শ্রীমার সঙ্গে দরিদ্র সংসারে পরিশ্রমী অন্যান্য মেয়ে বা ভগিনীর পার্থক্য আছে। কারণ যাদের পরিবারে শ্রম করতে হয়, তারা সেই অবস্থার অধীন হয়েই সেই শ্রম করে। কিন্তু মা সারদা জীবনে সবসময় অবস্থার অধীন হয়ে কাজ করেননি। কর্তব্যবোধ এবং হৃদয়ের প্রেরণাতেই কাজ করেছেন।
আলোকের ঝর্ণাধারায়
পর্ব-৫২: দেশহিতৈষী মা সারদা
গ্রামবাসীদের সুখ-দুঃখের খবর রাখার সঙ্গে সঙ্গে শ্রীমা স্বদেশ ও বিদেশের খবর নানাস্থান থেকে তাঁর কাছে আসা মানুষজনের কাছে জিজ্ঞাসা করে জানতেন। কখনও বা পত্রিকা পড়িয়ে শুনতেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন তিনি অনেকদিন এইভাবে পত্রিকা পড়িয়ে খবর শুনতেন।
পর্ব-৫১: জয়রামবাটির যথার্থ রক্ষয়িত্রী
কলকাতায় খাকার সময় শ্রীমার ভক্ত চন্দ্রমোহন দত্ত একবার শুনতে পান, পাগলি মামি বিড়বিড় করে শ্রীমাকে কটুকথা বলছেন। মা সারদা তখন পুজো করছিলেন। পুজো শেষ করে পাগলির দিকে চেয়ে বলেন, ‘কত মুনি ঋষি তপস্যা করেও আমাকে পায় না, তোরা আমাকে পেয়ে হারালি’।
পর্ব-৫০: ঠাকুরের ছবি শুধু ছবি নয়
একদিন জয়রামবাটির কোনও একজন লোক শ্রীমাকে বলেন যে, তাঁকে দেখতে কত লোক কত দূরদেশ থেকে আসছে। আর তারা কাছে থেকেও মা সারদাকে বুঝতে পারছে না কেন? তার উত্তরে শ্রীমা বলেন, ‘তা নাই বা বুঝলে, তোমরা আমার সখা, তোমরা আমার সখী’।
পর্ব-৪৯: রসিক স্বভাব মা সারদা
রামলালের ছোটমেয়ে রাধার বিয়েতে শ্রীমা কামারপুকুর আসেন। সেখানে বাসর জাগার কোনও লোক না থাকায় তাঁকেই জাগতে বলা হয়। বাসরঘরে বসে শ্রীমা আপন মনে গান ধরলেন, “রাধাশ্যাম একাসনে সেজেছে ভাল। রাই আমাদের হেমবরণী শ্যাম চিকন কালো”।
পর্ব-৪৮: বিয়ের পর রাধুর প্রত্যাবর্তন
শ্রীমা বললেন, ‘রাধুর অসুখের জন্য ঠাকুরকে বল্লুম, কিছু হল না। কত ডাক্তার, কবরেজ এসে গেল, তাদেরই সুবিধে হল’। নলিনী, সুশীলা আর রাধারানি, তিনজনেরই এখন পনের থেকে একুশের মধ্যে বয়স। কেউই সেইভাবে শ্বশুরবাড়ির ঘর করল না। রাধারানিও বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ি কদাচিৎ যেত।
পর্ব-৪৭: সারদা মা ও তাঁর রাধু
শ্রীমা ভেবেছিলেন, সুরোকে তিরোলের ক্ষ্যাপা কালীর বালা পরাবেন। তিনি জেনেছিলেন যে, অনেকের মাথার ব্যামো নাকি সেরে গিয়েছে। রাধু তার মার ন্যাড়া মাথা বলে তাকে ‘নেড়িমা’ বলে ডাকত আর শ্রীমাকে ‘মা’ বলত। সুরবালা মেয়ের ওপর রাগ করলে রাধু খিলখিল করে হাসত।
পর্ব-৪৬: শ্রীমায়ের দুই ভ্রাতৃবধূর কথা
