পরের দিন যে আমার শ্যুটিং নেই সেটা আগেই জেনে গিয়েছিলাম। হোটেলে বেলা করে ঘুম থেকে উঠলাম। ব্রেকফাস্ট করে কিছুক্ষণ হোটেলের আশপাশে ঘুরে বেরিয়ে প্রোডাকশনের গাড়ি চেপে শ্যুটিং লোকেশনে গিয়ে পৌঁছলাম। মিঠুন চক্রবর্তী এলেন একটু পরেই৷ খোলা মাঠে শ্যুটিং৷ মাঠের বুক চিরে পিচঢালা রাস্তা৷ প্রচুর ক্রাউড নিয়ে শ্যুটিং শুরু হল। মাঠের মধ্যে বিশাল তাঁবু খাটিয়ে আর্টিস্টদের বসার ব্যবস্থা, মেকআপ, এমনকী খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল৷ মিঠুনের সঙ্গে এর মধ্যে হাই-হ্যালো হয়ে গেছে। সবাই মিলে একসঙ্গে লাঞ্চ করার ফাঁকে আবদার করলাম ওঁর...
ডাক্তারের ডায়েরি
পর্ব-১৪: তুলকালাম সিনেমায় মিঠুনের সঙ্গে দু’বার দু’টি রোলে
সালটা ছিল ২০০৭, অর্থাৎ আজ থেকে ঠিক পনেরো বছর আগের ঘটনা। সেই বছরই মুক্তি পেয়েছিল হরনাথ চক্রবর্তী পরিচালিত এবং মিঠুন চক্রবর্তী অভিনীত 'তুলকালাম' সিনেমাটি। সেই সময় সিঙ্গুরে জমি দখল করে শিল্প স্থাপনকে ইস্যু করে বিভিন্ন বিরোধী দল আন্দোলন করছিলেন। তুলকালাম সিনেমাটিও ছিল এই কৃষি জমি দখলকে নিয়েই। আর ছিল এই সিনেমাটির প্রধান চরিত্রে মিঠুন চক্রবর্তীর লার্জার দ্যান লাইফ হিরোইক ইমেজ। ফলে দুয়ে দুয়ে চার হতে বেশি সময় লাগেনি। ছবি হয়ে গেল সুপার ডুপার হিট। আজও কিছুদিন বাদে বাদে টিভির পর্দায় এই সিনেমাটি দেখানো হয় এবং...
পর্ব-১৩: বইমেলায় আমার বই প্রকাশ অনুষ্ঠান
তখনও বইমেলা ঠাঁই নাড়া হয়নি। ফি বছর বইমেলার তখন ঠিকানা ছিল কলকাতা ময়দান। তখন মেলা প্রাঙ্গণের ইউ বি আই অডিটোরিয়ামে বই সংক্রান্ত নানা ধরনের অনুষ্ঠান হত। আমার প্রথম বই দে'জ পাবলিশিং থেকে প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৯১-এ বইমেলার শেষ দিনে। বইটির নাম ছিল, 'শরীর স্বাস্থ্য জিজ্ঞাসা'। এ ব্যাপারে বিস্তারিত আগেই লিখেছিলাম। শেষদিনে প্রকাশিত হয়েছিল বলে বইমেলায় এই বইয়ের কোনও আনুষ্ঠানিক প্রকাশ তখন করতে পারিনি। আর তাছাড়া কীভাবে এই ধরনের অনুষ্ঠান করতে হয়, তার কোনও পূর্ব অভিজ্ঞতাও আমার ছিল না। তবে এটা মনে আছে, সেই বছর ইন্ডিয়ান...
পর্ব-১২: বাংলা সিনেমার দুই সিংহ: বিকাশ রায় ও কমল মিত্র
বাংলা সিনেমায় প্রায় সিংহ দাপটে গত শতাব্দীর পঞ্চাশ থেকে সত্তর দশক পর্যন্ত রাজত্ব করেছেন দুই প্রবাদপ্রতিম অভিনেতা বিকাশ রায় এবং কমল মিত্র। সৌভাগ্যক্রমে এঁদের দুজনেরই স্নেহ সান্নিধ্য পেয়েছিলাম আমি। প্রথমে বিকাশ রায়ের কথাই বলি। তিনি যে শুধু বড় অভিনেতা ছিলেন তা তো নয়, ছিলেন বড় পরিচালকও। মরুতীর্থ হিংলাজ-এর মতো ছবি উনিই বানিয়েছিলেন। আবার আমার ছোটবেলায় দেখা ৪২ সিনেমায় নৃশংস এক ব্রিটিশ পুলিশ অফিসারের ভূমিকায় তাঁর অভিনয় দেখে শিউরে উঠেছিলাম। তারাশঙ্করের অমর সৃষ্টি আরোগ্য নিকেতন সিনেমায় আয়ুর্বেদাচার্য জীবন...
