ঠাকুর বলতেন, ‘কলকাতার লোকগুলো যেন অন্ধকারে পোকার মতো কিলবিল কচ্চে, তুমি তাদের দেখবে। আমি কি করেছি, তোমাকে এর চাইতে অনেক বেশি কত্তে হবে’।

ঠাকুর বলতেন, ‘কলকাতার লোকগুলো যেন অন্ধকারে পোকার মতো কিলবিল কচ্চে, তুমি তাদের দেখবে। আমি কি করেছি, তোমাকে এর চাইতে অনেক বেশি কত্তে হবে’।
একবার মা শ্যামাসুন্দরী নিজে মেয়ে সারদাকে নিয়ে এসেছিলেন। দক্ষিণেশ্বরে পা রাখতেই ঠাকুরের ভাগ্নে হৃদয় তেড়ে আসে। অথচ ঠাকুরের মা আর হৃদয় একই স্থান শিহড়ের বাসিন্দা।
অল্প পরিসরে সারদার থাকতে কষ্ট হয় দেখে ঠাকুরের রসদ্দার শম্ভুচরণ মল্লিক মায়ের মন্দিরের কাছে কিছু জমি আড়াইশো টাকায় কিনে নেন। শম্ভুবাবুর স্ত্রী সারদা মাকে দেবীজ্ঞানে ভক্তি করতেন।
ঠাকুরের মহিলা ভক্তরা শ্রীমাকে দেখতে এসে বলতেন, ‘আহা, কী ঘরেই আমাদের সীতালক্ষ্মী আছেন গো, যেন বনবাস গো’। যেমন অসংখ্য কষ্টের মধ্যেও বনবাসকালে শ্রীরামের সঙ্গ লাভ করে সীতার মন আনন্দে পরিপূর্ণ হয়ে থাকত।
ডাকাত মা বলল, ‘কাল রাতে মেয়ের মুড়ি ছাড়া তো কিছু খাওয়া হয়নি। তুমি যাও, কাছের বাজার থেকে মাছ, তরকারি কিনে নিয়ে এস। মেয়েকে আজ নিজের হাতে রেঁধে খাওয়াব।
ঠাকুর নিজে পূজারীর আসনে বসলেন। তাঁর ডানদিকে আলপনা করা দেবীর আসন পাতা। উত্তরমুখী হয়ে সেই আসনেই ঠাকুর শ্রীমাকে বসার জন্য ইঙ্গিত করলেন।
দশমহাবিদ্যার তৃতীয় রূপ হলেন অপূর্ব সুন্দরী ষোড়শী। ইনি সর্বজ্ঞানদায়িনী সরস্বতীরূপা, যাঁকে শ্রীবিদ্যা ও রাজরাজেশ্বরীও বলা হয়। তিনি ত্রিনয়না, রক্তবর্ণা ও চতুর্ভুজা।
ঠাকুর যেমন বালকস্বভাব, সকলের কথায় আস্থা রাখতেন। সারদাও তেমনই সরল ছিলেন। কোন একজন মহিলা সারদাকে বুঝিয়েছিলেন যে, সন্তান না হলে সংসারধর্ম রক্ষাকরা যায় না।
সারদার গলা শুনে ঠাকুরের তন্দ্রা কেটে যায়। তিনি তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে উঠে নহবতের ঘরে এসে খুবই কাতরভাবে বলতে লাগলেন, ‘দেখো গো, আমি মনে করেছিলুম লক্ষ্মী, তাই ‘তুই’ বলে ফেলেছি।
ঠাকুর বাংলার ঘরোয়া সুস্বাদু খাবার খেতে ভালোবাসতেন। শুধু তাই নয়, সুস্বাদু রন্ধন প্রণালীও জানতেন। এর কারণ কামারপুকুর গ্রামের অন্দরমহলে তাঁর ছেলেবেলা থেকে অবাধ যাতায়াত ছিল।
এরপর, একদিকে শ্রীরামকৃষ্ণদেবের জগজ্জননী দর্শনের আকূতি ও অন্যদিকে কঠোর সাধনা শুরু হয়। তার ফলে অনিয়মের জন্য শরীরের প্রতি তাঁর অবহেলায় স্বাস্থ্য খুব ভেঙে পড়ে।
মায়ের আগ্রহে ঠাকুর বিয়ের পর দু’বছরের বেশি কামারপুকুরে ছিলেন। এরপর ঠাকুর দক্ষিণেশ্বরে গিয়ে একবছর পর ভাগনে হৃদয়কে নিয়ে ফিরে আসেন ও তাকে নিয়ে দ্বিতীয় বার শ্বশুরালয়ে যান।
১২৬৬ সালের বৈশাখ মাসের শেষভাগ। পরবর্তীকালে বিবাহ প্রসঙ্গে সারদা মা বলতেন, ‘খেজুরের দিনে আমার বিয়ে হয়েছিল, মাস মনে নেই। যখন কামারপুকুর গেলুম তখন সেখানে খেজুর কুড়িয়েছি।’
ঠাকুরের যখন ছয় বছর বয়স তখনই তাঁর পিতা ক্ষুদিরাম দেহত্যাগ করেন। তাঁর বড়দাদা রামকুমার কলকাতার টোলে কাজ নেন। পরে নিজেরই টোল খোলেন। ভাই গদাধরকে তিনি পড়াবেন বলে কলকাতায় নিয়ে যান।
ঠাকুরের ভাগ্নে হৃদয় সারদার থেকে বই কেড়ে নিয়ে বলেছিলেন, মেয়েদের বই পড়তে নেই, শেষে কি নাটক-নভেল লিখবে? লক্ষ্মী বই ছাড়েননি। বাড়ির মেয়ে বলে তাঁকে হৃদয় জোর করতে পারেননি।