বরাক উপত্যকায় চারি দিকে যেমন রয়েছে সবুজের মেলা তেমনি রয়েছে বেশ কিছু আকর্ষণীয় স্থান। আর সেই সব স্থানের গল্পও বেশ মজাদার। এই জায়গাগুলিকে একটু যত্ন নিলে হয়ে উঠতে পারে ইতিহাস প্রেমী পর্যটকদের আকর্ষণ কেন্দ্র।

বরাক উপত্যকায় চারি দিকে যেমন রয়েছে সবুজের মেলা তেমনি রয়েছে বেশ কিছু আকর্ষণীয় স্থান। আর সেই সব স্থানের গল্পও বেশ মজাদার। এই জায়গাগুলিকে একটু যত্ন নিলে হয়ে উঠতে পারে ইতিহাস প্রেমী পর্যটকদের আকর্ষণ কেন্দ্র।
মহারাজ রাধাকিশোরের জ্যেষ্ঠ পুত্র যুবরাজ বীরেন্দ্র কিশোরের বিবাহ উপলক্ষ্যে রাজা কবিকে আসার আমন্ত্রণ জানালেন। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ পুত্রের অসুস্থতার জন্য আগরতলায় যুবরাজের বিবাহোৎসবে যোগ দিতে পারেননি।কবি যুবরাজ্ঞীর জন্য যে উপহার পাঠিয়েছিলেন—তা পেয়ে রাজা জানালেন, “বস্ত্রখানা শ্রীমতী বধূমার উপযুক্তই হইয়াছে।”
সুন্দরবন অঞ্চলে যেখানে অরণ্য রয়েছে সেখানে বড় গাছের ওপরে নানা ধরনের বক, পানকৌড়ি ও সারসকে বাসা বাঁধতে দেখা যায়। আর সেখানে তাদের মধ্যে বেশ বড় আকারের দুধ-সাদা এক জাতের বককেও দেখা যায়। বড় মানে উচ্চতায় একজন মানুষের কোমর প্রমাণ উচ্চতার থেকেও কিছুটা বেশি উঁচু। যখন ডানা মেলে উড়ে যায় তখন দুই ডানার বিস্তার হয় ৪ থেকে ৫ ফুট।
অসমের মাটিতে যেমন রয়েছে বহু জাতি, ধর্ম ও ভাষার মানুষ, ঠিক তেমনি অসমের একটি সুস্থ সুন্দর রূপ ধরে রাখতে এগিয়ে এসেছেন অনেক ভালো মনের মানুষ। মূলত তাঁদের প্রচেষ্টায় অসমের অনেক জাতি উপজাতির অজানা তথ্য সামনে এসেছে। খাসিয়া-জয়ন্তীয়া সম্প্রদায়ই হোক কিংবা রিয়াং বা রংমাই আজ সকল জাতি উপজাতি নিজেদের ঐতিহ্য বহন করে বসবাস করছে অসমে।
রাধাকিশোরের বিজ্ঞান মনস্কতা, সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রতি উদার পৃষ্ঠপোষকতা এবং বাংলা ভাষার প্রতি রাজার গভীর অনুরাগ সম্ভবত প্রবল ভাবে আকৃষ্ট করেছিল রবীন্দ্রনাথকে। দিনে দিনে কবি ও রাজার মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে। এক সময় রাজার জন্য মন্ত্রী ঠিক করে দেন কবি। রাজকুমারদের জন্য শিক্ষক নির্বাচন করেন তিনি। তবে রাধাকিশোরের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের এই ঘনিষ্ঠতা কিন্তু রাজ পারিষদদের সবাই ভাল চোখে দেখেননি।
ছোটবেলা থেকে ভাবতাম গোবক দু’রকমের হয়। এক রকম হল ধবধবে সাদা, আর এক রকম হল কমলা রঙের মাথা, গলা আর পিঠ ওয়ালা। কিন্তু পরে পড়াশোনা করে জানলাম অ-প্রজনন ঋতুতে গোবকের রং হয় সাদা আর প্রজনন ঋতুতে মাথা, ঘাড় ও পিঠের রং হয় কমলা বা সোনালি হলুদ। শুধু তাই নয়, প্রজনন ঋতুতে গোবকের পা ও চঞ্চুর রং হয় কমলা।
অসমের বরাক উপত্যকায় রয়েছে ৩টি জেলা। বরাক উপত্যকায় বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জাতির, গোষ্ঠীর মানুষ বসবাস করেছেন। বাঙালি, মণিপুরি, ভোজপুরি, বর্মণ, অসমীয়া, মার, মিজো, কুকি এবং আরও অনেক জাতির লোক এ অঞ্চলে মিলে মিশে বসবাস করছে। অসমের প্রাচীন জনজাতিদের মধ্যে এক হচ্ছে কাছারি। এই কাছারিরা মঙ্গোলীয় কিরাত গোষ্ঠীর অন্তরগত বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
