আমরা চাই, অনন্ত সুখ, চাই অনন্ত মুক্তি। প্রকৃতপক্ষে আমরা অনন্তকে চাই। আমরা প্রত্যেকে অনন্তকে বুঝি বা না বুঝি, ওই লক্ষ্যেই এগিয়ে চলেছি। পূর্ণ স্বরূপ কে জানি না বলে আমরা ছোট ‘আমি’ তে বদ্ধ হয়ে পড়ি।

আমরা চাই, অনন্ত সুখ, চাই অনন্ত মুক্তি। প্রকৃতপক্ষে আমরা অনন্তকে চাই। আমরা প্রত্যেকে অনন্তকে বুঝি বা না বুঝি, ওই লক্ষ্যেই এগিয়ে চলেছি। পূর্ণ স্বরূপ কে জানি না বলে আমরা ছোট ‘আমি’ তে বদ্ধ হয়ে পড়ি।
‘প্রথমে সাধু সঙ্গ করতে হয়। সৎসঙ্গ করলে ঈশ্বরের প্রতি শ্রদ্ধা হয়, শ্রদ্ধার পথ নিষ্ঠা। নিষ্ঠায় ঈশ্বর কথা বই আর কিছু শুনতে ভালো লাগে না। স্ত্রীর যেমন স্বামীতে নিষ্ঠা, এই নিষ্ঠা যদি ঈশ্বরেতে হয় তবেই ভক্তি হয়।
শ্রীরামকৃষ্ণ এও বলছেন, ভগবান শ্রীনারায়ণ প্রহ্লাদকে বললেন, ‘তুমি বড় লও।’ প্রহ্লাদ বলেন, ‘আপনার দর্শন পেয়েছি। আমার আর কিছু দরকার নাই।’
ভগবানে মন রেখে সমস্ত কর্ম করা, তা ঈশ্বরের কৃপায় সম্ভব। তার কৃপায় বৈরাগ্য আসে, মানুষের রোগ লেগেই আছে তার উপর আসক্তি। জগতের প্রতি বিরাগ ও ঈশ্বরের অনুরাগ।
বাড়ি প্রস্তুত করতে হলে প্রথমে ভাড়া বাঁধতে হয়। কিন্তু বাড়ি প্রস্তুত হয়ে গেলে আর ভাড়া দরকার থাকে না। মূর্তি পূজাও সেই রূপ প্রথমে দরকার শেষে আর প্রয়োজন থাকে না।
অহল্যা বলেছিলেন, “হে রাম ! যদি শুকর যোনিতেও জন্ম হয় সেও শিকার। কিন্তু যেন তোমার শ্রীপাদপদ্মে শুদ্ধা ভক্তি থাকে আর আমি কিছুই চাই না।”
শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছেন, “যিনি জ্ঞানী তিনি নম্র হন। কিন্তু হীন বুদ্ধি গর্বভাবে আপনাকে সকলের উপর ভাবে। তত্ত্ব জ্ঞানপ্রাপ্ত হলে মানুষের পূর্ব স্বভাব বদলে যায়।”
সবায় তাঁর দর্শন পাবে। যে আন্তরিক হয়ে তাঁকে ডাকবে সেই তাঁর দর্শন লাভে সার্থক হবে। এক পথ এই সত্য অন্য পথ নয়, এ হতে পারে না। অনন্তের ধারণা এই ছোট মস্তিষ্কে কী করে হবে।
যাদের মনে লোভ, লালসা পূর্ণ তারা ঈশ্বরের দিকে এগোতে পারে না। বিষয় আসক্তি যতই কমবে ঈশ্বরের প্রতি মতিগতি ততই বাড়বে। সাধনের ফল ফলিয়ে মানুষ নিরভিমানী হয়।
যাঁর হৃদয়ে বিষয় বাসনা প্রভুত্ব করছে তিনি কী করে ভগবানকে হৃদয়ে বসাবেন! প্রকৃত মানুষ হৃদয় থেকে বিষয় বাসনার প্রভুত্ব নষ্ট করলে ঈশ্বরের কৃপায় তা মুহূর্তেই পবিত্র হয়।
ঈশ্বরের সঙ্গে গুরু মেলবন্ধন ঘটিয়ে দেন। ঈশ্বর তবুও শিষ্যের কর্ম ও ফলের হিসাব করেন। বাসনাশূন্য হয়ে যে তাঁকে চায়, তাকে তিনি গ্রহণ করেন।
ধর্ম ও সাধনা সনাতন শাস্ত্র অনুযায়ী বিজ্ঞান। প্রকৃত ভক্ত ধর্ম লাভ করতে চাইলে কিছু বিশেষ পদ্ধতির মধ্য দিয়ে গিয়ে সর্বোচ্চ অবস্থা লাভ করতে পারে।
ধর্মলাভ করা নিয়ে কথা। ধর্ম পথ গ্রহণ করা ধর্ম লাভ করার মধ্যে অনেক পার্থক্য। আজকাল ধর্ম পথ গ্রহণ করা নিয়েও খুব হুড়োহুড়ি দেখা যায়। কিন্তু ধর্ম লাভ করা নিয়ে তেমন না। ধর্মলাভ হলে মন থেকে ভেদ ভাব চলে যায়।
ভক্ত বা জ্ঞানী, যিনি ঈশ্বরের উপর অনুরাগ প্রকাশ করে থাকেন, তিনি অন্য কিছু দেখেন না। সর্ব বস্তু বা ব্যক্তির মধ্যে সমান ভাবে আপন বোধে গ্রহণ বা বর্জন কিছুই করেন না।
পরমহংসদেব বললেন, ‘তাহা প্রকাশ করার জো নাই। যেমন যদি কেউ সমুদ্রের মধ্যে যায় আর যদি কেউ তাকে জিজ্ঞাসা করে সমুদ্র কেমন? তবে সে কী বলবে! সে কেবলই বলে জল-ই জল।’