বিমান উড়তেই যেন একটা অদ্ভুত অনুভূতি। যেন স্থান-কালের একটা বিস্ময়কর জায়গা থেকে আমি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলাম। কি অদ্ভুত, কি বিস্ময়কর, তাকে ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। সত্যিই স্থান-কালের এক অদ্ভুত জায়গায় এই ফেয়ারব্যাঙ্কস।

বিমান উড়তেই যেন একটা অদ্ভুত অনুভূতি। যেন স্থান-কালের একটা বিস্ময়কর জায়গা থেকে আমি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলাম। কি অদ্ভুত, কি বিস্ময়কর, তাকে ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। সত্যিই স্থান-কালের এক অদ্ভুত জায়গায় এই ফেয়ারব্যাঙ্কস।
আমি এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াতে লাগলাম। হঠাৎ একটা জায়গায় গিয়ে রাস্তার ধারেই থরে থরে সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড় করানো আছে ছোট থেকে মাঝারি মাপের অনেক বিমান। আমি আর কালক্ষেপ না করে সেখানেই গাড়ি ঢোকাতে গেলাম। ওমা, গাড়িটা দাঁড় করতে গিয়ে দেখি সে আরও মজার ব্যাপার। সেখানে গাড়ি আর বিমান পাশাপাশিই দাঁড় করানো আছে।
এখন দেশের অটো-টোটো বা গাড়ির প্রাচুর্যের সঙ্গে তুলনা করলেই বোঝা যাবে এখানে বিমান বা হেলিকপ্টারের প্রাচুর্য ঠিক কতটা। এই কথাটা আমি আগেই শুনেছিলাম, কিন্তু ওই ইন্টারভিউয়ের দিন চাক্ষুষ করার আগে ব্যাপারটা ঠিক উপলব্ধি করতে পারিনি। প্রথমত ইন্টারভিউয়ের সময় যখনই ওই ডিন মহাশয়ের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় পরিভ্রমণে বেরিয়েছিলাম তখনই আকাশে দেখেছি ওই ব্যক্তিগত বিমানগুলো উড়ছে মুহুর্মুহু।
দু’ পাশের সারি সারি বরফ ঢাকা গাছ। তার মধ্যে দিয়ে আঁকাবাঁকা বরফে ঢাকা নদী। আর ওপর দিয়ে আমি চলে যাচ্ছি স্লেজে চেপে। মাথার ওপরে খেলা করছে মেরুজ্যোতি। যেন আমাকে নিয়ে চলে যাচ্ছে স্বর্গের কাছাকাছি, যেখানে সান্তাক্লজ এখুনি আমার জন্য স্বর্গের দরজাটা খুলে দেবে।
চেনা নদীর ওপরে অনেক রকম বিনোদন মূলক কার্যকলাপ হয়। তারমধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হল ‘রিভারবোট ডিসকভারি ক্রুজ’। গ্রীষ্মকালে একটা চারতলা বিশাল নৌকায় চাপিয়ে ফেয়ারব্যাঙ্কস থেকে পর্যটকদের নিয়ে যাওয়া হয় চেনা নদীর মোহনায় যেখানে সেটা ট্যানানা নদীর সঙ্গে মিশেছে।
এই সফেদ পর্বতমালা থেকেই উৎপন্ন হয়েছে চেনা নদী যাকে ঘিরে আমার আদিখ্যেতার সবটুকু। এখন উত্তরে সফেদ পর্বতমালা আর দক্ষিণে আলাস্কা পর্বতমালা পেরিয়ে দু’ দিক থেকেই ফেয়ারব্যাঙ্কস শহরের একদম কাছাকাছি চলে এলে দেখা যাবে যে এই শহর কয়েকটা ছোট ছোট পাহাড় দিয়ে ঘেরা।