পর্ব-১১: শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে শ্রুতিনাটক
আমি যখন ডাক্তারি পড়ি, সেই সত্তর দশকের মধ্যভাগে, তখন অভিনয় জগতের উজ্জ্বল তারকা ছিলেন শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়। এবং তিনি একজন ডাক্তারও ছিলেন। রীতিমতো মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে পাশকরা ডাক্তার। ডাক্তার-অভিনেতা বলতে সে সময় সবাই এক ডাকে শুভেন্দুদাকে চিনত। ডাক্তারি পড়ার সময় যখন নাটক করছি, স্টুডিও পাড়ায় উঁকিঝুঁকি মারছি, তখন মনের কোণে একটা সুপ্ত বাসনা ধীরে ধীরে পল্লবিত হচ্ছে। ডাক্তারি পাশ করেও তো অভিনয় জগতে আসা যায়! এবং এ ব্যাপারে শুভেন্দুদাকে মনে মনে গুরু মানতে শুরু করেছি। ওঁর বেশকিছু নাটকও তখন দেখা হয়ে গেছে।...
পর্ব-১০: আকাশবাণীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিল তিন দশক
আকাশবাণী। প্রথম যার অবস্থান ছিল গাস্টিন প্লেসে। আমি অবশ্য ছোটবেলা থেকে ইডেন গার্ডেনের পাশেই আকাশবাণীকে দেখে এসেছি। আমাদের ছোটবেলায় টিভি ছিল না। বিনোদনের শেষ কথা ছিল রেডিওই। ঘুমোনোর সময়টুকু বাদ দিয়ে সারাদিনই রেডিও খোলা থাকত। যে যার পছন্দের অনুষ্ঠান শুনত। আমার খুব প্রিয় ছিল প্রতি শুক্রবার রাত আটটার এবং রবিবার দুপুরের নাটক। এছাড়া বিবিধ ভারতীর বিভিন্ন অনুষ্ঠান, রম্যগীতি এবং স্থানীয় সংবাদ খুব মন দিয়ে শুনতাম। ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছে হত, যদি আমিও রেডিওতে কিছু বলতে পারতাম, তাহলে কত লোক আমার গলাও শুনতে পেত! বাইরে থেকে...
পর্ব-৯: উত্তমকুমার আমার কাছে আজও এক বিস্ময় মানব
মানুষটি চলে গেছেন বিয়াল্লিশ বছর আগে। তবু তাঁকে নিয়ে চর্চা আজও হয়ে থাকে। বিশেষ করে ২৪ জুলাই, তার মৃত্যুদিন এলে। কিছু পত্রিকা আজও তাকে নিয়ে ওই সময় স্পেশাল ইস্যু করে। সেগুলো ভালো বিক্রিও হয়। সরকার মহানায়কের স্মৃতিতে পুরস্কারও দিয়ে থাকেন ফি-বছর। প্রথমবার উত্তম-দর্শন হয়েছিল অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে। চার বছর বাদে ১৯৭৮-এ আরেকবার সুযোগ পাওয়া গেল তাঁর ঘনিষ্ঠ হওয়ার। যার মাধ্যমে এই সুযোগ এল, তিনি সেই সময়ের একজন নামকরা চরিত্রাভিনেতা দিলীপ বসু। দিলীপদাকে প্রথম দেখেছিলাম তপন সিংহর 'এখনই' ছবিতে। বিখ্যাত হলেন মৌচাক...
পর্ব-৮: একটু দূরে দাঁড়িয়ে মহানায়ক উত্তমকুমার
জীবনের চলার পথে কত মানুষের সঙ্গেই তো দেখা হল, সবারই যেমন হয়। তবু তারই মাঝে কিছু দেখা, কিছু পরিচয়, কিছু ঘনিষ্ঠতা অন্তরের মণিকোঠায় চিরকালের জন্য ফ্রেমবন্দি হয়ে থাকে। সেদিন টিভির পর্দায় বহুবার দেখা সেই সোনার সিনেমা 'সন্ন্যাসী রাজা' দেখছিলাম। পঞ্চাশ বছর আগের সিনেমা এখনও হাঁ করে গিলতে হয়। মনে পড়ে গেল, মহানায়ককে প্রথমবার যখন দেখার সুযোগ পেয়েছিলাম, এভাবে হাঁ করেই গিলেছিলাম। আমার ডাক্তারির জীবন, নাটকের জীবন এবং লেখালেখির জীবনের অনেক কথাই এর আগে বলেছি। এবার একটু প্রসঙ্গান্তরে যাই। উত্তমকুমার-দর্শনের গল্প শোনাই।...
পর্ব-৭: দে’জ পাবলিশিং থেকে প্রকাশিত হল আমার বই
ওই যে একটা কথা আছে না, বসতে পেলে শুতে চায়, আমারও হল সেই দশা। দু'হাতে তখন লিখে চলেছি বিভিন্ন পত্র- পত্রিকায়। পরিচিত অনেকেই লেখা পড়ে অভিনন্দন জানাচ্ছেন। এভাবে দু'বছর গড়িয়ে গেল। বেশকিছু লেখাও জমা হল। এবার মনের কোণে উঁকি দিল সেই দুরাশা, যদি এগুলো থেকে বাছাই করে একটা বই করা যায়! কিন্তু আমি তো কোনও প্রকাশককে চিনি না। একদিন সঞ্জীবদাকে মনের কথা বলে ফেললাম। শুনে বললেন, আমি সুধাংশুদাকে একটা চিঠি লিখে দিচ্ছি, কথা বলে দেখতে পারেন। সুধাংশুদা মানে সুধাংশুশেখর দে। দে'জ পাবলিশিং-এর কর্ণধার। বইমেলায় অনেকবারই মানুষটিকে...
পর্ব-৬: সঞ্জীবদার সান্নিধ্য আমার জীবনটাকেই পালটে দিল
দাদু অর্থাৎ সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের বাবার ডেথ সার্টিফিকেটা আমিই লিখেছিলাম। ওঁর সেরকমই ইচ্ছে ছিল। দাদু পর্ব শেষ হওয়ার পরেও সঞ্জীবদার সঙ্গে আমার যোগাযোগ রইল। উনি তখন দেশ পত্রিকার সম্পাদকীয় দপ্তরে কর্মরত। প্রতি সপ্তাহে শনিবার আমি ঠাকুরপুকুর ক্যানসার হাসপাতাল থেকে বিকেলে সোজা এসে হাজির হতাম ধর্মতলায় আনন্দবাজারের তিনতলায় দেশ পত্রিকার দপ্তরে। সঞ্জীবদার সান্নিধ্য পাব বলেই যে এই ছুটে আসা, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তিনি তখন খ্যাতির মধ্যগগনে। দেশ পত্রিকার দপ্তরে তখন চাঁদের হাট। কয়েক ফুট দূরে সার সার বসে আছেন সুনীল...
পর্ব-৫: আমার সাহিত্য গুরু সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
ধর্মীয় গুরুবাদে কোনও বিশ্বাস নেই আমার। গুরু ভক্তিতেও নিষ্ঠা নেই। কিন্তু জীবনের মধ্যপর্বে আমি এমন একজনের দর্শন পেলাম, যাকে নিজের অজান্তেই গুরুর আসনে বসিয়ে ফেলেছিলাম। ১৯৮৫। মানে আজ থেকে ৩৭ বছর আগে যখন আমি ঠাকুরপুকুর ক্যানসার হাসপাতালে কর্মরত, তখন হঠাৎ তাঁর দর্শন পাই। ক্যানসার ওয়ার্ডে কাজ করছিলাম একদিন। হঠাৎ ডিরেক্টর ডাক্তার সরোজ গুপ্ত একজনকে নিয়ে সেখানে এলেন। আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, এনাকে চেনো? আমি চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে উত্তর দিলাম, অবশ্যই চিনি। স্যার বললেন, বলো তো কে? আমি বললাম, সঞ্জীব...
