কেবল শীতলার সঙ্গেই নয়, কোথাও কোথাও পঞ্চানন্দ, ধর্মঠাকুর, আটেশ্বর, দক্ষিণ রায়, পাঁচুঠাকুর, বসন্ত রায় প্রভৃতি লৌকিক দেবতাদের সাথেও জ্বরাসুরকে পূজিত হতে দেখা যায়।

কেবল শীতলার সঙ্গেই নয়, কোথাও কোথাও পঞ্চানন্দ, ধর্মঠাকুর, আটেশ্বর, দক্ষিণ রায়, পাঁচুঠাকুর, বসন্ত রায় প্রভৃতি লৌকিক দেবতাদের সাথেও জ্বরাসুরকে পূজিত হতে দেখা যায়।
দেখতে কেমন পাঁচু ঠাকুর? তাঁর প্রচলিত চেহারা কিন্তু অতি ভয়াবহ, আদিম দেবতাদের সঙ্গে অনেক মিল দেখা যায়। তাঁর গায়ের রং কালো। হুতোম প্যাঁচার মতো বড় বড় গোলাকার চোখ এবং চোখের রং লাল। মাথায় ঝাঁকড়া কোঁচকানো চুল।
পঞ্চানন্দ দেখতে কিছুটা শিবের মতো হলেও পার্থক্যই বেশি। পঞ্চানন্দের দেহের রং টকটকে লাল। বিরাট গোলাকার তিনটে রক্তচক্ষু দেখে ভীতিসঞ্চার হওয়া স্বাভাবিক। টিকালো নাক।
‘ওলাবিবি’ শব্দটির সঙ্গে আমার পরিচিতি আশৈশব। কারণ প্রায় অর্ধশতক আগে দারিদ্র্যপীড়িত সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রামে এক বিভীষিকাময় রোগ ছিল বিসূচিকা বা কলেরা। তখন গ্রামে সরকারি নলকূপের সংখ্যা ছিল খুব কম বা কোথাও আদৌ নেই। অধিকাংশ সাধারণ মানুষ পানীয় জল হিসেবে পুকুরের জল খেতে বাধ্য হত। ছিল না কোনও স্থায়ী শৌচাগার। ফলে সমস্ত মানুষ খোলা মাঠে মল ত্যাগ করত আর শৌচকর্ম করত পুকুরে। আবার সেই পুকুরের জল রান্নার কাজে বা পানীয় জল হিসেবে ব্যবহৃত হত। তাছাড়া স্নান এবং জামাকাপড় ধোয়াও হত সেই পুকুরে। কখনও একটা বড়ো পুকুর পাড়ার অনেক পরিবারও...
“মাকাল” কথাটি সম্ভবত “মহাকাল” শব্দের ধ্বনিলোপের ফলে উৎপন্ন হয়েছে। মহাকাল মানে হল পৌরাণিক দেবতা শিব। তাই মনে হয়, সুন্দরবনের মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে শিবের এক লৌকিক রূপ হল মাকাল ঠাকুর।
আটেশ্বর যদি লৌকিক দেবতা হন তবে সুদূর অতীতে এই নামে কি কোনও ব্যক্তি ছিলেন? সুন্দরবন অঞ্চলে কোথাও কোথাও ‘আট’ মানে উঁচু জমি। মেদিনীপুর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ‘আটান’ কথাটি প্রচলিত আছে।
‘গাজী’ কারও নাম নয়, এ হল উপাধি। ইসলামি অর্থে ‘গাজী’ হলেন তিনি যিনি ধর্মযুদ্ধে বিজয়ী। তিনি মৈত্রী ও অহিংসার মাধ্যমে ভিনধর্মের মানুষেরও হৃদয় জয় করার ক্ষমতা রাখেন।
ব্যক্তি দক্ষিণ রায় কে ছিলেন বা তিনি কোন সময়ে ছিলেন তা নিয়ে নানা মুনির নানা মত রয়েছে। অনেকের মতে দক্ষিণ রায় আসলে কারও নাম নয়, ‘দক্ষিণ প্রদেশের অধিপতি’ এই অর্থে দক্ষিণ রায়।
বনবিবি সঙ্গেই পুজো পায় তাঁর ভাই শাহ জঙ্গলি। পাশেই থাকে তাঁর মূর্তি। আর থাকে একদা দক্ষিণ রায়ের বন্ধু গাজি আউলিয়া এবং ব্যাঘ্ররূপী দক্ষিণ রায়ের মূর্তি।
ঐতিহাসিক ও পুরাতাত্বিক নানা উপকরণ প্রামাণ্য হিসেবে আবিষ্কৃত হয়েছে আদি গঙ্গার অববাহিকায়। অবশ্য অবহেলায় নষ্ট হয়েছে ও ভূগর্ভের অজানা স্থানে আজও প্রকাশের অপেক্ষায় আছে বহুগুণ বেশি প্রামাণ্য উপকরণ।
সুন্দরবনের কথা উঠলেই সবার আগে মনে আসে সুন্দরী গাছ আর রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের কথা। সুন্দরবনে উদ্ভিদকূলের রানি যদি হয় সুন্দরী গাছ, তবে প্রাণিকূলের রাজা হল রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার।
আলেকজান্ডারেরও হস্তীবাহিনী ছিল না। তিনি বুঝলেন ওই সংযুক্ত রাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধে গেলে পরাজয় অবশ্যম্ভাবী। তাই তিনি ম্যাসিডনে ফিরে যেতে মনস্থ করলেন।
সুন্দরবন নামের উৎস যে সুন্দরী গাছ সে ব্যাপারে আমরা নিঃসন্দেহ। কিন্তু সুন্দরবন অঞ্চলের নানা স্থানের নাম কীভাবে তৈরি হল?
বর্তমানে ভারত ও বাংলাদেশের যে অংশকে আমরা সুন্দরবন বলে জানি, তা কিন্তু সুদীর্ঘকাল আগে এমন ছিল না। গাঙ্গেয় উপদ্বীপে সুন্দরবন বহুবার উত্তর দিকে এগিয়ে গিয়েছে, আবার দক্ষিণ দিকে সরে এসেছে।
বাণিজ্যিকভাবে সুন্দরবনের লবণ-ক্ষেত্র বা খালাড়িগুলোতে লবন শ্রমিক বা মলঙ্গিদের দ্বারা লবণ উৎপাদনের পদ্ধতি ছিল প্রায় একইরকম। এক্ষেত্রে এক একটা খালাড়ি হত প্রায় ৪-৬ বিঘা।