নীলাঞ্জন উদ্ভ্রান্তের মতো তাকায় তারপর ‘অডিয়ো ক্লিপ’ শব্দটা বারবার বলতে থাকে, ধৃতিমান বা শ্রেয়া দু’জনেই হতভম্ব। নীলাঞ্জন বেডরুমে ছুটে গিয়ে ড্রয়ার খুলে চাবি নেয়, তারপর কী ভেবে দেওয়ালে বইয়ের দুটো র্যাক দুহাত দিয়ে সরিয়ে দেয়।

নীলাঞ্জন উদ্ভ্রান্তের মতো তাকায় তারপর ‘অডিয়ো ক্লিপ’ শব্দটা বারবার বলতে থাকে, ধৃতিমান বা শ্রেয়া দু’জনেই হতভম্ব। নীলাঞ্জন বেডরুমে ছুটে গিয়ে ড্রয়ার খুলে চাবি নেয়, তারপর কী ভেবে দেওয়ালে বইয়ের দুটো র্যাক দুহাত দিয়ে সরিয়ে দেয়।
দুবেজির উচ্চারণে ‘আননেসেসারি’ বা ‘মানি’ শব্দগুলো অন্যরকম শোনায়। একটু নৈঃশব্দ্য। দুবেজি ঘর ছেড়ে গিয়েছেন কিনা এখান থেকে ঠিক বুঝতে পারছি না। একটু দূরত্ব থেকে বলা কথা শুনে মনে হলো বাড়ির মেইন ডোরের কাছ থেকে টার্ন করে আবার কথাগুলো বলছেন দুবেজি।
শ্রেয়ার একটা ডুয়াল চ্যানেল ওয়্যারলেস মাইক্রোফোন আছে। প্রায় ৯০-৯৫ ফুট দূর থেকে মোবাইলে কোনওরকম নয়েজ ছাড়া অডিয়ো রেকর্ড করতে পারে। ডুয়াল চ্যানেল বলে একজোড়া মাইক্রোফোন। অ্যামাজন নয়, বিদেশ থেকে আনানো ভালো কোম্পানির।
ফোনের ডিসপ্লেতে ফুটে ওঠা নামটা ‘দুবেজি’! ফোনটা বেজে যাচ্ছে। নীলাঞ্জন জানতে চাইছে, সে কী করবে? আমি ঠোঁটে আঙুল দিয়ে আমার আর শ্রেয়ার দিকে হাত দেখালাম। নীলাঞ্জন সম্মতি জানাল, সে বুঝতে পেরেছে।
শ্রাদ্ধের কাজ মিটে বাড়ি ফাঁকা হল ফোন চার্জিং কমপ্লিট হল। ততক্ষণে শ্রেয়া এসে উপস্থিত হয়েছেন। আমরা একটি হলে বসলাম। ফোন অন হতে পরপর মেসেজ আসার শব্দ, একসময় থমকাল। নীলাঞ্জন আমার দিকে তাকালেন।
ধৃতিমান পারতপক্ষে কোথাও কখনও শ্রাদ্ধে যেতে চায় না একেবারে পারিবারিক সূত্রে কলকাতা শহরে যেগুলো সেখানে ইচ্ছে না থাকলেও যেতে হয়। কিন্তু কিছুতেই শ্রাদ্ধের পুজোআচ্চা যেখানে হয় তাঁর ত্রিসীমানায় থাকে না সে। দূরে দূরে এদিক-সেদিক ঘোরাফেরা করে।
নীলাঞ্জনের বাড়িতে বইয়ের কালেকশন দারুণ। ছিমছাম আড়ম্বরহীন সাজসজ্জায় তারিফ করার মতো হলো বই। নীলাঞ্জন যতক্ষণ পুজোয় ব্যস্ত ছিল তার কাছে অনুমতি নিয়ে ধৃতিমান ততক্ষণ বই দেখছিল। এমন নয় যে অনেক অনেক বই কিন্তু বইয়ের কালেকশনটা নানা ধরনের।
এযাবৎকাল এমন কোনও তদন্তে ধৃতিমান হাত দেয়নি যাতে এরকমভাবে তাকেও মানবিক যন্ত্রণার শরিক হতে হয়েছে। তাই বাবু ছোট্ট জবাব দিল—পরশু আমি আসব! ঠিকানা আমার কাছে আছে।
