
পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি


পর্ব-৭৭: পৃথিবীতে এমন কেউ নেই, যাঁর জীবনের আকাশে কখনও শত্রুতার মেঘ জমেনি
বায়সরাজ মেঘবর্ণের কথা শুনে সচিবেরা সকলে বললেন, হে রাজন্! আপনি যথার্থই প্রশ্ন করেছেন। শাস্ত্রে বলে, কিছু কিছু পরিস্থিতি আসে যখন রাজা পরমর্শ না চাইলেও মন্ত্রীদের যেচে পরামর্শ দেওয়া উচিত। এমনকি সেই পরামর্শ রাজার পছন্দও হতে পারে আবার অপছন্দও হতে পারে। তাও অপ্রিয় সত্যি মন্ত্রীদের বলা উচিত নিজের স্বার্থে এবং রাজ্যের স্বার্থে।

পর্ব-৭৬: পৃথিবীতে এমন কেউ নেই, যাঁর জীবনের আকাশে কখনও শত্রুতার মেঘ জমেনি
মানুষ জটিল প্রাণী। মনস্তাত্ত্বিকেরা বলেন, আপনি পৃথিবীর সবচেয়ে বন্ধুসুলভ একজন মানুষ হতে পারেন, তবুও কিছু মানুষ থাকবেনই, যাই হোক না কেন, তারা আপনাকে অপছন্দ করবেন। হতেও পারে আপনাকে অপছন্দ করবার তাদের হয়তো যথেষ্ট কারণও পারে, আবার সব ক্ষেত্রে যে কারণ লাগে তাও নায়। তাই এটা স্বাভাবিক এই জগতে প্রত্যেক মানুষেরই শত্রু আছে। অজাতশত্রু এইটা একটা ধারণা মাত্র। বাস্তবে তা হয় না।

পর্ব-৭৫: মিত্রপ্রাপ্তির সম্ভাবনা দেখা দিলে সযত্নে তার সদ্ব্যবহার করতে হয়
তারা চারজনে সেই সরোবরে ফিরে এসে সারাদিন নিজেদের মধ্যে গঠনমূলক কথাবার্তা চর্চা করতে করতে দিন কাটাতে লাগলো। মিত্রসম্প্রাপ্তির কাহিনীমালা সমাপ্ত করে বিষ্ণুশর্মা বললেন, এই কারণেই বুদ্ধিমান বিবেকী পুরুষেরা সব সময় মিত্র সংগ্রহ করেন। কারণ মিত্রশক্তি যাঁর যতো বেশি থাকে ততোই সেই রাজাই রাজমণ্ডলের মধ্যমণি হন। তাই মিত্রদের সঙ্গে কপটাচরণ করা কখনই উচিত হয়।

পর্ব-৭৪: মনের ইচ্ছে থাকলেই কার্যসিদ্ধি সম্ভব
মন্থরককে এইভাবে বেঁধে ধনুকের ডগায় টাঙিয়ে নিয়ে যেতে দেখে হিরণ্যক অত্যন্ত ব্যাকুল হয়ে বিলাপ করতে শুরু করল। দুঃখ যেন তার কাছে ক্রমশ সাগরের মতন বিশাল হয়ে উঠছে। নিজের দেশ এবং আত্মীয়বর্গকে হারিয়ে সবে যখন সে নতুন দেশে এসে নতুন বন্ধুদের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে শিখছে তখনই আবার নতুন বন্ধু মন্থরকের এই বিপদ। এক দুঃখের সমুদ্র পার হতে না হতেই দ্বিতীয় দুঃখ এখন তার সামনে। দুঃখের যেন শেষ নেই তার জীবনে।

পর্ব-৭৩: ভাগ্যের দোহাই দিয়ে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকা যায় না
হিরণ্যকের কথা শুনে লঘুপতনক তখন উড়ল আকাশ পথে চিত্রাঙ্গকে খুঁজতে। কিছু পথ যেতেই একটা ছোট ডোবার ধারে ব্যাধের জালে আটকে পড়া চিত্রাঙ্গকে দেখতে পেল সে। তাকে দেখেই অত্যন্ত ব্যাকুল হয়ে তার কাছে এসে লঘুপতনক বলল, ভদ্র চিত্রাঙ্গ! এ কী অবস্থা তোমার? লঘুপতনককে দেখে চিত্রাঙ্গ কিছুই বলতে পারল না উল্টে আরও বিমর্শ হয়ে পড়ল।

