‘পারব না’ একথা বলার আগেও ভাবো, আরব্ধ কর্মের পরিত্যাগের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ভাবো, কেন এমন বিচ্যুতি, কেন এমন মনোবিকলন, কেন সংশয়দীর্ণ এই অসহিষ্ণুতা, কেন লক্ষ্যচ্যুতি?

‘পারব না’ একথা বলার আগেও ভাবো, আরব্ধ কর্মের পরিত্যাগের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ভাবো, কেন এমন বিচ্যুতি, কেন এমন মনোবিকলন, কেন সংশয়দীর্ণ এই অসহিষ্ণুতা, কেন লক্ষ্যচ্যুতি?
দিনান্তের অন্ধকার নেমে আসছে। স্বতঃপ্রকাশ দৃশ্যমান জগৎ তার সকল চাঞ্চল্য নিয়ে প্রবেশ করছে রাত্রির গভীরে। সেই বৃক্ষশাখায় এসে বসেছে দুটি পাখি। চারপাশে বহু ফলবান বৃক্ষ, এই বৃক্ষের শাখায় শাখায় নবীন পল্লব, তার মধ্যে মধ্যে ফলভার। সুমিষ্ট বর্ণময় ফলের গন্ধে আকৃষ্ট ভ্রমরের পুঞ্জ ফল থেকে ফলে, ফুল থেকে ফুলে ভ্রমণ করে করে ক্লান্ত হয়ে প্রবেশ করেছে মুদিত কমলদলে।
ভর্তৃহরি বলছেন, যে মানুষ উত্তম, সে কার্যের সমাপ্তি না করে থামে না। যে মধ্যম, সে আরব্ধ কর্মে বাধা পেয়ে ত্যাগ করে। যে অধম, সে তো বাধার ভয়ে ভীত হয়ে কার্যের সূত্রপাত ঘটিয়ে উঠতে পারে না।
জীবনব্যাপী অনন্ত মহাসংগ্রাম। কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, বাহ্য ও অন্তরিন্দ্রিয়ের চির অবিরত দ্বন্দ্বে পরিকীর্ণ এই নশ্বর দেহে স্বার্থ, অহমের বন্ধন আর পিঞ্জরাবদ্ধ অন্তরাত্মার হাহাকার… হিংসার আবিল ক্লেদ, সভ্যতার পঙ্কিল আবর্তের ঊর্ধ্বে এক অসীম সম্ভাবনা, মুক্তি, বৃহতের মহাসম্মিলনের জয়গান সুরে সুরে তালে তালে বাজতে থাকে ওই ভেরিঘোষের মতোই।
কনরাড বিয়ের দু’ সপ্তাহ আগে একটি জাহাজের নাবিকের পদে কাজ পেলেন। জেসি তো খুব খুশি। স্বামীর সঙ্গে জাহাজে ঘুরবেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে কনরাড সে কাজটি নিলেন না। বিয়ের পর এমন লোকের সঙ্গে সব আত্মীয় স্বজন ছেড়ে চলে যেতে জেসির ভয় ভয় করছিল। তারপর আবার হানিমুন এ গিয়ে এক কাণ্ড।
সেই যে মাকড়সার গল্পটা ছিল, যে বারবার একটা গুহার অতিপিচ্ছিল প্রস্তরগাত্র থেকে পড়ে যাচ্ছিল, আর আপ্রাণ চেষ্টা করছিল আবার, আবারও। এক ধ্বস্ত বীর তাকে গভীর মনোযোগে দেখছিল। অনেক অনেক চেষ্টা করে করে মাকড়সাটি সফল হল, পৌঁছল গন্তব্যে। সেই বীর উপলব্ধি করল, আশা আছে। তারপর সে ইতিহাস গড়ল বুঝি।
কনরাডের জীবনীকার বাইনস তাঁর বিয়ের প্রসঙ্গ লিখতে গিয়ে একটু থমকে গিয়েছেন। কনরাড কেন বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিলেন এবং তা আবার জেসি কনরাডের মতো মেয়েকে এটার কারণ তার মাথায় আসছিল না। আসলে এই বিয়েটি যে সামাজিক ও বাস্তবিক লাভজনক একটি বিয়ে এটি জীবনী কারের মানতে অসুবিধে হচ্ছিল।
