উন্নতিকামী যে কোনও পুরুষের মধ্যে উত্সাহ গুণ থাকাটা সর্বদা আবশ্যক। যেক্ষেত্রে আলস্য ত্যাগ করে উত্সাহের সঙ্গে কোনও কার্য করা হয় এবং ন্যায়নীতির সঙ্গে মানুষের পৌরুষও যেখানে মিলে থাকে, লক্ষ্মীশ্রী সেখানেই অচঞ্চল হয়ে অবস্থান করে। ব্যবসায় উন্নতি করতে গেলে যেকোনও ব্যবসায়ীর মানসিকতাটা ঠিক এইরকমই হওয়াটা বাঞ্ছনীয়। সব কিছুই হল ভাগ্যের খেলা।
পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি
পর্ব-৬৯: টাকা-পয়সা থাকলে চোর-ডাকাতকেও লোকে সম্মান দেখায়
সোমিলক নিজের স্ত্রীকে বুঝিয়ে বললে, নিজের সামর্থ্য অনুসারে কঠোর পরিশ্রম করেও দুর্ভাগ্যবশত যদি কোনও মানুষের কার্যসিদ্ধি না হয়, তাহলেও সেই মানুষকে কিন্তু কখনই হতোদ্যম করা উচিত নয়। কারণ সে অন্তত প্রচেষ্টা করেছে। তাই অবশ্যই এখন অন্য দেশে যাওয়াটাই আমার প্রয়োজন।
পর্ব-৬৮: কাপুরুষরাই শুধু দৈবের দোহাই দিয়ে নিজেকে ভাগ্যের হাতে সঁপে দেয়
বায়স লঘুপতনকের আচরণে খুবই প্রসন্ন হয়েছিলেন মন্থরক। সে যেমন করে মূষিক হিরণ্যককে আশ্বস্ত করে আরও বললে, এছাড়া পরদেশে বাস করতে হচ্ছে বলে দুঃখ করবারও কোনও কারণ নেই। ধৈর্যবান মননশীল মানুষজনের কাছে বিদেশই বা কি আর স্বদেশই বা কি? তিনি তো যে দেশেই থাকেন সে দেশকেই আপন বাহুবলে নিজের অধীন করে নেন।যেমন সিংহ যে বনেই যায় সেখানেই নিজ দাঁত, নখ আর লেজকে অস্ত্র করে হাতিকে পর্যন্ত হত্যা করে তার রক্তলেখায় নিজের পিপাসা নিবারণ করে।
পর্ব-৬৭: সুখে-দুঃখে যাঁরা মিত্রতা বজায় রাখেন, তেমন সজ্জন পুরুষদের সঙ্গেই মিত্রতা করা উচিত
মিত্রসম্প্ৰাপ্তি বিবাহের শুভ মুহূর্ত যখন প্রায় উপস্থিত, তার কিছু সময় পূর্বে থেকেই সে দেশের শ্রেষ্ঠীর ঘরের দরজার সামনে সজ্জিত মণ্ডপে তাঁর পুত্রী বিবাহ বেদীতে মঙ্গলসূত্র বেঁধে বিবাহের উপযুক্ত মঙ্গল বেশভূষা ধারণ করে প্রতিক্ষা করছিল বরকীর্তির জন্য। ঠিক সে সময়েই কোথা থেকে এক মদমত্ত হাতি তার পিঠে বসা মাহুতকে মেরে পালাতে পালাতে বরযাত্রীদের কোলাহলের মধ্যে ঢুকে পড়লো। তাকে দেখে সকল বরযাত্রীরা বরকে শুদ্ধ নিয়ে প্রাণ বাঁচাতে এদিক ওদিক পালিয়ে গেল। ঠিক সেই সময়েই ‘প্রাপ্তব্যমর্থ’ ভয়ে চঞ্চল নেত্রে স্থিত কন্যাকে দেখে বললো ‘মা...