অ্যাঙ্করেজ আর ফেয়ারব্যাঙ্কস তুলনা করতে গেলে সেই ছোটবেলায় শহর ও গ্রামের তুলনা করে রচনা লেখার কথা মনে পড়ে যায়। অ্যাঙ্করেজে সুযোগ সুবিধা অনেকটাই বেশি ফেয়ারব্যাঙ্কসের তুলনায়। আমাদের ভারতীয়দের দৈনন্দিনের দিক থেকে দেখতে গেলে সেখানকার সুবিধাগুলো আরও বেশি করে চোখে পড়ে।
অ্যাঙ্করেজ আর ফেয়ারব্যাঙ্কস তুলনা করতে গেলে সেই ছোটবেলায় শহর ও গ্রামের তুলনা করে রচনা লেখার কথা মনে পড়ে যায়। অ্যাঙ্করেজে সুযোগ সুবিধা অনেকটাই বেশি ফেয়ারব্যাঙ্কসের তুলনায়। আমাদের ভারতীয়দের দৈনন্দিনের দিক থেকে দেখতে গেলে সেখানকার সুবিধাগুলো আরও বেশি করে চোখে পড়ে।
আলাস্কা ঘুরতে এসেই আমি আমার বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয় অর্থাৎ ইউনিভার্সিটি অফ আলাস্কা ফেয়ারব্যাঙ্কস সম্পর্কে প্রথম জানতে পেরেছিলাম। তার আগে আমার ধারণাও ছিল না যে আলাস্কায় কোনও বিশ্ববিদ্যালয় আছে বলে।
আমার পিএইচডি-র পড়াশোনার প্রথম দিকে, মানে যখন আমি সবে সবে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছি, তখনও পর্যন্ত আমি ভাবতাম যে, আমার গন্তব্য সানফ্রান্সিসকো, প্রযুক্তির পীঠস্থান। আমি কম্পিউটার সায়েন্স-এর ছাত্র। কাজেই আর পাঁচজনের মতোই আমি চাইতাম সিলিকন ভ্যালিতে কোনও একটি বড় সংস্থায় চাকরি করতে।
প্রাগৈতিহাসিক থেকে শুরু করে অত্যাধুনিক সবকিছুরই কি অদ্ভুত সংমিশ্রণ। আমার ভাবতেই বেশ ভালো লাগল যে এটাই পৃথিবীর একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় যাদের নিজেদের রকেট উৎক্ষেপণ কেন্দ্র রয়েছে। আবার তারই আনাচেকানাচে প্রাগৈতিহাসিক যুগের সাক্ষ্য পড়ে রয়েছে।
নাসা-সহ দেশের বিভিন্ন সংস্থা বিশ্ববিদ্যালয়ের রকেট উৎক্ষেপণ কেন্দ্র থেকে রকেট উৎক্ষেপণ করে, যেগুলো ছোট ছোট কৃত্রিম উপগ্রহ (আর্টিফিশিয়াল স্যাটেলাইট) বয়ে নিয়ে গিয়ে মহাকাশে পৃথিবীর চারিদিকে বিশেষ কিছু কক্ষপথে তাদের বসিয়ে দেয় বিবিধ রকমের তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে।
ভূ-তাত্ত্বিক বিভাগ ছাড়িয়ে পাহাড়ের ওই চূড়া থেকে পাহাড়ের উল্টো দিকে নেমে গিয়েছে বেশ কয়েকটা স্কি করার ট্রেইল। ভূ-তাত্বিক বিভাগের দিকে হাঁটতে হাঁটতে একটি ভবন বা বিল্ডিংয়ের ওপরে দেখি এক বিশাল বড় গোল মতো অ্যান্টেনা।
ডিন মহাশয় বেশ আমুদে লোক। খুব হইচই করতে ভালোবাসেন। নিজের একটা গানের দল বা ব্যান্ডও আছে। তার সঙ্গে সাক্ষাৎকার শুরু হতেই তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি যদি ক্লান্ত না থাকো তাহলে গোটা বিশ্ববিদ্যালয়টা ঘুরতে ঘুরতেই তোমার সঙ্গে কথা হতে পারে।
নদীর ওপাশটা বেশ ঘন বনভূমি। সেখানে চিরহরিৎ কনিফার আর পর্ণমোচী বার্চ এবং অ্যাস্পেন, সবকিছুরই সমান সমারোহ। তার সামনেটায় বড় করে পাথর কেটে সেগুলোকে ইংরেজি হরফের মতো বানিয়ে লেখা আছে ‘লাভ আলাস্কা’।