একটি মেয়ে এবং একটি পত্রিকা! ঠিক এই জায়গা থেকে শুরু হোক আজকের গল্প। গিরীন্দ্রমোহিনী দাসীর কথা বলি। সেই সময়কার এক মহিলা কবি! ভারতী পত্রিকায় লেখা পাঠানোর সূত্রে ভারতী পত্রিকার সম্পাদকের সঙ্গে আলাপচারিতা শুরু হয়। লিখেছেন ড. মহুয়া দাশগুপ্ত।

একটি মেয়ে এবং একটি পত্রিকা! ঠিক এই জায়গা থেকে শুরু হোক আজকের গল্প। গিরীন্দ্রমোহিনী দাসীর কথা বলি। সেই সময়কার এক মহিলা কবি! ভারতী পত্রিকায় লেখা পাঠানোর সূত্রে ভারতী পত্রিকার সম্পাদকের সঙ্গে আলাপচারিতা শুরু হয়। লিখেছেন ড. মহুয়া দাশগুপ্ত।
মায়ের সঙ্গে মতের মিল হল না। ছোট্ট মেয়েটি বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ল। অভিমানে বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে ভেবে ট্রেনে চেপে বসল। ছোট্ট মাথায় ভবিষ্যতের বিপদের চিন্তা নেই। শিয়ালদা নেমে প্লাটফর্মে বসে আছে। এ সব জায়গায় ভিড়ে মিশে থাকে সুযোগ সন্ধানীরা। হাবভাব দেখেই বুঝে যায়।
উনিশ শতকে মেয়েদের জন্য আঁধার সময়। মেয়েদের আলোর খোঁজ তাদের নিজেদেরই করতে হয়। সেই সময় চিকের আড়াল থেকে সরস্বতীর লীলাকমল হাতে যে মেয়েরা সহজিয়া ভঙ্গিতে এসে দাঁড়িয়েছিলেন সাহিত্যের দরবারে, তাঁদের মধ্যে অন্যতম মানকুমারী বসু।
কামিনী রায় শুধু লেখক ছিলেন না। তিনি ছিলেন নেতৃস্থানীয়া! বাখরগঞ্জ জেলার ম্যাজিস্ট্রেটের মেয়ের মধ্যে যে নেতৃত্ব দেওয়ার যে ক্ষমতা ছিল তা একটি পরাধীন জাতির জন্য অগ্নিশিখা হয়ে উঠতে পারত। তিনি ছিলেন ভারতের প্রথম মহিলা, যিনি সংস্কৃত অনার্স-সহ বিএ পাস করেন।
রাসসুন্দরী আত্মজীবনী লেখার পথটা মেয়েদের জন্য খুলে দিয়েছিলেন। তাছাড়া আত্মজীবনী মেয়েদের মনের এক মুক্তির পথও ছিল। মোহিতকুমারীকে লেখক হিসেবে খুব কম জনই চেনেন। কিন্তু তাঁর লেখা সেই সময়ের এক দলিল। তাছাড়া মোহিতকুমারীর বর্ণময় জীবন যেকোনও জীবনীকারের লেখার বিষয় হতে পারে।
হেমেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং পূর্ণিমাদেবীর মেয়ে ছিলেন প্রজ্ঞাসুন্দরী দেবী। ঠাকুরবাড়ির রান্না নিয়ে তাঁর বইটি রন্ধনরসিকদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। তিনি ছিলেন লক্ষ্মীনাথ বেজবরুয়ার সহধর্মিণী। অত্যন্ত মেধাবী আর গুণী দম্পতির চারটি মেয়ে—সুরভি, অরুণা, রত্না ও দীপিকা।
বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতা ও বিপ্লবীদের কণ্ঠস্বর এবং নানাবিধ অসহযোগের খবর ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে মাত্র ২২ বছরের ঊষা মেহতা ও তাঁর সহযোগী বিটঠল ভাই জাভেরি, চন্দ্রকান্ত জাভেরি, বাবুভাই ঠক্কর, শিকাগো রেডিয়োর কর্ণধার নঙ্কা মোতয়ানির সহায়তায় ‘সিক্রেট কংগ্রেস রেডিয়ো’ প্রতিষ্ঠা করেন।
ঠাকুরবাড়ির বৌ হতে গেলে পিরালী ঘরের মেয়ে হতেই হত। এক সময় নিয়ম ছিল দাসীরা পুতুল নিয়ে যে মেয়ে পছন্দ করে আসবে, তার সঙ্গেই বিয়ে হবে ঠাকুরবাড়ির ছেলের। এ ভাবেই তো গড়িয়ে গিয়েছে কতদিন! তবে ঠাকুরবাড়িতে লেখাপড়অর চর্চায় পিছিয়ে ছিলেন না মেয়েরাও।
‘আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে’ দীর্ঘ পথ ধরে এগিয়ে চলেছেন এক নারী। একা। অনেক প্রতিবন্ধকতা পেরিয়েছেন। এখনও থামেননি। তবে সঙ্গে কিছু সহযোগী পেয়েছেন। তৈরি হয়েছে ‘সৃষ্টির পথে’ নামে সংস্থা।
রবিঠাকুরের ছেলেমেয়েদের মধ্যে বাবার চিঠি নিয়ে রীতিমতো কাড়াকাড়ি পড়ে যেত। ছোট ভাই রথীর অভিমানের খবরও দিদি মাধুরীলতা পৌঁছে দিতো পত্রের হরফে হরফে। কখনও আবার মেয়ের চিঠির সঙ্গে দুইকলম চিঠি লিখে দিতেন মৃণালিনীও।
রবি ঠাকুরের পরিবারের মেয়ে শোভনা। কিন্তু তিনি রবীন্দ্রনাথের লেখার চেয়ে তিনি স্বর্ণকুমারী দেবীর লেখা পড়ে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। স্বর্ণকুমারীর ‘কাহাকে’ অনুবাদ করতে করতে শোভনা স্বপ্ন দেখতেন লেখক হওয়ার।
সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং জ্ঞানদানন্দিনী দেবীর মেধা ও আধুনিকতার স্পর্শে আরও দীপ্তিময়ী হয়ে উঠেছিলেন ইন্দিরা। উনিশ শতকের প্রাণবন্ত সরস্বতীই ছিলেন তিনি। তখনকার সময় ইন্দিরাদেবীর জীবনের গল্প রূপকথার চেয়ে কম ছিল না।
করছেন। সম্প্রতি কল্যাণী বিধানচন্দ্র মেমোরিয়াল গভর্নমেন্ট গার্লস স্কুলের সরস্বতী পুজো করলেন সেই স্কুলেরই শিক্ষিকা। সংস্কৃতের মৌসুমী দিদি।
সুখলতার শ্বশুরমশাই ছিলেন বিখ্যাত ওড়িয়া ভাষার লেখক মধুসূদন রাও, স্বামী সিভিল সার্জেন। সুখলতার জীবনে নতুন দিগন্ত খুলে গেল। বাংলা ভাষা আর ওড়িয়া ভাষার মেশবন্ধন ঘটল তাঁর সাহিত্যে। সুখলতা অপূর্ব ছবিও আঁকতেন।
বেথুনে পড়তে যাওয়া মেয়েরা যে সময় পুরুষতান্ত্রিক সমাজের চোখে বিপথগামিনী, ঠিক সেই সময় কলম ধরেছিলেন স্বর্ণকুমারী দেবী। দেবেন্দ্রনাথ ও সারদাদেবীর চতুর্থ কন্যা স্বর্ণকুমারীর পরিচয় শুধু ঠাকুরবাড়ির মেয়ে, ব্যারিস্টার জানকীনাথ ঘোষালের স্ত্রী অথবা রবীন্দ্রনাথের দিদি— এই গণ্ডিতে আবদ্ধ রইল না।