রামকৃষ্ণ জীবন আদর্শ বিশ্লেষণে দেখা যায়, মা ভবতারিণী, বালক শ্রীরামকৃষ্ণের কোন বাসনা অপূর্ণ রাখেননি। তাকে পূর্ণ করে দিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন কৃতকৃত্য। পূর্ণস্বরূপ ছিলেন।

রামকৃষ্ণ জীবন আদর্শ বিশ্লেষণে দেখা যায়, মা ভবতারিণী, বালক শ্রীরামকৃষ্ণের কোন বাসনা অপূর্ণ রাখেননি। তাকে পূর্ণ করে দিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন কৃতকৃত্য। পূর্ণস্বরূপ ছিলেন।
শ্রীশ্রীমায়ের জগতে প্রত্যেকটি জীবের প্রতি ছিল সন্তান ভাব। শ্রীমায়ের মমতা যেমন মানুষের প্রতি তেমন ভাবে ইতর জীবজন্তুদের প্রতিও সমান ভাবে কাজ করত।
ভগবান স্বয়ং মনুষ্য লীলা করার জন্য ভক্তের কারণে মানুষ রূপ ধরে অবতীর্ণ হন। ভগবান মধুর রস আস্বাদন করতে চান। প্রতি যুগেই তিনি ভিন্ন ভিন্ন ভাবে সে রস আস্বাদন করেছেন।
সাধক সাধিকার মনে অনন্তের ভাবনা তোলপাড় করে নানা জিজ্ঞাসায়। কেন এই সৃষ্টি? কী কারণেই বা এই শরীর ধারণ? এর অন্ত কোথায়? ঈশ্বর আর তার সৃষ্টির সম্পর্কই বা কী? সত্য সত্যই কি ঈশ্বর দর্শন করা যায়?
ভক্তি ও ভক্ত নিয়ে বিস্তর ভাবনা-চিন্তা করা হয়। সরল বিশ্বাস না থাকলে ভগবান লাভ হয় না। অনন্ত শক্তি মহামায়া কারও কারও মধ্যে কৃপা করে সে শক্তি প্রদান করেন, যাতে তাঁকে লাভ করা যায়। অনন্তের খেলা কে বুঝবে!
ভক্তির পথ—কর্ম, জ্ঞান ও যোগের থেকেও অধিকতর শ্রেষ্ঠ। ভক্তি, কর্ম, জ্ঞান ও যোগ সকল পথ সেই এক লক্ষ্যের দিকে নিয়ে যায়।
শ্রীরামকৃষ্ণ বলছেন, “দেখো মেয়েরা পুতুল খেলা কত করে যতদিন না বিবাহ হয়। আর যতদিন না স্বামী সহবাস করে। বিবাহ হলে পুতুলগুলি পেটরায় তুলে ফেলে। ঈশ্বর লাভ হলে আর প্রতিমা পুজোর কি দরকার?”
শ্রীরামকৃষ্ণ বলছেন, “মদের নেশা কমাবার জন্য একটু একটু চালুনির জল খেতে হয়। তাহলে ক্রমে ক্রমে নেশা ছুটতে থাকে।”
ভিজে দেশলাই যেমন জ্বালানোর জন্য অনেকবার ঘষতে হয়, তেমন আবার শুকনো দেশলায় একবার ঘষলেই জ্বলে ওঠে। তেমন ভক্ত ভগবত প্রসঙ্গ হওয়া মাত্র প্রেমাগ্নিতে জ্বলে ওঠে কিন্তু বিষয়ীর সাথে হাজার ভগবত প্রসঙ্গ করও কিছুতেই কিছু হয় না।
শ্রীরামকৃষ্ণ, শ্রীমা ও স্বামীজির তিন রূপে এক সত্ত্বা সেই এক অনন্তের। যাদের সহজ সরল জীবন অথচ মহাভাবের ঘনীভূত রূপ। সাধারণের মতো দিন যাপন করছেন অথচ গভীর ভগবত প্রেম সম্পন্ন। রূপ ঢেঁকে অরূপের আবির্ভাব।
তিনি সাংসারিকতা থেকে দূরে। যেখানে হিংসা, বিদ্বেষ, রাগ, অস্মিতা ইত্যাদি সকল রয়েছে তিনি তখন দূরেই থাকেন। তিনি কারও বশ নন। তিনি প্রেমের বশ।
শ্রীরামকৃষ্ণের প্রেমে পড়তে শুরু করেছেন মাস্টার। নিজেও অনুভব করছেন কোন এক অদৃশ্য শক্তি তাকে আবার টেনে নিয়ে এসেছে। ভক্ত ভগবানের সম্পর্ক তাই-ই। ভক্ত ছোট চুম্বক ভগবান বড় চুম্বক।
শ্রীশ্রী ঠাকুর বলছেন, “পাঁজিতে বিশ আড়া জল লেখা আছে, কিন্তু পাঁজি নিংড়লে জল পড়ে না। সিদ্ধি সিদ্ধি বললে নেশা হয় না। বেটে খেতে হবে। তবে নেশা হবে।”
আমরা চাই, অনন্ত সুখ, চাই অনন্ত মুক্তি। প্রকৃতপক্ষে আমরা অনন্তকে চাই। আমরা প্রত্যেকে অনন্তকে বুঝি বা না বুঝি, ওই লক্ষ্যেই এগিয়ে চলেছি। পূর্ণ স্বরূপ কে জানি না বলে আমরা ছোট ‘আমি’ তে বদ্ধ হয়ে পড়ি।
‘প্রথমে সাধু সঙ্গ করতে হয়। সৎসঙ্গ করলে ঈশ্বরের প্রতি শ্রদ্ধা হয়, শ্রদ্ধার পথ নিষ্ঠা। নিষ্ঠায় ঈশ্বর কথা বই আর কিছু শুনতে ভালো লাগে না। স্ত্রীর যেমন স্বামীতে নিষ্ঠা, এই নিষ্ঠা যদি ঈশ্বরেতে হয় তবেই ভক্তি হয়।