যোগানন্দ স্বামী যখন শ্রীমার দেখাশোনা করতেন, কৃষ্ণলাল তখন তাঁর সহকারী ছিলেন। এই স্বামী ধীরানন্দের শুদ্ধা ভক্তির উচ্চ ভাব সম্পর্কে শ্রীমা, স্বামীজি, রাখাল মহারাজ সকলেই বলেছেন। মঠে আগত ভক্তবৃন্দের কল্যাণে তিনি বাবুরাম মহারাজের অনুগামী ছিলেন।

যোগানন্দ স্বামী যখন শ্রীমার দেখাশোনা করতেন, কৃষ্ণলাল তখন তাঁর সহকারী ছিলেন। এই স্বামী ধীরানন্দের শুদ্ধা ভক্তির উচ্চ ভাব সম্পর্কে শ্রীমা, স্বামীজি, রাখাল মহারাজ সকলেই বলেছেন। মঠে আগত ভক্তবৃন্দের কল্যাণে তিনি বাবুরাম মহারাজের অনুগামী ছিলেন।
শ্রীমার চিঠি পেয়ে শরৎ মহারাজ যোগীনমা, গোলাপমা ও ভূমানন্দকে সঙ্গে নিয়ে জয়রামবাটি আসেন। প্রায় দু’ মাস এখানে তিনি থাকেন। শরৎ মহারাজ শ্রীমাকে গ্রাম্যজীবনের এই টানাপোড়েনে উৎকণ্ঠিত থাকার বদলে উদাসীন দেখেন।
ইন্দুমতী দেবী জানান, শ্রীমা ডুমুরের ডালনা, আমরুল শাক, গিমে শাক, এসব খেতে ভালোবাসতেন। শ্রীমার ছোট ভাই অভয় যখন দেহরক্ষা করে, তাঁর স্ত্রী সুরবালা তখন গর্ভবতী। তিনি সেসময় নিজের বাপের বাড়িতে ছিলেন। শৈশবে মাতৃহারা সুরবালা তাঁর দিদিমা ও মাসিমার কোলে বড় হয়েছিলেন।
বড়ভাই প্রসন্নকুমারের দুই মেয়ে নলিনী ও সুশীলা। রামপ্রিয়া প্রসন্নের স্ত্রী। তখন সারদাজননী জীবিত, যখন শিশুকন্যা নলিনীর জন্ম হয়। সারদা মা পিতৃগৃহে এলে রামপ্রিয়া শিশুকোলে নিয়ে তাঁকে প্রণাম করেন। শ্রীমা রামপ্রিয়াকে জিজ্ঞাসা করেন যে, এই কি প্রসন্নের মেয়ে নলিনী।
মা সারদার ছোটকাকা নীলমাধব ছিলেন অকৃতদার। বৃদ্ধ বয়সে তিনি তাঁর আদরের সারুর কাছেই থাকতে চাইতেন। শ্রীমাও তাঁকে নিজের কাছে রেখে স্বয়ং পরিচর্যা করতেন। সেই সময়ে আম, ম্যাঙ্গোষ্টিন প্রভৃতি ফলাদি অসময়ে বেশি দাম দিয়ে কেনা হত।
এই সময় পায়ের একটি ফোঁড়া নিয়ে মা ভীষণ কষ্ট পাচ্ছিলেন। ফোঁড়া পেকে গেলেও তিনি কাউকে ছুঁতে দিতেন না। একবার মন্দির দর্শনে গিয়ে অতি ভিড় দেখে পায়ে চোট লাগার ভয়ে মা চিৎকার করে ওঠেন।
দুর্গাপুজো উপলক্ষে শ্রীমা মঠে এসেছেন। ঠাকুরঘরের সামনের দেয়ালে টাঙানো ছিল যোগীন মহারাজের একটি তৈলচিত্র। মা কাছে গিয়ে সেই চিত্রটি অনেকক্ষণ ধরে দেখতে লাগলেন। তিনি ঠাকুরঘরে গিয়ে ঠাকুরকে প্রণাম করেই চলে এলেন।
সেকালের এক বিধবা মহিলার পক্ষে একাধারে বিদেশিনী ও খ্রিস্টান মেয়েকে স্বীকার করা এক কথায় কল্পনাতীত ছিল। তাই স্বামিজির মনে প্রচ্ছন্ন কৌতুহল ছিল, শ্রীমা তাঁকে কীভাবে নেন দেখার।
শ্রীমা বলেছেন, ‘আমার চিরকালই গঙ্গাবাই’। তাই গঙ্গাতীরে তাঁর জন্য নতুন বাড়ি ‘উদ্বোধন’ তৈরি হয়। ঠাকুরের তিরোভাবের পর তাঁর সন্ন্যাসী সন্তানেরা যখন অসহায় ও দিশাহারা হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তখন শ্রীমাই ঠাকুরের সন্ন্যাসী ও গৃহী ভক্তদের সঙ্ঘবদ্ধ করে রক্ষা করেছেন।
কৃষ্ণভামিনী দেবীর সনির্বন্ধ অনুরোধে শ্রীমাও তাঁর সঙ্গে কৈলোয়ারে যান। তাঁদের সঙ্গে গিয়েছিলেন কৃষ্ণভামিনী দেবীর মা, গোলাপমা, স্বামী যোগানন্দ, সারদানন্দ, ত্রিগুণাতীতানন্দ, যোগীন মহারাজের বাবা নবীনচন্দ্র চৌধুরী প্রমুখ।
যখন মা সারদা নীলাম্বরবাবুর বাড়িতে ছিলেন, তখন তাঁর এক অভিনব দর্শন হয়। তিনি দেখেন যে, ঠাকুর গঙ্গায় নামলেন, নামামাত্র তাঁর দেহ গঙ্গার জলে মিলিয়ে গেল।
ছেলেকে কোলে নিয়ে চোখের জলে কাঁপতে কাঁপতে গিরীশ ওপরে এসে শ্রীমাকে সাষ্টাঙ্গ প্রণাম করেন ও বলেন, ‘মা, এই ছেলে হতেই তোমার শ্রীচরণ দর্শন হল আমার’।
পুরীর পাণ্ডা গোবিন্দ শিঙ্গারী শ্রীমাকে শিবিকায় করে জগন্নাথমন্দিরে নিয়ে যেতে চাইলে মা সারদা বলেছিলেন, ‘না গোবিন্দ, তুমি আগে আগে পথ দেখিয়ে চলবে, আমি তোমার পেছনে পেছনে দীনহীন কাঙালিনীর মতো যাব’।
বৃন্দাবনে থাকার সময় মা সারদা এই খবর শুনে বলেন যে, ঠাকুরই যখন চলে গেলেন, তিনি টাকা নিয়ে কী করবেন। কামারপুকুরে মা সারদাকে রেখে স্বামী যোগানন্দ কলকাতায় গুরুভাইদের কাছে ফিরে আসেন। মা সারদার নিঃসঙ্গ জীবনের যাত্রা শুরু হল।
১৭ পৌষ, (৩ জানুয়ারি) পরমারাধ্যা সারদা মায়ের পূত জন্মতিথি। আমার আজকের লেখাটি শ্রীমায়ের পাদপদ্মে অর্পণ করলাম। বৃন্দাবনে যাওয়ার আগে মা সারদা ও তাঁর সাথীরা বৈদ্যনাথধাম দর্শন করেন।