না, ইউটিউবার সরাসরি ডাক্তার সুরজিত ব্যানার্জির নাম উল্লেখ করেছেন তাঁর মধ্যরাতের ভিডিয়োতে। আর গত ভিডিয়োতে এয়ার টিকিট, রিভার ক্রুজের টিকিট সব জায়গায় ডক্টর লেখার পরের অংশটুকু কালো কালিতে ঢাকা ছিল। আজকের ভিডিয়োতে সেই ডকুমেন্টগুলোতেই আর কোনও রাখঢাক নেই।

না, ইউটিউবার সরাসরি ডাক্তার সুরজিত ব্যানার্জির নাম উল্লেখ করেছেন তাঁর মধ্যরাতের ভিডিয়োতে। আর গত ভিডিয়োতে এয়ার টিকিট, রিভার ক্রুজের টিকিট সব জায়গায় ডক্টর লেখার পরের অংশটুকু কালো কালিতে ঢাকা ছিল। আজকের ভিডিয়োতে সেই ডকুমেন্টগুলোতেই আর কোনও রাখঢাক নেই।
এ সব ভাবতে ভাবতেই ইতিমধ্যে রাত বারোটা বেজে গিয়েছে সেটা বাবুর খেয়াল ছিল না। খেয়াল হলো শ্রেয়া বাসুর ফোন পেয়ে। শ্রেয়া জানাল ইউটিউবানন্দের ভিডিওর কথা! সন্ধেবেলায় প্রথম ভিডিওটাও শ্রেয়া দেখেছে। কথামতো এখন দ্বিতীয় ভিডিওতে ডাক্তারবাবুর পরিচয় দিয়েছে ইউটিউবার! তিনি কি সুরজিত ব্যানার্জি নাকি অন্যকেউ?
এখন পুলিশ ডিপার্টমেন্টে খবরের কাগজ, নিউজ চ্যানেল আর সেই সঙ্গে ইউটিউবার তিনে মিলে ত্র্যহস্পর্শ যোগ! একটা না একটা সূত্রে গুরুত্বপূর্ণ খবর লিক হয়ে যায়। পরীক্ষার খাতা চুরি হয়, ব্যাঙ্কের ক্যাশ টাকা চুরি হয়, সোনার দোকানে সোনা চুরি হয়, আর খবরের খনি থেকে খবর চুরি হবে না সেটা কি হয়?
শহরের অত্যন্ত সফল হার্ট স্পেশালিস্ট ডাঃ সুরজিৎ ব্যানার্জী। তাঁর বয়স ৬৫। অন্যদিকে কৌশিকীর বয়স সাড়ে ২২। ডাঃ ব্যানার্জীর সঙ্গে সিনেমার কোনও যোগাযোগ নেই। তাহলে কৌশিকী তার তিন কুড়ি বয়সের ডাক্তারের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লেন কেন?
সম্ভবত কৌশিকী তখন বাথটাবেই ছিল অর্ডার দেওয়া ওয়াইন বাইরে রাখতে বলেছিল। প্রতিদিন কাজের শেষে সন্ধেবেলায় নিয়মিত কৌশিকী ওয়াইন অর্ডার করেছে একটা নির্দিষ্ট সময়ে। হোটেলের সিস্টেম থেকে এই তথ্য পাওয়া গিয়েছে। তার মানে যে খুনি সে এই তিন চারদিন ধরে কৌশিকীর নানা হ্যাবিট নিখুঁতভাবে ফলো করেছে।
ধৃতিমানের হঠাৎ সুজাতা মুখার্জি হত্যা রহস্যের দায়ী সেই লরির কথা মনে পড়ল। রাস্তার সিসিটিভিতে লরির নাম্বার প্লেট ধরা পড়েনি। নম্বর প্লেটে কিছু একটা আড়াল ছিল। পরে যে সিসিটিভি ফুটেজ ছিল তাতে অসংখ্য একই ধরনের লরির ভিড়ে ঘাতক লরি মিশে গিয়েছিল। গাড়ির ‘FASTag’ RFID বা রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন থেকে সেই ঘাতক লরি খুঁজে বের করতে হয়েছিল।
রণজয়কে বলেছিল পুলিশ আসার আগে এই হোটেল কর্মী ভিকটিমের ঘরে ঢুকেছে এবং ঘর থেকে বেরিয়েছে। তাই এই অংশের ভিডিয়োটা সে বারবার দেখতে চায়। পুলিশ ওইদিনের সমস্ত ক্যামেরার সমস্ত ভিডিয়ো ক্লিপিং বাজেয়াপ্ত করেছে।
বাথটাব (পর্ব-৪)তখনও বাথটাবে কৌশিকীর শরীরটা ভাসছে। ফরেন্সিকের মফিজুল ও তার সহকারি সূত্র খুঁজে বেড়াচ্ছে। কৌশিকীর চোখ বোজানো। শিরা কাটা বাঁহাতটা বাথটাব থেকে ঝুলছে। মানে সম্ভবত ক্রাইমসিনের কোনও বদল করা হয়নি। বাথটাব ঘেঁষা র্যাকে একটা দামী ওয়াইনের অর্ধেক খালি বোতল। পাশে দুটো মোবাইল। তার শরীরে শুধু একটা তোয়ালে ঢাকাদেওয়া। ধৃতিমান নিশ্চিত এটা মফিজুল-এর কাজ। তারা দু'জনে একসঙ্গে বহু মৃতদেহের প্রথম তদন্তে পৌঁছেছে। স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে মফিজুল মৃতদেহের নিরাভরণ শরীরের ওপর ফরেন্সিকের ছাপ মারা তোয়ালে চাপা দিয়ে দেয়।...
