মঙ্গলবার ৯ জুলাই, ২০২৪


নানান স্টলে বসুন্ধরা এবং... ১ম খণ্ড, পূর্বা আসছে এবং জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন।

বইমেলার দু’ নম্বর গেট দিয়ে ঢুকেই তরুণ মজুমদার মঞ্চ। ডানদিকে ঘুরতেই মেদিনীপুর সমন্বয় সমিতির স্টল নম্বর ১৩৫-এ বিনয়কান্তি’র সঙ্গে দেখা। আপনি সময় আপডেটস-এর নিয়মিত পাঠক হলে বিনয়কান্তিকে নিশ্চয়ই চেনেন। বিনয়কান্তি দত্ত। দেশভাগ হওয়ার আগে মা বসুন্ধরাকে নিয়ে যাকে এই কলকাতা শহরের আশ্রিত হতে হয়েছিল। হ্যাঁ, আমি সময় আপডেটসে প্রকাশিত বসুন্ধরা এবং… ধারাবাহিক উপন্যাসের বিনয়কান্তি বা বসুন্ধরার কথা বলছি। জিৎ-সত্রাগ্নির এই জনপ্রিয় ধারাবাহিক উপন্যাসের ৫২ পর্ব নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে বসুন্ধরা এবং…প্রথম খণ্ড। প্রকাশক সর্বভারতীয় প্রকাশনা সংস্থা ব্লু-রোজ পাবলিশার্স।
সাজানো ঝকঝকে অনেক বইয়ের ভিড়ে নজর কাড়ে বসুন্ধরা এবং…প্রথম খণ্ড-এর ছিমছাম আকর্ষণীয় প্রচ্ছদ। প্রচ্ছদে মা দুর্গার অপূর্ব মুখ, আদ্যন্ত বাঙালিয়ানার কথা বলে। সাধারণত বইয়ের সামনের প্রচ্ছদ-বিন্যাসে নজর থাকে। এ বইটির পিছনের প্রচ্ছদটিও বেশ সুন্দর। মা দুর্গার ছ-ছটি মুখ আর তার সঙ্গে উপন্যাসের বিশেষ বিশেষ অংশ। পিছনের প্রচ্ছদে সময় আপডেটসের লোগো দেখে অবাক হলাম। পাতা ওলটাতেই কৌতূহলের অবসান। এই বইয়ের সামনে এবং পিছনের প্রচ্ছদ বিন্যাসের সৌজন্যে www.samayupdates.in — মা দুর্গার সবকটি ছবির চিত্রগ্রাহক সত্রাগ্নি।

বইতে প্রথম পাতাতে বাংলা এবং ইংরেজি ভাষায় কাহিনীর সারসংক্ষেপ দেওয়া রয়েছে, যাতে উপন্যাসের পটভূমি সমসাময়িকতা প্রেক্ষিত — এ সব বই কিনতে আসা মানুষজনের কাছে স্পষ্ট হয়। বইটির মুখবন্ধ লিখেছেন প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক প্রভাত রায়। লেখক জিৎ সত্রাগ্নি পরিচালকের সঙ্গে কয়েকটি চলচ্চিত্র ও ধারাবাহিকের সহযোগী-চিত্রনাট্যকার হিসেবে কাজ করেছেন। সেই সুবাদেই ছোট্ট একটি মুখবন্ধে প্রভাতবাবু জানিয়েছেন, “আমি চিরকাল সহজ কথা সহজ ভাবে বলার চেষ্টা করেছি। ওর মধ্যেও সেই ঘরানা কাজ করছে।”

নানা বইয়ের প্রচ্ছদ

ভূমিকা লিখেছেন, প্রখ্যাত নাট্য পরিচালক অভিনেতা এবং সায়ক দলের কর্ণধার মেঘনাদ ভট্টাচার্য। উপন্যাসের এক বিশদ ও আন্তরিক মূল্যায়নে তিনি লিখেছেন, “শুরু থেকেই পড়তে পড়তে এই উপন্যাসের প্রতি একটা প্রবল টান অনুভব করতে থাকি।…কাহিনীর বৈচিত্র্য বুনট লেখনীর গতি এবং সাবলীল ভাষা। ক্রমশ এই উপন্যাস আমাকে আকর্ষণ করতে থাকে।” এই উপন্যাসের মূল চরিত্র বসুন্ধরা ও বিনয়কান্তি কেন ভট্টাচার্যকে এত নাড়া দিয়েছে তা জানাতে গিয়ে তিনি তাঁর ব্যক্তিজীবনের উপলব্ধি ও অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। মেঘনাদ এই উপন্যাসের একটি বিশেষ অংশ উল্লেখ করে আরও জানিয়েছেন, “…শুধু এই অংশটুকু পড়ার পর এটুকু নিয়ে আমার নাটক করতে ইচ্ছে হয়েছিল। এত আকর্ষণীয় এবং নাটকীয় সেই কাহিনী বিন্যাস। এরপর আমার এই উপন্যাস নিয়ে আগ্রহ ক্রমশ বাড়তে থাকে।” উপন্যাসের মূল্যায়ন করতে গিয়ে মেঘনাদ ভট্টাচার্য লিখেছেন, “বসুন্ধরা এবং… পাঠকের মধ্যে সেই সদর্থক বিচার তৈরি করে দেয় যে মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারানো পাপ। এবং জীবনের লড়াইতে এক একটা ধাপ উঠে আসার জন্য সততাটাই মুখ্য। ওটাকেই মূলধন করতে হয়। সততাই একজনের একমাত্র আশ্রয়।”

