পঞ্চপাণ্ডব, মা কুন্তীর সঙ্গে একচক্রানগরীতে যে ব্রাহ্মণের বাড়িতে অবস্থান করছিলেন, সেই আশ্রয়দাতা ব্রাহ্মণকে বকরাক্ষসের করালগ্রাস হতে দ্বিতীয় পাণ্ডব ভীমসেন একাই, উদ্ধার করলেন।

পঞ্চপাণ্ডব, মা কুন্তীর সঙ্গে একচক্রানগরীতে যে ব্রাহ্মণের বাড়িতে অবস্থান করছিলেন, সেই আশ্রয়দাতা ব্রাহ্মণকে বকরাক্ষসের করালগ্রাস হতে দ্বিতীয় পাণ্ডব ভীমসেন একাই, উদ্ধার করলেন।
অরণ্যবাসে চলেছেন রাম। রজনী অবসানান্তে, বহুদূরে এগিয়ে গেলেন। যেতে যেতে অবশেষে ভোর হল। বড় সুন্দর মঙ্গলময় সে সকাল। রাম তাঁর প্রাতঃকালীন মাঙ্গলিক সন্ধ্যা ইত্যাদি সমাপন করলেন। রাজ্যের শেষ সীমায় উপস্থিত হলেন তিনি। কুসুমিত অরণ্যভূমি দেখতে দেখতে শ্রেষ্ঠ ঘোড়ায় টানা রথে দ্রুত অতিক্রম করে গেলেন অনেকটা পথ।
নহুষনন্দন যযাতি রাক্ষসগুরু শুক্রাচার্যের অভিশাপে জরাগ্রস্ত হলেন। তাঁর ত্রুটি হল—তিনি আচার্য শুক্রাচার্যের আদেশ অমান্য করে শুক্রাচার্যকন্যা দেবযানীর দাসী, রাক্ষসরাজ বৃষপর্ব্বার কন্যা শর্মিষ্ঠার গর্ভে তিনটি পুত্রের জন্ম দিয়েছিলেন।
তমসাতীরে রামচন্দ্রের বনবাসজীবনের সূচনা। ঘনায়মান রাতের অন্ধকার। রমণীয় তমসা নদী তীরেই হবে রাত্রিযাপন। রামচন্দ্র লক্ষ্মণকে আশ্বস্ত করেলেন, হে সৌমিত্রি লক্ষ্মণ, উৎকণ্ঠার কোনও কারণ নেই। তোমার কল্যাণ হোক। আজই আমাদের বনবাসের প্রথম নিশিযাপন।
শর্মিষ্ঠার মনোবাসনা হল যযাতির ঔরসে পুত্রলাভ। অশোক বনের কাছে, নিরালায়, রাজার দর্শনের অপেক্ষায় অবস্থানরতা শর্মিষ্ঠাকে দেখতে পেলেন রাজা যযাতি। শর্মিষ্ঠা, রাজার কাছে সন্তান প্রার্থনা করলেন। শর্মিষ্ঠার বংশপরিচয়, চরিত্র ও রূপ,রাজার অজানা নয়।
দেবী কৌশল্যার ক্ষোভ, দুঃখ, দোলাচলচিত্ততা দূর করতে এগিয়ে এলেন লক্ষ্মণজননী দেবী সুমিত্রা। প্রকৃত অর্থে ধার্মিক রাম, সৎ ও পুরুষশ্রষ্ঠ। পিতাকে সত্যবাদীরূপে প্রমাণ করেছে সে। এই কারণে সে রাজ্য ত্যাগ করে বনবাসী হয়েছে। ধার্মিক সৎ ছেলের জন্যে শোক কেন?
প্রবল আত্মবিশ্বাসী দেবী কুন্তী। তাঁর মহাবলশালী পুত্র ভীম কখনও ব্যর্থ হবে না। বকরাক্ষসের কাছে ভোজ্য পৌঁছে দেবে সে এবং নিজেও বিপদমুক্ত হবে। দ্বিতীয় পাণ্ডব রাক্ষসের মোকাবিলায় প্রস্তুত।
রাম পিছুটান উপেক্ষা করে চলেছেন বনবাসে।রামের নির্দেশে সারথি সুমন্ত্র রথ ছোটালেন চরম অশ্বগতিতে। তাঁর রথের পিছনে ধাবমান জনস্রোত, স্বজন, স্নেহশীল বৃদ্ধ পিতা। অন্তঃপুরিকাদের আর্ত চিৎকার, অনাথ, দুর্বল, সহায়হীন মানুষের আশ্রয় যিনি, তিনি আজ কোথায় চলেছেন?
