বাড়িতে টাকা-পয়সা বা গয়নাগাটি কিছু চুরি হয়েছে কিনা সেটা বলার জন্য তো কেউ আর বেঁচে নেই। নিয়মমাফিক তল্লাশি চালাতে গিয়ে শ্রেয়া জানালো ঘরের দুটো আলমারির দুটোই খোলা, লকার ভাঙা। খুব সম্ভবত বাড়িতে রাখা টাকা-পয়সা এবং গয়নাগাটি আর নেই।

বাড়িতে টাকা-পয়সা বা গয়নাগাটি কিছু চুরি হয়েছে কিনা সেটা বলার জন্য তো কেউ আর বেঁচে নেই। নিয়মমাফিক তল্লাশি চালাতে গিয়ে শ্রেয়া জানালো ঘরের দুটো আলমারির দুটোই খোলা, লকার ভাঙা। খুব সম্ভবত বাড়িতে রাখা টাকা-পয়সা এবং গয়নাগাটি আর নেই।
খুব সাবধানে সিন্নি বোঝাই ফুল বাতাসা দেওয়া শালপাতার বাটিটা গ্লাভস পড়ে পলিথিনের জ্যাকেটের মধ্যে ঢোকাতে ঢোকাতে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ মফিজুল ধৃতিমানের দিকে তাকিয়ে একটা অর্থপূর্ণ হাসি হাসল
নিচের তলাটা সাধারণ সাদাকালো ছিটছাটের মোজাইক। সিঁড়িটাও তাই। দোতলায় পৌঁছেই একেবারে মার্বেল। এটা বোঝা যাচ্ছে, ঘোষবাবু নিচেরতলাটা বেশ কষ্ট করে করেছিলেন। তারপর ধীরে ধীরে লক্ষ্মীদেবীর আশীর্বাদে অর্থাগম যথেষ্ট বাড়ে। তাই সেই বৈভব দোতলায় স্পষ্ট।
সম্ভবত এই স্কুলে পড়ার ফলেই ধৃতিমানের ভাবনা-চিন্তা আর পাঁচজনের থেকে একটু আলাদাভাবে তৈরি হতে শুরু হল। আরও প্রভাব ছিল। ধৃতিমানের বাবার শেখর চৌধুরী সাধারণ রেলকর্মী ছিলেন। রানাঘাট স্টেশনের টিকিট কাউন্টারে বসতেন শেখর।
কলেজ স্ট্রিটে মেডিকেল কলেজের কাছেই সবুজ রঙের সাইনবোর্ডে সোনালি অক্ষরে লেখা ‘এইচ মুখার্জি অ্যান্ড ব্যানার্জি সার্জিক্যাল প্রাইভেট লিমিটেড’। সেখানে গিয়ে স্টিকারটা পরীক্ষা করিয়েও এসেছে ধৃতিমান।
সকালে কাঠবাদামের ঠোক্কর দিতে দিতে হঠাৎ বুবু ‘বাবু স্টিকার বাবু স্টিকার’ বলে চেঁচাতে লাগল। এ সব চিৎকার চেঁচামেচির খানিক পরেই বুবু বলতে থাকবে, ‘চেঁচাচ্ছিস কেন? কিরে? চেঁচাচ্ছিস কেন?’
বাবু বুবুর কথা স্পষ্ট বুঝতে পারে।
নিখিল সেনের পরামর্শে কিছুটা আর্থিক সাহায্য করার জন্য এগিয়ে গিয়েছিলেন সেই নামী ক্রিকেটার। মৃতের বাড়ির থেকে সেই সাহায্য নিতে অস্বীকার করা হয়েছিল। নিখিল সেন সত্যি সত্যি সাহায্য করতে তো চাননি। সাহায্য করার একটা বাতাবরণ তৈরি করতে চেয়েছিলেন।
একবারও পিছনের দিকে না তাকিয়ে শ্রুতি সেন সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠে যাচ্ছেন। তাঁর দিকে তাকিয়ে ধৃতিমান ভাবছিল হয়ত সবই ঠিকঠাক বলছেন। কিন্তু যদি না বলতেন তাহলে? শ্রেয়া ম্যাডাম কি ধমকে চমকেও এনার কাছ থেকে কোনও কথা বের করতে পারবেন?
শ্রেয়া বাসু কনস্টেবল দত্তকে নিয়ে একবার ঘুরে এসেছেন। তাঁরা তাদের মতো জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। কিন্তু বাবুর মনে হল তার নিজের একবার যাওয়া উচিত। শ্রুতি সেনের সঙ্গে গিয়ে একবার কথা বলাটা জরুরি। শ্রুতি নিখিল সেনের স্ত্রী।
সঞ্জয়কে ভয় দেখাতে পুনম বিবাহ বিচ্ছেদের মামলার হুমকি দিল। ব্যবসাকে আলাদা করে নেবারও কথা জানিয়ে দিল। আসলে পুনম এগুলো সবই অভিমান থেকে করেছিল। যাতে সঞ্জয় ভুল বুঝতে পেরে তার কাছে আবার ফিরে আসে। ঠিক আগের মত।
পুলিশ রেকর্ড আর কোর্টের নথি ঘেঁটে বাবু নিখিল সেনের সাম্প্রতিক অতীতের কয়েকটি কেসের খুঁটিনাটি বের করে ফেলল। তিনটি কেসেই মিল হল, নিশ্চিত খুনের দায় থেকে অপরাধীদের বেকসুর খালাস করতে সক্ষম হয়েছেন ব্যারিস্টার নিখিল সেন।
সেদিন রিসর্ট-এর ঘরে দ্বিতীয়বার খুঁজতে গিয়ে খাটের পাশে কার্পেটের উপর চকচকে কিছু একটা চোখে পড়ল। আঠা হালকা হয়ে আসা খুদে একটা হলোগ্রাফিক স্টিকার। সেই একটা ছোট্ট স্টিকার অনেক কিছু বলে দিল।
এসকর্টদের মধ্যে থেকেশেষ দিনের সেই মেয়েটির কাছে। জানা গেল এটা একটা প্রায় নিখুঁত খুন। কিন্তু খুনীর মুখোমুখি পৌঁছেও প্রথম আর সম্ভবত এই শেষবারের মতো ধৃতিমান খুনিকে ছেড়ে দিল। কিন্তু কেন?
চক্রবর্তী সাহেবের ফোন পেয়েই তড়িঘড়ি তৈরি হয়ে নিয়ে ধৃতিমান ওলা চড়ে রওনা দিল দক্ষিণ শহরতলীর উপকন্ঠের সেই রিসর্টে। এই রিসর্টের আসল মালিক রাজ্যের এক প্রভাবশালী মন্ত্রী।
ড্রাইভার ছিল না লোকটি নিজেই ড্রাইভ করছিলেন। কলকাতা পর্যন্ত অনেকটা রাস্তা শুধু থানার ওই মেজ বাবুর ফোন নম্বরের ভরসা করে রাস্তায় বের হননি এই ব্যবসায়ী।