বেলুড় স্টেট জেনারেল হসপিটাল বালি ব্রিজ দিয়ে হয়তো কাছে পড়তো, কিন্তু বেশি রাতে ওখানে লরি ছেড়ে দেবে তাই হাওড়া ব্রিজ হয়ে ডান দিক নিতে হল নীলাঞ্জনকে।

বেলুড় স্টেট জেনারেল হসপিটাল বালি ব্রিজ দিয়ে হয়তো কাছে পড়তো, কিন্তু বেশি রাতে ওখানে লরি ছেড়ে দেবে তাই হাওড়া ব্রিজ হয়ে ডান দিক নিতে হল নীলাঞ্জনকে।
সুচেতা সুন্দরী। সাহসী। তার সাংবাদিক সত্তা ছাড়াও সুচেতা সোশ্যাল মিডিয়ায় বিশেষ পরিচিত মুখ। সোশ্যাল ইনফ্লুয়েন্সার। সমাজে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব। যে চ্যানেলে সে ডেপুটি এডিটর, শুধু সেই টিভি চ্যানেল নয়, শহরের নানান সংস্থা সাংবাদিকতায় উল্লেখযোগ্য কৃতিত্বের জন্য সুচেতা বহু পুরস্কার পেয়েছে।
শ্রেয়া কথা রেখেছিলেন। নিজের ইনফ্লুয়েনস খাটিয়ে প্রলয়ের ব্যবসাটা অন্য একজনকে বিক্রি করিয়ে একটা মোটা টাকা প্রলয়ের মাকে দেওয়ার ব্যবস্থা করে। আর এক মহিলা এনজিওতে তাঁর কাজের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন শ্রেয়া।
সহজ সরল প্রলয় কাঁদতে কাঁদতে তার অকপট স্বীকারোক্তিতে এই কথাগুলো জানিয়েছিল শ্রেয়াকে। রীনা আসল উদ্দেশ্য ছিল প্রলয়ের তোলা ছবিগুলো আর তার নেগেটিভ প্রলয়ের থেকে নিয়ে নেওয়া।
ভুল বোঝাবুঝি ব্যাপারটা এমনই সামান্য তুচ্ছ কারণ দিয়েই সব ভুল বোঝাবুঝির শুরু। আর পারস্পরিক তীব্র অধিকার বোধ থেকেই সেই সামান্য ভুলটাকে ভাঙাবার খেয়াল কারওই থাকে না। ক্রমাগত ভুলের পাহাড় জমতে থাকে।
কল্যাণবাবুর বাড়িতে তালা দেওয়া অফিস থেকে খবর পাওয়া গেল তিনি লম্বা ছুটিতে গিয়েছেন। চন্দননগরে লোক পৌঁছল। জানা গেল স্ত্রী দীপিকাকে নিয়ে হাওয়াবদল করতে পুরীর সমুদ্রসৈকতে গিয়েছেন কল্যাণবাবু। এত বছর পর এই প্রথমবার। সেখানেও আবার পুরীর যোগাযোগ।
রীনার কতটা সাড়া ছিল বা ছিল না সেটা এখন আন্দাজ করা কঠিন। বিদ্যুৎ আরও খবর পেয়েছে রীনা আর তৃণাকে আলাদা সময়ে পড়াতেন। তৃণাকে ভোরবেলা অফিস যাওয়ার আগে। আর রীনা পড়ত রাত আটটার পর কল্যাণ ভট্টাচার্য অফিস থেকে ফেরার পর সোম থেকে শনি একই রুটিন।
লোকাল থানার এএসআই বিদ্যুৎ সাঁপুইকে নিজের ফোন নম্বর দিয়ে এসেছিল ধৃতিমান। সে কি কোনও নতুন সূত্র পেল? সূত্র পেলে যে সেটা তার সবজান্তা গুরুঠাকুর বস এসএইচও নিত্যানন্দ মিত্রকে দিয়ে কোন লাভ হবে না, সেটা বোঝার মতো বুদ্ধিমান বিদ্যুৎ সাপুঁই।
একটা টু-টায়ার এসির টিকিটের ছেঁড়া অংশ। ট্রেন নম্বর ১৮৪০৯। পুরী জগন্নাথ এক্সপ্রেস। ডেট অফ জার্নি খুনের রাতে। কয়েকটা টুকরো মিসিং। তাই নামের অংশটা পাইনি। যাত্রী দু’জন ছিলেন। এ২৫ এবং এফ২১।
ওপ্রান্ত থেকে মফিজুলের বলা এই সামান্য কয়েকটা শব্দ ধৃতিমানের বুকের মধ্যে থেকে হাজার কেজির পাথরটা যেন এক নিমেষে সরিয়ে দিল।
আসলে বহুদিন সিনেমার থেকে নির্বাসিত ধৃতিমান। আলো ক্যামেরার ফ্লোরের ব্যস্ততার অদ্ভুত একটা নেশা আছে। যারা এর স্বাদ পেয়েছে তারা জানে। তাছাড়া রোজগারও চাই জমানো টাকা তো দিনে দিনে ফুরিয়ে আসছে।
বাড়িতে টাকা-পয়সা বা গয়নাগাটি কিছু চুরি হয়েছে কিনা সেটা বলার জন্য তো কেউ আর বেঁচে নেই। নিয়মমাফিক তল্লাশি চালাতে গিয়ে শ্রেয়া জানালো ঘরের দুটো আলমারির দুটোই খোলা, লকার ভাঙা। খুব সম্ভবত বাড়িতে রাখা টাকা-পয়সা এবং গয়নাগাটি আর নেই।
খুব সাবধানে সিন্নি বোঝাই ফুল বাতাসা দেওয়া শালপাতার বাটিটা গ্লাভস পড়ে পলিথিনের জ্যাকেটের মধ্যে ঢোকাতে ঢোকাতে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ মফিজুল ধৃতিমানের দিকে তাকিয়ে একটা অর্থপূর্ণ হাসি হাসল
নিচের তলাটা সাধারণ সাদাকালো ছিটছাটের মোজাইক। সিঁড়িটাও তাই। দোতলায় পৌঁছেই একেবারে মার্বেল। এটা বোঝা যাচ্ছে, ঘোষবাবু নিচেরতলাটা বেশ কষ্ট করে করেছিলেন। তারপর ধীরে ধীরে লক্ষ্মীদেবীর আশীর্বাদে অর্থাগম যথেষ্ট বাড়ে। তাই সেই বৈভব দোতলায় স্পষ্ট।
সম্ভবত এই স্কুলে পড়ার ফলেই ধৃতিমানের ভাবনা-চিন্তা আর পাঁচজনের থেকে একটু আলাদাভাবে তৈরি হতে শুরু হল। আরও প্রভাব ছিল। ধৃতিমানের বাবার শেখর চৌধুরী সাধারণ রেলকর্মী ছিলেন। রানাঘাট স্টেশনের টিকিট কাউন্টারে বসতেন শেখর।