পর্ব-৭২: অপ্রিয় সত্য বলবার এবং শোনবার মানুষ জগতে দুর্লভ
মন্থরক একজন অভিজ্ঞ দার্শনিকের মতো হিরণ্যককে বোঝাচ্ছিলেন, যে সম্পদ ব্যবহার হয় না, তার থাকা না-থাকা সমান। ফলে তাই নিয়ে দুঃখ করবার কোনও কারণ নেই। মন্থরকের মতে, মানুষেরমানই হল শ্রেষ্ঠ সম্পদ।যেদিন সেই মানসম্মানটুকুও মানুষের থাকে না, তখনই তাকে দরিদ্র বলতে হয়। না হলে সামান্য একটা বৃষকে মাত্র সম্পদ করে দেবাদিদেব মহাদেব একজন ধনীব্যক্তির মতন নিশ্চিন্তেকি ঘুরে বেড়াতে পারতেন!

পর্ব-৭১: ধর্মকার্যের জন্য টাকা জোগাড় করা আর সাদা কাপড়ে ময়লা লাগিয়ে ধোয়া, দুই-ই সমান
উপভুক্তধন সোমিলককে দেখে এবং তাঁর পরিচয় পেয়ে একেবারে উঠে এসে অভ্যর্থনা করে ঘরের মধ্যে নিয়ে গেল। উপভুক্তধন তাঁকে যথেষ্ট সমাদর করে অনেক ভোজ্যদ্রব্য দিলেন। রাত্রে বিশ্রামের জন্য কিছু বস্ত্র এবং মনোরম একটা বিছানাও দিলেন। সোমিলক সেই ভব্যশয্যায় বেশ আরামে নিদ্রা গেল। স্বপ্নে আবার সে ওই দু’জন পুরুষকে নিজেদের মধ্যে কথা বলতে শুনল।

পর্ব-৭০: অনিশ্চিত ফলের পিছনে না ছুটে নিশ্চিত ফল-প্রদায়ক কাজের প্রতি যত্নবান হওয়া উচিত
উন্নতিকামী যে কোনও পুরুষের মধ্যে উত্সাহ গুণ থাকাটা সর্বদা আবশ্যক। যেক্ষেত্রে আলস্য ত্যাগ করে উত্সাহের সঙ্গে কোনও কার্য করা হয় এবং ন্যায়নীতির সঙ্গে মানুষের পৌরুষও যেখানে মিলে থাকে, লক্ষ্মীশ্রী সেখানেই অচঞ্চল হয়ে অবস্থান করে। ব্যবসায় উন্নতি করতে গেলে যেকোনও ব্যবসায়ীর মানসিকতাটা ঠিক এইরকমই হওয়াটা বাঞ্ছনীয়। সব কিছুই হল ভাগ্যের খেলা।

পর্ব-৬৯: টাকা-পয়সা থাকলে চোর-ডাকাতকেও লোকে সম্মান দেখায়
সোমিলক নিজের স্ত্রীকে বুঝিয়ে বললে, নিজের সামর্থ্য অনুসারে কঠোর পরিশ্রম করেও দুর্ভাগ্যবশত যদি কোনও মানুষের কার্যসিদ্ধি না হয়, তাহলেও সেই মানুষকে কিন্তু কখনই হতোদ্যম করা উচিত নয়। কারণ সে অন্তত প্রচেষ্টা করেছে। তাই অবশ্যই এখন অন্য দেশে যাওয়াটাই আমার প্রয়োজন।

