রাজা দশরথের শব্দবেধী বাণে,বিদ্ধ হয়েছিলেন মুনিপুত্র। রাজার প্রতি, পুত্রশোকে কাতর পিতার অভিশাপ ছিল—রাজা দশরথ, মুনিপুত্রকে হত্যাজনিত কারণে পুত্রশোকহেতু প্রাণত্যাগ করবেন। মুনির এই অভিশাপ ফলপ্রসূ হল। পুত্রশোকে প্রয়াত হলেন রাজা দশরথ।

রাজা দশরথের শব্দবেধী বাণে,বিদ্ধ হয়েছিলেন মুনিপুত্র। রাজার প্রতি, পুত্রশোকে কাতর পিতার অভিশাপ ছিল—রাজা দশরথ, মুনিপুত্রকে হত্যাজনিত কারণে পুত্রশোকহেতু প্রাণত্যাগ করবেন। মুনির এই অভিশাপ ফলপ্রসূ হল। পুত্রশোকে প্রয়াত হলেন রাজা দশরথ।
দ্রুপদরাজ্যে রাজকন্যা দ্রৌপদীর স্বয়ংবরসভায় কঠোর শর্তসাপেক্ষ প্রতিযোগিতায় বিজয়ীর সম্মান লাভ করলেন তৃতীয় পাণ্ডব অর্জুন। পাঞ্চালরাজকন্যা যাজ্ঞসেনী দ্রৌপদী তাঁকে বরমাল্য অর্পণ করলেন। নববধূকে সঙ্গে নিয়ে প্রস্থানোদ্যত দুই পাণ্ডব ভাই,দ্বিতীয় পাণ্ডব ভীমসেন ও অর্জুন। পরাজিত রাজারা ভীষণ রাগে পাঞ্চালরাজের সমালোচনায় মুখর হলেন।
ধর্মাত্মা রাজা দশরথ, স্ত্রী কৌশল্যার কাছে, সত্য স্বীকারোক্তির মাধ্যমে, নিজের অজান্তে কৃত অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত করছেন। একদা যৌবনে রাজা শব্দবেধী বাণের অপপ্রয়োগ করেছিলেন। তাঁর লক্ষ্য ছিল জলপানরত কোন হাতি। ঘট জলপূর্ণ করছিলেন এক ঋষিকুমার।
দ্রুপদ রাজকন্যা দ্রৌপদীর স্বয়ংবর সভায়, রাজপুত্র ধৃষ্টদ্যুম্ন, সমবেত রাজাদের জানিয়ে দিলেন, তাঁর ভগিনীকে জয় করবার শর্তাবলি। বিশেষভাবে নির্মিত ধনুকে গুণ আরোপ করে, শূন্যে অবস্থিত, একটি কৃত্রিম যন্ত্রে স্থিত লক্ষ্যবস্তু বিদ্ধ করতে পারবেন যিনি, তিনিই দ্রৌপদীর বরমাল্য লাভ করবেন।
রামের বনবাসের কারণ রাজা দশরথ। দোষারোপের শেষ নেই রামজননী রানি কৈকেয়ীর। মুহুর্মুহু তিরস্কারে বিদ্ধ রাজা দশরথ অচৈতন্য হয়েও চিন্তার থেকে তাঁর নিস্তার নেই। চিন্তান্বিত রাজা আকুল হয়ে আত্মবিশ্লেষণে মগ্ন হলেন। তাঁর নিজের কী কোন অকাজের ফল ভোগ করছেন রাজা?
রাজকন্যার স্বয়ংবর সভা অনুষ্ঠিত হবে, দ্রুপদরাজ যজ্ঞসেনের কন্যার, যিনি যজ্ঞবেদী থেকে উদ্ভূতা, পদ্মপাতার মতো যাঁর নয়ন, শারীরিক সৌন্দর্যে যিনি অনিন্দিতা এবং দর্শনীয়া, সুকুমারী, উদারমনা, সেই দ্রৌপদী দ্রোণাচার্যের শত্রু ধৃষ্টদ্যুম্নের ভগিনী। তাঁর নীলোৎপলতুল্য অঙ্গের সুগন্ধ এক ক্রোশ দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে থাকে। এমন কন্যা ও তাঁর বরনির্বাচনের সেই অভাবনীয় মহোৎসব দেখতে চলেছেন ব্রাহ্মণরা।
রাম অরণ্যবাসে প্রস্থান করেছেন। সারথি সুমন্ত্র, তাঁদের বিদায় জানিয়ে ঘোড়াদের বিপরীতমুখে চালিত করলেন। অবোধ প্রাণীদের চোখেও অশ্রুজল। কোনও মতে বিচ্ছেদবেদনা মনে অবদমিত রেখে শৃঙ্গবেরপুরে নিষাদরাজ গুহের আশ্রয়ে, সুমন্ত্র রামের আবারও আহ্বানের অপেক্ষায়, দীর্ঘ দিন বসবাস করলেন
ঋষি বশিষ্ঠের ঔরসে ইক্ষ্বাকুবংশের রাজা কল্মাষপাদের বংশরক্ষা হল। মহর্ষি বশিষ্ঠের জ্যেষ্ঠা পুত্রবধূ, শক্ত্রির স্ত্রী অদৃশ্যন্তী শক্ত্রিতুল্য একটি পুত্রের জন্ম দিলেন। শত পুত্র হারিয়েও মহর্ষি বশিষ্ঠের বংশধারা অক্ষুণ্ণ রইল। বংশলোপের আশঙ্কায় মৃতপ্রায় বশিষ্ঠের প্রাণ সঞ্চার করলেন সেই বংশধর। তাই তাঁর নাম হল পরাশর।
