শ্রীরামকৃষ্ণ ভাবাবিষ্ট হয়ে রাখালকে বলছেন, “এখানকার শ্রাবণ মাসের জল নয়। খুব হুড় হুড় করে আসে, আবার বেরিয়ে যায়। এখানে পাতাল ফোঁড়া শিব, বসানো শিব নয়।”

শ্রীরামকৃষ্ণ ভাবাবিষ্ট হয়ে রাখালকে বলছেন, “এখানকার শ্রাবণ মাসের জল নয়। খুব হুড় হুড় করে আসে, আবার বেরিয়ে যায়। এখানে পাতাল ফোঁড়া শিব, বসানো শিব নয়।”
শ্রীরামকৃষ্ণের কাছে ভক্তেরা অবতার তত্ত্ব শুনছেন, আর ভাবছেন বেদ উক্ত অখণ্ড সচিদানন্দ, যা বাক্য মনের অতীত তিনি শ্রীরামকৃষ্ণ রূপ ধারণে তাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। আর তা যদি না হতো তাহলে কী রূপে তিনি রাম, রাম উচ্চারণ করতে করতে সমাধিস্থ হতেন! তিনি নিশ্চয়ই হৃদ পদ্মে রাম রূপ দর্শনে মথিত হচ্ছেন।
শ্রীরামকৃষ্ণ অনুধ্যানে মাস্টারমশাই দেখছেন, সেই অনন্তের আর এক প্রকাশ ঠাকুরের মধ্যে। তিনি তাঁর স্বরূপ ও ব্রহ্ম, এক করে অনন্তের সন্ধান দিচ্ছেন। ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দের পয়লা জানুয়ারি শ্রীরামকৃষ্ণ প্রাণকৃষ্ণ ও মাস্টার মহাশয়ের সঙ্গে কথা বলছেন। অনেকে এমন আছেন অনেক উচ্চ স্তরের কথা বলেন।
শ্রীরামকৃষ্ণ বলছেন, “ভক্তি পাকলে ভাব। ভাব হলে সচ্চিদানন্দকে ভেবে অবাক হয়ে যায়। জীবের এই পর্যন্ত। আবার ভাব পাকলে মহাভাব প্রেম। যেমন কাঁচা আম আর পাকা আম।”
গিরিশ অবচেতন ও সচেতন ভাবে জানেন শ্রীঠাকুর জগতের ত্রাতা, তিনি দেহ ধারণ করে এসেছেন। তা, তিনি কি আর গিরিশ ঘোষের মতো একজনকে উদ্ধার করতে পারবেন না! গিরিশের মনে কোনও চালাকি ছিল না। মনে প্রাণে সর্বতো ভাবে তিনি শ্রীরামকৃষ্ণের পায়ে অর্পণ করেছেন।
নলিনী দিদি শ্রীশ্রী মাকে জিজ্ঞাসা করছেন, “পিসিমা লোকের কত ধ্যান, জপ হয় শুনি, আমার কিছু হয় না কেন? তোমার সঙ্গে এতদিন যে রইলাম কই আমার কি হলো?”
শ্রীশ্রী ঠাকুর, শ্রীমা স্বামীজির আবির্ভাব, নতুন কোনও একটি সম্প্রদায়ের জন্য নয়। আবির্ভাবের মূল উদ্দেশ্য ছিল বেদের পুনরুত্থান। সনাতন আদর্শকে জাগরিত করা। তিনি বলতেন, “নবাবী আমলের মুদ্রা বাদশাহী আমলে চলে না।”
হৃদয় হোক প্রভুর আশ্রয়স্থল। যেখানে প্রভু নিশ্চিন্তে আসতে পারেন, থাকতে পারেন। আর বাসগৃহ মন্দির হোক, যেখানে প্রভু ও প্রভুর ভক্তেরা নিশ্চিন্তে আনাগোনা করতে পারেন, থাকতে পারেন। ভাবনা ও উদ্বেগহীন দিন কাটাতে পারেন। এমনই প্রভুর ইচ্ছা হোক, যা ভক্ত পূরণ করতে পারে।
আমরা ঈশ্বরকে ভালোবাসি, তার সান্নিধ্য অনুভব করার চেষ্টা করি। যেমন আমরা পিতা-মাতা, গুরুর সান্নিধ্য লাভ করি। তেমনই ঈশ্বর উপাসনার মাধ্যমে তার সান্নিধ্য লাভ করা যায়। তিনি আমাদের প্রিয়, প্রিয়ের থেকে প্রিয়। তাঁকে সবকিছু উজাড় করে দেওয়া যায়।
মানুষ চাই, মানুষ চাই, মানুষ চাই, তাহলেই সব কিছু হয়ে যাবে, স্বামীজি অনেক আগেই ঘোষণা করেছিলেন। প্রকৃত কয়েকজন মানুষ হলেই স্বামীজি পৃথিবীকে উল্টে দিতে পারতেন। বলতেন, আশিষ্ট, দ্রঢ়িষ্ঠ, বলিষ্ঠ, মেধাবী মানুষ চাই।
আমাদের ইন্দ্রিয়গুলি ভোগ্য বিষয় হিসেবে জগতের এত উপকরণ পায় যে আর ভিতরের দিকে তাকানোর সময় থাকে না বা দরকার হয় না। তার সীমার মধ্যে এত ভান্ডার রয়েছে, যা অফুরন্ত।
সংসারীরা কেমন করে সংসার করবেন? শ্রীরামকৃষ্ণ সে কথাসকল অনেকবার বলেছেন। কখনও সরল কথায়, কখনও বা গল্পচ্ছলে। সংসারে থেকে ঈশ্বরলাভ করা কেমন করে সম্ভব? সে কথাই বলছেন এক হাতে সংসার করা এক হাতে ঈশ্বরকে ধরে থাকা।
স্বামীজি বলছেন, “যদি আমরা ঈশ্বরের বিশ্বাস করি তবে মানতে হবে। বিশ্বাস করতে হবে, যা কিছু আমার বলে মনে করি সব তাঁরই, ঈশ্বরের।
কথায় আছে, কষ্টিপাথরের স্পর্শে ধাতু সোনা হয়ে যায়। অবতার পুরুষরা সেই কষ্টিপাথর, যাঁরা স্পর্শ মাত্রই মানুষের পূর্বস্বভাবের পরিবর্তন করিয়ে নতুন আর এক মানুষে পরিণত করতে পারেন। এমন একজন ব্যক্তি হলেন গিরিশচন্দ্র ঘোষ।
শ্রীরামকৃষ্ণদেব গিয়েছেন কলকাতার শ্যামপুকুর পল্লীতে। শ্রী প্রাণকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি। এক্সচেঞ্জের বড়বাবু। নিলামের কাজ তদারক করেন। তিনি একটু স্থুলকায় ছিলেন বলে, ঠাকুর তাঁকে ‘মোটা বামুন’ বলে ডাকতেন।