নদীয়ার চাকদহ থেকে ইডেনের বিশ্বকাপ ফাইনাল, সহজ ছিল না যাত্রাটা। হাজার একটা 'করতে নেই'-এর মাঝে নিয়ত জীবন যাপন যে ভারতীয় মহিলাদের তাঁদের মধ্যে এই মেয়েটা বরাবরই ছিল লম্বা রেসের ঘোড়া। কোনও বাধাই তাঁর কাছে বাধা নয়। একগুচ্ছ 'করতে নেই'কে অতিক্রম করে তিনি যথার্থ অর্থেই হয়ে উঠেছিলেন ভারতবর্ষের 'সোনার মেয়ে'। তিনি ঝুলন গোস্বামী। ইস্ট জোন উইমেন, এশিয়া উইমেন ইলেভেন এবং বেঙ্গল উইমেনের দলের মুখপাত্র হিসাবে ক্রিকেটার ঝুলন গোস্বামীর নাম আজ ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের প্রতিটি কোনায়। ব্যক্তিত্বের এই অপার বিস্তৃতি কি কেবলই প্রতিভার জোরে?...
দশভুজা
অনন্যা: সে আমাদের নিরুদ্দেশের যাত্রী
কথায় বলে স্মৃতিই নাকি মানুষকে অমরত্ব প্রদান করে। মনুষ্যজীবনের নশ্বরতাকে স্মৃতির অণু-পরমাণুই অতিক্রম করে তাকে করে তুলতে পারে অসীমের যাত্রী। আর আমরা বলি কেবল স্মৃতি নয়, ব্যক্তি প্রতিভার আধারে যে কীর্তি প্রতিভাত হয়, সেই কীর্তিই স্মৃতির আধারে আধারিত হয়ে বিশেষ করে তোলে ব্যক্তি প্রতিভাকে, মহান করে তোলে মনুষ্যত্বকে। আজ তেমনই এক মেয়ের কথা বলতে এসেছি। ব্রহ্মাণ্ডের প্রতিটি কোণে ছিল তার অবাধ বিচরণ। সেইজন্যই বোধকরি ব্রহ্মাণ্ডের দত্তক পুত্রী চিরতরে নিরুদ্দেশের পথে রওয়ানা দিলেন। তাঁর নাম কল্পনা চাওলা। ভারতের প্রথম মহিলা...
আন্তর্জাতিক নারী দিবস:
‘প্রাণের পুণ্যে ভরা’
'যা আমাকে অমরত্বই দিতে পারে না, সে ঘণ্টার ছাতা টাকাকড়ি নিয়ে আমি করবটা কী? ধুর!'— দুই গিন্নিকে ধনরত্নের 'তুক' দিয়ে পণ্ডিত কত্তার সংসারত্যাগী পিঠটান দেওয়ার সময়টিতে এমনটাই 'জোর সা ঝটকা' দিয়েছিলেন তাঁদের একজন। অবধারিত সত্য যে সে ভাষাছাঁদ অবশ্যই এমন জেন-ওয়াই মার্কা ছিল না, কিন্তু বয়ানটির অভিমুখ মোটেই তাতে পাল্টি খায় না বাপু! এ হেন ভাষ্য প্রথমবার শুনে যে কারুর মনে পড়ে যাবে গত উনিশ শতকে বলা আরেক অমরত্বপ্রার্থীর বয়ান— 'অমর করিয়া বর দেহ দাসে, সুবরদে!— ফুটি যেন স্মৃতি-জলে, মানসে, মা, যথা ফলে মধুময় তামরস কি...
