সপ্তদশ শতকের শেষ দিকে রাজা নরেন্দ্র মাণিক্যের সময়ে পলাতক যুবরাজ চম্পক রায়ের উদ্দেশ্যে প্রভাবশালী রাজপুরুষদের লেখা পত্রটিকেও সেই আমলের ত্রিপুরার প্রশাসনিক গদ্যের উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞগণ।

সপ্তদশ শতকের শেষ দিকে রাজা নরেন্দ্র মাণিক্যের সময়ে পলাতক যুবরাজ চম্পক রায়ের উদ্দেশ্যে প্রভাবশালী রাজপুরুষদের লেখা পত্রটিকেও সেই আমলের ত্রিপুরার প্রশাসনিক গদ্যের উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞগণ।
পানকৌড়ি কিন্তু বর্তমানে খুবই বিপন্ন হয়ে পড়েছে। আগে যে পরিমাণ পানকৌড়ি সুন্দরবন অঞ্চলে বিভিন্ন জলাশয়ে দেখা যেত এখন আর তেমনটি দেখা যায় না। এর অন্যতম কারণ জলাভূমি ভরাট করার ফলে জলাভূমির সংখ্যা হ্রাস। তাছাড়া জলাভূমিকে ঘিরে থাকা বড় বড় গাছের সংখ্যাও কমেছে। এরা সাধারণত তেঁতুল, জাম, আম, ইত্যাদি গাছে বাসা বাঁধতে পছন্দ করে।
বহাগ বিহু বা রঙ্গালী বিহু আনন্দের উৎসব। তবে একথা সত্য, সব উৎসবই আনন্দের উৎসব, কিন্তু রঙ্গালী বিহু শব্দটি সোনা মাত্রই মন যেন নেচে উঠে। এ যেন গানের তালে তালে যৌবনের জয় গান গাওয়ার পার্বণ। সাত দিন ধরে পালন করা হয় এই বিহু। চৈত্র সংক্রান্তির দিন থেকে শুরু করে বৈশাখের ৬ তারিক পর্যন্ত পালিত হয় এই উৎসব।
রাজকার্যে বাংলা ভাষা ব্যবহারের সুপ্রাচীন ঐতিহ্য রয়েছে ত্রিপুরার। অন্যান্য প্রান্তীয় রাজ্যেও অবশ্য রাজসভার কাজে বাংলার ব্যবহার ছিল, কিন্তু ত্রিপুরা নিঃসন্দেহে এ ক্ষেত্রে অগ্রগণ্য। সুদূর অতীত থেকে, মাণিক্য রাজবংশের প্রতিষ্ঠার প্রায় শুরু থেকেই ত্রিপুরার রাজকার্যে বাংলার ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।
সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রামে এইসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার মতো মানুষ বা গ্রন্থাগার ছিল না। উত্তর পেলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গিয়ে। ঘটনাচক্রে উদ্ভিদবিদ্যা নিয়েই পড়লাম। ফলে জানতে পারলাম আংশিক পরজীবী উদ্ভিদ ভিসকাম-এর কথা। এই গাছকে বাংলায় কী বলে জানতাম না। সুন্দরবন অঞ্চলের স্থানীয় মানুষ আদৌ কোনও স্থানীয় নামে এই গাছকে নির্দেশ করত কিনা আমার জানা ছিল না।
অসমের এই কুটির শিল্প অতি প্রাচীন। কালিকা পুরাণে অসমের পাট বস্ত্রের এবং কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে এক ধরনের স্বর্নবর্ণের সূর্যের মতো উজ্জ্বল বস্ত্রের উল্লেখ পাওয়া যায়। অসমের কুটির শিল্পে এন্ডি মুগার বস্ত্র নির্মাণ, মাটির জিনিস, ধাতুর বাসনপত্র নির্মাণ এবং আরও অনেক কিছু রয়েছে।
ত্রিপুরার রাজকার্যে যেমন বাংলা ব্যবহৃত হতো, তেমনই রাজাগণ নিজেরাও ব্যক্তিগত পর্যায়ে বাংলাতে চিঠিপত্র লিখতেন। এখানে অপেক্ষাকৃত আধুনিক কালের কয়েকজন রাজার চিঠি উল্লেখ করা হচ্ছে। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, ‘ভগ্ন হৃদয়’ কাব্যগ্ৰন্থের জন্য কিশোর কবি রবীন্দ্রনাথকে অভিনন্দন জানাতে বীরচন্দ্র মাণিক্য তাঁর সচিবকে কলকাতায় পাঠিয়েছিলেন।