একচক্রা নগরীতে পাণ্ডবদের আশ্রয়দাতা ব্রাহ্মণের পরিবার, এক ঘোর সঙ্কটের সম্মুখীন হয়েছে। কোনও এক রাক্ষসের কবলে পরেছে ব্রাহ্মণ পরিবারটি। পরিবারের মধ্যমণি ব্রাহ্মণ ও তাঁর স্ত্রী রাক্ষসের মুখোমুখি হতে ইচ্ছুক। কন্যাটি পিতামাতার আত্মত্যাগের উদ্যোগ ও পরিণাম শুনে, সেও তার নিজ বক্তব্যের সমর্থনে যুক্তিজাল বিস্তার করল।
রাজা দশরথ এমন বলতে বলতেই কণ্ঠস্বর রুদ্ধ হল তাঁর। অস্ফুট উচ্চারণে তিনি বলে উঠলেন, “রাম”। আর কোন কথা বলতে পারলেন না। পর মুহূর্তে সচেতন হয়ে, সাশ্রু নয়নে সুমন্ত্রকে বললেন, শ্রেষ্ঠ অশ্ব যোজনা করে রথ প্রস্তুত করা হোক, সেই রথে রাম যাবেন জনপদের সীমানা ছেড়ে গহন অরণ্যে।
পঞ্চপাণ্ডবদের উত্তরসূরী ঘটোৎকচের জন্মের পরে শর্ত অনুযায়ী বিদায় নিলেন ভীমসেনের স্ত্রী হিড়িম্বা। পাণ্ডবরা মা কুন্তীকে নিয়ে এগিয়ে চললেন বনান্তরে। এখন তাঁদের অঙ্গে তপস্বীর ছদ্মবেশ। জটা, বল্কল এবং মৃগচর্ম। যাত্রাপথে মৎস্য, ত্রিগর্ত্ত, পাঞ্চাল ও কীচকদেশ অতিক্রম করে এগিয়ে চললেন তাঁরা। পথে অধ্যয়নের বিরাম নেই।
রামের বনগমনে মানসিক প্রস্তুতি সম্পূর্ণ। তিনি এই ভোগসর্বস্ব জীবন পরিত্যাগ করে চলেছেন বনবাসে। অনাসক্তি তাঁর মনে, কি প্রয়োজন চতুরঙ্গ সেনার? শ্রেষ্ঠ হাতিটিকে দান করে তার বন্ধনরজ্জুর প্রতি মায়া কেন?
বারণাবতে কুন্তীসহ পঞ্চপান্ডবকে জতুগৃহে দগ্ধ করতে চেয়েছিলেন কৌরবদের দুষ্ট চক্র। কুরুরাজ ধৃতরাষ্ট্রের পূর্ণ সম্মতি নিয়ে দুর্যোধন, দুঃশাসন, শকুনি, কর্ণ এই চক্রান্তে অংশ নিয়েছিলেন। চক্রান্ত ব্যর্থ হল। বিদুরের সহায়তায় রক্ষা পেলেন পাণ্ডবরা।
রানি কৈকেয়ী মোহবশত নিজের অসৎপথে চালিত করছেন রাজাকে। সুমন্ত্রের বিবেচনায়, প্রচলিত প্রবাদানুসারে ছেলেরা পিতার এবং মেয়েরা মায়ের স্বভাব অনুসরণ করে থাকে। এই প্রবাদ, সত্যে পরিণত হল আজ।
দেবগুরু বৃহস্পতির পুত্র কচ, দানবগুরু শুক্রাচার্যের কাছে সঞ্জীবনী বিদ্যালাভ করে ইন্দ্রভবনে উপস্থিত হলেন। দেবতারা মহানন্দে, কচের কাছে সঞ্জীবনীবিদ্যা শিক্ষা করলেন। তাঁদের লক্ষ্য দানবনিধন। সঞ্জীবনীবিদ্যার প্রয়োগের সময় এ বার। প্রয়োজন দ্বন্দ্বের আবহ।