প্রবল আত্মবিশ্বাসী দেবী কুন্তী। তাঁর মহাবলশালী পুত্র ভীম কখনও ব্যর্থ হবে না। বকরাক্ষসের কাছে ভোজ্য পৌঁছে দেবে সে এবং নিজেও বিপদমুক্ত হবে। দ্বিতীয় পাণ্ডব রাক্ষসের মোকাবিলায় প্রস্তুত।

প্রবল আত্মবিশ্বাসী দেবী কুন্তী। তাঁর মহাবলশালী পুত্র ভীম কখনও ব্যর্থ হবে না। বকরাক্ষসের কাছে ভোজ্য পৌঁছে দেবে সে এবং নিজেও বিপদমুক্ত হবে। দ্বিতীয় পাণ্ডব রাক্ষসের মোকাবিলায় প্রস্তুত।
রাম পিছুটান উপেক্ষা করে চলেছেন বনবাসে।রামের নির্দেশে সারথি সুমন্ত্র রথ ছোটালেন চরম অশ্বগতিতে। তাঁর রথের পিছনে ধাবমান জনস্রোত, স্বজন, স্নেহশীল বৃদ্ধ পিতা। অন্তঃপুরিকাদের আর্ত চিৎকার, অনাথ, দুর্বল, সহায়হীন মানুষের আশ্রয় যিনি, তিনি আজ কোথায় চলেছেন?
একচক্রা নগরীতে পাণ্ডবদের আশ্রয়দাতা ব্রাহ্মণের পরিবার, এক ঘোর সঙ্কটের সম্মুখীন হয়েছে। কোনও এক রাক্ষসের কবলে পরেছে ব্রাহ্মণ পরিবারটি। পরিবারের মধ্যমণি ব্রাহ্মণ ও তাঁর স্ত্রী রাক্ষসের মুখোমুখি হতে ইচ্ছুক। কন্যাটি পিতামাতার আত্মত্যাগের উদ্যোগ ও পরিণাম শুনে, সেও তার নিজ বক্তব্যের সমর্থনে যুক্তিজাল বিস্তার করল।
রাজা দশরথ এমন বলতে বলতেই কণ্ঠস্বর রুদ্ধ হল তাঁর। অস্ফুট উচ্চারণে তিনি বলে উঠলেন, “রাম”। আর কোন কথা বলতে পারলেন না। পর মুহূর্তে সচেতন হয়ে, সাশ্রু নয়নে সুমন্ত্রকে বললেন, শ্রেষ্ঠ অশ্ব যোজনা করে রথ প্রস্তুত করা হোক, সেই রথে রাম যাবেন জনপদের সীমানা ছেড়ে গহন অরণ্যে।
পঞ্চপাণ্ডবদের উত্তরসূরী ঘটোৎকচের জন্মের পরে শর্ত অনুযায়ী বিদায় নিলেন ভীমসেনের স্ত্রী হিড়িম্বা। পাণ্ডবরা মা কুন্তীকে নিয়ে এগিয়ে চললেন বনান্তরে। এখন তাঁদের অঙ্গে তপস্বীর ছদ্মবেশ। জটা, বল্কল এবং মৃগচর্ম। যাত্রাপথে মৎস্য, ত্রিগর্ত্ত, পাঞ্চাল ও কীচকদেশ অতিক্রম করে এগিয়ে চললেন তাঁরা। পথে অধ্যয়নের বিরাম নেই।
রামের বনগমনে মানসিক প্রস্তুতি সম্পূর্ণ। তিনি এই ভোগসর্বস্ব জীবন পরিত্যাগ করে চলেছেন বনবাসে। অনাসক্তি তাঁর মনে, কি প্রয়োজন চতুরঙ্গ সেনার? শ্রেষ্ঠ হাতিটিকে দান করে তার বন্ধনরজ্জুর প্রতি মায়া কেন?
