পরীক্ষিৎ মাঝেমধ্যে বুদ্ধিমানের মতো কথা বলে। সুদীপ্ত সায় দিল। তার ড্রেসচেঞ্জ হয়ে গিয়েছিল। সে হাতে ঘড়ি পরছিল। এই ঘড়ি পরাটা তার কাছে অন্যতম জরুরি একটা কাজ। অথচ কাজের চাপে ঘড়ি দেখার সময়ই পায় না বেশিরভাগ সময়।

পরীক্ষিৎ মাঝেমধ্যে বুদ্ধিমানের মতো কথা বলে। সুদীপ্ত সায় দিল। তার ড্রেসচেঞ্জ হয়ে গিয়েছিল। সে হাতে ঘড়ি পরছিল। এই ঘড়ি পরাটা তার কাছে অন্যতম জরুরি একটা কাজ। অথচ কাজের চাপে ঘড়ি দেখার সময়ই পায় না বেশিরভাগ সময়।
রিমিতার এক মুহূর্ত লাগল, পূষণের রসিকতা বুঝতে। তারপর সে দুম দুম করে কিল বসিয়ে দিল তার পিঠে, বলল, “তুমি কি আমাকে বোকা পেয়েছ? বইটার নাম—‘আমার মা সব জানে’, এখানে বউ কোথা থেকে এল?”
গাড়িটা অরক্ষিত অবস্থায় রেখে গিয়েছিল জীবন। আসলে ঘটনার আকস্মিকতায় তার মাথায় আসেনি যে, অরক্ষিত গাড়িতে চাবি ঝুলিয়ে চলে গেলে, যে কোনও সময় যে কেউ গাড়িটা নিয়ে কেটে পড়তে পারত। এখানে এমন আকছার ঘটে। আর একবার গাড়ি চালিয়ে পার্শ্ববর্তী রাজ্যে ঢুকে পড়লে আর তাকে ধরে কে?
সামনেই শাক্য দৌড়াচ্ছিল। পাভেল তাকেই অনুসরণ করছিল। তবে শাক্যকে দেখে তার মনে হচ্ছিল সে অগ্রপশ্চাৎ বিবেচনা না-করেই দৌড়াচ্ছে। সে অন্তত এ ভাবে পারবে না। তার অত স্পিড নেই। সে স্পটে দাঁড়িয়েই অপেক্ষা করতে পারত। শাক্য তাকে বলেনি অনুসরণ করতে।
অভিষেক মালাকরের গলা শোনা গেল, “বুঝতে পারছি সেই ভোর থেকে যা ধকল গিয়েছে তোমার, তুমি খুব টায়ার্ড। কাল রাতেও তো তোমার ডিউটি ছিল। কিন্তু আমি এমন হতভাগ্য যে তোমাকে একটু বিশ্রামের সুযোগ করে দেবো, সে আমার কপালে নেই। সে জন্য বাধ্য হয়েই…”, কথা শেষ করেন না মালাকর। একটা অসহায়তার আক্ষেপ শোনা যায় তাঁর গলায়।
অঞ্জন অস্থিরভাবে বলল, “সত্যি অরণ্য, আমার আর ভালো লাগছে না। কেমন যেন একটা ধাঁধার মধ্যে ঘুরপাক খেয়েই চলেছি। দম বন্ধ হয়ে আসছে আমার। পুলিশ যা পারে করুক, যাকে অপরাধী হিসেবে পাকড়াও করে করুক, সে যদি আমিই হই, আমাকেই ধরুক। কিন্তু ধরুক। প্রতিমুহূর্তের মানসিক যন্ত্রণার হাত থেকে অন্তত মুক্তি পাব!”
অবাক হয়ে গেল শাক্য। মেয়েটি, যে নিজের অদ্ভুত নাম বলছে, ‘নুনিয়া’, সে জানে যে, শাক্য কোন্ কারণে এখানে এসেছে? এ কী থট রিডিং জানে না কি?
