প্রখ্যাত লেখক জিৎ সত্রাগ্নির ‘পূর্বা আসছে’ উপন্যাসটি হাতে পেয়েই বেশ আগ্রহ নিয়ে পড়তে শুরু করলাম। চলচ্চিত্র জগতের পটভূমিকায় কাহিনির বিস্তার। বইয়ের পাতা উল্টে ক্রমশ মুগ্ধতার আবেশ নিয়ে এগোতে লাগলাম। দেখতে পেলাম দেবাঞ্জন এডিটিং রুম থেকে হঠাৎ তড়িঘড়ি বেরিয়ে যায়। তার গাড়ি এসে দাঁড়ায় মেয়েদের একটি নামী স্কুলের সামনে। অল্পবয়সী একটি মেয়ে পরনে তার স্কুল ইউনিফর্ম। সে গুটি গুটি এগিয়ে যায় গাড়ির দিকে। দেবাঞ্জন ও মেয়েটি সাবধানে রাস্তা পার হয়ে গাড়ির পিছনের সিটে এসে বসে। এরপর টিফিন ক্যারিয়ার খুলে মেয়েটিকে নিজের হাতে খাবার খাইয়ে দেয় দেবাঞ্জন। মেয়েটি কে? সেই মুহূর্তে তার কোন পরিচয় না জানিয়ে পাঠকের আগ্রহকে আরও খানিকটা উসকে দিতে পেরেছেন লেখক। প্রসঙ্গত, উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিও নাটক লিখেছেন। মঞ্চনাটক লিখেছেন। টেলিভিশন ও ফিল্মের চিত্রনাট্য রচনা করেছেন। কোথায় কখন কতটুকু হাত খুললে পাঠকের উৎসাহ চতুর্গুণ হবে তা বিলক্ষণ জানেন জিৎ। অনেকটা সিনেমাটিক ফর্মে লেখা এই উপন্যাসের এমনই দুরন্ত গতি যে গোটা বইটা এক সিটিংয়েই পড়ে ফেলা যায়। ভীষণ টানটান।
দেবাঞ্জনের জীবনটা নানান টানাপোড়েনে জেরবার। আজ একজন সফল ফিল্ম এডিটরের এত মান মর্যাদা পেলেও একসময় তাকে এক কঠিন জীবনযুদ্ধে নামতে হয়েছিল। ফুল বিক্রি করত। মাছের ব্যবসা করেছে। পেট্রোল ট্যাঙ্কারের ম্যানেজারিও করতে হয়েছে। সব মিলিয়ে একটা লম্বা জার্নি। পুণে ফিল্ম ইনস্টিটিউট থেকে এডিটিং-এ রেকর্ড নম্বর নিয়ে পাস করার পরেই ভাগ্যের চাকা পুরোপুরি ঘুরে যায় দেবাঞ্জনের।
বাংলাদেশের জাগ্রত মন্দিরে মন্দিরে, পর্ব-৫০: ব্রহ্মপুত্র নদে লাঙ্গলবন্দ উৎসব খুবই প্রসিদ্ধ
দুই বাংলার উপন্যাস: বসুন্ধরা এবং, ২য় খণ্ড, পর্ব-৮: ‘ঈশ্বর… অদ্ভুত ম্যাজিক করেন, চাহিদা যত বেশি তিনি ততো কৃপণতা করেন’
দেবাঞ্জনের ঘরোয়া জীবনের ঘটনাবলি পাঠকের মন খারাপ করিয়ে দেয়। অবস্থাপন্ন ঘরের মেয়ে মল্লিকার সঙ্গে বিয়ে হয় দেবাঞ্জনের। মল্লিকা বদমেজাজি। বড়লোকি দম্ভ আর ঔদ্ধত্য ছিল মল্লিকার। তাদের এক কন্যা সন্তান হয়। ওর নাম পূর্বা। স্কুলে গিয়ে টিফিনের সময় মেয়েকে খাইয়ে আসে দেবাঞ্জন। মল্লিকা দেবাঞ্জনের ডিভোর্সও হয়ে গিয়েছে বেশ কিছুদিন। খোরপোশ দিয়ে যাচ্ছে দেবাঞ্জন। মল্লিকা চায় না দেবাঞ্জনের সঙ্গে কোনওরকম যোগাযোগ রাখুক পূর্বা। এটা নিয়েই মা ও মেয়ের মানসিক দ্বন্দ্বের সূত্রপাত, যা একসময় চরম পর্যায়ে পৌঁছয়।
চলো যাই ঘুরে আসি: অস্ট্রিয়ার ক্রিস্টাল দুনিয়া— সোয়ার্ভস্কি
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৫৫: নৌকো উল্টে সত্যেন্দ্রনাথের আইসিএস পড়তে যাওয়া বানচাল হতে বসেছিল
একদিন মা ও মেয়ের প্রচণ্ড মনোমালিন্য। পূর্বা চায় তার বাবার কাছে ফিরে যেতে। সঙ্গে মা-ও চলুক। তিনজনের নতুন করে সুখের সংসার গড়ে উঠুক। মল্লিকা অনমনীয় ক্ষোভে-দুঃখে ঘরের ভেতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয় পূর্বা। তার জন্মদিনেই ঘটনাগুলো পরপর ঘটে যায়। দেবাঞ্জন ফুল আর কেক নিয়ে এসেছে মেয়ের জন্যে। না, বাবার ডাকেও পূর্বা সাড়া দেয়নি। বন্ধ দরজা খোলেনি। তালা ভাঙ্গা হয়েছিল। কী হল পূর্বার?
