সন্দেশ দুটো মুখে ফেলে জল খেতেই চারদিকে বিয়ের হুড়োহুড়ি। তখন আর কাকে বলবে এগিয়ে দিতে। আধুনিক নিয়ম মেনে স্নিগ্ধার মা ছন্দা সম্প্রদানে বসেছেন। একা একা বাড়ির বাইরে এসে দুলালের মা অবাক।

সন্দেশ দুটো মুখে ফেলে জল খেতেই চারদিকে বিয়ের হুড়োহুড়ি। তখন আর কাকে বলবে এগিয়ে দিতে। আধুনিক নিয়ম মেনে স্নিগ্ধার মা ছন্দা সম্প্রদানে বসেছেন। একা একা বাড়ির বাইরে এসে দুলালের মা অবাক।
কি ভাগ্যি, স্নিগ্ধার বিয়ের আগেরদিন থেকেই পার্টির জেলা সম্মেলন স্থির হয়েছিল। জুটমিলের নেতা হিসেবে দুলালের কাছে এরকম আমন্ত্রণ প্রায়ই আসে। দুলাল এড়িয়ে যায়! ব্যারাকপুরে সম্মেলন হচ্ছে। এবার দুলাল রাজি হয়ে গেল। লোকাল পার্টি অফিসের সকলেই একটু আশ্চর্য কারণ দুলাল সচরাচর এসব এড়িয়ে চলে।
…চায়ের দাগটা হয়তো উঠে যাবে না উঠলে পাঞ্জাবিটা বাড়িতেই পরে নেবে। সাতসকালে স্নিগ্ধার মায়ের কাছে এরকম একটা অদ্ভুত প্রস্তাব পেয়ে মনের মধ্যে ওদের মা-মায়ের দুজনের সম্বন্ধেই একটা নোংরা দাগ লেগে গেল ! সেটা কি কোনদিন উঠবে?… কানাঘুষো একটা গুজগুজ ফুসফুস হচ্ছিল। দুলালের সামনে বলার সাহস কারো হয়নি! আজ মনে হচ্ছে এই গুজবটা রটানোর পিছনেও ছব্দা কাকিমার মাথা রয়েছে!
যাঁরা এসবে একেবারেই বিশ্বাস করেন না তাঁরা বলেছিলেন আচমকা পেশিতে খিঁচুনি হতে পারে! হার্টের পেইন হতে পারে। এটা কাকতালীয় ঘটনা। তালগাছে উড়ন্ত কাক এসে বসল পায়ের নখের খোঁচার ধাক্কায় বোঁটা থেকে আলগা হয়ে আসা পাকা তাল এসে ছেলের হাতে খসে পড়ল। গণক গুনে বলেছিলেন ফললাভ হবে, হল! গণকের নামে লোকে ধন্য ধন্য করল!
বাঁশদ্রোণীতে ছোট্ট বাড়ি! নীলিমার মাসি এবং মেসো দুজনেই চাকরি করেন। মাসি ক্যালকাটা কর্পোরেশনে আর মেসো রয়েছেন হাওড়ার একটি কারখানায় সকালবেলায় বাবা-মা ছেলে তিনজনেই খেয়ে টিফিন নিয়ে বেরিয়ে যান। ভোরবেলায় রান্নার লোক চলে আসে। সকালবেলাটা খুব হুড়োহুড়ি, সবাই খুব ভোরে উঠে পড়েন, তাড়াতাড়ি শুতে যান! শুধু শনিবারটা বেনিয়ম।
সবাই বলে আগেকার দিন ভালো ছিল এখনটা খারাপ। ঘেঁচু ভালো ছিল মশাই! কোনওদিন দেখেছেন হেমন্ত আর মান্না দে একইসঙ্গে বসে গান গাইছেন। দেখেছেন কখনও সতীনাথ আর শ্যামল মিত্তির পাশাপাশি বসে জলসায় গল্প করতে করতে গাইছেন? এখন সেটা দেখছেন!
