ভূ-তাত্ত্বিক বিভাগ ছাড়িয়ে পাহাড়ের ওই চূড়া থেকে পাহাড়ের উল্টো দিকে নেমে গিয়েছে বেশ কয়েকটা স্কি করার ট্রেইল। ভূ-তাত্বিক বিভাগের দিকে হাঁটতে হাঁটতে একটি ভবন বা বিল্ডিংয়ের ওপরে দেখি এক বিশাল বড় গোল মতো অ্যান্টেনা।

ভূ-তাত্ত্বিক বিভাগ ছাড়িয়ে পাহাড়ের ওই চূড়া থেকে পাহাড়ের উল্টো দিকে নেমে গিয়েছে বেশ কয়েকটা স্কি করার ট্রেইল। ভূ-তাত্বিক বিভাগের দিকে হাঁটতে হাঁটতে একটি ভবন বা বিল্ডিংয়ের ওপরে দেখি এক বিশাল বড় গোল মতো অ্যান্টেনা।
ডিন মহাশয় বেশ আমুদে লোক। খুব হইচই করতে ভালোবাসেন। নিজের একটা গানের দল বা ব্যান্ডও আছে। তার সঙ্গে সাক্ষাৎকার শুরু হতেই তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি যদি ক্লান্ত না থাকো তাহলে গোটা বিশ্ববিদ্যালয়টা ঘুরতে ঘুরতেই তোমার সঙ্গে কথা হতে পারে।
নদীর ওপাশটা বেশ ঘন বনভূমি। সেখানে চিরহরিৎ কনিফার আর পর্ণমোচী বার্চ এবং অ্যাস্পেন, সবকিছুরই সমান সমারোহ। তার সামনেটায় বড় করে পাথর কেটে সেগুলোকে ইংরেজি হরফের মতো বানিয়ে লেখা আছে ‘লাভ আলাস্কা’।
আলাস্কার এই সব অসুবিধার সম্পর্কে আমি অনেক আগে থেকেই জানতাম। এই সমস্ত কিছুকে চোখের সামনে দেখবো বলেই আমার আলাস্কা আসার এতো ইচ্ছা। চিরাচরিত আরামের মধ্যে বেশিদিন একটানা থেকে আমি কোনওদিনই খুব একটা শান্তি পাইনি। বারবার বেরিয়ে পড়েছি অজানার উদ্দেশ্যে।
শহর থেকে দু’ মিনিট বাইরে গেলেই সেখানে পুরোপুরি কাঁচা রাস্তা। কোথাও কোথাও বা পাথুরে রাস্তা। কাজেই ওসব রাস্তায় ট্রাক বা ওই ধরণের শক্তপোক্ত গাড়িই ভালো চলে।
২০২১ সালের মে মাস নাগাদ আমার প্রথম ডাক আসে ইউনিভার্সিটি অফ আলাস্কা-ফেয়ারব্যাঙ্কসে সহ-অধ্যাপকের ইন্টারভিউর জন্য। দ্বিতীয় পর্বের ইন্টারভিউ দেওয়ার জন্যই আমাকে যেতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই যাতায়াতের সমস্ত খরচ বহন করে। যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যাপনার চাকরির এটাই নিয়ম।
দাম্পত্য জীবনের শুরুতে আমাদের দু’ জনের সব রকমের অনুভূতির প্রায় সবটুকুই তাকে ঘিরে। জানলা দিয়ে তার চুইয়ে পড়া স্নিগ্ধ আলোয় সময়ের হিসেবে ছাড়াই শুরু করা যায় ক্যান্ডেল লাইট ডিনার।
সূর্যের আলো এখানে অনেকটা তির্যক ভাবে পড়ে। কাজেই আলোটা কাছাকাছি পাহাড়ের ঢালে যেখানে সরাসরি পরে সেই খানে বেশ খানিকটা জায়গা হয়ে যায় রোদ ঝলমলে। আর বাকি জায়গাগুলো থাকে অপেক্ষাকৃত অনেকটাই অন্ধকার।
এ যেন সত্যিই ‘প্রকৃতির অন্তরাকাশে জাগরিত জোতির্ময়ী জগন্মাতার আগমন বার্তা। আনন্দময়ী মহামায়ার পদধ্বনি অসীম ছন্দে বেজে উঠে রূপলোক ও রসলোকে নিয়ে এসেছে ভাব মাধুরীর সঞ্জীবন’, আশৈশব আকাশবাণীতে বিরূপাক্ষের কণ্ঠে শুনে আসা মহালয়ার মাতৃবন্দনার এ যেন সত্যিকারের দৃশ্যায়ণ।
তড়িঘড়ি গিয়ে ফোনটা তুললাম। ফোন তোলা মাত্রই সে বলতে শুরু করলো। কোনও রকম সম্ভাষণ কিছু না করেই সটান আমাকে আর আমার সহধর্মিণীকে তক্ষুনি তৈরি হয়ে নিতে বললো। তারা নাকি ইতিমধ্যেই রাস্তায়। এখনই আসছে গাড়ি নিয়ে আমাদের তুলতে।
আলাস্কার আকাশে মেরুজ্যোতি দেখা যাবে কিনা সেটা বোঝা যায় ‘কেপি ইনডেক্স’ বলে একটি ধ্রুবকের সাহায্যে। এটা আসলে সৌরঝড় পরিমাপ করার একটি ধ্রুবক। এর মান ‘০’ থেকে ‘৮’ এর মধ্যে পরিবর্তিত হতে থাকে। শূন্য হওয়ার অর্থ কোনও সৌরঝড় নেই। অর্থাৎ মেরুজ্যোতি দেখারও কোনও সম্ভাবনা নেই।
মেরুজ্যোতিকে দেখা যেন এক অদ্ভুত অনুভূতি। যখন সে সর্পিল গতিতে মহাকাশের একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে চলে যায় সমস্ত বুকের মধ্যে যেন এক শিহরণ খেলে যায়। বিধাতার ওপরে হয়তো একটু অভিমান হয় তাকে সেই মন্দিরের গহীন কোণে আটকে রাখার জন্য।
সূর্য একটি বিরাট আগুনের পিণ্ড যার মধ্যে বহু গ্যাসীয় পদার্থ এবং ধাতব পদার্থ ভৌত ও রাসায়নিক পদ্ধতিতে প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে আবার গলে যাচ্ছে। একে বলা যেতে পারে সৌর কার্যপ্রণালী বা সোলার অ্যাকটিভিটি।
আলাস্কায় চূড়ান্ত শীতের কষ্ট বা অন্ধকার রাতের সমস্ত ভয় দূরে সরে যায় যখন ওই অন্ধকারের বুক চিরে চলে যায় উজ্জ্বল সবুজ মেরুজ্যোতি। আর ঠিক তখনই মনে হয় এই যাবতীয় ভয়, কষ্ট, অসহনীয়তা সব কিছু মেনে নেওয়া যায় তার জন্য।
মাত্র দুই থেকে তিনফুট মতো দেখা যাচ্ছে সামনে। পিছনের কাঁচ দিয়ে তো কিছুই দেখা যাচ্ছে না। কাজেই গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছি পুরো আন্দাজে। আর সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হল সবাই ওভাবেই চালাচ্ছে। অর্থাৎ সামনে পাশে কোন গাড়ি যাচ্ছে কেউ কিছু দেখতে পাচ্ছে না।