শরৎ মহারাজ শ্রীমাকে সাষ্টাঙ্গ প্রণাম করতেই মা সারদা বলেন, ‘এসেছ বাবা শরৎ। তোমার জন্যই নিমপাতা পাড়ছি, তুমি খাওয়ার সময় প্রথমপাতে তেতো নিমবেগুন খেতে ভালবাস, জানি’। শ্রীমা সকলকে এবার বললেন, ‘জল খেয়ে সবাই একটু জিরিয়ে নিয়ে স্নান কোরো’।
পর্ব-৪৫: কথার কথা মা নয়—সত্য জননী
সেই যুগে শিক্ষিত মেয়েদেরও অবিবাহিত জীবনযাপন কল্পনাতীত ছিল। মা সারদা মানসিক দিক থেকে সময়ের চাইতে অনেক এগিয়ে ছিলেন। তাই তিনি শুধু উপদেশ দিয়ে নয়, নিজেও দৃঢ়ভাবে তা কার্যে পরিণত করেছেন। সন্ন্যাসিনী গৌরীপুরী মাতার পালিতা কন্যা দুর্গাকে সকলের অমত সত্ত্বেও তিনি ইংরাজি শিখতে পাঠান।
পর্ব-৪৪: সারদা মায়ের মানসিক দৃঢ়তা
শ্রীমার মানসিক দৃঢ়তা তৎকালীন সমাজের প্রেক্ষিতে কতখানি ছিল, তা এই একটি উদাহরণে তুলে ধরা যায়। লোকমান্য তিলক ও রানাডে মহারাষ্ট্রের এক খ্রিষ্টান মিশনারিদের সভায় গিয়েছিলেন। সেখানে সকলের জন্যই ‘চা’ পরিবেশন করা হয়। আর তাই নিয়ে সমাজে কথা উঠল।
পর্ব-৪৩: শ্রীমার বড় ভাইজিরা—নালু ও মাকু
কোনও পল্লীতে কাজের খোঁজে গেলে গৃহস্তরা আতঙ্কে দরজা বন্ধ করে দেয়। এক মুসলমান কয়েকটি কলা এনে মাকে বললে, ‘এগুলি ঠাকুরের জন্য এনেছি, নেবেন কি’? শ্রীমা হাত পেতে বললেন, ‘ঠাকুরের জন্য এনেছ, নেব বৈ কি’।
পর্ব-৪২: শ্রীমার ভাইপো খুদি
শ্রীমার সেজভাই বরদাপ্রসাদের স্ত্রী ইন্দুমতীর কথা থেকে জানা যায় যে, তার বড়ছেলে খুদিরামকে মা সারদা খুদির বদলে ‘ফুদি’ ডাকতেন। সে ফল খেতে খুব ভালোবাসত। তার জন্য শ্রীমা কলকাতা থেকে কখনও বা পার্সেল করে ফল পাঠাতেন।
পর্ব-৪১: মা সারদার অন্তরঙ্গ সেবক শরৎ মহারাজ
যোগানন্দ স্বামী যখন শ্রীমার দেখাশোনা করতেন, কৃষ্ণলাল তখন তাঁর সহকারী ছিলেন। এই স্বামী ধীরানন্দের শুদ্ধা ভক্তির উচ্চ ভাব সম্পর্কে শ্রীমা, স্বামীজি, রাখাল মহারাজ সকলেই বলেছেন। মঠে আগত ভক্তবৃন্দের কল্যাণে তিনি বাবুরাম মহারাজের অনুগামী ছিলেন।
পর্ব-৪০: মা সারদার নিজবাটি
শ্রীমার চিঠি পেয়ে শরৎ মহারাজ যোগীনমা, গোলাপমা ও ভূমানন্দকে সঙ্গে নিয়ে জয়রামবাটি আসেন। প্রায় দু’ মাস এখানে তিনি থাকেন। শরৎ মহারাজ শ্রীমাকে গ্রাম্যজীবনের এই টানাপোড়েনে উৎকণ্ঠিত থাকার বদলে উদাসীন দেখেন।
পর্ব-৩৯: ইন্দুমতী ও সুরবালা
ইন্দুমতী দেবী জানান, শ্রীমা ডুমুরের ডালনা, আমরুল শাক, গিমে শাক, এসব খেতে ভালোবাসতেন। শ্রীমার ছোট ভাই অভয় যখন দেহরক্ষা করে, তাঁর স্ত্রী সুরবালা তখন গর্ভবতী। তিনি সেসময় নিজের বাপের বাড়িতে ছিলেন। শৈশবে মাতৃহারা সুরবালা তাঁর দিদিমা ও মাসিমার কোলে বড় হয়েছিলেন।