নতুন মালিকপক্ষ নানা ধরনের কড়াকড়ি শুরু করল। প্রতিদিন নতুন নতুন ঝামেলা। এসবের মধ্যে মাথা দেবে না একেবারে নিশ্চিত করে ফেলেছিল দুলাল। কিন্তু এড়িয়ে থাকতে পারল না। নিজের অনিচ্ছা সত্ত্বেও ওয়েলেস্লি মিলের শ্রমিকপক্ষের প্রতিবাদী মুখ হয়ে ওঠে উঠল দুলাল সেন।
বাবার কাছে যে ন্যায়-নীতি মূল্যবোধের কথা সে শিখেছে, তার থেকেই সরাসরি গিয়ে বাড়িতে বাড়িতে জানিয়ে এল যে অমৃতলাল সেনের বিকল্প তার ছেলে দুলাল সেন নয়। সুতরাং তারা যেন উপযুক্ত প্রাইভেট টিউটর খোঁজেন এবং ছেলেমেয়েদের পড়ানোর সঠিক ব্যবস্থা করেন। ক্রমাগত চাকরির চেষ্টা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল দুলাল।
সেই পুরনো সময়ে পাড়ায় পাড়ায় ছোটখাটো পত্রিকা বের হতো হাতে লিখে স্টেশনে বা বাসস্ট্যান্ডে দেয়াল পত্রিকার খুব চল ছিল। বাড়িতে বাড়িতে নিয়মিত গানবাজনার চর্চা ছিল। অনেক নাটকের দল নিয়মিত অভিনয় করত। পাড়ায় পাড়ায় একাঙ্ক নাটকের প্রতিযোগিতা হতো। দুর্গাপুজোর পরে লক্ষীপুজো থেকে কালীপুজোর মধ্যে বেশ কিছু জায়গায় নানা বয়সের সকলে মিলেমিশে সাড়ম্বরে নাট্য উদযাপন করতেন।
অমৃতলাল সেন। হাইস্কুলের শ্রদ্ধেয় শিক্ষক। তিন মেয়ে দুইছেলে স্ত্রী বিধবামা আর নিজেকে নিয়ে মোট আটজনের পরিবার। স্কুলের মাইনেতে চলে না। তাই স্কুলের সময়টুকু বাদ দিয়ে একনাগাড়ে টিউশনি করতে হতো অমৃতস্যারকে। অঙ্কের ওপর ইনজেকশন নেবার মতই একটা সামাজিক ভয় আছে। খুব কমসংখ্যক ছাত্রছাত্রীরা এই ভয়টা কাটিয়ে উঠতে পারে।
ফাদার স্যামুয়েল জানেন এখন প্রায় দেড় ঘণ্টা গাড়ি চালিয়ে অতনু অজন্তা সিনেমার কাছে জেমস লং সরণিতে তার ফ্ল্যাটে পৌঁছবে। সারা সপ্তাহ উদয়াস্ত পরিশ্রম করবে, আবার পরে শনিবারে আসবে। ফাদার জানতে না চাইলেও তিনি জানেন, চুঁচুড়ার এই চার্চে আসার আগে অতনু কোথায় গিয়েছিল? আগামী শনিবার অফিস থেকে বেরিয়ে অতনু সেখানে যাবে খানিক সময় কাটিয়ে আবার আসবে চুঁচুড়ার চার্চে।
ফাদার মরিস ভেবেছিলেন চার্চের উন্নতি করবেন অনাথ ছেলেপুলের আশ্রয়ের একটা ব্যবস্থা করবেন। পরবর্তীতে ফাদার স্যামুয়েল তাকে পুরোদস্তুর হোম তৈরি করলেন। খ্রিস্টান হোম নিয়ে নানাধরনের ধারণা বহুদিন ধরেই মানুষের মধ্যে আছে। বিদেশ থেকে বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে টাকা আসে গরিব মানুষের মধ্যে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা ইত্যাদি ইত্যাদি। কুৎসা রটে, তার সবটা সত্যি নয়।
অতনু সেনের রেকমেন্ডেশন বলেই কি দিয়ার এথেনা ইনফোটেক-এ চাকরি পেতে খুব একটা অসুবিধে হয়নি? ভদ্রতার জন্যই তো তাঁকে একটা… ফোন নম্বর চাইবে? কিন্তু মিস্টার চ্যাটার্জি যদি কিছু মনে করেন?
একটা নিশ্চিত চাকরি সচ্ছ্বল রোজগার সেই সব ছেড়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যতে লাফ দেওয়ার জন্য প্রচুর সাহস লাগে, আত্মবিশ্বাস লাগে। রবীনবাবুর পক্ষে সেটা একটু সহজ হয়েছে তার স্ত্রী মালবিকার জন্য। মালবিকা চাকরি ছাড়েননি। উইপ্রোতেই আলাপ সেখানেই বিয়ে। তারপর স্ত্রী মালবিকার ভরসাতেই রবীনের ঝুঁকি নেওয়া।
(২)এরকম অফিস দিয়া দেখেনি রিসেপশনের দেয়ালটা টপকালেই পুরো অফিসফ্লোর খোলামেলা। ছোট ছোট ওয়র্কষ্টেশন। একটাই কেবিন। সেটা সিইও-র। দরজা নেই। অফিসের চারদিকেই সিসি ক্যামেরা আর মনিটর লাগানো। দিয়া ঘরে ঢোকার পর অতনু সেন একটাও কথা বলেননি। ডান হাত দেখিয়ে চেয়ারে বসতে বলেছেন বাঁ হাত বাড়িয়ে ফাইল চেয়েছেন। “অ্যাকাডেমিক ব্যাকগ্রাঊণ্ড তো ভালো ছিল, ডিপ্লোমা না করে ক্যাট (CAT) দিয়ে ভালো কোনও ইন্সটিটিউট থেকে ম্যানেজমেন্ট ডিগ্রি করতে পারতেন! “অনেকগুলো ‘ifs and but’ ছিল। আর আমার ইন্সটিটিউট খুব একটা খারাপ নয়। “আমি তো খারাপ বলিনি, তবে...