পর্ব-৬৬: দরিদ্রেরা কিছু দান করবার ইচ্ছা নিয়ে এলেও লোকে ভাবে কিছু চাইতে এসেছে
দুর্ভাগ্য এমনই যে কোনও নির্ধন ব্যক্তি যদি কোনও ধনি ব্যক্তির ঘরে কিছু দান করবার ইচ্ছাতেও আসেন তাহলেও লোকে ভাবে সে হয়তো কিছু চাইতেই এসেছে। দরিদ্রের কপাল থেকে যাচক-নামের কলঙ্ক ঘোছে না। জীবনে দারিদ্র এক বিরাট অভিশাপ।
পর্ব-৬৫: টাকা না থাকলে নির্ধন ব্যক্তির বন্ধুও শত্রু হয়
সূর্য যেমন সকল ভূতবর্গকে প্রকাশিত করে তেমনই সম্পদ বা লক্ষ্মীশ্রীও সকলের গুণকে প্রকাশিত করে। সত্যি বলতে যে লোক শুরু থেকেই ধনহীন তার এতো কষ্ট হয় না, কিন্তু যে ব্যক্তি বিত্তশালী হয়ে পরে ধনহীন হয় তার মতন মানুষের দুঃখের আর শেষ নেই। পোকা-মাকড়ে খাওয়া, জ্বলে যাওয়া শুকনো গাছের জীবনও বরং ভালো এখন ভিক্ষুকের তুলনায়।
পর্ব-৬৪ : অকারণে কেউ অন্যের ভালো করতে যায় না
কোনও এক বনের ধারে এক ভীল থাকত। শিকার করে মাংস বিক্রি করেই জীবন কাটত তার। প্রতিদিনের মতো একদিন সে পাপবৃদ্ধির জন্যেই শিকার করতে বনে ঢুকল। এদিক ওদিক ঘুরতে ঘুরতে শুরুতেই সে কালো পাহাড়ের নিচে এক বিরাট শূকর দেখতে পেল। তাকে দেখেই ধনুকের জ্যা কান পর্যন্ত টেনে এক তীক্ষ্ণ বাণ ছুড়ল সেই ভীল।
পর্ব-৬৩: চোর-ডাকাতও যদি দান-ধ্যান করে, তবে লোকে ‘তাকে’-ও ভগবানের মতোই শ্রদ্ধা করে
প্রাচীন ভারতে চিরকাল মঠমন্দির প্রতিষ্ঠার বিষয়ে ধর্মশাস্ত্রগুলিতে যেমন প্রশংসা দেখতে পাওয়া যায়, তেমন ভাবেই অন্যান্য দার্শনিক সম্প্রদায়, যাঁরা এই সব বাহুল্য ত্যাগকেই মোক্ষ বা নির্বাণ লাভের একমাত্র পথ বলে মনে করেন, তাঁদের দর্শনে এইসব আড়ম্বরপূর্ণ ধর্মচর্চার বিষয়ে নিন্দাও দেখতে পাওয়া যায়।
পর্ব-৬২: মঠ-মন্দির তৈরি করার চিন্তা বেশি করলে প্রকৃত ধর্মচর্চা থেকে মানুষ দূরে চলে যায়
পাঠকদের বলবো কেমন করে অতিথি সত্কার করতে হয় এই গ্রন্থের মাধ্যমে রাজপুত্রদেরও শিখিয়ে দিলেন বিষ্ণুশর্মা। ভারতবর্ষে অতিথিকে দেবতূল্য সম্মান করা হয় —তাই অতিথিকে কিভাবে সম্মান করতে হয় সে শিক্ষাটিও শিশুকালেই প্রয়োজন।
পর্ব-৬১: মিষ্টি কথার মানুষের কোনও শত্রু হয় না
বিদ্যাবত্তা আর রাজার ক্ষমতা—এই দুটোর মধ্যে কোনো তুলনাই চলতে পারে না। রাজা তাঁর নিজের দেশে নিজের প্রজাদের থেকে সম্মান পান মাত্র। কিন্তু বিদ্বান ব্যক্তিদের সম্মান সর্বত্র। যেখানে তাঁরা যান সেখানেই লোকেরা তাঁকে সম্মান করেন, কিন্তু রাজা নিজের দেশ ছাড়া অন্য কোথাও সম্মানিত হন না।
পর্ব-৬০: বাস্তবে একে অপরের উপকার না করলে, কখনও মৈত্রী-বন্ধন তৈরি হয় না