আন্তর্জাতিক নারী দিবস:
আমি নারী, নহি সামান্যা
জন্মসূত্রে নারীর সঙ্গে রয়েছে দুখানা এক্স ক্রোমোজোম। গবেষণায় নাকি অনুমান করা হয়েছে নারীর অধিক জীবনীশক্তি কিংবা পুরুষ অপেক্ষা দীর্ঘজীবনের মূলেও রয়েছে এর হাত, সে যে অপ্রতিহতগতি হবে এতে আর আশ্চর্য কী? বছরদুয়েক আগের একটি জনপ্রিয় সংগীতবিষয়ক ওয়েবসিরিজে শুনেছিলাম সুরসাধিকা এবং গুরু মা তাঁর ছেলেকে সংগীতসম্রাট নামের এক মস্ত শাস্ত্রীয় সংগীতের প্রতিযোগিতায় উত্তীর্ণ হবার জন্য সংগীতের পাঠ দেবার মুহূর্তে বলছেন, ‘বেটা, প্রাত্যহিক প্রতিটি কাজেই রয়েছে লয় আর সুর৷ তাই শুধু সুরসাধনা নয়, তুমি রোজের কাজে সেই সুরকে চেনার চেষ্টা করো৷...
আন্তর্জাতিক নারী দিবস:
অভেদ
নিশীথ রাতের নীরবতা, বা প্রত্যুষের নির্জনতা, বলতে পারবে কার বেশি গভীরতা? প্রভাতের সূর্য, নাকি পূর্ণিমা রাতের চাঁদ, বলো দেখি কে পারবে ভাঙতে সব সৌন্দর্যের বাঁধ? বৃষ্টিস্নাত পাহাড়ি অরণ্য, কিংবা পলাশে রাঙানো জঙ্গল ঘন, কার বলো তো বেশি লাবণ্য? উদ্যাম সে চঞ্চল ঝর্না, নাকি নিষ্পাপ পাহাড়িয়া চপল কন্যা, হৃদয়ে তোমার কে বেশি বয় বন্যা? কোনও এক গাঁয়ের বধূর নকশিকাঁথা, বা হঠাৎ খুঁজে পাওয়া তোমার ডায়েরির ছেঁড়া পাতা, কে থাকবে বলো তো বেশি তোমার হৃদয়ে গাঁথা? ভেসে আসা ভোরের সুরেলা আজান, নাকি মধুর প্রভাতি কীর্তন গান, বলতে পারো কোনটি বেশি...
আমার উড়ান: শোনো এক মাটির মেয়ের গল্প তবে…
'রেখো মাটির পরে দুটি পা রেখো মাটির সাথে দোস্তি, যেনো আকাশের কোনো ঠিক নেই মাটি মরণেও দেয় স্বস্তি।' এ এমন এক কন্যের গল্প যাকে প্রকৃত অর্থেই 'মাটির কন্যে' বলা চলে। মাটি আঁকড়েই তার লড়াই আরম্ভ হয়েছিল, আর মাটির সঙ্গে সখ্য বজায় রাখতে পারার মতো নম্রতা, সহিষ্ণুতাই তাকে একদিন 'দেশের একজন' হয়ে উঠতে সাহায্য করেছিল। আজ সে একজন আইপিএস অফিসার। লোকে বলবে 'খেতমজুর থেকে আইপিএস অফিসারের পথে উড়ান' আর আমরা বলব আইপিএসের যাত্রা আরম্ভের জন্য খেতমজুরের জীবনটাই তার ছিল অন্যতম মূলধন। নাম তার ইলমা আফরোজ৷ উত্তরপ্রদেশের কুন্দারকি গ্রামের...
আমার উড়ান: এ পৃথিবীজুড়ে থাকে হৃদয়ের ঘর-বসত
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অধিবাসী, জন্মগতসূত্রে ভারতীয়, লেখিকা ঝুম্পা লাহিড়ী চিরকাল তার লেখনীর মধ্য দিয়ে খুঁজে বেড়িয়েছেন তার শিকড়ের অস্তিত্বকে। আর সেই সন্ধান করতে করতেই তিনি তার লেখনীর মাধ্যমে তৈরি করেছেন এক বিশ্ব সংযোগসূত্র। আমাদের 'আমার উড়ান'-এ আজ এই প্রবাসী লেখিকার বিশ্ব সংযোগ সূত্রের চলনটিকেই খানিক ছুঁয়ে দেখার চেষ্টা।যা কিছু আমার চার পাশে ছিল ঘাসপাথর সরীসৃপ ভাঙা মন্দির যা কিছু আমার চার পাশে ছিল নির্বাসন কথামালা একলা সূর্যাস্ত যা কিছু আমার চার পাশে ছিল ধ্বংস তীরবল্লম ভিটেমাটি সমস্ত একসঙ্গে কেঁপে ওঠে পশ্চিম...
