অযোধ্যাপতি স্মিত হেসে বললেন, “তুমি কি জানো না, একমাত্র রাম — সে ছাড়া এই জগতে তুমি হলে আমার সবচেয়ে প্রিয়। এই হৃদয়খানিও তুলে তোমার হাতে দিতে পারি, রানি।

অযোধ্যাপতি স্মিত হেসে বললেন, “তুমি কি জানো না, একমাত্র রাম — সে ছাড়া এই জগতে তুমি হলে আমার সবচেয়ে প্রিয়। এই হৃদয়খানিও তুলে তোমার হাতে দিতে পারি, রানি।
কৈকেয়ী নিজে স্বপ্ন দেখছেন, মন্থরাকেও সে স্বপ্নের সঙ্গী করে নিয়ে যেন ভাসছেন স্বপ্নের রাজ্যে। মন্থরা জানেন কৈকেয়ী বড় অগভীর মন। সে মন এভাবেই কখনও হর্ষে উদ্বেল, কখনও ক্রোধে বিহ্বল।
ভোর হচ্ছে অযোধ্যায়। এ ভোর প্রতিদিনের নিয়মের বাইরে যেন অন্য এক অলৌকিক ভোর। রামের কানে ভেসে আসছে সুত, মাগধ, বন্দনাকারীদের মধুর স্তুতিগাথা।
মনের গভীর থেকে উঠে এল আশীর্বাদ —“পুত্র, দীর্ঘজীবী হও।তোমার শত্রু দূর হোক। তুমি ইক্ষ্বাকুরাজলক্ষ্মীকে লাভ করে আমার ও সুমিত্রার আত্মীয়জনকে আনন্দিত করো।”
দীর্ঘদিন রাজ্য শাসন করে এখন ক্লান্ত রাজা দশরথ। বয়সের ভার ন্যুব্জ করেছে তাঁকে। জরাগ্রস্ত দেহ, ক্লান্ত মন এখন যেন বিরতি চায়।
মিথিলা থেকে অযোধ্যা — এই দীর্ঘ যাত্রাপথে হঠাৎ ঘনিয়ে এসেছিল বিপদের কালো মেঘ। জমদগ্নিপুত্র পরশুরাম দাঁড়ালেন পথ জুড়ে। তাঁকে পরাস্ত করলেন রাম। পথের বিপদ কেটে গেল পথেই।
মিথিলা নগরী ছেড়ে এবার ফেরার পালা অযোধ্যায়। বিবাহ অনুষ্ঠান সমাপ্ত হল। ভাঙল মিলনমেলা। এই বিবাহ মাঙ্গলিকীর মূল হোতা বিশ্বামিত্র বিদায় নিলেন সকলের কাছ থেকে।
দ্রুতগতি ঘোড়ায় চলেছেন জনক রাজার দূত। যেতে হবে মিথিলা থেকে অযোধ্যা। জুড়বে দুই নগরীর হৃদয়। হরধনু ভঙ্গ করে নিজের পরাক্রম প্রদর্শন করে জনক রাজার মন জয় করে নিয়েছেন দশরথপুত্র রাম।
বিশ্বামিত্র জানেন, মিথিলা আর অযোধ্যা— ভারতভূমির দুই ক্ষাত্রশক্তির আধার। এদের মধ্যে সম্বন্ধ স্থাপনে, মেল বন্ধনে, পূর্ণ শক্তির প্রকাশ হবে- ঋষির হৃদয় আর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা দিয়ে তিনি তা দেখতে পাচ্ছেন।
ঋষিজনোচিত ঔদার্য কিংবা মহত্ত্বে কেউ কেউ হয়ে ওঠেন রাজর্ষি। কিন্তু ক্ষাত্রশক্তির উর্দ্ধে অধ্যাত্মশক্তিকেই একমাত্র অবলম্বন করে জীবন অতিবাহিত করার সিদ্ধান্ত বড় কঠিন, বড় বিরল।
মিথিলা নগরীতে মহর্ষি বিশ্বামিত্র এসেছেন, এ সংবাদ শুনে রাজপুরোহিত শতানন্দ ও অন্যান্য ঋত্বিকদের নিয়ে সাদর অভ্যর্থনা জানাতে এলেন স্বয়ং মিথিলেশ্বর জনক। পাদ্য, অর্ঘ্য দিয়ে বরণ করে নিলেন তাঁকে।
মিথিলার পথে চলেছেন বিশ্বামিত্র ঋষি, চলেছেন রাম, লক্ষ্মণ আর সিদ্ধাশ্রমের মুনিরা। পার হয়ে এলেন তাঁরা শোণ নদ, এলেন ত্রিপথগামিনী গঙ্গার তীরে। সেখানে রাত্রিবাস।
যে হিমালয়নন্দিনী গঙ্গা ভারতবর্ষের হৃদয় প্লাবিত করে বয়ে চলেছেন সাগর মোহনায়, তিনি ভাগীরথীও। কিন্তু কীভাবে? সে আখ্যান রয়েছে রামায়ণে, মহাভারতে, মৎস্য, ব্রহ্মাণ্ড প্রভৃতি পুরাণে।
শোণনদের তীরে রাত্রি হল ভোর। প্রভাতী আলোয় আবার শুরু হল পথ চলার প্রস্তুতি। যেতে হবে সেই মিথিলা নগরী। এবার শোণ নদ পার হতে হবে। নদের জল কোথাও কোথাও অগভীর, পার হওয়া দুষ্কর নয়।
সিদ্ধাশ্রমে সিদ্ধি লাভ হল বিশ্বামিত্রের। তবে কি আবার ফিরে চলা অযোধ্যায়? স্নেহকাতর পিতা সেখানে দুই পুত্রের জন্য অধীর অপেক্ষায়।