ইন্দ্রের যদিও এইরকম কীর্তিকাহিনি অনেক আছে। পুরাণের কাহিনি আছে যে বিমাতা দিতির সেবা করার ছলে ইন্দ্র নাকি দিতির বিশ্বাস অর্জন করে সুযোগ বুঝে তাঁর গর্ভ নষ্ট করে দিয়েছিল। কারণ সে শুনেছিল যে বিমাতা দিতির গর্ভে যে পুত্র জন্মাচ্ছে সে ইন্দ্রের বিরোধী হবে। ফলে সন্ধি-শপথ এসবের কোনও দাম নেই।
পর্ব-৫৯: শাসক বেকায়দায় পড়লেই প্রতিপক্ষকে সন্ধির প্রতিশ্রুতি দেয়, যদিও রাজনীতিতে সে সব মানা হয় না
কেউ যদি ভাবে আমি গুণবান, কারও ক্ষতি করি না। নিজের কাজকর্ম নিয়েই থাকি অন্যের সাতে-পাঁচে থাকি না। তাই কেউ আমার ক্ষতি করবে না, তাহলে বলতে হয় এটা একটা ভ্রম মাত্র। যারা মূর্খ তাদের কাছে মুড়ি আর মুড়কি সমান। অর্থাৎ হীরের মতো পাথরের মূল্য যে জানে না, তার কাছে সেই হীরে আর পাঁচটা সামান্য পাথরের মতোই লাগে, আলাদা কিছু মনে হয় না।
পর্ব-৫৮: চরম শত্রুর সঙ্গেও মতের মিল হলে বন্ধুত্ব হয়, আবার মতের মিল না হলেই শত্রুতা
কাক-লঘুপতনক আড়াল থেকে সবটাই দেখলো। কপোতরাজ-চিত্রগ্রীব আর মুষিক-হিরণ্যকের মধ্যে সব কথোপকথনই শুনলো সে খুব মন দিয়ে। হিরণ্যককে দেখে খুব ভালো লাগলো তার। সে ক্ষুদ্র হলেও তার তীক্ষ্ণ দাঁত দিয়ে শিকারীর জাল কেটে ফেলার ক্ষমতা খুব বিস্মিত করলো তাকে।
পর্ব-৫৭: রাজনৈতিক লাভের আশায় রাজাকে ক্ষেত্র বিশেষে গণিকার মতো অভিনয়ে নিপুণ হতে হয়
মিত্রসম্প্ৰাপ্তিভাগ্যই হল বলবান। না হলে, দূর আকাশের নির্জন প্রদেশে বিচরণ করে যে সব পাখিদের দল, তারাও কি করে এইরকম বিপদে ফেঁসে যায়! গভীর সমুদ্রের মাছেরাও আটকে পড়ে জেলেদের চাতুরীতে। এর থেকেই তো মনে হয় যে, এই সংসারে সুনীতি-দুর্নীতি বা পাপ-পুণ্য বলে আসলে কিছুই হয় না। সুরক্ষিত বা অসুরক্ষিত স্থানে বাস করাটাও নিরাপদ নয়। কালই একমাত্র সত্য। সে তার লম্বা বাহুদুটি বের করে প্রতিক্ষণ জগতের সকল প্রাণীদের গ্রাস করে “কালঃ সর্বজনান্ প্রসারিতকরো গৃহ্ণাতি দূরাদপি”। এইসব অনেক কথা বলে হিরণ্যক তার তীক্ষ্ণ ধারালো দাঁত দিয়ে...
পর্ব-৫৬: কোনও একটি দাবিতে বিরোধীরা জোট বাঁধুক কখনও চায় না শাসক
মিত্রসম্প্ৰাপ্তি জগতের এইটাই নিয়ম। যখন কোনও দাবিতে গণ-অভ্যুত্থান বা রাষ্ট্র বিপ্লব শুরু হয় তখন বিক্ষুব্ধরা যতক্ষণ একসঙ্গে একাত্ম হয়ে বিদ্রোহ করেন ততক্ষণ বলবান শাসকওতাঁদেরকে ভয় পায়। কিন্তু যখনই তারা বিভিন্ন দাবি নিয়ে আলাদা হন, আলাদা আলাদা ভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন, তখনই সেই গণ-অভ্যুত্থান লঘু হতে শুরু করে। বিক্ষুব্ধরা যতই নিজেদের মধ্যে ভিন্নভিন্ন দাবিতে ভিন্ন ভিন্ন মত পোষণ করতে শুরু করেন শাসকের সুবিধা ততই বৃদ্ধি পায়। কোনও গণ-আন্দোলনের ক্ষেত্রে একদফা দাবি হলে শাসকের বিরুদ্ধে যে চাপ তৈরি হতে পারে, দাবি একাধিক হয়ে...