আমার উড়ান: বেনিয়মেই বাঁচুক নিয়ম, মানুষ আগে ‘মানুষ’ হোক, ওরা সবাই মুখচোরা, তবু মুক্তলয়েই গান বাঁধুক
জগতের আনন্দযজ্ঞে— 'তোমার যজ্ঞে দিয়েছ ভার, বাজাই আমি বাঁশি গানে গানে গেঁথে বেড়াই প্রাণের কান্নাহাসি এখন সময় হয়েছে কি? সভায় গিয়ে তোমায় দেখি জয়ধ্বনি শুনিয়ে যাব এ মোর নিবেদন'বিশ্বব্যাপী এ কর্মযজ্ঞে, জীবনের আনন্দযজ্ঞে তিনি মানবধর্মের বাণী সর্বসাধারণের মধ্যে ছড়িয়ে দেবেন বলেই শুরু করেছিলেন তার পথচলা। এ যাত্রা যেন কোনও মরমিয়া সাধিকার অনন্তের পথে আবহমান এক চলার গল্প, সাম্যের মন্ত্র ছড়িয়ে দেওয়ার ব্রত নিয়ে জনসমুদ্রে এসে দাঁড়িয়েছেন সেই সাধিকা। কিন্তু নারীর কণ্ঠে যখন প্রথাগত নিয়মতান্ত্রিকতার বিরোধিতা শোনা যায় তখন সেই...
আমার উড়ান: অসীমের যাত্রীর ডায়রি
জীবন যেন বাক্যময়—চারপাশের জীবন বড় বেশি শব্দময়, তাকে কিছু বাক্যের লালিত্য দাও, দাও ধ্বনির ছান্দিক কৃষ্টি, শব্দে বাসা বাঁধুক বিশ্বমানবতাবাদ নামক দেবী শ্রী, কমললোচনে। জীবন হোক ছন্দপূর্ণ। কে দেবে জীবনকে এই ছন্দের আদর? মানুষ দেবেন নিশ্চিতভাবেই। কোন মানুষ দেবেন? যিনি আত্মিক অর্থেই ছন্দের কারিগর, শিল্প যার আত্ম এবং অপর উভয়ই তিনি দেবেন। দেবেন সেই নারী যিনি কেবল ধারণ করেন না, রোপণ করেন, প্রয়োজনে বিষোদগারও করেন নিজেকে এবং সামগ্রিক সমাজকে সুস্থ জীবনদানের আশায়। এমনই এক মানুষের গল্প আজ শুনি তবে যিনি নিজের উড়ানের সমস্ত...
আমার উড়ান: বিদ্যার দেবীর আরাধনায় বিদ্যমান স্বয়ং ‘বিদ্যা’
বিগত দশকের মাঝামাঝি সময় থেকেই সমাজের প্রথাগত পুরুষতান্ত্রিক কাঠামোর বিবিধ ও বিভিন্ন প্রকার সংকীর্ণতার দিকে তর্জনী ওঠাতে আরম্ভ করেছেন সমাজের বিভিন্ন স্তরের, বিভিন্ন কর্মজগৎ থেকে আসা মহিলারা, উঠছে প্রশ্ন, যুক্তি ও শিক্ষার প্রভাব ভাঙছে ক্ষমতায়নের অচলায়তন। এবার সেই অচলায়তনের ঠিক ভরকেন্দ্রটিতে যেন হানা হল আঘাত। হিন্দু ধর্মের পরিকাঠামোয় পৌরোহিত্যে অধিকার কেবল পুরুষের, নারীরা সেখান চিরকালই নিষ্ক্রিয় এক আজ্ঞাপালনকারী দর্শক মাত্র। যদিও কেবল হিন্দুধর্ম না যেকোনও ধর্মই যখন প্র্যাকটিস থেকে প্রতিষ্ঠানমুখী হতে আরম্ভ করে তখনই...