হাসপাতালের সামনে দেখল বেশ কয়েকটা গাড়ি! এত রাতে এখানে এতও গাড়ি কেন? ক্যাবটা একটু আগেই ছেড়ে দিল নীলাঞ্জন। হঠাৎ নজরে এল নিউজ টিভি ওবি ভ্যান, সুচেতার অফিসের লোকেরা কি রাতে ডিউটির পর এসেছে? পুলিশের দুটো গাড়ি হয়তো সুচেতার কেসটা প্রশাসন হাই প্রোফাইল কেস হিসেবে দেখছে।
ধৃতিমান চৌধুরী নামটা শোনা লাগছে। নীলাঞ্জনের বড্ড ভুলোমন, কিন্তু এটা স্পষ্ট মনে আছে এই নামটা সে সুচেতার কাছেই শুনেছে। হ্যাঁ, ধৃতিমান চৌধুরী পেশায় একজন নাট্য ও চিত্র পরিচালক এবং নেশায় গোয়েন্দা। দুর্দান্ত কম্বিনেশন।
অডিয়ো ক্লিপ, পর্ব-৪ মিস্টার সরখেলের কথা শোনার পর নীলাঞ্জনের কান মাথা ভোঁভোঁ করছে। প্রতিবার প্লেন থেকে নামার পর নীলাঞ্জনের এই সমস্যাটা হয়। কী অদ্ভুত সুচেতা কখনওই এরকম অসুবিধের মুখোমুখি হয় না। অনেকেরই হয় না কারও কারও হয়। একে এরোপ্লেন ইয়ার বা ব্যারোট্রমা বলে। ঠিক ধরেছেন এই ব্যারো শব্দটা ব্যারোমিটার থেকেই এসেছে। প্লেন ওড়ার সময় বা নামার সময় অনেকটা উঁচুতে যাওয়া কিংবা হঠাৎ উঁচু থেকে নিচে আসার সময় কানের ভিতরের বায়ুর চাপের সঙ্গে বাইরের কমতে বা বাড়তে থাকা বায়ুর চাপের তফাতটা খুব বেড়ে গেলেই এই সমস্যা শুরু...
মিস্টার সরখেলের মোবাইলে সুচেতাদের দুর্ঘটনাগ্রস্থ গাড়িটার ভয়ঙ্কর ছবি দেখার পর নীলাঞ্জনের মাথাটা টলে গিয়েছিল। ভাগ্যিস মৃদুল পাশে ছিল, সে নীলাঞ্জনকে শক্ত করে ধরে ফেলে। গাড়ির এই অবস্থা হলে মানুষগুলোর কি অবস্থা হয়েছিল।
বেলুড় স্টেট জেনারেল হসপিটাল বালি ব্রিজ দিয়ে হয়তো কাছে পড়তো, কিন্তু বেশি রাতে ওখানে লরি ছেড়ে দেবে তাই হাওড়া ব্রিজ হয়ে ডান দিক নিতে হল নীলাঞ্জনকে।
সুচেতা সুন্দরী। সাহসী। তার সাংবাদিক সত্তা ছাড়াও সুচেতা সোশ্যাল মিডিয়ায় বিশেষ পরিচিত মুখ। সোশ্যাল ইনফ্লুয়েন্সার। সমাজে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব। যে চ্যানেলে সে ডেপুটি এডিটর, শুধু সেই টিভি চ্যানেল নয়, শহরের নানান সংস্থা সাংবাদিকতায় উল্লেখযোগ্য কৃতিত্বের জন্য সুচেতা বহু পুরস্কার পেয়েছে।
শ্রেয়া কথা রেখেছিলেন। নিজের ইনফ্লুয়েনস খাটিয়ে প্রলয়ের ব্যবসাটা অন্য একজনকে বিক্রি করিয়ে একটা মোটা টাকা প্রলয়ের মাকে দেওয়ার ব্যবস্থা করে। আর এক মহিলা এনজিওতে তাঁর কাজের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন শ্রেয়া।