উপন্যাস সম্বন্ধে বলেছেন, “সমালোচকেরা বলতেই পারেন, কোনও না পাওয়া নেই? কোন নেগেটিভ নোট নেই কেন? তাদের মনে হতে পারে জীবনটা কি এরকম সাদা? এত ভালো? জীবন তো ধূসর… তাদের সবিনয়ে জানাই সেরকম উপন্যাস অসংখ্য লেখা হয়েছে। আরও হয়তো অসংখ্য লেখা হবে ভবিষ্যতে। কিন্তু এরকম একটা উপন্যাস লেখা হোক যেটা পড়ে আমার মতো পাঠকের মনে হবে তার গঙ্গাস্নান হল। সে পবিত্র হয়ে উঠল যেভাবে পর্বে পর্বে বসুন্ধরা পড়তে পড়তে আমি পবিত্র হচ্ছি। আমার মন পবিত্র পরিষ্কার হচ্ছে। সেখানেই এই উপন্যাসের সার্থকতা বলে আমি মনে করি।”

২৫৪ পাতার একটা উপন্যাস বইমেলার ভিড়ের মধ্যে উলটেপালটে দেখে তো বোঝা যায় না। তাই প্রভাত রায় বা মেঘনাথ ভট্টাচার্যের মতো বিদগ্ধজনেরা তাঁদের এতবছরের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে এ লেখাটি সম্বন্ধে কী বলেছেন সেটা একটু বিশদে দেখছিলাম। শেষ পাতায় লেখক পরিচিতিতে গিয়ে দেখলাম, বসুন্ধরা এবং… লেখার আগের সলতে পাকানোর ইতিহাসটা সুদীর্ঘ। রেডিও নাটক, টেলিভিশন ও ফিল্মের চিত্রনাট্য এবং নিয়মিত মঞ্চ নাটক লেখার সঙ্গে সঙ্গে উপন্যাস লেখার একটা অধ্যায়। সেখানেই দেখলাম বসুন্ধরা এবং প্রথম খন্ডের সঙ্গেই প্রকাশিত হয়েছে জিৎ সত্রাগ্নি’র আরও একটি উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ এবং দুটি নাটকের একটি নাট্য সংকলন।

পূর্বা আসছে, ঝকঝকে অথচ পরিমিত প্রচ্ছদ ভাবনায় ডিএনএ হেলিক্সের ধাঁচে পাকানো ফিল্ম রোল – পিছনে কাহিনী পরিচিতি ও লেখক পরিচিতি। ইতিমধ্যেই একজন ফিল্ম এডিটরকে নিয়ে লেখা এই আকর্ষণীয় উপন্যাস “পূর্বা আসছে” নিয়ে সময় আপডেটস-এর বইয়ের দেশে বিভাগে— একটি বিস্তারিত আলোচনা বেরিয়েছে।

“বাবা-মাকে কাছে আনতে…পূর্বাকে চলে যেতে হল কেন?”

জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্যসংকলন -এ রয়েছে দুটি মঞ্চ সফল আকর্ষণীয় নাটক। বাপু আর রোদ্দুর ও অমলকান্তি। ২০২২ সালের শারদ প্রকাশ উপলক্ষে পঞ্চমী থেকে দশমী ছয়দিনে ছটি পর্বে রোদ্দুর ও অমলকান্তি নাটকটি প্রকাশিত হয়েছে সময় আপডেটস ডট ইন-এ। এই বইটির প্রচ্ছদ আড়াআড়ি বা ল্যান্ডস্কেপে ছাপা। প্রচ্ছদে রয়েছে দুটি নাটকের পোস্টার। নাট্যকার প্রচ্ছদে পোস্টার ব্যবহারের জন্য মাঙ্গলিক ও বহুরূপী নাট্যদলের প্রতি কৃতজ্ঞতাস্বীকার করেছেন।

