বোধিসত্ত্ব সেবার বারাণসীর কাশীগ্রামে জন্মগ্রহণ করলেন ব্রাহ্মণকুলে। বয়ঃপ্রাপ্তির পর সংসারে তাঁর মন টিকল না। বিষয়বাসনা ত্যাগ করে তিনি প্রব্রজ্যা গ্রহণ করলেন, ক্রমে লাভ করলেন ধ্যানবল, হিমালয়ের এক বিজন বনভূমিতে ধ্যানস্থ হলেন অবশেষে।

বোধিসত্ত্ব সেবার বারাণসীর কাশীগ্রামে জন্মগ্রহণ করলেন ব্রাহ্মণকুলে। বয়ঃপ্রাপ্তির পর সংসারে তাঁর মন টিকল না। বিষয়বাসনা ত্যাগ করে তিনি প্রব্রজ্যা গ্রহণ করলেন, ক্রমে লাভ করলেন ধ্যানবল, হিমালয়ের এক বিজন বনভূমিতে ধ্যানস্থ হলেন অবশেষে।
নৈমিষারণ্যে সেদিন চাঁদের হাট বসেছে। অগ্রগণ্য সকল ঋষিগণ উপস্থিত। ঋষি মেধা, অত্রি, ধৌম্য, গৃত্সমদ, যাজ্ঞবল্ক্য, বিশ্বামিত্র, অষ্টাবক্র, মহাতপাসহ অনেকেই সভা উজ্জ্বল করে বসে আছেন। এছাড়াও আচার্য পাণিনি মাতুল ব্যাড়ির সঙ্গে এসেছেন এই মহতী সভায়। আচার্য কৌটিল্য এসেছেন, রাজনীতিজ্ঞ কৌণপদন্ত, বাতব্যাধি বসে উৎকৃষ্ট তক্র পান করছেন। মধ্যমণি আচার্য বৈশম্পায়ন। পরস্পর বিশ্রম্ভালাপ, দেশ-দশের খবরাখবর আদানপ্রদান চলছে।
একদা লক্ষ্যভেদী আজ এই রণভূমিতে নিতান্ত অসঙ্গ, একা। তখন এক যুগন্ধর বাগ্মী পুরুষ বলতে থাকলেন ধর্মের বাণী, কর্তব্যের উপদেশের সঙ্গেই আত্মজাগরণের বরাভয় শোনালেন, স্মরণ করালেন শরণাগতকে। জীবনমৃত্যুর দোলাচল তাঁর ভাষ্যে যেন হয়ে উঠল নটরাজের চরণযুগলের নৃত্যমধুর নুপূরনিক্বণ অথবা মহাকালের দুই হাতে শোভমান কালের মন্দিরার নিত্যধ্বনি।
সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মশতবর্ষ পেরিয়ে গিয়েছে বহুদিন। গত সহস্রাব্দের শেষলগ্নেই। তারপর নতুন সহস্রাব্দ এল, দুনিয়া আর দিনকাল বদলে গেল কত– সকলেই ‘পুরনো দিন’ বলতে যা বোঝে তা ঝড়ের বেগে পিছনে ছুটছে, আজ যেটা মনে হয় এই তো গতকালের কথা বুঝি, আগামিকাল-ই তা যুগের ওপারে চলে গিয়েছে এমন বোধ হবে। এই চলমান সময়ে, গতিময় মূল্যবোধের পৃথিবীতে তেইশে জানুয়ারি আসে বাংলার বুকে।
বোধিসত্ত্ব সে জন্মে রাজা ব্রহ্মদত্তের এক প্রধান অমাত্য হয়ে রাজসন্নিধানে রাজসেবা করছেন। বারাণসীরাজ ব্রহ্মদত্ত অত্যন্ত বাচাল ছিলেন। রাজপদে আসীন থেকে এমন বাচালতা কাম্য নয়, উল্টে তা বিপদ ডেকে আনতে পারে। অমাত্য সুযোগের অপেক্ষা করতে লাগলেন, অপেক্ষা করতে লাগলেন একটা যথাযথ দৃষ্টান্তের, যার সাহায্যে তিনি রাজাকে সচেতন করতে পারবেন।
পবিত্র ধর্মগ্রন্থের মাহাত্ম্য শ্রীমদ্ভগবদ্গীতাকে ঘিরে রেখেছে। তবে বাহ্য প্রদর্শনে, ধর্মীয় আচারের পালনেই তার সার্থকতা নয়। তার সাফল্য অন্তর্গত গীতিময় বাণীর ধারণে, যাপনে, উপলব্ধিতে।
বোধিসত্ত্ব নানাজন্মে নানারূপ ধারণ করেছিলেন। আজকের কাহিনিটি একটু বিচিত্র, সেবার ব্রহ্মদত্তের শাসনকালে বারাণসী নগরে বোধিসত্ত্ব এক শূকরীর গর্ভে জন্ম নিয়েছিলেন। একদিন শূকরী তার দুটি পুত্রকে নিয়ে গর্তে শুয়ে ছিল। তখন এক বৃদ্ধা কার্পাসক্ষেত্র থেকে কার্পাসপূর্ণ ঝুড়ি নিয়ে হাতের লাঠিটিতে ঠকঠক আওয়াজ করতে করতে পথ দিয়ে যাচ্ছিল। শূকরী সেই শব্দ শুনে প্রাণভয়ে ভীত হয়ে পুত্রদুটিকে ফেলে পালিয়ে গেল।
