিনে বেশ কয়েকটি ছবিতে আমার অভিনয় করা হয়ে গিয়েছে৷ একটু-আধটু প্রশংসাও পাচ্ছি৷ হঠাৎ একদিন সত্যজিৎ রায়ের প্রোডাকশন ম্যানেজার অনিল চৌধুরি ও সাউন্ড রেকর্ডিস্ট দুর্গা সেন আমার বাড়িতে এসে বললেন, মানিকদা আপনাকে একবার ডেকেছেন৷ সত্যজিৎ রায় সেই সময় থাকতেন মেনকা সিনেমা হলের কাছাকাছি ৩নং লেক টেম্পল রোডে৷ কাশী মিত্র ঘাট স্ট্রিট থেকে লেক টেম্পল রোডের দূরত্ব কতটা আশাকরি আপনারা বুঝতে পারছেন৷ কলকাতার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত৷ অনিলবাবু ট্যাক্সিভাড়া দিতে চেয়েছিলেন৷ আমি নিইনি৷ সত্যজিৎ রায় যখন ডেকেছেন গিয়ে দেখি কী হয়৷ মাকে বললাম৷ মা বললেন, কত ট্যাক্সিভাড়া পড়বে জানিস? তখন আমার একটু অর্থাভাবও ছিল৷ সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে দেখা করলাম৷ উনি বললেন, আমি ‘অভিযান’-এর আউটডোরে যাচ্ছি, ফিরে এসে কথাবার্তা হবে৷ আমাকে চা, তার সঙ্গে ব্রাহ্মসমাজের একরকম চানাচুর হয়, দারুণ মুখরোচক, অফার করলেন৷ আউটডোর থেকে ফিরে এসে আমাকে ‘মহানগর’-এর চিত্রনাট্য পড়ে শোনালেন৷ মানিকদার নিজের হাতে লেখা৷ তখন তো ফোটোকপির সুবিধা ছিল না৷ ওঁর ছবির অভিনেতা-অভিনেত্রী প্রত্যেকের জন্য আলাদা চিত্রনাট্য নিজের হাতে লিখে দিতেন৷ কতটা পরিশ্রমসাধ্য কাজ ছিল ভাবুন একবার! ‘মহানগর’-এর পুরো চিত্রনাট্য মায়ের কাছে রেখেছিলাম৷ পরে সেটা আর খুঁজে পাইনি৷ এই আক্ষেপ আমার কোনওদিন যাবে না৷—চলবে
ছবি: সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে।
‘…তখন আমি উত্তর কলকাতার কাশী মিত্র ঘাট স্ট্রিটে থাকতাম৷ ভাড়া বাড়ি৷ ততদিনে বেশ কয়েকটি ছবিতে আমার অভিনয় করা হয়ে গিয়েছে৷ একটু-আধটু প্রশংসাও পাচ্ছি৷ হঠাৎ একদিন সত্যজিৎ রায়ের প্রোডাকশন ম্যানেজার অনিল চৌধুরি ও সাউন্ড রেকর্ডিস্ট দুর্গা সেন আমার বাড়িতে এসে বললেন, মানিকদা আপনাকে একবার ডেকেছেন৷ সত্যজিৎ রায় সেই সময় থাকতেন মেনকা সিনেমা হলের কাছাকাছি ৩নং লেক টেম্পল রোডে৷ কাশী মিত্র ঘাট স্ট্রিট থেকে লেক টেম্পল রোডের দূরত্ব কতটা আশাকরি আপনারা বুঝতে পারছেন৷ কলকাতার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত৷ অনিলবাবু ট্যাক্সিভাড়া দিতে চেয়েছিলেন৷ আমি নিইনি৷ সত্যজিৎ রায় যখন ডেকেছেন গিয়ে দেখি কী হয়৷ মাকে বললাম৷ মা বললেন, কত ট্যাক্সিভাড়া পড়বে জানিস? তখন আমার একটু অর্থাভাবও ছিল৷ সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে দেখা করলাম৷ উনি বললেন, আমি ‘অভিযান’-এর আউটডোরে যাচ্ছি, ফিরে এসে কথাবার্তা হবে৷ আমাকে চা, তার সঙ্গে ব্রাহ্মসমাজের একরকম চানাচুর হয়, দারুণ মুখরোচক, অফার করলেন৷ আউটডোর থেকে ফিরে এসে আমাকে ‘মহানগর’-এর চিত্রনাট্য পড়ে শোনালেন৷ মানিকদার নিজের হাতে লেখা৷ তখন তো ফোটোকপির সুবিধা ছিল না৷ ওঁর ছবির অভিনেতা-অভিনেত্রী প্রত্যেকের জন্য আলাদা চিত্রনাট্য নিজের হাতে লিখে দিতেন৷ কতটা পরিশ্রমসাধ্য কাজ ছিল ভাবুন একবার! ‘মহানগর’-এর পুরো চিত্রনাট্য মায়ের কাছে রেখেছিলাম৷ পরে সেটা আর খুঁজে পাইনি৷ এই আক্ষেপ আমার কোনওদিন যাবে না৷—চলবে
ছবি: সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে।