মাধবী মুখোপাধ্যায়ের স্মৃতিচারণ— ‘মানিকদা একদিন ফোন করে বললেন, কবিগুরুর নষ্টনীড় গল্পটা পাঠাচ্ছি৷ পড়ে দেখো৷ বলেছিলাম, আমার পড়া৷ উনি বললেন, আবার পড়ো৷
বরণীয় মানুষের স্মরণীয় সঙ্গ
পর্ব-১৩: কবিগুরুর ‘নষ্টনীড়’ অবলম্বনে ‘চারুলতা’ ছবির নায়িকা আমি! ভাবতেও পারছিলাম না: মাধবী
মাধবীদির সঙ্গে আমার কথা হচ্ছিল ‘মহানগর’ ছবি নিয়ে। তাঁর কথায়: ‘ঋত্বিক ঘটকের 'সুবর্ণরেখা'র শ্যুটিং আগে শুরু হলেও মানিকদার 'মহানগর'ই প্রথম মুক্তি পেয়েছিল৷ ১৯৬৩ সালের কথা৷ দেখতে দেখতে প্রায় ৬০ বছর হয়ে গেল৷ কারও কারও হয়তো মনে আছে 'মহানগর'-এ আমার চরিত্রের নাম ছিল আরতি মজুমদার৷ আমার স্বামীর ভূমিকায় ছিলেন অনিল চট্টোপাধ্যায়৷ স্বামীর চাকরি চলে যায়৷ সংসার চালানোর জন্য বাধ্য হয়ে আরতিকে সেলসগার্লের চাকরি নিতে হয়৷ একদিন তার সহকর্মী অ্যাংলো ইন্ডিয়ান বন্ধু এডিথেরও চাকরি চলে যায়৷ এডিথের চাকরি যাওয়ায় এই প্রথম ক্ষোভে...
পর্ব-১২: সত্যজিৎ রায়ের শ্যুটিং দেখার সেই স্বপ্নপূরণের ঘটনা আজও ভুলতে পারিনি
মাধবীদি’র ফ্ল্যাটের দেওয়ালে দুটো বড় ফোটো পাশাপাশি—রবীন্দ্রনাথ এবং সত্যজিৎ রায়৷ মাধবীদি বলেছিলেন, ‘কবিগুরু হলেন আমার জীবনদেবতা৷ আর মানিকদা বিরাট মাপের মানুষ৷ আলোর ঠিকানা৷’
পর্ব-১১: পরজন্মে যেন বাঙালি হয়েই জন্মগ্রহণ করি: অশোককুমার
চলচ্চিত্রের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি টিভি সিরিয়ালেও অভিনয় করেছেন অশোককুমার৷ কীভাবে নিজেকে তৈরি করেছিলেন দাদামণি? তিনি বেশ জোর দিয়ে বলেছিলেন, 'আমরা যাঁরা অভিনয় করি, অন্যদের অভিনয় আমাদের বেশি করে দেখা উচিত৷ আমার মধ্যে যেটার অভাব সেটা ধীরে ধীরে মেরামত করে নিতে পারলেই আর সমস্যা থাকে না৷ আমার অভিনয়ের অনেক দোষত্রুটি ছিল৷ কিছু কিছু কাটাতে পেরেছি৷ তবে আজও মনে হয়, আমি একজন শিক্ষার্থী৷ ক্যামেরার সামনে যখন দাঁড়াই মনে করি, এই প্রথম ক্যামেরা ফেস করছি৷' হলিউডের ছবি দেখার প্রচণ্ড নেশা ছিল অশোককুমারের৷ তাঁর প্রিয় অভিনেতা...
পর্ব-১০: হিন্দি ছবির এক সময়ের যাত্রাধর্মী অভিনয়কে বদলে দিয়েছিলেন অশোককুমার
ছেলে অভিনয়ের জগতে থাকলেও নায়িকাদের সঙ্গে তাঁর মাখামাখি পছন্দ হয়নি কুঞ্জলাল গাঙ্গুলি ও গৌরীদেবীর৷ বেশিদিন এরকম চলতে থাকলে ছেলের মাথা বিগড়ে যেতে পারে এই ভয়ে কুঞ্জলালবাবু স্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে অশোককুমারকে ডেকে পাঠালেন খান্ডোয়ায়৷ মধ্যপ্রদেশের খান্ডোয়া অশোককুমারের পৈতৃক বাড়ি৷ তখন 'বচন' ছবির শ্যুটিং চলছে৷ খান্ডোয়া রেল স্টেশনে নেমে অশোককুমার দেখেন বাবা দাঁড়িয়ে আছেন৷ জানালেন, এখুনিই কলকাতায় যেতে হবে৷ কেন? কুঞ্জলালবাবুর মুখে কোনও উত্তর নেই৷ ঘণ্টাচারেক পর একটা বড় জংশন স্টেশনে ট্রেন থামতেই তিনি ছেলেকে বললেন,...
