আমরা যারা সাধন করে চলেছি, সাধ্য মতো ঈশ্বরের স্মরণ মনন করে থাকি। সাধনের বিভিন্ন ক্ষণে বিভিন্ন বাধা, বিপর্যয় আসে।

আমরা যারা সাধন করে চলেছি, সাধ্য মতো ঈশ্বরের স্মরণ মনন করে থাকি। সাধনের বিভিন্ন ক্ষণে বিভিন্ন বাধা, বিপর্যয় আসে।
ভক্তির রসে স্নান করে ভক্ত যখন নিতান্ত তন্ময় হয়ে যায়, ভগবান মানব শরীর ধারণ করে অবতীর্ণ হন সে ভক্তি রস আস্বাদন করার জন্য।
শ্রীশ্রীঠাকুর বলছেন, “ঈশ্বর এক কিন্তু তার ভাব বিভিন্ন। যেমন বাটির কর্তা এক ব্যক্তি, কিন্তু তিনি কাহারো পিতা, কাহার ভাতা, কাহার পতি— ভাব ভিন্ন ভিন্ন কিন্তু ব্যক্তি এক ঈশ্বর সেই রকম।
শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছেন, “অমৃতকুন্ডে যে কোনও প্রকারে পড়তে পারলেই অমর হওয়া যায়, সেই রূপ ভগবানের নাম যে কোনও প্রকারে লইলেই তাহার ফল হইবেই হইবে।”
পুজোপাঠ, ভজন-কীর্তন ভক্তির সাধন আবার কর্মও। নিয়মিত এ সকল সাধক যখন করে থাকেন তখন বৈধীকর্ম হয়ে যায়। নিয়ম নিষ্ঠা আচার উপকরণ মেনে পুজোপাঠ আচরণ করা বৈধী কর্ম।
যোগ অভ্যাস দ্বারা ক্রমাগত ইন্দ্রিয়গুলিকে সংযত করতে চেষ্টা করা। ‘মন শুদ্ধ তো সব শুদ্ধ’। আমাদের ক্রমাগত শুদ্ধ হতে চেষ্টা করতে হবে। অনবরত পবিত্র চিন্তা আমাদের শুদ্ধত্বের দিকে নিয়ে যায়।
নাম জপ ও কীর্তন এর মধ্য দিয়ে তার সঙ্গে এক হয়ে থাকাই ভক্তের উদ্দেশ্য। প্রকৃত ভক্ত শত বিপদেও নামের সাধন করতে ছাড়েন না।
উপনিষদে বলা হয়েছে, ব্রহ্মের উপস্থিতি হেতুই সকলে যে যার কর্মে প্রেরিত হয়। সূর্য, চন্দ্র, অগ্নি, বায়ু, আদি সকলে আপন আপন কাজে নিয়োজিত হয়।
এক ভক্ত শ্রীশ্রীমাকে জিজ্ঞাসা করছেন, “মা কৃপাতেও বিচার আছে?” উত্তরে শ্রীমা বলছেন, “তা আছে বৈকি, যার যেমন কর্ম করা থাকে। কর্ম শেষ হলেই ভগবানের দর্শন হয়। সেটিই শেষ জন্ম।”
ভগবান লাভ হলে তখন আর দেহাত্মা বোধ থাকে না। যে দেহ এত সুন্দর, যে দেহকে পরম ভোগ্য বলে মনে হয়, তাতে আর সে বোধ হয় না। এত আকর্ষণ থাকে না।
মন আর মুখ এক হলে প্রকৃত সাধনা সম্ভব। নতুবা মুখে বলছি তুমি আমার সর্বস্ব, কিন্তু মন বিষয়কেই সর্বস্ব জেনে বসে রয়েছে— এইরূপ লোকের সাধনা বিফল।
নিয়মিত জপ, নাম, গুণগান আর সৎসঙ্গ ঈশ্বরের প্রেমে ডুবিয়ে রাখে। যেমন আচারের মতো, যেমন ভেতর বাহির সবেতেই রসে ভর্তি। ভক্তের ভগবানকে আস্বাদন করা বিভিন্ন ভাবেই হয়ে থাকে।
কামনা বাসনা আমাদের মনকে মলিন করে। যেমন এক ফোঁটা নীলবড়ি সমস্ত বালতির জলকে নীল করে দেয়। তেমন কামনা বাসনা আমাদের মনকে অশুদ্ধি করে দেয়।
ভগবানের কাছে ভক্তের ভক্তি খুব প্রিয়, যেমন গরুর প্রিয় জাব মেশানো খাওয়ার। “আমি মুক্তি দিতে কাতর নই ভক্তি দিতে কাতর হই”, রামপ্রসাদী গানে রয়েছে।
বালক যেমন খুঁটি ধরে বন বন করে ঘুরলেও পড়ে যায় না। সেই রকম ভগবানকে ধরে যা ইচ্ছা করো, তোমার কাছে কোনও বিপদ আসবে না। “সংসারে ঈশ্বরকে ধরে সকল কাজ করো, নিরাপদে থাকবে।”