স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে এ বছর আমার এক রকম মিশ্র অনুভূতি হল। এরকম অনুভূতি হওয়ার পিছনে কারণ কী তা অনুসন্ধানের চেষ্টা করে বুঝলাম এর মূলত দুটি বিষয় রয়েছে।

স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে এ বছর আমার এক রকম মিশ্র অনুভূতি হল। এরকম অনুভূতি হওয়ার পিছনে কারণ কী তা অনুসন্ধানের চেষ্টা করে বুঝলাম এর মূলত দুটি বিষয় রয়েছে।
পুরুষদের থেকে বানর অনেকটাই পিছিয়ে আছে সেই নিয়ে সন্দেহ নেই। কিন্তু নারী সে যেকোনও প্রাণী গোত্রেরই হোক না কেন, সন্তানের জন্ম দিয়ে স্তন্য পান করিয়ে বাঁচিয়ে রাখবে।
লিলিথকে পিশাচ বলা হয়েছে। কারণ, তিনি নাকি যৌনতা এবং সন্তান উৎপাদনের প্রক্রিয়াতে বাধা হয়ে ছিলেন। আবার তাঁকে যৌনকর্মীদের দেবী হিসেবে দেখান হয়েছে। লিলিথকে বলা হয়েছে যৌন মুক্তির প্রতীক।
রাবণ সামাজিক ক্ষমতা বলে ছোট ভাই অর্থাৎ আর এক পুরুষের উপর ক্ষমতার আস্ফালন করা হল। ছোটভাই সীতার প্রতি অবিচারের প্রতিবাদ করতে চাইল। কিন্তু আমরা কী করলাম? তাঁকে আজন্মকাল ধরে বলে এলাম ঘরের শত্রু বিভীষণ।
নারীবাদী আন্দলনের হাত ধরেই আশির দশক থেকে পুরুষ বা পৌরুষ বিষয় নিয়ে কথা বলা শুরু হয়েছে। সেই কথোপকথনে বঞ্চনা আর অত্যাচারের অভিজ্ঞতা পুরুষ, পৌরুষকে অনেক সময় কোণঠাসা করেছে।
নির্ভয়া কেস যখন সামনে আসে তখন সারা দেশ প্রতিবাদে সরব হয়ে ওঠে। এই ঘটনা ভারতীয় চেতনাতে প্রভাব ফেলেছিল। একটি মেয়ের উপর পাশবিক অত্যাচারের কোনও সাধারণ ঘটনা নয়।
সম্মতি শুধু যৌনক্রিয়ার ক্ষেত্রে নয়, মেয়েদের জীবনের সব সম্মতির ক্ষেত্রেই মৌনতা মানেই সম্মতি— এই ধারণার মধ্যে বজায় থেকেছে। কারণ মেয়েরা এখনও নাগরিকের মতো নিজের আইন নিজে তৈরির প্রক্রিয়াতে অংশগ্রহণ করে উঠতে পারছে না যে!
ভারতের এমন কিছু ধর্মীয় বিশ্বাস বা পুজো পদ্ধতি আছে যেখানে নারীর জন্ম দেওয়ার শক্তি বা সৃষ্টি করার ক্ষমতাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। বাকি ধর্ম মতে, অদ্ভুত দ্বিধা দ্বন্দ্বপূর্ণ ভাবে নারীদের দেখা হয়।
আইনি অধিকারের সঙ্গে সমাজ আর একটি বিষয়কে চিরস্থায়ী করে রাখতে চায়, সেটি হল পুরুষ প্রাথমিক উৎপাদক আর নারী হল গৌণ বা সহায়ক এজেন্ট।
রান্নাঘর ও নারীর মধ্যে তৈরি হওয়া সম্পর্ক ক্রমেই জটিল হতে শুরু করল। আর সেটাই হয়ে উঠল পিতৃতান্ত্রিক সমাজের অস্ত্র। এই অস্ত্রকেই বারে বারে কাজে লাগান হয়েছে নারীকে দমনের জন্য।
বিবাহবিচ্ছেদকে আমাদের সমাজে খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়। আসলে বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠানকে সমাজে টিকিয়ে রাখতে গেলে এই আইনি বিচ্ছেদকে খুব সহজলভ্য করলে চলবে না।
সামাজিক প্রেক্ষাপটের দৃষ্টিকোণ থেকে এই পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করার চেষ্টা করলে আপনারাও বুঝতে পারবেন নারী বিশেষ ভাবে সক্ষমদের অবস্থান প্রান্তিকস্তরে।
প্রকৃতিকে তুষ্ট রাখার প্রচেষ্টাতে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, কোনও না কোনও নারীকে এগিয়ে দেওয়া হয়েছে। পরে এঁদের দেবী বলে পরিচিতি দেওয়া হয়েছে।
নারী কোনও গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদে থাকলে সেই নারীর দরকারি বা কাজের প্রয়োজনের খাতিরে দেওয়া আদেশ মানতে না চাওয়া। তাঁকে অকারণ হেনস্থা করে বিনোদন পাওয়ার চেষ্টা করা।
প্রতিদিনের যাপনচিত্রে চোখ বোলালে আমরা সহজেই বুঝতে পারব কীভাবে এই নিপীড়ন করার ভাবনার বীজ নারী পুরুষের মধ্যেকার থাকবন্দি বিভেদ বা উচ্চ নীচের বিভেদের ধারণা কে তৈরি করা হয়।