ভয় পাচ্ছো? অধর্মের? নাকি ভরসা হারিয়ে ফেলছো, জীবন, সত্য, ধর্ম, ন্যায় এই শব্দগুলো অভিধানের দিকেই আবার ক্রমশ ফিরে যাচ্ছে দেখে? নাকি এটাই ভাবছো যে, যাদের সঙ্গে তোমার আজন্মের বন্ধন, তারাই আজ শত্রু।
বিয়ে নরনারীর যৌন সম্পর্কের সিলমোহর। সেই সম্পর্ক ও তথাকথিত মাতৃত্বের প্রতি তীব্র অনীহা ছিল শার্লটির। শার্লটি এবং শ দু’জনেই বিয়ে ও তার পরিপূর্ণতার প্রতি এক বিদ্বেষ পোষন করতেন। শার্লটি তার এই অস্বাভাবিক মানসিকতার ব্যাখ্যা খুঁজে নিতেন তার শৈশবের পরিবেশ থেকে। শিশুদের নিয়ে তার মন্তব্য শুনে চমকে যেতে হয়।
তখন অগ্নিযুগ। এক মধ্যাহ্নের দহনক্লান্ত দ্বিপ্রহর। একটি লোক শহরের একটি অপ্রশস্ত গলিপথে সতর্কগতিতে চলছিল। তার কাঁধে পশরার ঝুলি, হাতেও একটি ঝুড়িতে সাজানো বই। রাজপথের মুখে পথ আটকে খোঁজ চলছে কিছুর। খাকি পোষাক লাল পাগড়ি সেপাই এসে তল্লাশি নিল।
প্রাক চল্লিশে বিবাহিত বার্নার্ড শ এবং তাঁর স্ত্রী শার্লটি পায়েন টাউনসেন্ড এক অশ্রুতপূর্ব জুটি—না ছিল যাদের মধ্যে প্রেমের বন্ধন, না ছিল শারীরিক আকর্ষণ। তবু তাঁরা যেন একে অপরের জন্য। বার্নার্ড শ জীবনে অনেক নারীর সঙ্গে প্রেমে পরেছেন। বুদ্ধির দ্যুতিতে নারীদের আকৃষ্ট করেছেন। কিন্তু এক অদ্ভুত নিস্পৃহতা নিয়ে মিশেছেন।
উত্তম কুমার-র সমগ্ৰ অভিনয় জীবন কয়েকটা পর্বে ভাগ করলে সবার আগে চোখে পড়বে প্রস্তুতি পর্বের উত্তমকে। প্রথম হিট ছবি ‘বসু পরিবার’, আর জীবদ্দশায় শেষ মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘দুই পৃথিবী’-র যদি প্রেক্ষিত আলোচনা করি তাহলে দেখতে পাব, প্রায় ৯০ শতাংশ একই ভূমিকায় অভিনয় করা দু’জন উত্তমের নিজেকে প্রকাশ, আকাশ-পাতাল তফাতে।
শৈশবে প্রথমদিন যখন ধনুর্বাণ গ্রহণ করেছিলে, তখন বুঝি জানতে তুমি অগ্রগণ্য ধনুর্ধরদের অন্যতম হবে? তোমার দিগ্বিজয়ের সামনে নতজানু হবে তামাম বিশ্ব? এই অজ্ঞান-ই তোমাকে বাধা দিচ্ছে। তুমি জানো না তুমি কী করতে পারো, তোমার মধ্যে সুপ্ত সেই শক্তি আবেগ আর মোহের মেঘে আচ্ছন্ন হয়েছে বারবার, আজ এই সকাল সেকারণেই মনে হচ্ছে রাতের থেকেও বুঝি গাঢ়তর তমিস্রায় ঢাকা পড়েছে।
১৮৮২ সালে টলস্টয় মস্কো শহরে একটি পরিসংখ্যান নেবার কাজ করতে গিয়ে দরিদ্রদের অবস্থা নিজে চোখে দেখেন। তাদের অপুষ্টি, খাদ্যাভাব, অসুখ ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ দেখে অত্যন্ত ভীত হন। মানুষের এ ভাবে বাস করা অসম্ভব মনে হয় তার। এক আমূল পরিবর্তনের পরিকল্পনা করেন তার বই ‘What Are We To Do’ তে। তার মনে হল, সম্পদের প্রাচুর্যই সব নষ্টের মূল। এ ভাবনা তার নিজের জীবনেরও এক মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
খড়-কুটো, কিছু লতা-পাতা, বিশেষ করে কাশ গাছের পাতা নিয়ে এরা নিপুণভাবে, দক্ষশিল্পীর মতো বাসা বানায়। বাবুই এর বাসার নির্মাণশৈলী আধুনিক যুগের কারিগর, বাস্তুবিদ ও প্রকৌশলীদেরও ভাবিয়ে তোলে।