দশভুজা: সেই ষোলো মিনিটের দূরত্ব কোনওদিন পূরণ হয়নি
পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-২: ‘আও টুইস্ট করে’ গানের জন্য পঞ্চমের সঙ্গে শচীনকর্তার বাক্যালাপও বন্ধ ছিল বেশ কিছুদিন
এত সুন্দর ব্যঞ্জনাময় বাক্যবন্ধনের সাহায্যে এই উপন্যাসের সমাপ্তি টেনেছেন জিৎ সত্রাগ্নি, যা বইটি সংগ্রহ করে পড়ার আগ্রহকে নিঃসন্দেহে আরও বাড়িয়ে দেবে। লিখতে গিয়ে ব্যক্তিগত জীবনের বহুমাত্রিক অভিজ্ঞতা কাজে লেগেছে তাঁর। যার কিছু কিছু পরিচয় জনপ্রিয় ওয়েবসাইট www.samayupdates.in এ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত জিৎ সত্রাগ্নি’র চলতি উপন্যাস ‘বসুন্ধরা এবং…’ এ দেদার পাচ্ছেন পাঠকেরা। আর একটা কথা। বাংলা বানানের ব্যাপারে লেখককে আরও একটু সতর্ক হতে হবে।
একঝলকে
উপন্যাস: পূর্বা আসছে
লেখক: জিৎ সত্রাগ্নি
প্রকাশক: ব্লু রোজ ওয়ান
মূল্য: ২৭৫ টাকা
পাওয়া যাচ্ছে:
বিশিষ্টজনদের প্রতিক্রিয়া
রুমকি চট্টোপাধ্যায়, চিত্র ও মঞ্চের অভিনেত্রী
জিৎ সত্রাগ্নি টানটান এক গল্পের বুনোটে তার উপন্যাসটিকে বেঁধেছেন। প্রতিটি চরিত্র তাদের নিজের নিজের উপলব্ধি নিয়ে জীবন্ত হয়ে উঠেছে। সবচেয়ে যেটি অভিনব তাহলে উপন্যাসের নামকরণ ‘পূর্বা আসছে!’ হ্যাঁ, পূর্বা এল এক বিরাট অপ্রত্যাশিত চমক নিয়ে যার জন্য উপন্যাসটি শেষ পর্যন্ত পড়ার আগ্রহ থেকেই যায়।
গৌতম ঘোষ, সংগীত পরিচালক, প্রাক্তন সহযোগী অধ্যাপক, যন্ত্রসঙ্গীত বিভাগ, রবীন্দ্রভারতী
পড়তে পড়তে মন চলে গিয়েছে আমার এলাকা ছাড়িয়ে মেঘের প্রান্তর ভেদ করে উপন্যাসের চরিত্রের আবাসে। এর প্রোটাগনিস্ট এক মিডিয়াম্যান। জটিল আবর্তের মধ্যে সে উঠে আসে, মনে হল, এ তো আমার চেনা! যেন বারবার কথা হয়েছে। হয়তো বা কখনও কাজ করেছি একত্রে। এতটাই জীবন্ত, প্রাণচঞ্চল এ। সত্যিই এক জীবন্ত নাটক। কেউ যদি একে নিয়ে ছবি করেন তার মেটেরিয়াল পরতে পরতে সাজানো। নির্দেশক নিশ্চিন্ত হবেন। লেখককে অভিনন্দন।
গৌরীশংকর মুখোপাধ্যায়, নাট্যকর্মী ও পরিচালক
অঞ্জন মুখোপাধ্যায়, চলচ্চিত্র পরিচালক, ছন্নছাড়া, মানসী