হিন্দুরা ছাবালপীর বা খোকা পীর কে বালক কৃষ্ণ বলে মনে করেন। সুন্দরবন এলাকায় যখন ষোড়শ সপ্তদশ শতকে পীরদের দ্বারা ইসলাম ধর্মের প্রভাব ক্রমশ বাড়ছিল তখন হিন্দুদের বালক কৃষ্ণ মুসলমানদের ছাওয়াল পীরের সঙ্গে অঙ্গীভূত হয়।

হিন্দুরা ছাবালপীর বা খোকা পীর কে বালক কৃষ্ণ বলে মনে করেন। সুন্দরবন এলাকায় যখন ষোড়শ সপ্তদশ শতকে পীরদের দ্বারা ইসলাম ধর্মের প্রভাব ক্রমশ বাড়ছিল তখন হিন্দুদের বালক কৃষ্ণ মুসলমানদের ছাওয়াল পীরের সঙ্গে অঙ্গীভূত হয়।
‘খুব লড়ি মর্দানি, ওহ তো ঝাঁসি ওয়ালি রানি থি’ না আজ ঝাঁসির রানির গল্প নিয়ে আসিনি। তবে ইতিহাসের পাতাতে তো ঝাঁসির রানি লক্ষ্মীবাঈর মতো আরও অনেক বীরাঙ্গনা রয়েছেন। আজ তাঁদেরই একজনের কথা বলব।
চন্দ্রকেতুগড় স্থানটির কথা আজ অনেকের কাছে সুপরিচিত। উত্তর ২৪ পরগনার বেড়াচাঁপায় রয়েছে রাজা চন্দ্রকেতুর গড় বা দুর্গের ভগ্নাবশেষ। চন্দ্রকেতুর কথা যতটুকু জানা যায় তা লোকমুখে প্রচারিত অলৌকিক নানা কাহিনি।
ডিমাসা, বাঙালি, মণিপুরি আরও অনেক ভাষা ও সংস্কৃতির লোকদেরকে একসঙ্গে মিলেমিশে থাকতে দেখা যায় এই বরাক পাড়ে। বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে বরাক উপত্যকা তার নিজস্বতা বহন করছে।
লোকগবেষকদের মতে, সুন্দরবনের লৌকিক দেবতা রক্তবর্ণের পঞ্চানন্দ থেকে রক্তান গাজীর উদ্ভব। সুন্দরবন অঞ্চলে যখন ইসলাম ধর্ম প্রভাব বিস্তার করছিল এবং তার ফলে অনেক হিন্দু ইসলাম ধর্মগ্রহণে বাধ্য হচ্ছিল তখন এই রূপান্তর ঘটে।
ইতিহাস বড় মজার বিষয়। ইতিহাস শুধু নাম আর তারিখের তালিকাই ধরে রাখে না, সেই সঙ্গে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকে কত বীরদের অমর গাথা। আমাদের বরাক ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে এমন অনেক ক্ষণজন্মা জন্মেছেন যাঁরা আমাদের কাছে চির স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞের মতে সত্যনারায়ণ ও সত্যপীর একই উপাস্য। অনেক ঐতিহাসিকের মতে গৌড়েশ্বর হুসেন শাহ তাঁর রাজ্যে হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে সমণ্বয়ের জন্য হিন্দুদের সংস্কৃত শব্দ ‘সত্য’ ও মুসলমানদের আরবি শব্দ ‘পীর’ জুড়ে সত্যপীর উপাসনা প্রবর্তন করেন।
অসম নামের উৎস শব্দটি নিয়ে ভিন্ন মত আছে। তবে আজকের দিনে আসাম নয়, রাজ্যটির নাম ‘অসম’ বলেই আমরা জানি। ব্রিটিশ শাসনের শুরুর দিকে ইংরেজিতে ‘আসাম’ বানানে একটি ‘S’ ব্যবহার করা হতো।
মানিক পীরের মূর্তি আজকাল প্রায় দেখাই যায় না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাঁর সমাধি বা স্তূপ পূজা-হাজোত করা হয়। মানিক পীরের মূর্তি খুব সুন্দর। গায়ের রং ফর্সা। মাথায় বাবরি করা চুল ও গালে দাড়ি।
অসম বলতেই মনে হয় সবুজের অসম, গাছের অসম, বিহুর অসম, বৃষ্টির অসম। আমার অসম।
বসন্ত রায়—নামটা শুনলে ইনি যে কোনও দেবতা হতে পারেন তা মনে আসে না। কারণ দেবতাদের নামের শেষে কোনও পদবি থাকতে দেখা যায় না। কিন্তু ব্যতিক্রম সুন্দরবনের লৌকিক দেবতা দক্ষিণ রায়, কালু রায় বা বসন্ত রায়।
মুন্সি বয়নুদ্দিন রচিত মুসলমানি কেচ্ছা ‘বনবিবি জহুরানামা’ (১৮৭৮) থেকে জানা যায় মক্কা থেকে বনবিবি খোদাতাল্লার হুকুমে এসেছিলেন ভাটির দেশে অর্থাৎ সুন্দরবনে।
অনার্য আদিম প্রাচীন সুন্দরবনবাসী, তাই পৃথিবীর অন্যান্য আদিম সংস্কৃতির মতো ভয়ঙ্কর সেই সব জীবজন্তুর হাত থেকে বাঁচতে তাদের মধ্যে দেবত্ব আরোপ করে তাদের পুজো শুরু করে।
কালীপুজো বাঙালির কাছে দুর্গাপুজোর পর দ্বিতীয় বড়ো উৎসব। কিন্তু আজ থেকে অর্ধ শতক আগে সুন্দরবন অঞ্চলে দুর্গাপুজো বা কালীপুজোর বাড়তি কিছু গুরুত্ব ছিল না।
বর্তমান সুন্দরবনে লৌকিক দেবদেবীদের গুরুত্ব ক্রমশ কমলেও একমাত্র যে দেবীর গুরুত্ব একটুও কমেনি, বরং ক্রমবর্ধমান তিনি হলেন সর্পদেবী মনসা। সুন্দরবন হল সাপসঙ্কুল এলাকা।