রবিবার ১০ নভেম্বর, ২০২৪


নির্মলকুমার, সুপ্রিয়া দেবী ও ছবি বিশ্বাস।

বাংলা ছবির বিখ্যাত নট ছবি বিশ্বাস। তাঁর অভিনয়গুণে যেকোনও চরিত্রই হয়ে উঠত প্রাণবন্ত। সেই ছবি বিশ্বাস শারীরিক ভাবে কষ্ট হতে পারে এমন কোনও দৃশ্যের শ্যুটিং থাকলে, সেটা যেভাবেই হোক এড়াতে চেষ্টা করতেন। সেক্ষেত্রে তাঁকে ছলচাতুরীর আশ্রয় নিতে হতো কখনও কখনও তা বলাই বাহুল্য। তেমনি একদিনের ঘটনার কথা বলছি। ছবির নাম ‘বিষকন্যা’। ১৯৬১ সালে ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল। ছবি বিশ্বাস এই ছবিতে মুখ্য ভূমিকায় রয়েছেন। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন নায়িকা সুপ্রিয়া দেবী, নায়ক নির্মলকুমার। এছাড়াও ছবিতে আছেন তুলসী চক্রবর্তী, ভানু বন্দোপাধ্যায়, জহর রায়, অনুপ কুমার, তরুণ কুমার প্রমুখ শিল্পী।

এ ছবির শ্যুটিং চলছিল টেকনিশিয়ান স্টুডিওতে। একদিন ওই ছবির শ্যুটিং করতে স্টুডিওতে গাড়ি নিয়ে ঢুকে, গাড়ি থেকে নামার পর ছবি বিশ্বাস খোঁড়াতে খোঁড়াতে মেকআপ রুমের দিকে এগোতে শুরু করলেন। স্টুডিওতে অন্য ফ্লোরে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ‘স্বরলিপি’ ছবির শ্যুটিং করছিলেন। ছবি বিশ্বাসের সঙ্গে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মুখোমুখি দেখা। ‘বিষকন্যা’ ছবির পাঁচু বসাক চট করে এসে গেলেন। অন্যান্য অনেকেই ছিলেন ছবি বিশ্বাসকে ঘিরে।

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় উৎকণ্ঠিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন ছবিদা কী হয়েছে? পা খোঁড়াতে খোঁড়াতে চলেছেন? সৌমিত্র-সহ উপস্থিত সবাইকে একটি কাহিনী তখন শোনালেন ছবি বিশ্বাস। বললেন, ‘গতকাল নিজের বাগানের গাছগুলো পরিচর্যা করছিলাম নিজে নিজেই। এই কাজটা অবসর সময়ে করতে ভালোই লাগে। হঠাৎ বলা নেই কওয়া নেই একটা গর্তের মধ্যে পাটা পড়ে গেল। সে যে কী ব্যথা বলে বোঝাতে পারব না। পাঁচু বসাক এ কথা শোনা মাত্র বললেন ‘ও তাহলে আপনাকে আজ আর ছুটে আসার সিনটা যে ছিল সেটা করতে হবে না। ওটা বাদ দিয়ে ম্যানেজ করে নেব।’
ছবি বিশ্বাস এটাই চেয়েছিলেন। তিনি যেন রিলিফ পেলেন। ওই দিনই ঘণ্টা কয়েক বাদে লাঞ্চ ব্রেকে ফ্লোরের বাইরে ইজি চেয়ারের ছবি বিশ্বাস বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়-সহ অনেকের সঙ্গে গল্প করছিলেন। এমন সময় ‘বিষকন্যা’ ছবির সহকারী পরিচালক এসে ছবি বিশ্বাসকে জানিয়ে দিলেন যে শট রেডি হয়ে গিয়েছে। ছবি বিশ্বাস ইজি চেয়ার থেকে উঠে ফ্লোরের দিকে স্বাভাবিক চালে হেঁটে যেতে শুরু করলেন।

সৌমিত্র এই দৃশ্য দেখে ছবি বিশ্বাসকে কানের কাছে গিয়ে আস্তে আস্তে বললেন, ‘ছবিদা আপনার খোঁড়ানোর কন্টিনিউটিটা কিন্তু থাকছে না।’ ছবি বিশ্বাস দেখলেন সৌমিত্র তো ঠিক কথাই মনে করিয়ে দিয়েছে। ছবি বিশ্বাস এবার বললেন ‘ভালো কথা মনে করিয়ে দিয়েছিস কিন্তু কোন পায়ে ব্যথা দেখিয়েছিলাম বলতো? বাঁ পাটাই হবে। হ্যাঁ হ্যাঁ বাঁ পাটাই হবে।” বলতে বলতে বাঁ পাটা খোঁড়াতে খোঁড়াতে ফ্লোরের মধ্যে ঢুকে গেলেন ছবি বিশ্বাস। এমনই রসিক মানুষ ছিলেন ছবি বিশ্বাস।

Skip to content