আমাকে আবার প্রায় এক মাইল পথ পেরিয়ে আমার বিভাগে পৌঁছতে হবে গরম জায়গায় ঢুকতে গেলে। আর এই একবার জমে যাওয়া অবস্থায় অতটা পথ পেরোতে গেলে আমার গলায় যে কি হবে আমি নিজেও জানি না।

আমাকে আবার প্রায় এক মাইল পথ পেরিয়ে আমার বিভাগে পৌঁছতে হবে গরম জায়গায় ঢুকতে গেলে। আর এই একবার জমে যাওয়া অবস্থায় অতটা পথ পেরোতে গেলে আমার গলায় যে কি হবে আমি নিজেও জানি না।
মুখের শীতের মাস্কটা একটু ভালো করে নিঃশাস নেওয়ার জন্য এক মিনিটের জন্য খুলে রেখেছি। তার পরে সেটা পরতে গিয়ে দেখি সেটাও পুরো জমে কাঠ। মুখের নিঃশ্বাসে যে ভাপ বেরোচ্ছে সেটা ওই মাস্কের একদিকে জমে বরফ হয়ে গিয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যা প্রায় ১০.৫ কোটি, যেখানে আলাস্কার জনসংখ্যা মাত্র ৭.৫ লক্ষ। অর্থাৎ আলাস্কা পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় পরিমাপের নিরিখে প্রায় ৫ গুণ বড় অন্যদিকে আলাস্কার জনসংখ্যা পশ্চিমবঙ্গের ১৪২ ভাগের চেয়েও কম।
গোটা ফেয়ারব্যাঙ্কস শহরের জনঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে মাত্র তিনশকুড়ি যেখানে কলকাতায় প্রতি বর্গ কিলোমিটারে চব্বিশহাজারেরও বেশি লোক বসবাস করে। অর্থাৎ ফেয়ারব্যাঙ্কসের তুলনাল কলকাতার জনঘনত্ব প্রায় ৮০ গুণ বেশি।
এই পর্বে শীতকালের সেই প্রতিরাতের কথাই বলবো। তীব্র শীত, মাসের পর মাস শুধু অন্ধকার, তার মধ্যে কেমন ভাবে চলে এখানকার আমাদের জীবন সেসব কথাই বলবো এই পর্বে।
জানুয়ারির ১৭-১৮ নাগাদ থেকে ঠান্ডা কমে গিয়েছে অনেকটাই। তাপমাত্রা মাইনাস ২০-এর ওপরে থাকছে প্রায় সবসময়েই। মানে উইসকনসিনের মতোই আর কী।
মুঠোফোনের ব্যাটারি শেষ হয়ে যাওয়া নিয়ে মজার অভিজ্ঞতা হয়েছিল। আসার দু’দিন পর একদিন গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছি। নতুন এসেছি বলে তেমন কিছুই চিনি না। গুগল ম্যাপ ধরে চালাচ্ছি। যেখানে থামছি ছবি তুলছি।
প্রায় প্রতিদিনই গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছি। কখনও বাড়িতে ইন্টারনেটের বন্দোবস্ত করার জন্য, কখনও কিছু জিনিস কেনার জন্য বা বিভিন্ন রকম কাজে। সমস্ত রকম সতর্কবাণী উপেক্ষা করেই বেরিয়েছি।
মনে মনে ভাবলাম যে তুমি আমার ঈশ্বরের দূত। তার নাম ডেল। সে বিমানবন্দরে কাজ করে। এই পথে বাড়ি ফেরে। সে এসে আমার চাকার চারিদিক দেখে বলল যে, আর পরিষ্কার করার কিছু নেই।
ইষ্টনাম জপে দিলাম এক্সেলেরেটরে চাপ। কিন্তু প্রকৃতির ক্রিয়া কলাপে ইষ্টেরও হাত থাকে না। এতো কিছুর পরেও যে কে সেই। অর্থাৎ চাকা বনবন ঘুরে যাচ্ছে আর এগোনো বা পিছন যাচ্ছে না এতটুকুও।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে রাস্তা যদি একেবারে সমতল হয়, বরফ জমে যাচ্ছে একদম মসৃণ হয়ে। সে এমন মসৃণ যে তাতে পাশাপাশি গাছের প্রতিফলন দেখা যায়।
যাই হোক, মনস্থির করে ফেললাম যখন বেরোবো, তখন আর দেরি করে লাভ নেই। ধীরে ধীরে গাড়ি চালিয়ে ঠিক পৌঁছে যাবো, এরকম ভেবেই আবার বাইরে বেরোনোর জন্য প্রস্তুত হলাম।
বরফের উষ্ণতা থাকে শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর এই মেরুর দেশে তার চাইতে আরও ৩০ থেকে ৪০ ডিগ্রি কম। এখানে ফ্রস্টবাইটে চামড়ার অনেক ভিতরে থাকা শরীরের কলা-কোষগুলি নষ্ট হতে থাকে রক্ত চলাচলের অভাবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম দিন গিয়ে বুঝলাম যে ৪-৫ ডিগ্রি পার্থক্য তো কিছুই নয়। নতুন চাকরিতে যোগদানের দিন সকালেই নিকটবর্তী পাহাড়ে তাপমাত্রা ছিল মাইনাস ১৮ ডিগ্রি আর নিচে মাইনাস ৩৭ ডিগ্রি।
দপ্তর থেকেও সবাই বেরিয়ে গিয়েছে যে তাঁদের বলে কিছু ব্যবস্থা করা যাবে। আমি প্রথমেই ওরায়নকে জানালাম ব্যাপারটা। সে বললো যে দেখছে কিছু ব্যবস্থা করা যায় কিনা।