অসুস্থতা নিয়েও সকলের সঙ্গে রসে-বশে ঠাকুর ভালোবোধ করতে লাগলেন। সারদা মা তাঁকে কাছে থেকে সেবা করে সবই লক্ষ্য করেন নীরবে। ডাক্তার মহেন্দ্রলালের চিকিৎসায় রোগ কিছুটা উপশম হলেও তা যে সম্পূর্ণ সারার নয়। সকল ভক্তের সঙ্গে শ্রীমাও তা বুঝতে পারেন।

অসুস্থতা নিয়েও সকলের সঙ্গে রসে-বশে ঠাকুর ভালোবোধ করতে লাগলেন। সারদা মা তাঁকে কাছে থেকে সেবা করে সবই লক্ষ্য করেন নীরবে। ডাক্তার মহেন্দ্রলালের চিকিৎসায় রোগ কিছুটা উপশম হলেও তা যে সম্পূর্ণ সারার নয়। সকল ভক্তের সঙ্গে শ্রীমাও তা বুঝতে পারেন।
১২৯১ সালে ঠাকুরের গলরোগ ধরা পড়ে। পাণিহাটির মহোৎসবে যোগদানের পর থেকে সেই রোগ ক্রমে বেড়ে যায়। ওষুধের সবরকম ব্যবস্থা করা হলেও তা বেড়েই চলে। ভাদ্রমাসে একদিন তাঁর গলা থেকে রক্ত বার হলে ভক্তরা চিন্তায় পড়েন।
শ্রীমা রসিকের কথা ঠাকুরকে বলেন, শুনে ঠাকুর হুঁ বলে সম্মতি দেন। তারপর একদিন ভাবের ঘোরে ঠাকুর যখন পঞ্চবটির দিকে যাচ্ছিলেন, রসিক সেখানে ঝাঁট দিচ্ছিল। ঠাকুর তাকে দেখে তার দিকে এগিয়ে যান।
সারদা মা পুজো করছিলেন, মহিলাটি তাঁকে প্রণাম করে সব জানালেন। শ্রীমা ঠাকুরের স্বভাব জানতেন। তিনি বললেন যে ঠাকুরই ঔষধজ্ঞ, তিনি কিছুই জানেন না।
সারদা মা যেন স্বয়ং মালক্ষ্মী। লক্ষ্মী যেমন সদা নারায়ণের পদসেবারতা, শ্রীমাও তেমনি ঠাকুরের বিশ্রামের সময় তাঁর পদসেবা করছেন। কখনও বা রন্ধনকর্মে ব্যস্ত থেকেছেন।
সারদা মায়ের যখন ছ’বছর বয়সে বিয়ে হয়, তখন তাঁর একমাত্র বোন কাদম্বিনী আর এক ভাই প্রসন্নকুমার খুবই ছোট ছিল। বাকি চার ভাই তখনও জন্মায়নি। আজ ভাইফোঁটার পর্বে মা সারদা ও তাঁর ভাইদের কথা শোনা যাক।
জগদ্ধাত্রীপুজোর প্রসঙ্গে সারদা মা বলেছেন, একবার গ্রামের কালীপুজোর সময় নব মুখুজ্যে তাঁদের সঙ্গে আড়াআড়ি করে পুজোর চাল না নিয়ে ফেরত দিল। পুজোর যোগাড়ের চাল শ্যামাসুন্দরী তৈরি করে রেখেছিলেন…
ঠাকুরের ইষ্টদর্শনে তিন মায়ের স্বরূপ একাকার হয়ে আছে। এক মন্দিরের মা ভবতারিণী, অপরজন নহবতে তাঁর সহধর্মিণী যাঁকে তিনি আদ্যাশক্তি ষোড়শীরূপে পুজো করেছেন। আর তৃতীয়জন তাঁর গর্ভধারিণী মা।
পুজোতে সারদামা পশুবলি নিষিদ্ধ করায় তাঁর বাড়ির জগদ্ধাত্রী পুজোতেও বলি হত না। তিনি প্রকাশ্যে ভক্তির নামে নিষ্ঠুরতা মেনে নিতে পারতেন না।
ঠাকুর বলতেন, ‘কলকাতার লোকগুলো যেন অন্ধকারে পোকার মতো কিলবিল কচ্চে, তুমি তাদের দেখবে। আমি কি করেছি, তোমাকে এর চাইতে অনেক বেশি কত্তে হবে’।
একবার মা শ্যামাসুন্দরী নিজে মেয়ে সারদাকে নিয়ে এসেছিলেন। দক্ষিণেশ্বরে পা রাখতেই ঠাকুরের ভাগ্নে হৃদয় তেড়ে আসে। অথচ ঠাকুরের মা আর হৃদয় একই স্থান শিহড়ের বাসিন্দা।
অল্প পরিসরে সারদার থাকতে কষ্ট হয় দেখে ঠাকুরের রসদ্দার শম্ভুচরণ মল্লিক মায়ের মন্দিরের কাছে কিছু জমি আড়াইশো টাকায় কিনে নেন। শম্ভুবাবুর স্ত্রী সারদা মাকে দেবীজ্ঞানে ভক্তি করতেন।
ঠাকুরের মহিলা ভক্তরা শ্রীমাকে দেখতে এসে বলতেন, ‘আহা, কী ঘরেই আমাদের সীতালক্ষ্মী আছেন গো, যেন বনবাস গো’। যেমন অসংখ্য কষ্টের মধ্যেও বনবাসকালে শ্রীরামের সঙ্গ লাভ করে সীতার মন আনন্দে পরিপূর্ণ হয়ে থাকত।
ডাকাত মা বলল, ‘কাল রাতে মেয়ের মুড়ি ছাড়া তো কিছু খাওয়া হয়নি। তুমি যাও, কাছের বাজার থেকে মাছ, তরকারি কিনে নিয়ে এস। মেয়েকে আজ নিজের হাতে রেঁধে খাওয়াব।
ঠাকুর নিজে পূজারীর আসনে বসলেন। তাঁর ডানদিকে আলপনা করা দেবীর আসন পাতা। উত্তরমুখী হয়ে সেই আসনেই ঠাকুর শ্রীমাকে বসার জন্য ইঙ্গিত করলেন।