শাক্য চাইছিল যেভাবেই হোক, লোকটা ধরা পড়ুক। তাহলেই জানা যাবে, কী উদ্দেশ্য নিয়ে লোকটা এখানে এসেছিল। সে কি তাদের উপর নজর রাখবার জন্য এসেছিল, না কি নিজের প্রয়োজনেই এসেছিল? এই প্রশ্নের উত্তরের উপর নির্ভর করছে ভাবনার গতি কোন দিকে যাবে, সেই বিষয়টি।
অঞ্জন ক্যান খুলে এক চুমুক খেয়ে বলল, “তোমাকে খুব টেনশড্ লাগছে অরণ্য ! এনিথিং রং?” তাড়াতাড়ি নিজেকে গুটিয়ে নিতে চায় অরণ্য। মুখে কৃত্রিম হাসি ফুটিয়ে বলে, “কিসের টেনশন? কেনই বা টেনিশন করতে যাবো?”
সত্যব্রত একবার মাত্র দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন, তাও কয়েক মুহূর্তের জন্য, কিন্তু বাইরে তা বুঝতে দিলেন না। মুখে হাসিটা ধরে রেখে বললেন, “তাই তো দেখছি! আমার কপাল ভালো বলতে হবে। নাহলে, পর পর দু’ দিন সাইলেক বাবুর সঙ্গে দেখা হওয়া তো ভাগ্যের ব্যাপার।”
পাভেল একটু দূরে উবু হয়ে কিছু সূত্রটুত্র পাওয়া যায় কি না দেখছিল। শাক্যর কথা শুনে সে বলল, ‘আরে, কাল অবধি তো আমি ক্যামাফ্লেজ করে ছিলাম! আসবো কী করে? কাল যদি আসতামও পুলিশ আমায় দেখতে দিত?
হিরণ্ময় খুব সাই ছিল। মিশুকে ছিল না। নিজের মধ্যে গুটিয়ে থাকতে ভালোবাসত। যেদিন তাকে প্রপোজ করে সে, সেদিন অবাক হয়ে গিয়েছিল উন্মেষা। তার জীবনে যে ঝড় বয়ে গিয়েছিল তখন, তার পরেও যে কোনও পুরুষ তাকে মুগ্ধ দৃষ্টি দিয়ে দেখতে পারে, ভালোবাসতে পারে, এ তার কল্পনাতেও ছিল না।
নুনিয়া একটা কাগজের ঠোঙা হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করছিল। তার দৃষ্টি নিচের দিকে। একটু আগে ফাদার তাকে ওই ঠোঙায় ছোলাভাজা খেতে দিয়েছিল। কেমন বিটনুন ছড়ানো। দু’ একটা বেশ শক্ত, কিন্তু তাতে কী? দাঁতে পড়তেই যে কটকট করে শব্দ হয়, সেই শব্দ শুনতে বেশ লাগে তার। ফাদারের প্রশ্ন তার কানে গেল বলে মনে হল না।
শাক্য এগিয়ে গেল জঙ্গলের দিকে। সামনেই একসার শাল গাছ, নিচে কাঁটাঝোপ, দু-একটা বিড়িপাতা আর কুসুমগাছও রয়েছে তাদের ভিড়ে। পাভেলের একটু অস্বস্তি হচ্ছে। এখানে অনেকদিন আগে এসে ছানবিন করার সুবাদে সে জানে, এই জঙ্গলকে কেন্দ্র করে হরেক কিসিমের ভয়ের গল্প ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে।
মারুতি মাহাতো দাওয়ায় বসে চুটা খাচ্ছিল। আদুরি অল্প দূরে বসে বিড়ি টানছিল, সে চুটা পছন্দ করে না। প্রায় ঘণ্টাখানেক আগে তারা কাজ থেকে ফিরেছে। ঘরে ঢুকতে না ঢুকতেই মোড়লের লোক এসে বলে গেল যে, “ডাগ্তারবাবু সেই কখন থেকে তাদের সঙ্গে দেখা করবেন বলে বসে আছেন।”