আজ মকরসংক্রান্তি। ভারতীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানে সংক্রান্তি সূর্যের রাশি পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কিত। মকর সংক্রান্তিতে সূর্য প্রবেশ করে মকররাশিতে। প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে, এই সময় থেকে সূর্যের উত্তরায়ণের সূচনা। কিন্তু বৈজ্ঞানিক-ভৌগোলিক গণনায় উত্তরায়ণের সূচনা ঘটে গিয়েছে দিনপনেরো আগে থেকেই। সে যাই হোক, ভারতবর্ষের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয়জীবনে, পরম্পরাগত বিশ্বাসে ও যুগবাহিত সমাজদর্শনে মকরসংক্রান্তি এক বিশেষ দিন।
জীবনে বহুকৌণিক ও আপাতবিরুদ্ধ বিবিধ ধর্মের নির্ণয় ও পালনেই আসে সার্থকতা। মহাদর্দর সেই কর্তব্যের পালনে চ্যুত হননি বলেই তাঁর সেই ক্ষুদ্র তুচ্ছ জীবন একদা মিশবে মহাসাগরে, মহাজীবনের ছন্দোময় মন্দমধুর মহাধ্বনির অমলিন ঝঙ্কারে সার্থক হবে একদিন।
সেবার বোধিসত্ত্ব স্বর্গের অন্যতম দেবপুত্রভাবে অবস্থান করছেন। ব্রহ্মদত্ত তখন বারাণসীর রাজা, সেসময় বারাণসীতে এক বিশাল উত্সব আয়োজিত হল। বারাণসী বলে কথা! সেই মহোত্সবে নাগ, পক্ষী, দেবগণ নানালোক থেকে বারাণসীতে আসতে থাকলেন। নানাবিধ স্বর্গলোক থেকে দেবতারা আসছেন, তাঁদের মধ্যে চারজন দেবপুত্র ছিলেন। বোধিসত্ত্ব এঁদের অন্যতম।
আজ যে ক্ষুদ্র, কাল সে বৃহৎ। আজ যে দীন, কাল সে-ই দীনবন্ধু। যাকে যতটা ভালো ভাবো সে হয়তো ততো ভালো নয়। যাকে যতটা খারাপ ভেবেছো, সেও ততটা খারাপ নয়। দোষে-গুণে যে পূর্ণ হয়ে যে জীবদেহ আর প্রাণের খেলা তার গুণের ভাণ্ডারে ত্রিবিধ গুণের টানাপোড়েন চলছে অবিরত।
সেবার বোধিসত্ত্ব এক গোধারূপে জন্ম নিয়েছেন। সেই গোসাপটি প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে অরণ্যে বসবাস শুরু করল। কাছেই এক জটাজুটধারী অজিনবাস এক ব্রহ্মচারী তাপসের পর্ণকুটীর। সেই তাপস অত্যন্ত দুঃশীল। গোসাপটি নিত্যই তাপসের আশ্রমে চরতে যায়, তাঁকে প্রণাম করে আসে। এভাবেই দিন কাটছিল।
সেবার বোধিসত্ত্ব রাজার ঘরে জন্মেছেন। ক্রমে ক্রমে তিনি কালের নিয়মেই সিংহাসনে আসীন হলেন। রাজ্যাধিকার পেয়ে ধর্মমতে প্রজাপালন করতে লাগলেন। এক ব্রাহ্মণ রাজার রাজপুরোহিত ছিলেন, তাঁর নাম রুহক। এই কাহিনি এই রুহকের। জাতকমালার অন্তর্গত রুহক জাতক।
কর্মের এই দুরূহ স্বরূপ কীরকম ঠিক? কোনটি কর্ম, কোনটি অকর্ম, কোনটি বিকর্ম তা না জানলে নিষ্কাম কর্মের সাধন যথার্থ হতে পারে না। কর্তব্যের অনুষ্ঠান হল কর্ম, নিষিদ্ধের অর্থাৎ অকর্তব্যের অনুষ্ঠান বিকর্ম। কর্মোত্তীর্ণ সন্ন্যাস হল কর্মের অকরণ বা অকর্ম। বেদবিহিত কর্তব্যের যথার্থ অনুগমন কর্তব্য বলে নন্দিত।
সাহিত্যিক হিসেবেও বুদ্ধিতে ক্যাথেরিন তার চেয়ে অনেক উঁচুতে। এটা প্রতি নিয়ত বুঝতেন মারে। তাই পুরোপুরি আত্মমগ্ন থাকতেন নিজের পড়াশুনার জগতে। স্বার্থপরের মতো থাকতেন, যদিও স্বামী-স্ত্রী তারা। সংসারের সমস্ত কাজই ছিল ক্যাথেরিনের। কোথাও বেড়াতে গেলে প্লান করতেন মারে আর সব আয়োজন এবং কাজ ছিল ক্যাথেরিনের।