পর্ব-৪: নাটক আমার বেঁচে থাকার অক্সিজেন
পর্ব-৪নাটুকে জীবন কথাটার মধ্যে যেমন নাটকীয়তা আছে, তেমনি একটু হালকা তাচ্ছিল্যের ভাবও আছে। আসলে নাটক মানেই তো যা সত্যি নয় তাই অর্থাৎ মিথ্যা। অথচ এই মিথ্যার সঙ্গেই আমার সখ্য হয়েছিল খুব ছোট্ট বয়সেই। যখন ক্লাস ওয়ান-টু-তে পড়ি অর্থাৎ পাঁচ-ছ'বছর বয়স, তখন গরম, শীত বা পুজোর সময় যখন আমার পিসতুতো-মাসতুতো ভাই-বোনেরা আমাদের বাড়িতে আসত, তখন সবাই মিলে টুকটাক নাটক করতাম। আমাদের বাড়ির দোতলা উঠছে তখন। ছাদে বেঞ্চ কিংবা চৌকি সাজিয়ে মা-কাকিমার শাড়ি ঝুলিয়ে 'অবাক জলপান' নাটক করেছিলাম, মনে আছে। দর্শক বাড়ির লোকেরাই। ছোটবেলায়...
পর্ব-৩: ভালো ছিল স্কুলের সেই সব দিনগুলি…
স্কুলের দিনগুলোর কথা ভাবলে একটা নস্টালজিক ফিলিং শুধু আমার নয়, সবারই হয়। আমাদের জীবন গড়ে ওঠার প্রথম বুনিয়াদ কিন্তু আমাদের স্কুল শিক্ষা। জীবনের এতগুলো বছর পার হয়ে এসে যখন পিছন ফিরে তাকাই, তখন স্কুলের সেই সোনা-ঝরা দিনগুলোর অসংখ্য স্মৃতি হৃদয়ের মণিকোঠায় মাঝে মাঝে চিনচিন করে ওঠে। আনন্দ-বিষাদে গড়া সেই সব স্মৃতি। মাস্টারমশাইদের মুখগুলো মাঝে মাঝে মনে পড়ে, যাদের কেউই আজ আর বেঁচে নেই। অথচ তাদের কাছেই জীবন গড়ার প্রথম পাঠ পেয়েছিলাম। আমার জীবনের প্রথম স্কুলের নাম ছিল মডেল কেজি স্কুল। সেই আমলে ইংরেজি স্কুল ছিল হাতে...
পর্ব-২: ডাঃ সরোজ গুপ্ত এবং ঠাকুরপুকুর ক্যানসার হাসপাতাল
আমার ডাক্তারি জীবন গড়ে ওঠার দিনগুলোতে এমন একজন মানুষের সাহচর্য পেয়েছিলাম, যাকে না পেলে আজ আমি এই 'আমি' হয়ে উঠতে পারতাম না। তিনি হলেন এই রাজ্যে ক্যানসার চিকিৎসার প্রাণপুরুষ ডাক্তার সরোজ গুপ্ত। প্রায় শূন্য থেকে শুরু করে যিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করে ঠাকুরপুকুরে এই রাজ্যের প্রথম বেসরকারি ক্যানসার চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন। কীভাবে এই স্বপ্নদ্রষ্টা মহাপুরুষের সংস্পর্শে আমি এলাম, সেই গল্পটা এবার বলি। আর জি কর হাসপাতালে হাউসস্টাফশিপ শেষ হবার পর তিন মাস এক্সটেনশন পেলাম। এটা ১৯৮৩ সালের গোড়ার দিকের কথা। এর মধ্যে...
পর্ব-১: আপনার ছাত্র আপনার উদ্দেশে সশ্রদ্ধ প্রণাম জানায়…
আমি কি বহুমুখী! মাঝে মাঝে প্রশ্ন করি নিজেকেই। বহুমুখী শব্দটির মধ্যে একটু ঔদ্ধত্য আছে, একটা জাহির করা ব্যাপার আছে। আসলে পেশাগত ‘এক’টা পরিচয় আমার থাকলেও, আমার তো গমন, ভালোলাগা, ভালোবাসা ‘বহু’তে। অভিনয় করি সেই সাত-আট বছর বয়স থেকেই, এখনও যা বর্তমান। লেখালেখিটাও স্কুল বয়স থেকেই। বই পড়ার নেশা? সেটাও ছোট্ট বয়স থেকেই। গান ভালোবাসি মায়ের গলায় ছোটবেলা থেকেই শুনে শুনে। পেশাগত তালিম নেই, তবে অভিনয়ের প্রয়োজনে কাজ চালাবার মতো গাইতেও পারি। ছোটবেলায় খেলাধুলা করতাম, দেশ-বিদেশের স্টাম্প জমাতাম। বই বাঁধানোও শিখেছিলাম।