ছোট থেকেই আমাদের গ্রামের বাড়ির বাস্তুজমির এদিকে ওদিকে তিন-চার ফুট লম্বা এক প্রকার গুল্ম জাতীয় গাছ প্রায়শই জন্মাতে দেখতাম। বাড়ির বড়দের কাছ থেকে জেনেছি এর নাম রামবাণ। কিন্তু কেন এর নাম রামবাণ তা জানতাম না। ছোটবেলায় তা জানার চেষ্টা করেছি বলেও মনে পড়ে না। তবে গাছটি ছিল আমার খুব পছন্দের গাছ। এর ফল ছিল আমার খুব প্রিয়। অদ্ভুত আকার রামবাণ ফলের। দেখলে মনে হবে শিঙাড়া।
‘দেশীয় রাজ্য’ গ্ৰন্থে তিনি উল্লেখ করেছেন যে, পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর একবার তাঁর সোনার চেনের সঙ্গে ঝোলানো সোনার মোহরে বাংলা অক্ষর দেখে পুলকিত হয়েছিলেন। বিদ্যাসাগর সহর্ষে উপস্থিত সবাইকে বলেছিলেন—”ইহাতে যে বাংলা ভাষা ছাপা। তবে আমার বাংলা রাজভাষা!”
সুন্দরবনে সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলে বালিয়াড়ির উপর এক ধরণের লতানে গাছ দেখা যায় যার পাতার গঠন অদ্ভুত, নজরে পড়ার মতো। নরম মাটির উপর দিয়ে ছাগল হেঁটে গেলে তার ক্ষুরের ছাপ যেমন পড়ে ঠিক সেই রকম আকারের পাতা। আর তাই সুন্দরবনের মানুষ এই লতানে গাছের নাম দিয়েছে ছাগল ক্ষুরি।
অসমের বরাক উপত্যকার কাঁচাকান্তি মন্দির ভক্তদের এক বিশেষ আকর্ষণের জায়গা। এক প্রাচীন মন্দিরও বটে। এখানকার সাধারণ মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাসের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এই মন্দির এবং মন্দির কেন্দ্রিক কিছু প্রচলিত অলৌকিক ঘটনার গল্প।
ত্রিপুরার রাজাদের মতো রাজপরিবারের সদস্যদের মধ্যেও বাংলা সাহিত্য চর্চার ধারা ছিল। বীরচন্দ্রের জ্যেষ্ঠ কন্যা অনঙ্গমোহিনী দেবী ছিলেন সেই আমলের এক বিশিষ্ট কবি। রাজকুমারীর কাব্য প্রতিভার কথা সেদিন ত্রিপুরার গন্ডি পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়েছিল বৃহত্তর বঙ্গদেশে। এমনকি রবীন্দ্রনাথও অনঙ্গমোহিনীর কাব্যের প্রশংসা করেছিলেন।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, প্রাচীনকালে গ্রিকরা নাকি যুদ্ধে যাওয়ার আগে নোনা শাকের আগা তুলে খেত। সেক্সপিয়ার তাঁর ‘কিং লিয়ার’ নাটকে এই শাকের উল্লেখ করেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম রাষ্ট্রপতি জর্জ ওয়াশিংটনের নাকি অন্যতম প্রিয় খাদ্য ছিল এই নোনা শাকের পদ।
ত্রিপুরার রাজা এবং রাজপরিবারের সদস্যদের মধ্যেও সাহিত্য চর্চার ধারা ছিল। সে যুগের একজন সুবিখ্যাত বৈষ্ণব কবি রাজা বীরচন্দ্র মাণিক্যের কথা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁর পরবর্তী রাজা এবং রাজপরিবারের সদস্যরাও কাব্য চর্চা করেছেন।
গিরা শাক নামটার সঙ্গে পরিচয় শৈশব থেকে। আমাদের গ্রামের গরিব মানুষজনকে দেখতাম প্রায়শই নদীর ধারে যেত গোরুর জন্য ধানি ঘাস আর নিজেদের খাওয়ার জন্য গিরা শাক আনতে। খাদ্য হিসেবে গিরা শাকের সঙ্গে খুব ছোটবেলায় পরিচয় না হলেও ১৩-১৪ বছর বয়সে সুযোগ আসে গিরা শাকের রান্না করা পদ খাওয়ার।