ভারতীয় চলচ্চিত্রে বেড়েছে নারীকেন্দ্রিকতা। বাস্তবের চিত্রায়নেও কি ঘটছে বদল? কী বলছেন বাস্তবের স্বনির্ভরারা?
দয়াময়ীকে মনে পড়ে? ঘর-গেরস্থালির খুঁটিনাটির একটুকরো আঁচলে বেঁধে সংসার করতে এসেছিল যে মেয়েটি! কিন্তু সংসার রক্ত-মাংসের মানবজীবন থেকে সরিয়ে এনে তার স্থান নির্দিষ্ট করে দিয়েছিল 'দেবী'র আসনে। হ্যাঁ ঠিকই ধরেছেন, কথা বলছি প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় রচিত ছোটগল্প 'দেবী' অবলম্বনে সত্যজিৎ রায়ের নির্মিত চলচ্চিত্র 'দেবী'র কেন্দ্রীয় চরিত্র দয়াময়ীকে নিয়ে। পাশাপাশি আরেকটি চলচ্চিত্রের কথাও এই প্রসঙ্গে মনে পড়ে যায় ভীষণভাবে, মনোজ ভট্টাচার্য নির্মিত 'ডাইনি'। এই ছবিও এক নিতান্ত সাধারণ গৃহবধূর রক্তমাংসের মানবী থেকে মানবাতীত 'ডাইনি' হয়ে...
আমার উড়ান: অভিনয় করতে গিয়ে ভালোবেসে ফেললেন কেক-কে! কী রহস্য লুকিয়ে ‘তার’ এমন কেকপ্রীতির পেছনে?
বলিজগতের আকাশছোঁয়া স্বপ্নের দেশে কত তারা নিজেদের মতো করে ফুটে ওঠে। যাদের যাত্রাপথের কক্ষপথটি হয় জোরালো, তারা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হয়ে ওঠে উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর আর যাদের কক্ষপথে ভাগ্য মুচকি হেসে ছলনা করে তারা ম্লান হতে হতে কখন যেন হারিয়ে যায় তা বোঝাই যায় না অনেক সময়। কিন্তু অনেক তারকাই যথার্থ 'তারকা' হয়ে উঠতে না পারলেও তাদের অনেককেই কিন্তু দর্শক কোনও না কোনও কারণে মনে রেখে দেয়। এরকমই একজন তারকা হলেন বলি অভিনেত্রী 'সন্দলী' সিনহা। নাম হয়তো অনেক মানুষই ঠিক মনে করতে পারবেন না, কারণ তাকে সন্দলী নামে মানুষ চেনেন যত বেশি...
অনন্যা: জীবন-মরণের সীমানা ছাড়ায়ে
সেকালের মহীয়সী নারীরা, যাঁরা আগামী প্রজন্মের নারীদের পথ চলার অন্যতম পাথেয় হয়ে উঠতে পেরেছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম ডাঃ কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়। দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম মহিলা চিকিৎসক যিনি ছিলেন উনিশ শতকীয় পুরুষতান্ত্রিক বর্বরতার বিরূদ্ধে এক দৃষ্টান্তমূলক বৈপ্লবিক প্রতীক। ‘দশভুজা’-র বিশেষ বিভাগ ‘অনন্যা’-তে আমাদের আজকের বিশেষ শ্রদ্ধার্ঘ্য ডাঃ কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রতি।