অমলকান্তি নাটকের প্রচ্ছদবিন্যাস করেছেন প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী অধ্যাপক ইন্দ্রপ্রমিত রায় এবং চিত্রশিল্পী সজল বন্দ্যোপাধ্যায়। নাট্যকার তাঁদেরও ঋণশিকার করেছেন। এই নাট্যসংকলনের মুখবন্ধ লিখেছেন প্রখ্যাত চিত্র ও মঞ্চ অভিনেতা নাট্যপরিচালক অশোক মুখোপাধ্যায়। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্য বিভাগের প্রাক্তন এই অধ্যাপক নাটক দুটির বিস্তারিত আলোচনায় উল্লেখ করেছেন, “সম্পূর্ণ দু’রকমের মেজাজের দুই ধরণের দুটি নাটক একই মলাটের ভেতরে এবার পাঠকেরা নিজেদের পড়াশোনার অবকাশ অবসরে পেয়ে যাবেন। থিয়েটারের পক্ষে এটা একটা ভালো ঘটনা।”

বইয়ের দেশে: বইমেলায় বই হয়ে সময় আপডেটস-এর ‘গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি’

বাংলা নাটকের প্রবীণ পুরোধা সংগীত নাটক আকাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত বিভাস চক্রবর্তী লিখেছেন, এই নাট্য সংকলনের ভূমিকা। এই নাট্যচিন্তক লিখেছেন, “আমরা একটা অদ্ভুত সময়ের মধ্যে দিয়ে চলেছি।সারা বিশ্বজুড়ে অশান্তি হানাহানি। … এই সময়কে মোকাবিলা করতে জিৎ সত্রাগ্নি’র এই সংকলনে প্রকাশিত দুটি নাটকের বক্তব্যে এক অদ্ভুত মিল রয়েছে।”
আরও পড়ুন:

পর্ব-৩, বসুন্ধরা এবং…/২য় খণ্ড: লিখতে বসে সুবর্ণর মনে হয়েছে ‘বসুন্ধরা এবং…’ তার কনফেশন বক্স …

নাট্যকথা: রোদ্দুর ও অমলকান্তি/৬

দুটি নাটক ছাড়াও রয়েছে সাধারণ দর্শকের নাটক নিয়ে স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিক্রিয়া। রয়েছে বিখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্ব অরুণ মুখোপাধ্যায় ফাল্গুনী চট্টোপাধ্যায় দেবেশ রায়চৌধুরী নাট্যকার অরূপ শঙ্কর মৈত্র প্রমুখের মূল্যায়ণ। রয়েছে এই দুটি নাটক নিয়ে দ্য স্টেটসম্যান সাপ্তাহিক দেশ বর্তমান পত্রিকা তথ্যকেন্দ্র এবং নাট্য মুখপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনের অংশবিশেষ। মহাত্মা গান্ধীর রাজনৈতিক ও ব্যক্তিজীবনের খণ্ডচিত্র নিয়ে নাটক বাপু আর কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী’র আইকনিক কবিতা “অমলকান্তি” নিয়ে এক সারিয়্যাল বা পরাবাস্তব নাটক রোদ্দুর ও অমলকান্তি। অমলকান্তি নাটকে এসেছে অমলকান্তি’র স্কুলের বন্ধুরা। আশ্চর্যভাবে সেই বন্ধুরা আবার বাংলা সিনেমা’র অতি পরিচিত আকর্ষণীয় সব চরিত্র। তাই এই নাটকের শুরুতে বিস্তারিত চরিত্রবিন্যাস রাখা হয়েছে। মাঙ্গলিক এবং বহুরূপী নাট্যদল প্রযোজিত এই দুটি নাটক মানুষের কাছে বেশ পরিচিত। তাই এই নাটকের বই পাঠকের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে বলেই মনে হয়।

নয়াদিল্লিস্থিত ব্লু রোজ পাবলিশার্স ৪৬তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেননি। তাই জিৎসত্রাগ্নি’র এই বইগুলি মেলার নানান বুকস্টলে রাখা হয়েছে। এগুলি হল দু- নম্বর গেট দিয়ে ঢুকে স্টল নম্বর ১৩৫ (মেদিনীপুর সমন্বয় সমিতি – আশাবরী পাবলিকেশন) ৮ বা ৯ নাম্বার গেটের কাছে স্টল নম্বর ৪৭৪ (লাইবার ফেইরি বুক্স) এবং লিটিল ম্যাগাজিন ১০৩ নম্বর বুকস্টলে (শব্দপ্রতিমা প্রকাশনী)।
ফেব্রুয়ারি মাসে দিল্লির প্রগতি ময়দানে অনুষ্ঠিত আগামী নয়াদিল্লি আন্তর্জাতিক বইমেলায় ব্লু রোজ পাবলিশার্সের নিজস্ব প্যাভিলিয়নে বিক্রয় হবে এই বাঙলা বইগুলি। এছাড়াও এই বইগুলি নিয়মিতভাবে অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে ব্লুরোজ স্টোর্স, আমাজন এবং ফ্লিপকার্টে। বসুন্ধরা এবং… প্রথম খণ্ড, পূর্বা আসছে বা জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্যসংকলনের দাম যথাক্রমে ৪০০ টাকা, ২৭৫ টাকা ও ৩৫০টাকা। বইমেলায় এই বইগুলি আকর্ষণীয় ছাড়সহ পাওয়া যাচ্ছে।

Skip to content