অরণ্যের যাত্রাপথে, ভরদ্বাজমুনির উপদেশানুসারে সীতা ও লক্ষ্মণ পৌঁছে গেলেন চিত্রকূট পর্বতে। মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য ও বসবাসের আদর্শ জায়গাটি ভারি পছন্দ হল রামের। সেখানে বসবাসের উদ্দেশ্যে কুটির নির্মিত হল।
গন্ধর্বরাজ অঙ্গারপর্ণ, তৃতীয় পাণ্ডব অর্জুনের কাছে, মহর্ষি বশিষ্ঠের সঙ্গে রাজা বিশ্বামিত্রের দ্বৈরথ বর্ণনা করলেন। দুই মহর্ষির বিরোধের অবসান হল না। তপঃশক্তিতে ব্রহ্মর্ষি বশিষ্ঠের সমকক্ষ হওয়ার লক্ষ্যে, রাজা বিশ্বামিত্র রাজ্যসুখ ত্যাগ করে কঠোর তপশ্চর্যার মাধ্যমে ব্রাহ্মণত্ব অর্জন করেছিলেন। ব্রহ্মর্ষি বশিষ্ঠের সঙ্গে তাঁর সংঘাত শেষ হল না।
রাম, অরণ্যপথে গঙ্গানদী অতিক্রম করে দক্ষিণে গহন অরণ্যে প্রবেশ করলেন। তাঁরা প্রথম নিশি যাপন করলেন একটি বটগাছের তলায়। এর পরে নির্মল সকালে গঙ্গাযমুনার সঙ্গমস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন। আসন্ন সন্ধ্যায় প্রয়াগতীর্থের নিকটবর্তী হয়েছেন অনুমান করলেন রাম। কারণ চারিদিকে যেন অগ্নিদেবতার পতাকার মতো ধোঁয়া উঠছে। নিশ্চিতভাবেই মুনিদের উপস্থিতি অনুমান করলেন রাম।
ব্রহ্মর্ষি বশিষ্ঠ ছিলেন ব্রহ্মার মানসপুত্র। তিনি ব্রহ্মর্ষি।তাঁর স্ত্রী অরুন্ধতী।সমসাময়িক রাজর্ষি বিশ্বামিত্রের সঙ্গে তাঁর শত্রুতার প্রাচীন কাহিনি সকলেই অবগত আছেন। মহাভারতে, অর্জুনের অনুরোধে,গন্ধর্বরাজ অঙ্গারপর্ণ কথিত এই জয়পরাজয়ের আখ্যানটিতে বশিষ্ঠের ঔদার্য এক নতুন মাত্রা যোগ করল।
বনবাসের পথে, সারথি সুমন্ত্রকে আশ্বস্ত করে রামের এবার বন্ধুবর নিষাদরাজ গুহর কাছে বিদায় নেবার পালা। গুহকে জানালেন, স্বজনের সান্নিধ্যে বনবাস যথাযথ নয়। বিধিমতে আশ্রমবাস এখন তাঁর কর্তব্য। তাই পিতা, সীতা ও লক্ষ্মণের কল্যাণে নিয়মানুসারে তপস্বিজনের ভূষণ জটাধারী হয়ে অরণ্যে গমন করবেন। তাই বটগাছের ক্ষীর নিয়ে এস।
প্রাচীনকালে গঙ্গা হিমালয় হতে বহির্গত হয়ে সাতটি ধারায় সাগরে মিশেছে। সাতটি প্রবাহের নাম —গঙ্গা, যমুনা, প্লক্ষজাতা, সরস্বতী, সরযূ, গোমতী ও গণ্ডকী। এই সাতটি নদীর জল পান করলে পাপমুক্তি হয়। এই পবিত্র গঙ্গা আকাশকে তটরূপে গ্রহণ করায় আকাশগামিনী হয়।
রাম চলেছেন নির্ধারিত বনবাস যাপনে। পথে গঙ্গাতীরে রাত্রি ভোর হল। সূর্যোদয় সমাগত। কোকিলের কলকাকলিপূর্ণ ভোরে, বনভূমি কেকাধ্বনিমুখর, রামচন্দ্র লক্ষ্মণকে বললেন, তরাম জাহ্নবীং সৌম্য শীঘ্রগাং সাগরঙ্গমাম্। হে সৌম্য, চল সাগরের দিকে দ্রুত ধাবমানা জাহ্নবী পার হই। জ্যেষ্ঠ রামের কথানুসারে সুমিত্রানন্দন লক্ষ্মণ গুহ ও সারথিকে ডেকে আনলেন। স্থপিতি গুহর নির্দেশে একটি শক্তপোক্ত, সুন্দর, শুভ, অনায়াসে পারাপারের উপযুক্ত, সঙ্গে একজন দক্ষ কর্ণধার, এমন নৌকা নিয়ে উপস্থিত হলেন অমাত্যরা। গুহর অনুরোধে, রাম, খড়্গ ও তূণীর যথাযথভাবে বেঁধে নিলেন।...