মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ছিলেন ভ্রমণপ্রিয় মানুষ। সব সময় যে দূরে কোথাও চলে যেতেন, তা নয়, কাছেপিঠেও যেতেন। হিমালয়ের নির্জনবাসের প্রশান্তি হয়তো পেতেন চুঁচুড়োতেও। নদীর প্রতি ছিল অমোঘ আকর্ষণ। যেতেন প্রায়শই জলপথে। জীবনের বেলা শেষে, মহর্ষি তখন রুগ্ন শরীরে সবে ফিরেছেন চৌরঙ্গীর বাড়িতে। অসুস্থতা তখনও রয়ে গিয়েছিল।
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি
পর্ব-১০৬: ‘একবার মাখিলেই চুল ওঠে’ — জোড়াসাঁকোয় তৈরি ভেষজ তেলের সার্টিফিকেট দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ
ক্ষিতীশবাবুর মাথায় রকমারি ভাবনা খেলা করত। ভেষজ নিয়ে তাঁর ভীষণ আগ্রহ ছিল। করতেন রকমারি পরীক্ষা-নিরীক্ষা। নিজের ঘরে বসে এক ধরনের মাথায় মাখার সুগন্ধি তেল তৈরি করেছিলেন। সে তেলের একটা সুন্দর নামও দিয়েছিলেন। ‘অলকানন্দা হেয়ার অয়েল’। তেল তৈরির পর মাথায় এক ব্যবসায়িক বুদ্ধি আসে। অনেকানেক তেল তৈরি করবেন, বিক্রি করবেন। যেমন ভাবা তেমন কাজ। বোতলে ভরে বিক্রির ব্যবস্থা হয়।
পর্ব-১০৫: রবীন্দ্রনাথ ভয় পেতেন মহর্ষিদেবকে
যশোরের সারদাসুন্দরী যখন ঠাকুরবাড়িতে বধূ হয়ে এলেন, দেবেন্দ্রনাথের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হলেন, তখন তাঁর বয়স ছয়। কেউ বলে আট। ছয়-আট যাই হোক না কেন, তখন তিনি যে নিতান্তই বালিকা, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। ক্রমে তাঁদের পনেরোটি পুত্র-কন্যার জন্ম হয়। একটি পুত্র ও একটি কন্যা অকালে মারা যায়। অল্পায়ু কন্যাটি সম্পর্কে কিছুই জানা যায় না। নামকরণ হওয়ার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়েছিল।
পর্ব-১০৪: আশ্রমের আনন্দময় পিকনিক
আশ্রমে আনন্দ-আহরণের অফুরান আয়োজন ছিল। নৃত্যগীতি পরিবেশন থেকে নাট্যাভিনয়, এমনকি ফুটবলও। ছাত্র ও শিক্ষকের সম্মিলিত উপস্থাপন, ফলে আনন্দও হত দেদার। আনন্দ হত পিকনিকেও। আনন্দের জন্যেই তো সেই আয়োজন। শীতকালেই পিকনিক হত বেশি।
পর্ব-১০৩: দেবেন্দ্রনাথ হয়েছিলেন ‘কল্পতরু’
ভোগবিলাসের আবর্তে দেবেন্দ্রনাথ ঘুরলেও কখনও রুচি বিসর্জন দেননি। যতই অর্থবান হোক না কেন, রুচিহীন মানুষজনকে কৌশলে তিনি ধিক্কারও জানিয়েছেন। তিনি বাবুয়ানায় মজে ছিলেন সত্য, আবার সেই জায়গা থেকে সহসা সরেও দাঁড়িয়েছিলেন।
পর্ব-১০২: দ্বারকানাথের বেলগাছিয়ার বাগানবাড়ি
বেলগাছিয়া ভিলায় ছিল সাহেব-মেমের আনাগোনা। সমবেত অতিথিদের মনোরঞ্জনের জন্য আসত শহরের সেরা গাইয়ে ও বাজিয়েরা। নাচ-ঘরের পাশাপাশি গান-ঘরটিও ছিল সুন্দর করে সাজানো। পাথরের ঘড়ি, নানা দেশের ফুলদানি, মার্বেলের আসবাব, আসবাবের সঙ্গে মানানসই ‘কমলালেবু রঙের দুর্মূল্য রেশমের পর্দা’।
পর্ব-১০১: খামখেয়ালির গিরীন্দ্রনাথ
গিরীন্দ্রনাথ ছিলেন খেয়ালি-মনের মানুষ। আনন্দে-আমোদে দিন কাটাতে ভালোবাসতেন। জীবনকে উপভোগ করতে জানতেন। চার পুত্র-কন্যা ও স্ত্রী যোগমায়াকে রেখে মাত্র চৌত্রিশ বছর বয়সে মারা গিয়েছিলেন তিনি। খোশমেজাজে থাকতেন। সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখায় আছে, তিনি কতখানি ‘সুরসিক অমায়িক সৌখিন পুরুষ ছিলেন। যেন বিলাসিতা মূর্তিমান।’
পর্ব-১০০: ঠাকুরবাড়ির রূপবান, ঠাকুরবাড়ির গুণবান
মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ও সারদাসুন্দরীর পুত্রদের মধ্যে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ছিলেন সৌন্দর্যের প্রতিমূর্তি। তরুণ-বয়সে কী সুন্দরই দেখতে ছিল তাঁকে। ব্যায়াম করা নির্মেদ চেহারা। নিয়মিত মুগুর-ভাঁজতেন, ঘোড়ায় চড়তেন। সুভো ঠাকুরের স্মৃতি চর্চা থেকে জানা যায়, মহর্ষির পুত্রদের মধ্যে হেমেন্দ্রনাথ ছিলেন সর্বাধিক সুপুরুষ, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী।
পর্ব-৯৯: ভ্রমণে বেরিয়ে মহর্ষি পেয়েছিলেন পুত্রের মৃত্যু-সংবাদ
কবির পিতৃদেব মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ বছরের অনেকখানিই ব্যস্ত থাকতেন পর্যটনে, দেশভ্রমণে। এই ভ্রমণ যে তাঁর জীবনের কতটা জুড়ে ছিল, সে সাক্ষ্য রয়েছে রবীন্দ্র-রচনায়। ‘জীবনস্মৃতি’তে আছে, ‘আমার জন্মের কয়েক বৎসর পূর্ব হইতেই আমার পিতা দেশভ্রমণেই নিযুক্ত ছিলেন। বাল্যকালে তিনি আমার কাছে অপরিচিত ছিলেন বলিলেই হয়; মাঝে মাঝে তিনি কখনো বাড়ি আসিতেন।’
পর্ব-৯৮: মংপুর কমলালেবু পেয়ে অসুস্থ কবি খুব আনন্দ পেয়েছিলেন
সাহিত্যের প্রতি গভীর আকর্ষণ ছিল মৈত্রেয়ী দেবীর। লিখতেন, যত না লিখতেন, তাঁর থেকে ঢের বেশি পড়তেন। জীবনের প্রথম দিকে লিখতেন কবিতা। বিস্ময়কর হলেও সত্য, বছর ষোলো যখন বয়েস,তখনই বের হয়েছিল তাঁর প্রথম বই। সে বইয়ের নাম ‘উদিতা’। ভূমিকা লিখে দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ।
পর্ব-৯৭: কী করে গল্প লিখতে হয়, ছোটদের শিখিয়েছিলেন অবনীন্দ্রনাথ
কোন্নগরের বাগানবাড়িতে বেড়াতে এসে ছবি-আঁকায় হাতেখড়ি। সেই শুরু, দিনে দিনে ছবি-আঁকাই হয়ে উঠেছে ধ্যান-জ্ঞান। ছবি-আঁকিয়ে হিসেবে অবনীন্দ্রনাথ তখন খ্যাতির শিখরে। ব্যস্ততা তুঙ্গে। সেই ব্যস্ততার মাঝেও নিয়ম করে ছোটদের নিয়ে বসতেন। গল্পের পর গল্প বলতেন।
পর্ব-৯৬: স্রোতস্বিনী পদ্মায় লাফিয়ে কবির কটকি চটি-উদ্ধার
রথীন্দ্রনাথের লেখা থেকে জানা যায়, প্রিন্স দ্বারকানাথ তৈরি করিয়েছিলেন এই বজরা। অনেকটা ঢাকাই বজরার আদলে তৈরি। যথেষ্ট বড়সড়ো, সাজানো-গোছানো। বজরার ঘরগুলো বেশ প্রশস্ত। বাড়ির মতোই সব সুযোগ-সুবিধা।
পর্ব-৯৫: প্রথম ভারতীয় সিভিলিয়ান সত্যেন্দ্রনাথ ভেবেছিলেন পরীক্ষায় পাশই করবেন না
দুই বন্ধু, সত্যেন্দ্রনাথ ও মনোমোহন একই মাস্টারমশায়ের কাছে পড়তেন। মাস্টারমশায় সত্যেন্দ্রনাথের নয়, প্রশংসা করতেন মনোমোহনের। বলতেন,‘যুবার ধড়ে বুড়ার মাথা।’ এ তাঁর মেধার স্বীকৃতি, বুদ্ধিমত্তার স্বীকৃতি। আসলে বয়সে নয়, মেধায়, মনন, ভানায় মনোমোহন পরিপক্কতা অর্জন করেছিলেন।
পর্ব-৯৪: জোড়াসাঁকোয় পাগল-যাচাই
ঠাকুরবাড়িতেও পাগল ছিল। পাগলের আনাগোনাও ছিল। রবীন্দ্রনাথের কাছে বিচিত্র ধরনের লোকজন আসতেন। হ্যাঁ, পাগলও আসত। বিদ্যাসাগরে জীবনীকার চণ্ডীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুত্র জ্যোতিপ্রকাশের মাথার ব্যামো ছিল, তা তাঁকে দেখে তো বটেই, তাঁর আচার-আচরণেও বোঝা যেত।
পর্ব-৯৩: মৃণালিনীর মৃত্যু হয়েছিল কীসে?
মায়ের শেষযাত্রায় কিশোর রথীন্দ্রনাথ যাননি। পুত্রের হাতের আগুন পাননি মৃণালিনী। শোকস্তব্ধ রবীন্দ্রনাথও যাননি। শোকযন্ত্রণার মধ্যে কবি টানা ক-দিন বাড়িতেই ছিলেন। পাঁচ দিন পর বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। গিয়েছিলেন প্রিয়-বান্ধব আচার্য জগদীশচন্দ্রের বাড়িতে, পার্শিবাগানে।