পর্ব-৯: কলকাতায় মাঝপথে পড়াশোনা থামিয়ে মুম্বইয়ের ট্রেন ধরলেন অশোককুমার/১
অনেক দিন আগের কথা। সাংবাদিকতার কাজে মুম্বইয়ে গিয়ে সেবার প্রথম পরিচয় হল শ্রদ্ধেয় অশোককুমারের সঙ্গে। ঘটনাটা এরকম—হিন্দি ছবির প্রখ্যাত প্রযোজক ও পরিচালক বি আর চোপড়ার সঙ্গে দেখা করতে তাঁর অফিসে গিয়েছিলাম। সঙ্গে ছিলেন ফোটোগ্রাফার টুলু দাস। মুম্বইয়ে গেলেই বি আর চোপড়ার সঙ্গে দেখা করাটা আমাদের রুটিনের মধ্যে পড়ত। অফিসের রিসেপশনে জানতে পারলাম, দাদামণি এসেছেন। বি আর চোপড়ার সঙ্গে জরুরি কথাবার্তা বলছেন। আমাদের একটু অপেক্ষা করতে হবে। আগেই ভিজিটিং কার্ড পাঠিয়েছিলাম। বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হল না। বি আর চোপড়া তাঁর...
পর্ব-৮: কবিগুরুকে সামনাসামনি দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল: কাননদেবী /৩
একদিন বিকেলের দিকে কাননদেবীর বাড়িতে গিয়েছিলাম। ততদিনে দিদির স্নেহ-মমতা আমার ওপর বর্ষিত হয়েছিল অকৃপণভাবে। নিজেকে ভাগ্যবান মনে হয়েছিল। সেদিন কথায় কথায় দিদিকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, 'আপনার সঙ্গে তো বহু বিশিষ্ট মানুষের আলাপ-পরিচয় হয়েছে, তাঁদের কথা যদি একটু বলেন।' আমার মুখের কথা শেষ হয়নি। আনন্দে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে দিদির মুখ। বললেন, 'একবার হিন্দুস্থান রেকর্ড কোম্পানিতে গিয়েছিলাম গান রেকর্ডিং-এর জন্য। কবিগুরুকে সামনাসামনি দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল৷ প্রশান্ত মহলানবিশের (ভুলুদা) ভাই আমাকে বললেন, গুরুদেব এখানেই আছেন। তাঁর...
পর্ব-৭: ‘শ্রীগৌরাঙ্গ’ ছবিতে কাননদেবীর মর্মস্পর্শী অভিনয় হৃদয় ছুঁয়ে যায়…/২
কাননদেবী তাঁর আত্মজীবনী 'সবারে আমি নমি'-তে তাঁর কৈশোর জীবনের দুঃখকষ্টের কথা অকপটে বলেছেন।—'হঠাৎ একদিন বাবাকে হারালাম। চারদিকে যেন অন্ধকার নেমে এল। সংসারে আমি, দিদি ও মা ছাড়া কেউ নেই। দিদির বিয়ে তার আগেই হয়ে গিয়েছে। ভালো করে জ্ঞান হওয়ার আগেই, শোক সামলে ওঠার মতো মানসিক অবস্থা তৈরি হওয়ার সুযোগ পেতে না পেতেই একটা প্রচণ্ড দায়িত্বের তাড়না যেন চাবুক মেরে অস্থির করে তুলেছিল। কী করে চলবে? আমার বাবা (রতনচন্দ্র দাস) মার্চেন্ট অফিসে কাজ করতেন। এছাড়া সোনার-রুপোর ছোটখাট একটা দোকানও ছিল। কিন্তু নানা কু-অভ্যাসের জন্য...
পর্ব-৬: কাননদেবীর মধুঝরা কণ্ঠস্বরে মুগ্ধ হয়েছিলাম…/১
ভারতীয় চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি নায়িকা কাননদেবীর সঙ্গে আমার প্রথম যোগাযোগের কারণটা ছিল একটু অন্যরকম। হলিউডের আরেক কিংবদন্তি নায়িকা গ্রেটা গার্বো মারা যান। যে কাগজের অফিসে কাজ করতাম তার সম্পাদকীয় দপ্তর সিদ্ধান্ত নেয় গ্রেটা গার্বোকে নিয়ে রোববারের পাতা হবে। গ্রেটা গার্বোর গুণমুগ্ধ কাননদেবী। তাই তাঁর একটা এক্সক্লুসিভ ইন্টারভিউ পেলে ভালো হয়। আর এই কঠিন দায়িত্ব আমাকে সঁপেছিলেন কাগজের সম্পাদক। প্রায় ৩২ বছর আগের কথা। ১৯৯০ সালের ১৬ এপ্রিল। বেলা বারোটা নাগাদ কাননদেবীকে বাড়ির ল্যান্ডলাইনে ফোন করেছিলাম। যিনি ফোন...
পর্ব-৫: যামিনী রায়ের মতো এক কিংবদন্তির স্মরণীয় সঙ্গ আজও স্মৃতিতে উজ্জ্বল…/৩
রোববার সকালে শ্রদ্ধেয় যামিনী রায়ের বাড়িতে যাওয়া হবে একথা মিহিরদা আমাকে টেলিফোনে জানিয়ে দিলেন৷ জনা চার-পাঁচ ক্লাব সদস্যের নাম চূড়ান্ত হল৷ তাঁদের মধ্যে প্রয়াত ভজন নাগ, বেণীমাধব ভট্টাচার্য, প্রাণবন্ধু নাগ, শান্তিরঞ্জন সাহা, আমিও ছিলাম৷ মিহিরদার সাদা রঙের একটা ফিয়েট গাড়ি ছিল৷ নিজেই ড্রাইভ করতেন৷ ড্রাইভিং ছিল তাঁর প্যাশান৷ সিদ্ধান্ত হল, মিহিরদা তাঁর জাজেস কোর্ট রোডের এলআইসি-র ফ্ল্যাট থেকে সোজা ক্লাব অফিসে এসে আমাদের কয়েকজনকে গাড়িতে তুলবেন৷ তারপর একসঙ্গে বালিগঞ্জে যামিনী রায়ের বাড়িতে যাব৷ স্বাক্ষর সংগ্রহের জন্য...
পর্ব-৪: কিংবদন্তি চিত্রশিল্পী যামিনী রায় এত নামী মানুষ হয়েও কী বিনয়ী… / ২
মিহির সেন আমাদের নিয়ে যখন এক্সপ্লোরার্স ক্লাবে গুরুত্বপূর্ণ মিটিং করছেন, পূর্ববঙ্গে ততদিনে স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হয়ে গিয়েছে। পশ্চিম পাকিস্তানের সেনাবাহিনী রাতের অন্ধকারে ঝাঁপিয়ে পড়েছে পূর্ববঙ্গের ওপর। দিনটা ছিল ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ। নির্বিচারে গোলাগুলি চালিয়ে হাজার হাজার নিরপরাধ মানুষকে মেরে ফেলতে লাগল সেনাবাহিনী। তাদের এই হত্যালীলায় কেঁপে উঠেছিল গোটা বিশ্ব। কিন্তু দুঃখের বিষয় ভারত ছাড়া আর কোনও দেশ তখন পূর্ববঙ্গের স্বাধীনতাকামী জনগণের পাশে দাঁড়ায়নি। তবে স্বাধীনতার মন্ত্রে দীক্ষা গ্রহণকারী বাঙালি ইপিআর...
পর্ব-৩: বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ও কিংবদন্তি চিত্রশিল্পী যামিনী রায় / ১
সুমন গুপ্ত তাঁর দীর্ঘ লেখক ও সাংবাদিক জীবনে সান্নিধ্যলাভ করেছেন বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের। এবার তাঁদের সঙ্গে কাটানো কিছু বিশেষ মুহূর্ত টুকরো স্মৃতিকথা হিসেবে তিনি তাঁর ধারাবাহিক ‘বরণীয় মানুষের স্মরণীয় সঙ্গ’-তে আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নেবেন।'বরণীয় মানুষের স্মরণীয় সঙ্গ' ধারাবাহিকের গত পর্বে এক্সপ্লোরার্স ক্লাবের কথা অল্পস্বল্প বলেছিলাম। এবার দুই পর্ব জুড়ে কিংবদন্তি চিত্রশিল্পী শ্রদ্ধেয় যামিনী রায় ও এক্সপ্লোরার্স ক্লাবের কথা আপনাদের বলব। প্রশ্ন উঠতেই পারে—যামিনী রায়ের সঙ্গে এক্সপ্লোরার্স ক্লাবের সম্পর্ক কী! আসলে...
পর্ব-২: আচার্য সত্যেন্দ্রনাথ বসু
সুমন গুপ্ত তাঁর দীর্ঘ লেখক ও সাংবাদিক জীবনে সান্নিধ্যলাভ করেছেন বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের। এবার তাঁদের সঙ্গে কাটানো কিছু বিশেষ মুহূর্ত টুকরো স্মৃতিকথা হিসেবে তিনি তাঁর ধারাবাহিক ‘বরণীয় মানুষের স্মরণীয় সঙ্গ’-তে আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নেবেন।
পর্ব-১: বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম
সুমন গুপ্ত তাঁর দীর্ঘ লেখক ও সাংবাদিক জীবনে সান্নিধ্যলাভ করেছেন বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের। এবার তাঁদের সঙ্গে কাটানো কিছু বিশেষ মুহূর্ত টুকরো স্মৃতিকথা হিসেবে তিনি তাঁর ধারাবাহিক ‘বরণীয় মানুষের স্মরণীয় সঙ্গ’-তে আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নেবেন।