১৮৮১ সালের একুশে মে ন্যাশনাল থিয়েটারে গিরিশচন্দ্রের ‘আনন্দে রহ’ একটি নাটক অভিনীত হয়েছিল। চণ্ড নাটকে গিরিশচন্দ্র মধুসূদন প্রবর্তিত চোদ্দো অক্ষরে অমিত্রাক্ষর ছন্দ ব্যবহার করেছেন।

১৮৮১ সালের একুশে মে ন্যাশনাল থিয়েটারে গিরিশচন্দ্রের ‘আনন্দে রহ’ একটি নাটক অভিনীত হয়েছিল। চণ্ড নাটকে গিরিশচন্দ্র মধুসূদন প্রবর্তিত চোদ্দো অক্ষরে অমিত্রাক্ষর ছন্দ ব্যবহার করেছেন।
গিরিশচন্দ্রের পৌরাণিক এবং সামাজিক নাটকগুলো যেমন অসাধারণ জনপ্রিয় হয়েছিল, ঐতিহাসিক নাটকগুলির সম্পর্কে ঠিক তেমন ভাবে বলা যায় না। আসলে গিরিশচন্দ্রের যুগ ধর্মোত্থানের যুগ।
কলকাতার মধ্যবিত্ত বাঙালি ঘরের গল্প নিয়ে নটগুরু গিরিশচন্দ্র সামাজিক নাটকগুলো লিখেছিলেন। সাধারণত এই সমস্ত ঘরে নিরুপদ্রব এবং গতানুগতিক জীবনধারায় মধ্যে নাটকে উপাদান খুব বেশি একটা ছিল না।
গিরিশচন্দ্রের সাহিত্য সাধনা দীর্ঘকাল স্থায়ী এবং বৈচিত্রে ও প্রাচুর্যে তা উল্লেখযোগ্য। যেহেতু তিনি বিভিন্ন রঙ্গমঞ্চের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তাই রঙ্গমঞ্চের দাবি মেটাতে গিয়ে তাঁকে অনেক নাটক লিখতে হয়েছিল।
নাটকে অভিনয় করেই গিরিশচন্দ্র রঙ্গমঞ্চ থেকে বিদায় নিয়েছিলেন। শেষ অভিনয় মিনার্ভা থিয়েটারে করুণাময়ের ভূমিকায়। সেদিন ছিল দুর্যোগের রাত। মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছিল।
মধুসূদন অমিত্রাক্ষর ছন্দ ব্যবহার করেছেন। কিন্তু অভিনয় টানা অমিত্রাক্ষরের ব্যবহার নাটকের শিল্পীদের ভীষণ কষ্ট হতো। এটি গিরিশচন্দ্র শিল্পীদের দিয়ে অভিনয় করানোর থেকে বুঝতে পেরেছিলেন।
নটগুরু গিরিশচন্দ্রের ভক্তিরসাত্মক চরিত নাটক হল ‘রূপ সনাতন’। এটি প্রথম অভিনীত হয়েছিল ৬৮ নম্বর বিডন স্ট্রিটের ‘স্টার থিয়েটারে’ ১৮৮৭ সালের একুশে মে শনিবার।
নটগুরু গিরিশচন্দ্র ঘোষের ভক্তিরসাত্মক আত্মচরিত নাটক ‘বিল্বমঙ্গল ঠাকুর’। এই নাটক ৬৮ নম্বর বিডন স্ট্রিটের স্টার থিয়েটারে প্রথম অভিনীত ১৮৮৬ সালের ১২ জুন শনিবার।
বিডন স্ট্রিটের স্টার থিয়েটারে নাট্যাচার্য গিরিশচন্দ্র নতুন যে ভক্তি রসাত্মক বা ভক্তিমূলক পৌরাণিক নাটক মঞ্চস্থ করেছিলেন তার নাম ‘প্রভাস যজ্ঞ’। প্রথম অভিনীত হয়েছিল ৩০মে শনিবার ১৮৮৫ সালে।
পৌরাণিক তথা ধর্মমূলক নাটক রচনায় গিরিশচন্দ্র অপ্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। ‘বৃষকেতু’ তাঁরই লেখা স্বল্পায়তন একাঙ্ক। এটি পৌরাণিক হলেও এর কাহিনী কিন্তু মহাভারতের নয়।
শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব ভক্তদের সঙ্গে ১৮৮৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর রবিবার স্টার থিয়েটারে এসেছেন নাট্যাচার্য গিরিশচন্দ্রের স্বল্পায়তন দু’ অঙ্কের পৌরাণিক নাটক ‘প্রহ্লাদ চরিত্রে’র অভিনয় দেখতে।
গিরিশচন্দ্রের ‘শ্রীবৎস চিন্তা’ চারটি অঙ্কবিশিষ্ট ভক্তি রসাত্মক বা ভক্তিমূলক পৌরাণিক নাটক। শ্রীবৎস, চিন্তা, লক্ষ্মীদেবী, শনিদেব, ভদ্রা প্রভৃতি প্রধান চরিত্রচিত্রণে কাশীরাম দাসের মহাভারতকে গিরিশচন্দ্র বিশ্বস্ততার সঙ্গে অনুসরণ করেছিলেন।
গুর্মুখ রায় স্টার থিয়েটার পরিত্যাগের পর চরিত্রাভিনেতা অমৃতলাল মিত্র, রসরাজ অমৃতলাল বসু সহকারী ম্যানেজার দাশুচরণ নিয়োগী এবং হিসাবরক্ষক হরিপ্রসাদ বসুর স্বত্বাধিকারীতে নতুন ব্যবস্থাপনায় এই মঞ্চটি চালু রইল এবং সেখানে নাট্যাচার্য গিরিশচন্দ্রের ভক্তি রসাত্মক নাটকটি প্রথম অভিনীত হয়। এই অভিনয় অনুষ্ঠিত হয় ২৯ মার্চ শনিবার ১৮৮৪ সালে। 'কমলে কামিনী' নাটকের প্রথম অভিনয় রজনীতে যাঁরা অভিনয় করেছেন তাঁরা হলেন শ্রীমন্তের চরিত্রে বনবিহারিণী, শালিবাহনের চরিত্রে উপেন্দ্রনাথ মিত্র, গুরুমশাইও সভাসদচরিত্রে অমৃতলাল বসু, খুল্লনা ও...
ভক্তি রসাত্মক পৌরাণিক নাটক লেখার ক্ষেত্রে গিরিশচন্দ্র ঘোষ ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী৷ স্টার থিয়েটারে তৃতীয় নাটকটি ছিল গিরিশচন্দ্র ঘোষের লেখা এবং তাঁর নির্দেশনায় 'নল দময়ন্তী' যেটি প্রথম মঞ্চস্থ হয় ১৮৮৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর শনিবার। প্রথম দিনের অভিনয়ে যে সব শিল্পী অভিনয় করেছিলেন তাঁদের মধ্যে রয়েছেন; নলের ভূমিকায় অমৃতলাল মিত্র। বিদূষকের চরিত্রে অমৃতলাল বসু। দময়ন্তীর চরিত্রে বিনোদিনী। রাজমাতার চরিত্রে গঙ্গামণি। সুনন্দার চরিত্রে ভূষণকুমারী। রানির চরিত্র ক্ষেত্রমণি প্রমুখ। 'নল দময়ন্তী' নাটকের সুরকার এবং সংগীত শিক্ষক...
গিরিশচন্দ্র যাঁকে ভবপারের কান্ডারিরূপে দর্শন করেছিলেন তিনি আর কেউ নন, তিনি হলেন শ্রীরামকৃষ্ণ। গিরিশচন্দ্র জানতেন এমন পাপ নেই যা তিনি করেননি। তবু তিনি অহংকারের সঙ্গে বলতেন, 'তুমি আসবে আগে জানলে আরও বেশি করে অপচার করে নিতুম।' আরও বলতেন গিরিশচন্দ্র 'ঠাকুরের কাছে আর সকল শুদ্ধসত্ত্ব ছেলেরা এসেছিল; আর এমন পাপ নেই যা আমি করিনি। তবু তিনি আমায় গ্রহণ করেছিলেন। তিনি কিছু নিষেধ করেননি, সব আপনি ছুটে গেল।' এসবই সত্যি কিন্তু শুধু পাপ বিমোচন-এর দিক থেকে গিরিশচন্দ্রকে দেখলে অন্যায় হবে। শ্রীরামকৃষ্ণ তাঁকে সেই দৃষ্টিতে দেখেননি।...