পর্ব-৬৮: কাপুরুষরাই শুধু দৈবের দোহাই দিয়ে নিজেকে ভাগ্যের হাতে সঁপে দেয়
বায়স লঘুপতনকের আচরণে খুবই প্রসন্ন হয়েছিলেন মন্থরক। সে যেমন করে মূষিক হিরণ্যককে আশ্বস্ত করে আরও বললে, এছাড়া পরদেশে বাস করতে হচ্ছে বলে দুঃখ করবারও কোনও কারণ নেই। ধৈর্যবান মননশীল মানুষজনের কাছে বিদেশই বা কি আর স্বদেশই বা কি? তিনি তো যে দেশেই থাকেন সে দেশকেই আপন বাহুবলে নিজের অধীন করে নেন।যেমন সিংহ যে বনেই যায় সেখানেই নিজ দাঁত, নখ আর লেজকে অস্ত্র করে হাতিকে পর্যন্ত হত্যা করে তার রক্তলেখায় নিজের পিপাসা নিবারণ করে।

পর্ব-৬৭: সুখে-দুঃখে যাঁরা মিত্রতা বজায় রাখেন, তেমন সজ্জন পুরুষদের সঙ্গেই মিত্রতা করা উচিত
মিত্রসম্প্ৰাপ্তি বিবাহের শুভ মুহূর্ত যখন প্রায় উপস্থিত, তার কিছু সময় পূর্বে থেকেই সে দেশের শ্রেষ্ঠীর ঘরের দরজার সামনে সজ্জিত মণ্ডপে তাঁর পুত্রী বিবাহ বেদীতে মঙ্গলসূত্র বেঁধে বিবাহের উপযুক্ত মঙ্গল বেশভূষা ধারণ করে প্রতিক্ষা করছিল বরকীর্তির জন্য। ঠিক সে সময়েই কোথা থেকে এক মদমত্ত হাতি তার পিঠে বসা মাহুতকে মেরে পালাতে পালাতে বরযাত্রীদের কোলাহলের মধ্যে ঢুকে পড়লো। তাকে দেখে সকল বরযাত্রীরা বরকে শুদ্ধ নিয়ে প্রাণ বাঁচাতে এদিক ওদিক পালিয়ে গেল। ঠিক সেই সময়েই ‘প্রাপ্তব্যমর্থ’ ভয়ে চঞ্চল নেত্রে স্থিত কন্যাকে দেখে বললো ‘মা...

পর্ব-৬৬: দরিদ্রেরা কিছু দান করবার ইচ্ছা নিয়ে এলেও লোকে ভাবে কিছু চাইতে এসেছে
দুর্ভাগ্য এমনই যে কোনও নির্ধন ব্যক্তি যদি কোনও ধনি ব্যক্তির ঘরে কিছু দান করবার ইচ্ছাতেও আসেন তাহলেও লোকে ভাবে সে হয়তো কিছু চাইতেই এসেছে। দরিদ্রের কপাল থেকে যাচক-নামের কলঙ্ক ঘোছে না। জীবনে দারিদ্র এক বিরাট অভিশাপ।

পর্ব-৬৫: টাকা না থাকলে নির্ধন ব্যক্তির বন্ধুও শত্রু হয়
সূর্য যেমন সকল ভূতবর্গকে প্রকাশিত করে তেমনই সম্পদ বা লক্ষ্মীশ্রীও সকলের গুণকে প্রকাশিত করে। সত্যি বলতে যে লোক শুরু থেকেই ধনহীন তার এতো কষ্ট হয় না, কিন্তু যে ব্যক্তি বিত্তশালী হয়ে পরে ধনহীন হয় তার মতন মানুষের দুঃখের আর শেষ নেই। পোকা-মাকড়ে খাওয়া, জ্বলে যাওয়া শুকনো গাছের জীবনও বরং ভালো এখন ভিক্ষুকের তুলনায়।

পর্ব-৬৪ : অকারণে কেউ অন্যের ভালো করতে যায় না
কোনও এক বনের ধারে এক ভীল থাকত। শিকার করে মাংস বিক্রি করেই জীবন কাটত তার। প্রতিদিনের মতো একদিন সে পাপবৃদ্ধির জন্যেই শিকার করতে বনে ঢুকল। এদিক ওদিক ঘুরতে ঘুরতে শুরুতেই সে কালো পাহাড়ের নিচে এক বিরাট শূকর দেখতে পেল। তাকে দেখেই ধনুকের জ্যা কান পর্যন্ত টেনে এক তীক্ষ্ণ বাণ ছুড়ল সেই ভীল।