রণজয় রায়ও কৃতী অফিসার কিন্তু একজন পেশায় সখের গোয়েন্দা, যার নাটকের দল আছে। যিনি দুটি মাত্র ফিচার ছবি আর কিছু ডকুমেন্টারি বানিয়েছেন তাকে নিয়ে ভৈরব চক্রবর্তীর মাতামাতি কিছুতেই সহ্য করতে পারে না। রণজয় তার ব্যক্তিগত পরিসরে মন্তব্যও করেছে ফেলুদা ব্যোমকেশ পরাশর কিরীটী রায় বা দীপক চ্যাটার্জি এককালে ছিল, এটা শবর দাশগুপ্তদের যুগ!
বাথটাব (পর্ব-২) মূহুর্তের মধ্যে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়লো সন্ধ্যের মুখে এই খবর। কৌশিকী দত্তগুপ্ত সুন্দরী। জনপ্রিয় টেলিভিশন নায়িকা। তারপর এই পুজোতে তার প্রথম সিনেমা মুক্তি পাবে। তার আত্মহত্যা মানে নিশ্চয়ই মানসিক টানাপোড়েন। তাহলে সেই অস্থিরতার পিছনে কে বা কারা? একদিকে নিউটাউনের সেই হোটেল থেকে ঘটনার লাইভ সম্প্রচার, আর একঘেয়েমি কাটাতে স্টুডিয়োতে বসে ঘটনার চুলচেরা বিশ্লেষণ। সেখানে রয়েছেন কৌশিকীর পুরনো এক জনপ্রিয় টেলিভিশন ধারাবাহিকের পরিচালক, এক মহিলা মনোবিদ আর আগামী ছবি ‘ওহ লাভলি’-এর প্রযোজক এবং পরিচালক ছবির...
কৌশিকী ভালো অভিনেত্রী। ছবির ক্ষেত্রে যেটা খুব জরুরি সেটা হল চোখের জোরালো দৃষ্টি, আর একটা আকর্ষণীয় চেহারা। কৌশিকীর এই দুটোই ছিল। সঙ্গে প্রমোশনের জোর তো ছিলই, স্বাভাবিকভাবেই জনপ্রিয়তার নিরিখে এগিয়ে থাকা ছোটপর্দার কৌশিকী বড়পর্দার আঙিনায় পা রাখল।
নীলাঞ্জন উদ্ভ্রান্তের মতো তাকায় তারপর ‘অডিয়ো ক্লিপ’ শব্দটা বারবার বলতে থাকে, ধৃতিমান বা শ্রেয়া দু’জনেই হতভম্ব। নীলাঞ্জন বেডরুমে ছুটে গিয়ে ড্রয়ার খুলে চাবি নেয়, তারপর কী ভেবে দেওয়ালে বইয়ের দুটো র্যাক দুহাত দিয়ে সরিয়ে দেয়।
দুবেজির উচ্চারণে ‘আননেসেসারি’ বা ‘মানি’ শব্দগুলো অন্যরকম শোনায়। একটু নৈঃশব্দ্য। দুবেজি ঘর ছেড়ে গিয়েছেন কিনা এখান থেকে ঠিক বুঝতে পারছি না। একটু দূরত্ব থেকে বলা কথা শুনে মনে হলো বাড়ির মেইন ডোরের কাছ থেকে টার্ন করে আবার কথাগুলো বলছেন দুবেজি।
শ্রেয়ার একটা ডুয়াল চ্যানেল ওয়্যারলেস মাইক্রোফোন আছে। প্রায় ৯০-৯৫ ফুট দূর থেকে মোবাইলে কোনওরকম নয়েজ ছাড়া অডিয়ো রেকর্ড করতে পারে। ডুয়াল চ্যানেল বলে একজোড়া মাইক্রোফোন। অ্যামাজন নয়, বিদেশ থেকে আনানো ভালো কোম্পানির।
ফোনের ডিসপ্লেতে ফুটে ওঠা নামটা ‘দুবেজি’! ফোনটা বেজে যাচ্ছে। নীলাঞ্জন জানতে চাইছে, সে কী করবে? আমি ঠোঁটে আঙুল দিয়ে আমার আর শ্রেয়ার দিকে হাত দেখালাম। নীলাঞ্জন সম্মতি জানাল, সে বুঝতে পেরেছে।