বারণাবতে কুন্তীসহ পঞ্চপান্ডবকে জতুগৃহে দগ্ধ করতে চেয়েছিলেন কৌরবদের দুষ্ট চক্র। কুরুরাজ ধৃতরাষ্ট্রের পূর্ণ সম্মতি নিয়ে দুর্যোধন, দুঃশাসন, শকুনি, কর্ণ এই চক্রান্তে অংশ নিয়েছিলেন। চক্রান্ত ব্যর্থ হল। বিদুরের সহায়তায় রক্ষা পেলেন পাণ্ডবরা।
রানি কৈকেয়ী মোহবশত নিজের অসৎপথে চালিত করছেন রাজাকে। সুমন্ত্রের বিবেচনায়, প্রচলিত প্রবাদানুসারে ছেলেরা পিতার এবং মেয়েরা মায়ের স্বভাব অনুসরণ করে থাকে। এই প্রবাদ, সত্যে পরিণত হল আজ।
দেবগুরু বৃহস্পতির পুত্র কচ, দানবগুরু শুক্রাচার্যের কাছে সঞ্জীবনী বিদ্যালাভ করে ইন্দ্রভবনে উপস্থিত হলেন। দেবতারা মহানন্দে, কচের কাছে সঞ্জীবনীবিদ্যা শিক্ষা করলেন। তাঁদের লক্ষ্য দানবনিধন। সঞ্জীবনীবিদ্যার প্রয়োগের সময় এ বার। প্রয়োজন দ্বন্দ্বের আবহ।
রামের চরিত্র পুরুষোচিতগুণগুলিতে সমৃদ্ধ, সেই গুণগুলি হল, অহিংসা, দয়া, শাস্ত্রজ্ঞান, চরিত্রবল, ইন্দ্রিয়সংযম ও প্রশান্তি। প্রজাপুঞ্জের দশা ঠিক যেন গ্রীষ্মে জলের স্বল্পতার দরুণ, পীড়িত জলচর প্রাণীদের তুল্য।
আদর্শ শিক্ষাগুরুর দৃষ্টান্ত হলেন দানবগুরু শুক্রাচার্য, যিনি প্রতিপক্ষীয় দেবগুরু বৃহস্পতির পুত্রকে শিষ্যরূপে গ্রহণ করেছেন নির্দ্বিধায়। বিদ্যাদানের ক্ষেত্রে শত্রু বা মিত্রের মধ্যে কোন ভেদাভেদ নেই। দেবতাদের কূট চক্রান্তের অন্যতম চাল হলেন কচ।
সীতা রামচন্দ্রের সঙ্গে বনগমনের সিদ্ধান্তে স্বামীর সম্মতি নিয়ে সহযাত্রিণী হবেন, স্থির হল। বনবাসপ্রসঙ্গে রাম ও সীতার তুমুল বাদানুবাদের সময়ে সেখানে উপস্থিত ছিলেন লক্ষ্মণ, যিনি রামের ছায়াসঙ্গী। চোখভরা জল নিয়ে তিনি রামের চরণে লুটিয়ে পড়লেন।
যুধিষ্ঠির স্থৈর্য, অর্জুন শৌর্য, ভীমসেন যেন গতিময়তার প্রতীক। তিনি যাত্রাপথের চলমান ছন্দ ধরে রেখেছেন। মা কুন্তীসহ চার ভাই পথশ্রমের ক্লান্তিতে নিদ্রিত। অদূরে শালগাছের উপরে হিড়িম্ব নামে এক রাক্ষসের আশ্রয়। কেমন শক্তিমত্তা সেই রাক্ষসের? স্বভাবটিও বা কেমন?
রাম, স্বামীর আসন্ন বিচ্ছেদবেদনায় সাশ্রুলোচনা স্ত্রীকে সান্ত্বনা দিয়ে, বনবাসজীবনের দুঃখদায়ক কষ্টকর অভিজ্ঞতা বর্ণনা করলেন। সীতাকে বনবাসের সিদ্ধান্ত থেকে নিবৃত্ত করাই তাঁর লক্ষ্য।
স্বজন জ্ঞাতিদের প্রাণহরণের চক্রান্ত ব্যর্থ করে গৃহচ্যুত পঞ্চপাণ্ডব, মা কুন্তীকে সঙ্গে নিয়ে, রাতের অন্ধকারে, গোপণে, বারণাবত পরিত্যাগ করে এগিয়ে চললেন। দ্বিতীয় পাণ্ডব ভীম, চার ভাই ও মাকে বহন করে, বায়ুবেগে, এগিয়ে চললেন। লক্ষ্য হল দূরত্ববৃদ্ধি।