রাজার পর যুবরাজ হলেন সিংহাসনের প্রথম দাবিদার। তাই ঈশানচন্দ্রের মৃত্যুর পর স্বাভাবিক ভাবেই রাজ্যাধিকারী হলেন ‘যুবরাজ’ বীরচন্দ্র। কিন্তু পাকাপোক্ত ভাবে তাঁর রাজত্বলাভ মোটেই মসৃণ ছিল না। বীরচন্দ্রের দুই ভাই চক্রধ্বজ ও নীলকৃষ্ণ এই রোবকারী ‘জাল’ অভিযোগ করে ইংরেজ সরকারের কাছে ত্রিপুরা রাজ্যের উপযুক্ত দাবিদার হিসেবে তদবির শুরু করলেন।
মহাকায় বকেরা পরিযায়ী পাখি নয়, তবে খাদ্যাভাব দেখা দিলে অন্যত্র যেতে পারে। যখন প্রজনন ঋতু নয় তখন এরা একা একাই ঘোরাফেরা করে। পক্ষীবিজ্ঞানীদের মতে, মহাকায় বকদের মধ্যে অন্তঃপ্রজাতি সংগ্রাম বেশি হওয়ার দরুণ এদের সংখ্যা বেশি হয় না। এরা নিশাচর বক। রাতেই এরা খাদ্য সংগ্রহ করতে পছন্দ করে।
ত্রিপুরার রাজপরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের সূত্রে সেদিন আমরা এক অন্য রবীন্দ্রনাথের পরিচয় পেয়েছিলাম। সেই রবীন্দ্রনাথ ত্রিপুরার রাজার জন্য মন্ত্রী ঠিক করে দেন,রাজ্যের বাজেট নির্ধারণ করেন,আবার রাজনীতিকের ভূমিকাতেও অবতীর্ণ হন। আর ত্রিপুরায় এই অন্য রবীন্দ্রনাথের আলোচনা প্রসঙ্গে যে নামটি বারবার আসবে তা হচ্ছে ব্রজেন্দ্র কিশোর দেববর্মণ, যিনি লালুকর্তা হিসেবেই সমধিক পরিচিত।
বক পরিবারের এই বৃহত্তম সদস্যটি IUCN তালিকায় least concern হলেও মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ায় এদের সংখ্যা খুবই কমে গিয়েছে এবং বিচ্ছিন্নভাবে কোনও কোনও জায়গায় এখন দেখা যায়।
রাধাকিশোরের পর সিংহাসনে বসেন পুত্র বীরেন্দ্র কিশোর মাণিক্য। তিনিও রাজকার্যে বাংলার ব্যবহার অব্যাহত রাখেন। রাজকার্যে ইংরেজির প্রবাহ ঠেকাতে বীরেন্দ্র কিশোরও উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তাঁর রাজত্বকালে এ ব্যাপারে আদেশনামা জারি হয়েছিল।
কিছুদিন আগে পক্ষীপ্রেমী এক বন্ধু সুন্দরবন ভ্রমণে গিয়ে অনেক পাখির ছবি তুলেছিল। সেই সব ছবি দেখতে গিয়ে যেসব ছবিগুলোতে চোখ আটকে গিয়েছিল সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হল সবুজ রঙের একটা বকের ছবি। এইরকম বক আমার নজরে কোনওদিন পড়েনি। কিন্তু ছোটবেলায় ঠাকুমার মুখে সবুজ বকের কথা শুনেছি। সুন্দরবনের পশ্চিম অংশেও একসময় তাহলে সবুজ বক ছিল। জনবসতির চাপে বহু প্রজাতির মতো সবুজ বকও মনে হয় এলাকাচ্যুত হয়েছে।
মহারাজা বীরচন্দ্র মাণিক্যের রাজত্বকালে (১৮৬২-১৮৯৬ খ্রিঃ) ত্রিপুরায় রাজকার্যে প্রচলিত বাংলা আরও উন্নত হয়েছিল। ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে বীরচন্দ্রের যৌবরাজ্যে অভিষেক বিষয়ে প্রচারিত রোবকারীটির কথা এখানে উল্লেখ করা যায়। ঈশানচন্দ্র মাণিক্যের মৃত্যুর পর এক বিতর্কিত রোবকারি মূলে রাজা হয়েছিলেন বীরচন্দ্র।
লাল কাঁক নামক পাখিটার নাম শুনেছি খুব ছোটবেলা থেকে। সন্ধে নাগাদ কখনও কখনও দেখতাম বেশ বড় আকারের পাখি ডানা ঝাপটে উড়ে যাচ্ছে। আওয়াজ শুনতাম ‘কোয়ারাং’। জিজ্ঞাসা করলে কখনও বাবা, কখনও ঠাকুমার মুখে শুনতাম— এটা লাল কাঁক পাখি ডাকছে। একেবারে শৈশবে এই পাখিকে দিনের আলোয় চোখে দেখেছিলাম কিনা তা আজ আর মনে নেই।